‘না, স্যার।‘
‘আমি বুঝিয়ে বলছি। শুধুমাত্র এক ধরনের লোকেরাই দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের অস্তিত্ব জানে এবং আমাকে বাধা দিতে পারে। চ্যানিশ, আমি নিশ্চিত তুমি একজন দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনার।‘
হাঁটুর উপর কনুই-এর ভর দিয়ে সামনে ঝুঁকে এল চ্যানিশ। রাগের সাথে বলল ‘কোনো সরাসরি প্রমাণ আছে। এই অভিযোগ আজকে দিনে দুইবার ভিত্তিহীন বলে প্রমাণিত হয়েছে।‘
‘সরাসরি প্রমাণও রয়েছে, চ্যানিশ। আমি তোমাকে বলেছি আমার লোকদের টেম্পার করা হচ্ছে, যে করছে সে অবশ্যই আনকনভার্টেড এবং সব বিষয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। খুব সহজ ব্যাপার। তুমি অত্যন্ত সফল চ্যানিশ। মানুষ তোমাকে পছন্দ করে। সবকিছুই ভালোমতো চলছিল।
‘তারপর আমি তোমাকে এই অভিযানের দায়িত্ব নিতে বললাম তুমিও পিছপা হলে না। তোমার ইমোশন পরীক্ষা করে বুঝলাম তোমার কোনো দুশ্চিন্তা নেই। যে কোনো সাধারণ লোক এই অভিযানে যেতে সামান্য হলেও অনিশ্চয়তায় পড়ে যেত। কিন্তু তোমার কোনো অনিশ্চয়তা ছিল না। হয় তুমি প্রচণ্ড বোকা অথবা কন্ট্রোলড।
‘তাই তোমাকে আরেকভাবে পরীক্ষা করলাম। এক মুহূর্তের জন্য আমি তোমার মাই পূর্ণ করে দিলাম প্রচণ্ড কষ্টে এবং পরমুহূর্তেই সরিয়ে নিলাম। তুমি রেগে উঠলে, আমার কাছে স্বাভাবিক আচরণ বলে মনে হয়েছে। কিন্তু তার আগে, মাত্র এক পলকের জন্য, খুব সামান্য এক পলকের জন্য নিজেকে সামলে নেওয়ার আগে তোমার মাইও রেজিস্ট করল। এটাই জানার প্রয়োজন ছিল আমার।’
‘আমার মতো ক্ষমতা ছাড়া কেউ আমাকে বাধা দিতে পারবে না, এমনকি কয়েক পলকের জন্যও না।‘
চ্যানিশের কণ্ঠস্বর নিচু এবং তিক্ত, ‘তো এখন কী ঘটবে?’
‘এখন তুমি মারা যাবে–একজন দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনার হিসাবে। নিশ্চয়ই বুঝতে পারছো তোমাকে মেরে ফেলা দরকার।’
আরেকবার ব্লাস্টার এর মাজল-এর মুখোমুখি হল চ্যানিশ। এইবার মাজল এর পিছনে যে রয়েছে সে প্রিচারের মতো দুর্বল কেউ নয়, বরং তার নিজের মতোই পরিণত এবং শক্তিশালী।
আর তার হাতে সময়ও খুব কম।
.
