‘আমরা কালগানে ফিরে যাচ্ছি?’
‘আমরা এখানেই থাকছি। কমবেশি পনের মিনিটের ভেতর মিউল আমাদের সাথে যোগ দেবেন। তোমার কী ধারণা আমি তার অনুগত বলে সে আমাদের অনুসরণ করে আসেনি? তুমি তোমার খেলা ঠিক মতোই খেলেছ। হয়তো তুমি শিকারকে আমাদের কাছে নিয়ে যাওনি, কিন্তু আমাদের তুমি শিকারের কাছে নিয়ে এসেছ।‘
‘আমি বসতে পারি’, চ্যানিশ বলল, এবং কিছু বিষয় তোমার কাছে ছবির মতো পরিষ্কার করে ব্যাখ্যা করতে পারি?’
‘তুমি দাঁড়িয়েই থাকবে।‘
‘ঠিক আছে, দাঁড়িয়েও বলতে পারব। কী মনে হয় তোমার, কমিউনিকেশন সার্কিটে বসানো হাইপারট্রেসারের মাধ্যমে মিউল আমাদের অনুসরণ করে আসছে?’
.
হাতে ধরা ব্লাষ্টার একটু কেঁপে গেল হয়তো। চ্যানিশ ঠিক নিশ্চিত নয়।
‘তোমাকে অবাক দেখাচ্ছে না।’ চ্যানিশ বলল, তবে আমি বাজি ধরে বলতে পারি তুমি প্রচণ্ড একটা ধাক্কা খেয়েছ। হাইপারট্রেসারের কথা আমি প্রথম থেকেই জানি। এখন আমি তোমাকে এমন কিছু বলব যা আমি জানি যে তুমি জান না।’
৫০ # সেকেণ্ড ফাউণ্ডেশন
‘বিশ্বাসঘাতক বা শত্রু এজেন্ট, যদি এই শব্দটাই তোমার পছন্দ হয়, কিন্তু মিউল সেটা জেনেছে একটু অদ্ভুতভাবে। তার কনভার্টেড লোকদের কয়েকজনের মাইও টেম্পার করা হয়েছে।’
‘হাতের ব্লাস্টার এবার নিশ্চিতভাবেই কেঁপে গেল।’
‘সেজন্যই আমাকে তার প্রয়োজন হয়। আমাকে কনভার্ট করা হয়নি। সে তোমাকে বলেনি যে তার একজন আনকনভার্টেড লোকের প্রয়োজন। তোমাকে কী সে আসল কারণ বলেছি?’
‘অন্যভাবে চেষ্টা কর চ্যানিশ। যদি আমি মিউলের বিরুদ্ধে চলে যেতাম, আমি সেটা বুঝতে পারতাম।‘ প্রিচার দ্রুত ও নিঃশব্দে নিজের মাইণ্ড অনুভব করল। আগের মতোই আছে। চ্যানিশ অবশ্যই মিথ্যা কথা বলছে।
‘অর্থাৎ তুমি এখনও মিউলের প্রতি আনুগত্য বোধ করছ। সম্ভবত আনুগত্যের কোনো পরিবর্তন করা হয় না। মিউল বলেছিল খুব সহজেই এই পরিবর্তন ডিটেক্ট করা যায়। কিন্তু মানসিকভাবে তুমি কেমন বোধ করছ? নিষ্ক্রিয়। যাত্রা শুরু করার পর থেকে কী সবসময় নিজেকে স্বাভাবিক মনে হয়েছে? অথবা অদ্ভুত কোনো অনুভূতি যেন তুমি অনেকটা নিজের ভেতরে নেই। কী চাও তুমি, ট্রিগার না টিপেই আমার শরীরে গর্ত করে ফেলবে?’
প্রিচার তার ব্লাস্টার আধা ইঞ্চি সরিয়ে আনল। ‘কী বলতে চাও?’
