দেওয়ালের সাথে পিঠ লেগে গেল, মিউল দাঁড়িয়ে আছে একেবারে মুখোমুখি। কোমরে হাত, বিশাল নাকের নিচে ঠোঁট ভয়ঙ্করভাবে ফাঁক হয়ে আছে।
তোমার খেলা শেষ, চ্যানিশ। তোমাদের সবার খেলা–সরার, যাদের দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন বলা হত।
এখানে বসে তুমি কিসের অপেক্ষা করছিলে। যখন তুমি প্রিচারে সাথে তর্ক করছিলে, যখন শারীরিক শক্তি ছাড়াই প্রিচারকে প্রায় ধরাশায়ী করে ফেলেছিলে। তুমি আসলে অপেক্ষা করছিলো, তাই না? অপেক্ষা করছিলে প্রতিকূল একটা পরিস্থিতিতে আমাকে স্বাগত জানাতে। তোমার জন্য দুঃসংবাদ যে আমার জন্য প্রতিকূল বলে কোনো কথা নেই।
‘আর এখন তুমি কিসের অপেক্ষা কবুছ? এখনও আমার দিকে এমনভাবে শব্দবান ছুঁড়ছ, যেন তোমার কণ্ঠস্বর আমাকে চেয়ারের সাথে গেঁথে রাখবে। আর যখনই তুমি কথা বলছ তোমার মাইণ্ড কিছু ঘটার জন্য অপেক্ষা করছে–তো করছেই। কিন্তু কেউ আসবে না। যাদের তুলি আশা করছ, তোমার বন্ধুরা তাদের কেউ না। তুমি এখানে একা চ্যানিশ এবং একই থাকবে। কেন জান?
কারণ প্রথম থেকে শেষপর্যন্ত দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন আমাকে ভুলভাবে বিচার করেছে। আমি তাদের পরিকল্পনা আগে থেকেই জানি। তারা ভেবেছিল তোমাকে অনুসরণ করে আমি এখানে আসব এবং সিদ্ধ হওয়ার জন্য তাদের উত্তপ্ত কড়াইতে চড়ে বসব। তুমি আসলে একটা টোপ, দুর্বল, বোকা এক মিউট্যান্টের জন্য একটি টোপ।
‘তারা কীভাবে চিন্তা করল যে আমি আমার ফ্লিট ছাড়া এখানে আসব? যে কোনো আর্টিলারির বিরুদ্ধে তারা অসহায়। আমার শিপ প্রায় বার ঘণ্টা আগে জেনভার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে। এতক্ষণে জেনডা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। জনবসতির কেন্দ্রগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের আর কোনো অস্তিত্ব নেই। এবং দুর্বল কুৎসিত এই আমি এখন গ্যালাক্সির সব ক্ষমতার অধিকারী।’
চ্যানিশ অসহায়ভাবে মাথা নাড়ানো ছাড়া আর কিছু করতে পারল না। আর্তস্বরে বলল-–’না, না।’
‘হ্যাঁ–হ্যাঁ—’ মিউল ভেঙচি কেটে বলল। এবং তুমি সম্ভবত সর্বশেষ জীবিত। তবে বেশিক্ষণ থাকবে না।’
বেশ কিছুক্ষণের নীরবতা। তারপর চ্যানিশের মাইণ্ডের সবচেয়ে ভিতরের টিস্যুতে অনুপ্রবেশের ফলে হঠাৎ তীব্র ব্যথায় সে প্রায় গড়াগড়ি দিতে লাগল।
মিউল পিছিয়ে গেল, ‘যথেষ্ট নয়,। তুমি পরীক্ষায় পাস করতে পারোনি। তুমি ভণ্ড। বড় একটা আদর্শ ধ্বংস হয়ে যাবে। তার জন্য তোমার কোনো আক্ষেপ নেই, বরং নিজের মৃত্যুভয়ে কাতর।
মিউল তার দুর্বল হাতের ছোট্ট মুঠি দিয়ে চ্যানিশের গলা চেপে ধরল। অনেক কষ্টেও সে ছুটতে পারল না।
‘তুমি আমার বীমা, চ্যানিশ। আমি যদি কোনো ভুল করে থাকি তুমি তার বিরুদ্ধে আমার পরিচালক ও সেফগার্ড।‘ মিউলের চোখ তার ভিতরে গেঁথে যাচ্ছে–জোরালোভাবে–তীব্রভাবে–
‘আমার হিসাব ঠিক আছে, চ্যানিশ? আমি তোমার দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের সবাইকে নিশ্চিহ্ন করতে পেরেছি? জেনডা ধ্বংস হয়ে গেছে চ্যানিশ, পুরোপুরি ধ্বংস; বাস্ত বতাটা কী? আমি অবশ্যই বাস্তবতা এবং সত্য জানতে চাই। কথা বল চ্যানিশ কথা বল। আমি কী তবে গভীরভাবে অনুপ্রবেশ করতে পারিনি? এখনও বিপদ রয়ে গেছে? কথা বল, চ্যানিশ। আমি কোথায় ভুল করেছি?’
