.
মিউল কখনো বিভ্রান্ত হয় না এবং তার অভিধানে অপ্রত্যাশিত বলে কোনো ঘটনা নেই। সবকিছুই তার প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়।
শারীরিকভাবে মিউল কোনো পরিস্থিতি প্রভাবিত করতে পারে না, এখনও করছে না।
পোশাকের কারণে তার স্বাভাবিক অবয়ব ফুটে উঠেনি। মুখ ঢাকা। আলখাল্লার হুড মাথার উপর টেনে দেওয়ায় তাকে আরও রহস্যময় মনে হচ্ছে। তার উপস্থিতিতে প্রিচারের মানসিক যন্ত্রণা পুরোপুরি না হলেও কিছুটা কমল। অন্যভাবে বলা যায় পরিস্থিতিতে কিছুটা ভারসাম্য তৈরি হল।
‘ব্লাস্টার তোমার কাছেই থাক, প্রিচার।‘ মিউল বলল, তারপর চ্যানিশের দিকে ঘুরল। চ্যানিশ কাধ ঝাঁকিয়ে বসে পড়েছে। ‘আমি ছাড়া অন্য কারো অনুসরণ করার ব্যাপারটা কী?’
প্রিচার বাধা দিল, ‘আপনার আদেশে আমাদের যানে হাইপারট্রেসার বসানো হয়েছিল, স্যার?’
মিউল ঠাণ্ডা চোখে তার দিকে তাকাল, অবশ্যই। ইউনিয়ন অব ওয়ার্ল্ডস ছাড়া গ্যালাক্সির অন্য কোনো পক্ষ কী সেখানে ঢুকতে পারত? যাই হোক, তুমি কিছু বলছিলে চ্যানিশ?
‘হ্যাঁ। কিন্তু আমার ভুল হয়েছিল, স্যার। আমার ধারণা ছিল দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের কেউ ট্রেসার বসিয়েছে এবং তাদের কোনো স্বার্থসিদ্ধির জন্য আমাদের এখানে পথ দেখিয়ে আনা হয়েছে। আমি সেটা প্রতিরোধ করার জন্য তৈরি হচ্ছিলাম। এ ছাড়াও আমার ধারণা ছিল জেনারেল বোধহয় তাদের হাতে চলে গেছেন।
‘এখন আর তোমার সেরকম মনে হচ্ছে না।’
‘এখন আর মনে হচ্ছে না।‘
‘ঠিক আছে, এই বিষয়টা বাদ দাও।’ মিউল প্যাড লাগানো এবং ইলেকট্রিক্যালি উত্তপ্ত পোশাকের উপরের স্তর খুলে ফেলল। আমি বসতে পারি? এখন–এখানে আমরা নিরাপদ এবং অনাহুত প্রবেশের বিপদমুক্ত। এই বরফের ডিপোর স্থানীয় লোকদের এখানে প্রবেশের কোনো আগ্রহ নেই। নিশ্চিন্ত থাকতে পার। নিজের ক্ষমতার উপর পরিপূর্ণ আত্মবিশ্বাস ফুঠে উঠল।
চ্যানিশ তার বিরূপভাব গোপন করল না। গোপনীয়তার প্রয়োজন কেন? কেউ কি পানীয় সার্ভ করবে আর নর্তকীরা নাচ দেখাবে?
‘হতে পারে, তোমার থিওরি কী বলে? কোনো দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনার তোমাকে এমন একটি ডিভাইস দিয়ে অনুসরণ করেছে যা আমি ছাড়া আর কারো কাছে নেই এবং এই জায়গা তুমি কীভাবে খুঁজে পেলে?’
‘জানা সমস্ত ঘটনা বিশ্লেষণ করে আমি নিশ্চিত হয়েছি যে নির্দিষ্ট ধারণা আমার মাথায় প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল–’
‘সেই একই দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনার দ্বারা?’
