সে ব্লাস্টার নিচে ফেলে দিল এবং লাথি দিয়ে পাঠিয়ে দিল কামরার অন্যদিকে। একই সাথে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল প্রিচার।
‘জেগে উঠে আবার সে স্বাভাবিক হয়ে যাবে,’ মিউল আগের গলাতেই বলল।
মিউল ট্রিগারে চাপ দিতে শুরু করার পর ব্লাস্টার ফেলে দেওয়া পর্যন্ত সময় লেগেছে মাত্র দেড় সেকেণ্ড।
কিন্তু সচেতনতার ঠিক বাইরে থেকে হঠাৎ করেই চ্যানিশ এক পলকের জন্য মিউলের মাইণ্ডের ভেতর কিছু একটা ডিটেক্ট করতে পারল। সেটা হচ্ছে আত্মবিশ্বাস এবং বিজয়উল্লাস।
.
১.৬ দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন
লোক দুজন সম্পূর্ণ শিথিল ও সহজভাবে বসে রয়েছে; দুজন দুই দিকে। কিন্তু আবেগিক স্নায়ুগুলো কাঁপছে উত্তেজনায়।
দীর্ঘ সময়ের মধ্যে এই প্রথম মিউল অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। চ্যানিশ জানে এই মুহূর্তে নিজেকে রক্ষা করতে পারলেও বেশিক্ষণ পারবে না।
এ ধরনের চিন্তাও মৃত্যুর সামিল। কোনো ধরনের আবেগিক দুর্বলতার প্রকাশ মানেই মিউলের হাতে একটা অস্ত্র তুলে দেওয়া। মিউল এরই মধ্যে কোনো পরিকল্পনা করে ফেলেছে।
সময় পেতে হবে–
এখনও আসছে না কেন? সেটাই কী মিউলের আত্মবিশ্বাসের কারণ? তার প্রতিপক্ষ এমন কী জানে যা সে জানে না? তার মাইণ্ড কিছুই বলছে না, যদি সে আইডিয়াগুলো বুঝতে পারত। এবং এখনও–
‘যেহেতু আপনার ধারণা আমি দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনার,’ চ্যানিশ বলল, এবং আমিও অস্বীকার করিনি, তাহলে বলুন কেন আমি জেনডায় এসেছি?
‘ওহ না,’ মিউল আত্মবিশ্বাসের সাথে হাসল, ‘আমি প্রিচার নই। তোমার কাছে আমার কোনো কিছু ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন নেই। তুমি যে যুক্তিই দেখাও, তোমার আচরণেই আমি নিঃসন্দেহ হয়েছি।’
‘তারপরও আপনার গল্পের কোথাও ফাঁক থাকতে পারে। জেনডাই কী আপনি যা খুঁজছেন সেই দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন? প্রিচার প্রায়ই আপনার আরেকটি প্রচেষ্টার কথা বলত এবং আপনার সাইকোলজিস্ট এবলিং মিস-এর কথা। আমার স্বল্প উৎসাহে সে অনেক কিছুই বলত। এবলিং মিস এর কথা চিন্তা করুন, ফার্স্ট সিটিজেন।’
‘কেন করব?’ আত্মবিশ্বাসের সাথে বলল মিউল।
চ্যানিশ বুঝতে পারছে মিউল ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠছে, যেন সময়ের সাথে সাথে তার সমস্ত উদ্বেগ কেটে যাচ্ছে।
নিজের মরিয়া ভাব দৃঢ়ভাবে প্রতিহত করল চ্যানিশ। আপনার কৌতূহল কম তাহলে। প্রিচার বলেছিল মিস কিছু একটার প্রতি প্রবলভাবে বিস্মিত হয়েছিল। সে বারবার দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনকে সতর্ক করে দেওয়ার কথা বলছিল। কেন? এবলিং মিস মারা গেল। দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন কেন সতর্ক হয়নি। এবং তারা টিকে আছে।
নিষ্ঠুর তৃপ্তির সাথে হাসল মিউল, অবশই তারা সতর্ক হয়েছিল। তা নইলে কেন আমার লোকদের সামলানোর জন্য বেইল চ্যানিশ নামের একজন কালগানে উপস্থিত হল এবং সম্ভবত আমাকে উৎখাতের উদ্দেশ্যও তার ছিল। একটু দেরি করে এসেছিল এই যা।‘
‘তাহলে,’ চ্যানিশ কিচ্ছু করুণা বোধ করুল তার প্রতি, ‘আপনি জানেনই না দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন কী, অথবা যা সব ঘটছে তার মূল অর্থ কী?’