চ্যানিশ অনুভব করল শব্দগুলো তার মুখ থেকে বেরিয়ে আসছে। অনিচ্ছাকৃতভাবে। দাঁত চেপে ধরে সেগুলোকে বাধা দিতে চাইল। জিহ্বা দমিয়ে রাখার চেষ্টা করল। গলার সমস্ত পেশী শক্ত করে রাখল।
কিন্তু শব্দগুলো বেরিয়ে এল ফিসফিস করে প্রচণ্ড শক্তিতে বেরিয়ে আসার পথে তার গলা, জিভ, দাঁত ছিন্নভিন্ন করে দিল।
‘সত্য,’ সে অত্যন্ত ক্ষীণ গলায় বলল, ‘সত্য-–’
‘হ্যাঁ, সত্য। আর কী করার আছে?’
‘সেলডন দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন স্থাপন করেছিলেন এখানে। এখানে, আমি মিথ্যা বলছি না। সাইকোলজিস্টরা এখানে এসে স্থানীয় অধিবাসীদের নিয়ন্ত্রণ নেয়।‘
‘আর জেনডা?’ মিউল তার আবেগকে অত্যাচারের বন্যায় ডুবিয়ে দিল– নিষ্ঠুরভাবে সেগুলোকে ছিন্নভিন্ন করতে লাগল। জেনডা আমি ধ্বংস করেছি। তুমি জান আমি কী চাই। আমাকে বল।’
‘জেনডা নয়। আমি বলেছি দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন সম্ভবত সরাসরি ক্ষমতায় থাকবে না। জেনডা হচ্ছে সবার মাথা–’ শব্দগুলো বোঝাই যায় না। দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনারের ইচ্ছার প্রতিটি অণুর বিরুদ্ধে সেগুলো তৈরি হচ্ছে, ‘রোসেম–রোসেম? রোসেমই হচ্ছে সেই পৃথিবী–’
মিউল তার মুঠো ঢিলে করল এবং চ্যানিশ যন্ত্রণা ও পীড়নের মধ্যে হাবুডুবু খেতে থাকল।
‘তুমি আমাকে বোকা বানানোর চেষ্টা করছ?’ খুব নরমভাবে বলল মিউল।
‘তোমাকে বোকা বানানো হয়েছে।‘ এটাই ছিল চ্যানিশের সর্বশেষ প্রতিরোধ।
‘কিন্তু খুব বেশি সময়ের জন্য নয়। আমি আমার ফ্লিটের সাথে যোগাযোগ করেছি। জেনডার পর তারা রোসেমেও আসতে পারবে। কিন্তু প্রথমে–’
চ্যানিশ টের পাচ্ছে তার চারপাশে যন্ত্রণাদায়ক অন্ধকার তৈরি হচ্ছে, কিছুতেই দূর হচ্ছে না। অন্ধকার তার শ্বাসরোধ করে দিচ্ছে, বুঝতে পারছে তার অত্যাচারিত, আহত মাইণ্ড চির অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে। আবছাভাবে দেখতে পেল মিউল বিজয় গর্বে হাসছে। হাসির তালে কাঁপছে লম্বা, মাংসল নাক।
শব্দটা হালকা হয়ে গেল। অন্ধকার তাকে গ্রাস করে নিল।
একটা ঝাঁকুনি দিয়ে চেতনা ফিরে আসতে লাগল চ্যানিশের। ব্যাপারটা অনেকটা ছোট ফুটো দিয়ে একঝলক আলো এসে পড়ার মতো। আলোটা একবার ফুটোর সামনে আসছে আবার চলে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে বাস্তব দুনিয়ায় ফিরে আসছে। চ্যানিশ।