পরবর্তী পরিস্থিতি ইমোশনাল কন্ট্রোলে অক্ষম সাধারণ কারো পক্ষে বর্ণনা করা কঠিন।
বস্তুত ব্লাস্টারের ট্রিগারে মিউল বুড়ো আঙুল দিয়ে চাপ দিতে শুরু করার পর অতি স্বল্প সময়ে ব্যাপারটা বুঝতে পারল চ্যানিশ।
মিউলের এই মুহূর্তের ইমোশনাল মেকআপ দৃঢ় ও আত্মপ্রত্যয়ী। কোনো দ্বিধাগ্রস্ততা নেই। পরে চ্যানিশের যদি কৌতূহল জাগে সে হিসাব করে দেখতে পাবে যে তার মৃত্যু ছিল আর মাত্র এক সেকেণ্ডের পাঁচ ভাগের এক ভাগ দূরত্বে।
সেই একই সময়ের ভেতর মিউল যা বুঝতে পারল তা হচ্ছে, চ্যানিশের মস্তিষ্কের ইমোশনাল পটেনশিয়াল তার কোনো প্রভাব ছাড়াই হঠাৎ উদ্দীপ্ত হয়ে উঠল, একই সাথে অপ্রত্যাশিত দিক হতে সীমাহীন ভয়ঙ্কর ঘৃনার এক প্রবাহ আছড়ে পড়ছে তার উপর।
নতুন এই ইমোশনাল এলিম্যান্ট ঝাঁকি দিয়ে ট্রিগার থেকে মিউলের আঙুল সরিয়ে দিল। আর কিছু করার ছিল না, পরিস্থিতির পরিবর্তন সে পুরোপুরি বুঝে ফেলেছে।
তিনজন ব্যাক্তি এমন অবস্থানে আছে যে কতগুলো রেখা দিয়ে তাদের সংযুক্ত করলে একটা ত্রিভুজ তৈরি হবে।
দাঁড়িয়ে আছে মিউল, হাতে ব্লাস্টার, গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে চ্যানিশের দিকে। চ্যানিশ নিঃশ্বাস নিতে ভয় পাচ্ছে। আর প্রিচার, তাকে দেখে মনে হয় যেন কেউ তাকে চেয়ারের সাথে ঠেসে ধরে রেখেছে। তার শরীর কাঁপছে প্রচণ্ড বেগে, মাংশপেশীগুলো এতো বেশি শক্ত হয়ে আছে, যে-কোনো মুহূর্তে ফেটে রক্ত বেরিয়ে আসতে পারে। পলকহীন চোখে তাকিয়ে আছে মিউলের দিকে, দৃষ্টিতে সুতীব্র এবং ভয়ঙ্কর ঘৃণা।
চ্যানিশ এবং মিউলের মধ্যে একটা বা দুটো শব্দ বলা হয়েছে। একটা বা দুটো শব্দই ইমোশনাল কনশাসনেস-এর প্রবাহকে চালু করে দেয়, যে প্রবাহ শুধু তাদের মতো দুজনই বুঝতে পারবে। আমাদের নিজেদের সুবিধার জন্য তাদের অনুভূতিকে শব্দে অনুবাদ করাই ভালো।
চ্যানিশ চাপা গলায় বলল, ‘আপনি দুটো আগুনের মাঝখানে রয়েছেন, ফার্স্ট সিটিজেন। একই সাথে আপনি দুটো মাইণ্ড কন্ট্রোল করতে পারবেন না, যেখানে একটি হচ্ছে আমার। প্রিচার এই মুহূর্তে আপনার কনভার্সন থেকে মুক্ত। আমি তার বাধাগুলো সরিয়ে দিয়েছি। ও হচ্ছে সেই আগের প্রিচার যে এক সময় আপনাকে হত্যা করতে চেয়েছিল, সে আপনাকে সমস্ত মুক্ত ও পবিত্র জিনিসের শত্রু বলে মনে করে এবং এও জানে যে আপনি তাকে পাঁচবছর ধরে নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন। তার ইচ্ছাশক্তি দমিয়ে আমি তাকে সামলে রাখছি কিন্তু যদি আপনি আমাকে হত্যা করেন, সে মুক্ত হয়ে যাবে এবং আমার দিক থেকে ব্লাস্টার বা আপনার ইচ্ছা শক্তি সরিয়ে নেওয়ার আগেই সে আপনাকে খুন করবে।‘
বুঝতে পারল মিউল। একটুও নড়ল না।
চ্যানিশ বলে যেতে লাগল, ‘যদি আপনি তাকে কন্ট্রোল বা হত্যা বা অন্য কিছু করার জন্য মাইণ্ড ঘুরিয়ে নেন, আমাকে থামানোর জন্য আবার আপনি আমার দিকে এত দ্রুত ঘুরতে পারবেন না।‘
মিউল এবারও স্থির। শুধু হালকা সম্মতির চিহ্ন রয়েছে।
‘তাই,’ চ্যানিশ বলল, ‘ব্লাস্টার নিচে ফেলে দিন এবং আগের আলোচনায় ফিরে যাই।‘
‘আমি একটা ভুল করেছি’ অবশেষে বলল মিউল, যখন তোমাকে জেরা করছিলাম তখন এখানে তৃতীয় কারো উপস্থিত থাকাটা বোকামি হয়েছে। এখন ভুলের খেসারত দিতেই হবে।