চ্যানিশ নিজের মনে কথা বলতে বলতে হাঁটছে। পুরো ব্যাপারটি নিয়ে তার মনে কোনো সন্দেহ নেই। স্বাভাবিকভাবেই দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন। সেই অস্বস্তিকর কাল্পনিক ভয়, যার প্রতি অধিক গুরুত্ব দিয়ে মিউল তার সীমাহীন রাজ্যবিস্তারের নীতি থেকে দূরে সরে গেছে, তার সাম্রাজ্য বিস্তারনীতির অফিসিয়াল প্রতিশব্দ “কনসলিডেশন।”
এই মুহূর্তে বিভিন্ন গুজব তৈরি হচ্ছে–গুজব কখনো বন্ধ হয় না। শোনা যাচ্ছে মিউল পুনরায় আক্রমণাত্মক হয়ে উঠবে। মিউল দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছে এবং যে কোনো মুহূর্তে হামলা চালাবে। মিউল দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের সাথে চুক্তি করে গ্যালাক্সি নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিয়েছে। মিউল সিদ্ধান্তে এসেছে যে দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের কোনো অস্তিত্ব নেই এবং পুরো গ্যালাক্সিতে তার আধিপত্য বিস্তার করবে।
গুজবের কোনো শেষ নেই। শুধু প্রথমবারের মতোই এ ধরনের গুজব ছড়ায়নি। বেইল চ্যানিশের মনে অবশ্য রহস্যময় দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের ব্যাপারে কোনো দ্বিধা বা ভয়। নেই। আবার মিউলকেও সে ভয় পায় না এবং এটা নিয়ে তার কিছুটা অহঙ্কারও রয়েছে।
নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছল সে।
বিশাল মসৃণ দরজা বিকট হা করে খুলে গেল। ভিতরে ঢুকে সে উপরদিকে চলমান র্যাল্পে চড়ল। শব্দহীন এলিভেটরে করে প্রাসাদের সর্বোচ্চ চূড়ায় মিউলের আলো ঝলমলে ব্যক্তিগত কক্ষের ছোট দরজার সামনে এসে থামল।
.
মিউল-তার অন্য কোনো নাম নেই এবং অফিসিয়ালি তার উপাধি ফার্স্ট সিটিজেন’–একমুখী স্বচ্ছ দেওয়ালের ভিতর দিয়ে দিগন্তের আলো ঝলমলে সুউচ্চ নগরীর দিকে তাকিয়ে আছে।
দিনের আলো নিভে যাওয়ায় নক্ষত্র দেখা যাচ্ছে এবং সবগুলোই তার নিকট আনুগত্য স্বীকার করতে বাধ্য।
এই চিন্তাটা তার মুখে ক্ষীণ একটু তিক্ত হাসি ফুটিয়ে তুলল। আসলে তারা আনুগত্য স্বীকার করেছে এমন একটি ক্ষমতার কাছে যা কেউ আগে কখনো দেখেনি।
তাকিয়ে থাকার মতো সুদর্শন সে নয়। মিউল–অবহেলার দৃষ্টিতেই সবাই তার দিকে তাকাবে। লম্বায় পাঁচ ফিট আট ইঞ্চি এবং ওজন একশ বিশ পাউণ্ড। তার কংকালসার অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো হাড্ডিসার দেহ থেকে অশোভনভাবে বেরিয়ে রয়েছে। শুকনো মুখ থেকে মাংসল মোটা ঠোঁট উকটভাবে ঝুলে আছে প্রায় তিন ইঞ্চি।
তার চোখের দিকে তাকালে কেউ ধারণাই করতে পারবে না যে সে মিউল। তার চোখে রয়েছে শান্ত নরম দৃষ্টি–যা গ্যালাক্সির সর্বশ্রেষ্ঠ দখলদারের জন্য একেবারেই বেমানান– সেই সাথে কিছুটা বিষণ্ণতাও মেশানো রয়েছে।