‘আমার তাই ধারণা।‘
‘তা হলে তোমার কী একবারও মনে হয়নি যে যদি একজন দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনার নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনে যেতে তোমাকে বাধ্য বা প্ররোচিত করতে পারে–এবং তুমি জান যে সে আমার মতো একই পদ্ধতিতে কাজ করে। যদিও খেয়াল করো, আমি শুধু ইমোশন প্রতিস্থাপন করতে পারি, আইডিয়া না–তোমার কী মনে হয় না, সে যখন এভাবেই কাজ সারতে পারছে, তখন হাইপারট্রেসার বসানোর কোনো প্রয়োজনই ছিল না।’
হঠাৎ কেঁপে উঠল চ্যানিশ। তীব্র চোখে মিউলের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। স্বস্তি তে প্রিচারের কাধ ঝুঁকে গেল।
না,’ বলল চ্যানিশ, আমার সেরকম মনে হয়নি।‘
‘অথবা তারা যদি তোমাকে অনুসরণ করতে বাধ্য হয়, তা হলে তোমাকে কীভাবে পথনির্দেশনা দেবে। আর পথনির্দেশ না পেলে এই জায়গা তুমি খুঁজে পেতে না। বিষয়টা ভেবেছিলে?
‘সেটাও আমি চিন্তা করিনি।’
‘কেন করনি? তোমার বুদ্ধিমত্তা কী সাধারণ মাত্রার চেয়েও নিচু স্তরের?’
‘এর উত্তরে আমি শুধু একটা প্রশ্ন করব স্যার। আপনিও কী জেনারেলের সাথে মিলে আমাকে বিশ্বাসঘাতক হিসাবে অভিযুক্ত করছেন?’
‘যদি করেই থাকি তবে অভিযোগ খণ্ডন করার জন্য তুমি কী বলবে?’
‘জেনারেলকে যা বলেছি তাই বলব। যদি আমি বিশ্বাসঘাতক হই এবং দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের অবস্থান আমার জানা থাকে, তাহলে আমাকে কনভার্ট করে সহজেই তথ্যগুলো জেনে নিতে পারতেন। যদি আমাকে অনুসরণ করার প্রয়োজন হয়ে থাকে তবে বুঝতে হবে আমি আগে থেকে কোনো তথ্য জানি না এবং বিশ্বাসঘাতক নই। অর্থাৎ আপনার ধাঁধার উত্তরে আমি আরেকটি ধাঁধা তৈরি করলাম।’
‘তো, শেষপর্যন্ত উপসংহার কী হলো?’
‘আমি বিশ্বাসঘাতক নই।‘
‘আমাকে বিশ্বাস করতেই হচ্ছে, যেহেতু যুক্তি আছে তোমার কথায়।‘
‘তা হলে আপনি আমাদের গোপনে অনুসরণ করে এসেছেন কেন?’
‘কারণ পুরো ঘটনার একটা আলাদা ব্যাখ্যা আছে। তুমি এবং প্রিচার নিজেদের মতো করে কিছু ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়েছো, সবগুলোর দিতে পারোনি। আমি–যদি তোমরা আমাকে সময় দাও–অল্প সময়ে পুরো ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করতে পারি। প্রিচার, তোমার ব্লাস্টার আমার হাতে দাও। আমাদের উপর আঘাত আসার কোনো ভয় নেই। ভিতর থেকে না, বাইরে থেকেও না, এমনকি দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন থেকেও কোনো ভয় নেই।‘
রোসেমিয়ান পদ্ধতিতে বৈদ্যুতিক তার দ্বারা কামরাটি গরম রাখা হয়েছে। হালকা হলুদ আলো দিচ্ছে সিলিং থেকে ঝুলন্ত একটা বাল্ব, বড় হয়ে তিনজনের ছায়া পড়েছে দেওয়ালে।
মিউল বলল, ‘চ্যানিশকে যেহেতু আমি অনুসরণ করে এসেছি বুঝতে হবে যে আমি কিছু একটা পেতে চেয়েছিলাম। তারপর সে যেরকম দ্রুত ও সরাসরি দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনে চলে গেল, আমরা ধরে নিতে পারি যে এরকম একটা কিছুই আমি চেয়েছিলাম। কোনো একটা বাধার কারণে আমি চ্যানিশের কাছ থেকে সরাসরি তথ্য সংগ্রহ করতে পারিনি। এই হচ্ছে ঘটনা। চ্যানিশের কাছে সমস্ত জবাব রয়েছে। আমি জানি। প্রিচার, তুমি বুঝতে পেরেছ?’