সে বেঁচে আছে অবশ্যই। নরমভাবে প্রায় পালকের মতো হালকা করে শ্বাস নিল। তার চিন্তাভাবনা স্থির হচ্ছে। আরামবোধের একটা প্রবাহ তার ভিতরে প্রবেশ করছে সে বুঝতে পারল। বাইরে থেকে। নাক ঘষল সে।
দরজা খোলা এবং ফার্স্ট স্পিকার ঠিক চৌকাঠের ভিতরে দাঁড়িয়ে আছে। সে কথা বলার চেষ্টা করল, চিৎকার করার চেষ্টা করল, সতর্ক করার চেষ্টা করল–কিন্তু কোনো শব্দ বের হলো না। সে জানে মিউলের পরাক্রমশালী মাইণ্ডের একটা অংশ এখনও তাকে ধরে রেখেছে এবং শব্দগুলো তার ভিতরেই আটকে রাখছে।
সে আরেকবার নাক ঘষল। মিউল এখনও কামরায় রয়েছে। অত্যন্ত ক্ষিপ্ত এবং চোখ লাল হয়ে আছে। এখন আর সে হাসছে না। কিন্তু হিংস্রভাবে দাঁত বেরিয়ে রয়েছে।
তার মাইণ্ডে ফার্স্ট স্পিকারের কোমল মেন্টাল ইনফ্লুয়েন্স অনুভব করছে চ্যানিশ। আস্তে আস্তে তার যন্ত্রণার উপশম হচ্ছে। হঠাৎ করেই সব অনুভূতি হারিয়ে গেল। কারণ ফার্স্ট স্পিকারের মেন্টাল ইনফ্লুয়েন্স মিউলের প্রতিরক্ষার সাথে এক মুহূর্তের জন্য ধাক্কা খেল। তারপর আবার সব ঠিক।
মিউল তার কৃশকায় শরীরের সাথে বেমানান ক্রোধের সাথে বলল, আরেকজন আমাকে স্বাগত জানাতে এসেছে। তার ক্ষিপ্র মাইণ্ড কামরা ছাড়িয়ে আরও অনেক দূর পর্যন্ত চলে গেল–
‘তুমি একা,’ সে বলল।
‘আমি পুরোপুরি একা।’ বললেন ফার্স্ট স্পিকার, একা আসাই দরকার, যেহেতু পাঁচবছর আগে আমিই তোমাকে চিনতে ভুল করেছিলাম। সেই ভুলের সংশোধন আমাকে একাই করতে হবে। দুর্ভাগ্যবশত যে মেন্টাল ওয়েভ দিয়ে তুমি জায়গাটা ঘিরে রেখেছো, সেটা আমার হিসাবে ছিল না। এখানে আসতে সে কারণেই আমার সময় বেশি লেগেছে। তোমার দক্ষতার জন্য অভিনন্দন।‘
‘অভিনন্দনের প্রয়োজন নেই।‘ বৈরী জবাব আসল। ‘তুমি কী ওইখানে পড়ে থাকা তোমার ভাঙা পিলারের সাথে তোমার ব্রেইনের ছিটেফোঁটা যোগ দিতে এখানে এসেছো?’
ফার্স্ট স্পিকার হাসলেন, ‘কেন, যাকে তুমি বেইল চ্যানিশ হিসাবে চেন সে তার মিশন পুরোপুরি সম্পন্ন করেছে, যদিও মেন্টালি সে তোমার সমকক্ষ নয়। আমি দেখতে পারছি তুমি তার কতটুকু ক্ষতি করেছ, হয়তো আমরা তাকে পুরোপুরি সুস্থ করে তুলতে পারব। সে অত্যন্ত সাহসী, এই মিশনে স্বেচ্ছায় এসেছে।‘
চ্যানিশের মাইণ্ড তরঙ্গ কিছু বলার চেষ্টা করছে, সতর্ক করে দিতে চাচ্ছে, কিন্তু পারছে না। সে শুধু ভয়ের একষ্টা স্রোত নিক্ষেপ করতে পারল।
মিউল একেবারেই শান্ত। ‘তুমি নিশ্চয়ই জেনডার ধ্বংসের কথা জান?’
‘আমি জানি। তোমার কামলার কথা আমরা আগেই অমনুমান করেছিলাম।‘
‘হ্যাঁ, আমিও তাই মনে করি। কিন্তু প্রতিরোধের ব্যবস্থা করনি?’