‘বলতে চাই তোমার মাইণ্ড টেম্পার করা হয়েছে। তুমি মিউল বা অন্য কাউকে হাইপারট্রেসার বসাতে দেখনি। তুমি শুধু জিনিসটা সেখানে পেয়েছ এবং ধরে নিয়েছ কাজটা মিউলের। তারপর থেকেই তোমার ধারণা হয়েছে মিউল আমাদের অনুসরণ করে আসছে। অবশ্য তোমার রিসিভার যে ওয়েভলেংথে মূল যানের সাথে যোগাযোগ করে আমার রিসিভার তত ভালোভাবে পারে না। তুমি ভেবেছিলে আমি কিছুই জানি না! এখন সে দ্রুত এবং রাগের সাথে কথা বলছে। তার নিঃস্পৃহ ভাব চলে গিয়ে হিংস্র আচরণ ফুটে উঠেছে, কিন্তু অনুসরণ করে মিউল আমাদের কাছে আসছে না।’
‘সে যদি না হয় তা হলে কে?’
‘তুমি কাদের আশা কর। যেদিন আমরা যাত্রা করি সেদিনই আমি হাইপারট্রেসার খুঁজে পাই। কিন্তু একবারের জন্যও চিন্তা করিনি কাজটা মিউলের। তা ছাড়া যদি আমি বিশ্বাসঘাতক হতাম তা হলে অর্ধেক গ্যালাক্সি পাড়ি দিয়ে এখানে আসার প্রয়োজন ছিল না। খুব সহজেই কনভার্ট করে মিউল আমার কাছ থেকে দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের অবস্থান জেনে নিতে পারত। মিউলের কাছে তুমি কিছু গোপন রাখতে পারবে? আর যদি আমি নাই জানি, তা হলে কীভারে তাকে পথ দেখাব? তবে কেন আমাকে পাঠানো হয়েছে?’
‘অবশ্যই হাইপারট্রেসার বসিয়েছে দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের কোনো এজেন্ট। তারাই এখন আমাদের কাছে আসছে। কী চায় তারা? মহাকাশযান? একটা যান দিয়ে তারা কী করবে। আসলে তারা চায় তোমাকে। প্রিচার। মিউলের পরে ইউনিয়ন সম্পর্কে তুমিই সবচেয়ে বেশি জান এবং তাদের কাছে মিউল যতটা বিপজ্জনক, তুমি ততটা নও। আর তাই কোন পথে অনুসন্ধান করতে হবে সেটা তারা আমার মাইণ্ডে স্থাপন করে দিয়েছিল। আমি জানতাম পিছনে দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন রয়েছে এবং তারাই পুরো ব্যাপার পরিচালনা করছে। আমি তাদের নিয়মেই খেলে গেছি। আমরা পরস্পরকে ধোকা দিয়েছি। তারা আমাদের চেয়েছিল, আমি তাদের অবস্থান জানতে চেয়েছিলাম। সে জানে আমরা কেউ কাউকে ধোকা দিতে পারিনি।‘
‘কিন্তু তুমি এভাবে অস্ত্র ধরে রাখলে আমরাই হেরে যাব। অবশ্যই এই পরিকল্পনা তোমার না, তাদের। ব্লাস্টার আমার হাতে দাও প্রিচার। জানি কাজটা তোমার কাছে ভুল মনে হচ্ছে, কিন্তু এই মুহূর্তে তোমার মাইও কাজ করছে না, তোমার ভিতরে থেকে দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন কাজ করছে। ব্লাস্টার দাও, প্রিচার এবং এখন থেকে যা ঘটবে আমরা একসাথে তার মোকাবেলা করব।’
প্রিচার এক ভীতিজনক দ্বন্দ্বের মুখোমুখি হল। অনিশ্চয়তা! তার সব ধারণাই কী ভুল? নিজের ভেতরে এত সন্দেহ কেন? সে নিশ্চিত হতে পারছে না কেন? চ্যানিশ কী করে এত নিশ্চিত হয়?
অনিশ্চয়তা!
তার কি দুটো সত্তা রয়েছে?
একটা বিভ্রমের মধ্যে সে চ্যানিশকে দেখল হাত বাড়িয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে–এবং হঠাৎ করেই প্রিচার বুঝতে পারল যে চ্যানিশের হাতে সে ব্লাস্টার দিয়ে দিতে যাচ্ছে।
এবং ব্লাস্টার চ্যানিশের হাতে দেওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে তার পিছনে দরজা খুলে গেল, প্রায় নিঃশব্দে–ঘুরে দাঁড়াল সে।