নগরীতে বিলাসবহুল পৃথিবীর বিলাসবহুল রাজধানীর সকল আমোদপ্রমোদের ব্যবস্থা আছে। সে তার সবচেয়ে শক্ত প্রতিপক্ষ ফাউণ্ডেশনে রাজধানী স্থাপন করতে পারত, কিন্তু ফাউণ্ডেশন গ্যালাক্সির একেবারে প্রান্তে অবস্থিত। কালগান অনেকটা কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে এবং অভিজাত শাসকদের ভূমি হিসাবে এর রয়েছে আলাদা ঐতিহ্য। কৌশলগত দিক দিয়ে কালগানই রাজধানী হিসাবে উৎকৃষ্ট।
তারপরেও সে শান্তি পায়নি।
তারা তাকে ভয় করে, মান্য করে, এমনকি শ্রদ্ধাও করে কিন্তু একটা দূরত্ব বজায় রেখে, অবজ্ঞা ছাড়া কেইবা তার দিকে তাকাবে? শুধু তারাই যাদেরকে সে কনভার্ট করেছে। কিন্তু তাদের কৃত্রিম আনুগত্যের কী মূল্য রয়েছে। এতে কোনো আনন্দ নেই। ইচ্ছা করলে সে অনেক উপাধি ধারণ করতে পারে, বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান আরোপ করতে পারে, কিন্তু তাতেও অবস্থার পরিবর্তন হবে না। বরং ভাল বা বলা যায় যে খারাপ কিছু ঘটবে না যদি শুধুমাত্র ফার্স্ট সিটিজেন হয়ে সে নিজেকে লুকিয়ে রাখে।
হঠাৎ করে তার ভিতরে তীব্র ও প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ঘটল। গ্যালাক্সির সামান্যতম অংশও তাকে অস্বীকার করতে পারবে না। গত পাঁচ বছর ধরে সে নিজেকে চুপচাপ কালগানে কবর দিয়ে রেখেছে শুধুমাত্র না দেখা, শোনা, না জানা দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের অন্তহীন, রহস্যময় হুমকির কারণে। তার বয়স বত্রিশ। যদিও বৃদ্ধ বয়স নয় কিন্তু সে নিজেকে বৃদ্ধ মনে করে। তার যতই তীব্র মেন্টাল পাওয়ার থাকুক, শারীরিকভাবে সে দুর্বল।
প্রতিটি নক্ষত্র! যতগুলি নক্ষত্র সে দেখতে পারে এবং যতগুলি নক্ষত্র সে দেখতে পারে না সবই তার।
প্রতিশোধ। এমন একটি মানবসভ্যতার উপর যেখানে তার কোনো অংশ নেই। এমন একটি গ্যালাক্সির উপর যেখানে তার যোগ্যতার কোনো স্বীকৃতি নেই।
মাথার উপরের ঠাণ্ডা সবুজ ওয়ার্নিং লাইট জ্বলে উঠল। যে লোকটি প্রাসাদে প্রবেশ করেছে তার প্রতিটি পদক্ষেপ সে অনুভব করতে পারছে এবং যেহেতু সন্ধ্যার ম্লান আলোয় তার মিউট্যান্ট অনুভূতি আরও তীক্ষ্ণ হয়েছে, সেহেতু আগন্তুকের মস্তিষ্কের ভিতরে ঢুকে সমস্ত আবেগ বুঝতে পারছে।
কোনো চেষ্টা ছাড়াই সে আগন্তুককে চিনতে পারল। প্রিচার।
ফাউণ্ডেশনের এক সময়ের ক্যাপ্টেন, সেই ক্যাপ্টেন প্রিচার যে তঙ্কালীন ক্ষয়িষ্ণু শাসনব্যবস্থার অবহেলার স্বীকার। ক্যাপ্টেন প্রিচারের কাজ ছিল একজন সাধারণ পাই এর। সেখান থেকে তাকে সে উদ্ধার করে প্রথমে কর্নেল এবং পরে জেনারেল পদে উন্নীত করে; পুরো গ্যালাক্সিতে তার কাজের পরিধি বাড়িয়ে দেওয়া হয়।
বর্তমানের জেনারেল প্রিচার সম্পূর্ণ অনুগত, যদিও শুরুতে সে ছিল প্রচণ্ড বিদ্রোহী। তাকে যে সুযোগ দেওয়া হয়েছে বা কৃতজ্ঞতাস্বরূপ বা প্রতিদানের উদ্দেশ্যে সে মিউলের প্রতি অনুগত নয়–বরং শুধুমাত্র কৃত্রিম কনভার্সনের কারণেই সে অনুগত।