‘না, প্রতিরোধ করা হয়নি। ফার্স্ট স্পিকারের ইমোশনাল সিম্বোলজী একেবারেই সরল। যেন তিনি নিজের প্রতিই বিরক্ত। এবং ভুলটা তোমার চেয়ে আমারই বেশি। পাঁচবছর আগে কে ভাবতে পেরেছিল তোমার এত ক্ষমতা। প্রথম থেকেই আমরা অনুমান করেছিলাম–যখন কালগান দখল কর–যে তোমার ইমোশনাল কন্ট্রোলের ক্ষমতা আছে। খুব একটা অবাক হওয়ার মতো কিছু না, ফার্স্ট সিটিজেন, আমি ব্যাখ্যা করতে পারি।’
তুমি আর আমি যেভাবে ইমোশনাল কন্টাক্ট করি সেটা নতুন কিছু নয়। এটা মানুষের ব্রেইনের মধ্যেই রয়েছে। অধিকাংশ মানুষই প্রাগৈতিহাসিক পদ্ধতিতে ইমোশন প্রকাশ করতে পারে যেমন মুখের ভঙ্গি, কণ্ঠস্বর ইত্যাদি। কিছু পশু গন্ধশোঁকার অনুভূতিকে ব্যবহার করে। এই ক্ষেত্রে আবেগ কম জটিল।
‘বস্তুত মানুষের ক্ষমতা আরও বেশি। কিন্তু মিলিয়ন বছর আগে কথা বলতে শেখার পর সরাসরি ইমোশনাল কন্টাক্ট বিষয়টি বন্ধ হয়ে যায়। একমাত্র দ্বিতীয় ফাউন্ডেশনই এই ভুলে যাওয়া বিষয়টি কিছু পরিমাণে ধরে রাখতে পেরেছে।
‘কিন্তু আমরা এই ক্ষমতা নিয়ে জন্মাই না। মিলিয়ন বছরের ক্ষয় একটা ভয়ানক বাধা এবং আমাদের এই অনুভূতিকে শিখতে হয়, চর্চা করতে হয়। পেশীর জন্য যেমন ব্যায়াম করি এর জন্যও সেভাবে ব্যায়াম করতে হয়। তোমার সাথে এখানেই আমাদের পার্থক্য। তুমি এই ক্ষমতা নিয়েই জন্মেছ।
‘অনেক কিছুই আমরা বুঝতে পারি। যে মানবগোষ্ঠীর এই ধরনের ক্ষমতা নেই তাদের উপর এর প্রভাব আমরা বুঝতে পারি। আমাদের হিসাবে তুমি ছিলে ম্যাগালোম্যানিয়াক এবং আমাদের ধারণা ছিল যে আমরা প্রস্তুত। কিন্তু দুটো কারণে আমাদের ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়।
‘প্রথমত তোমার অনুভূতির ক্ষমতা। আমরা কেবলমাত্র মানুষের চোখের দিকে তাকিয়ে ইমোশনাল কন্টাক্ট আরোপ করতে পারি। আর তাই যে কোনো অস্ত্রের বিরুদ্ধে আমরা অসহায়। কিন্তু তুমি দৃষ্টি এবং শ্রবণ সীমার বাইরে থাকলেও তোমার লোকদের নিয়ন্ত্রণ করতে পার। ব্যাপারটা অনেক পরে ধরতে পারি।’
‘দ্বিতীয়ত তোমার শারীরিক অক্ষমতার কথা আমাদের জানা ছিলনা। বিশেষ করে যে কারণে তুমি মিউল নাম গ্রহণ করেছ। ধারণাও ছিল না যে তুমি শুধু একজন মিউট্যান্টই নও বরং শারীরিক অক্ষমতার কারণে একটা বিকৃত মিউট্যান্ট। আমরা শুধু একজন ম্যাগালোম্যানিয়াককে ঠেকানোর প্রস্তুতি নিয়েছিলাম–একজন সাইকোপ্যাথকে ঠেকানোর প্রস্তুতি আমাদের ছিল না।
‘এই ভুলের সমস্ত দায়দায়িত্ব আমার, যেহেতু তুমি যখন কলগান দখল করা আমি ছিলাম দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের নেতা। যখন তুমি ফার্স্ট ফাউণ্ডেশন ধ্বংস কর, আমরা তোমার ব্যাপারে সব বুঝতে পারি–কিন্তু অনেক দেরিতে–সেই ভুলের জন্য জেনডাতে কয়েক মিলিয়ন লোক মারা গেল।