মিউল অন্যজনের করুণা বুঝতে পেরে বিরূপ হয়ে উঠল। তার সেই পরিচিত ভঙ্গিতে নাক ঘষল চার আঙুল দিয়ে। ‘বল তাহলে দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের ব্যাপারটা কী?’
চ্যানিশ মরিয়াভাবে বলা শুরু করল, আবেগিক প্রতীকের বদলে এখন সে শব্দ ব্যবহার করছে। ‘আমি যতুটুকু জানি দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনকে ঘিরে থাকা রহস্যই মিসকে বেশি বিভ্রান্ত করে তু্লেছিল। হ্যারি সেলডন তার দুটো ইউনিট অত্যন্ত ভিন্নভাবে স্থাপন করেছিলেন। প্রথম ফাউণ্ডেশন ছিল প্রকাশ্য। কিন্তু দ্বিতীয়টি অন্ধকারে থাকা রহস্যময় কালো গহ্বর।
‘কেন এরকম করেছিলেন, সেটা বুঝতে হলে আবার আপনাকে ধ্বংসোন্মুগ এম্পায়ারের তৎকালীন পরিবেশ অনুধাবন করতে হবে। সেটা ছিল এক চরম সময়, চুড়ান্ত উৎকর্ষতার পর সমস্ত অগ্রগতি থেমে গিয়েছিল। এক মুমূর্ষ সভ্যতার নিদর্শন। যেখানে নতুন ধ্যান-ধারণার বিরুদ্ধে বাধা তৈরি করা হয়েছিল। সেলঙ্গন এই বাধের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন যা তাকে বিখ্যাত করে তোলে। এটাই ছিল তার সর্বশেষ তারুণ্যদীপ্ত সৃষ্টি যা এম্পায়ারের অস্তমিত সূর্যকে উজ্জ্বল করে তোলে এবং দ্বিতীয় এম্পায়ারের সূর্যোদয়ের পথ তৈরি করে।”
‘বেশ নটিকীয় তো?’
তাই তিনি সাইকোহিস্টোরির নীতি অনুসরণ করে দুটো ফাউণ্ডেশন তৈরি করেন। কিন্তু তার চেয়ে আর কে ভালোভাবে জানে যে এই নীতিগুলো সব আপেক্ষিক। তিনি কোনো ফিনিশ প্রোডাক্ট তৈরি করেননি। ফিনিশ প্রোডাক্ট ক্ষয়িষ্ণু মনের জন্য। কিন্তু তার একটা গতিশীল মেকানিজম ছিল এবং দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন হচ্ছে সেই গতিশীলতার মূল হাতিয়ার। আমরা, ক্ষণস্থায়ী ইউনিয়ন অব ওয়ার্ল্ডের ফার্স্ট সিটিজেন, আমরাই হচ্ছি সেলডনস প্ল্যানের আসল অভিভাবক, রক্ষক, শুধু আমরা।’
‘তুমি কী নিজেকে সাহস যোগাচ্ছ,’ মিউল অবজ্ঞার সাথে বলল, ‘অথবা আমাকে প্রভাবিত করতে চাও? দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন, সেলডনস প্ল্যান, দ্বিতীয় এম্পায়ার আমাকে একেবারেই প্রভাবিত করতে পারেনি। আবেগিক যে উপাদানগুলো তুমি আমার ভেতর ঢুকানোর চেষ্টা করছ, তাতেও লাভ হয়নি। তাছাড়া বোকা, দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন এখন অতীত। কারণ তারা ধ্বংস হয়ে গেছে।‘
মিউল চেয়ার ছেড়ে সামনে এগুলো। চ্যানিশ তার মাইণ্ডে ইমোশনাল পটেনশিয়ালিটি চেপে বসছে বুঝতে পারছে। সে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করল প্রাণপণে। কিন্তু একটা বিরুদ্ধ শক্তি তার ভেতরে নির্মমভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, আঘাত করছে, তার মাইণ্ড দুমড়ে-মুচড়ে দিয়েছে।