‘আমার মনে হয় না গভর্নর তাদের লোক। আমি নিশ্চিত নই। ধর তুমি একজন দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনার।‘ চ্যানিশ চিন্তিতভাবে বলল, ‘তুমি কী করবে? ধর আমরা এখানে কেন এসেছি সেটা তুমি জান। তুমি কীভাবে আমাদের সামলাবে?’
‘অবশ্যই, কনভার্ট করে।‘
‘মিউলের মতো?’ চ্যানিশ তীক্ষ্ণ চোখ তুলে চাইল। আমরা কী করে বুঝব তারা আমাদের কনভার্ট করেছে কীনা? আর তারা যদি অত্যন্ত চালাক সাইকোলজিস্ট হয়ে থাকে?
‘সে-ক্ষেত্রে আমি দ্রুত নিজেদের শেষ করে ফেলব।‘
‘আর আমাদের মহাকাশযান? না’, চ্যানিশ তর্জনী নাচাল। ‘আমরা সবাই ভান করছি, প্রিচার, ওল্ডম্যান। শুধুই ভান। আমরা–তুমি এবং আমি হচ্ছি ঢাল। তাদের আসল লড়াই মিউলের সাথে এবং তারা ঠিক আমাদের মতোই সতর্ক। আমার মনে হয় আমাদের পরিচয় তাদের কাছে গোপন নেই।’
শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল প্রিচার। ‘তুমি এখন কী করতে চাও?’
‘অপেক্ষা।‘ চ্যানিশ দ্রুত বলল, ‘তাদেরকে আমাদের কাছে আসতে দাও। তারা উদ্বিগ্ন হতে পারে মহাকাশযানের কারণে, তবে সম্ভবত মিউলের ব্যাপারেই বেশি উদ্বিগ্ন। গভর্নরকে পাঠিয়ে আমাদের ধোকা দিতে চেয়েছিল। কিন্তু কাজ হয়নি। এরপর যে আসবে সে দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনার হবে এবং সে আমাদের সাথে কোনো ধরনের সমঝোতায় আসতে চাইবে।‘
‘তখন?’
‘তখন আমরা সমঝোতা করব।’
‘আমি সেরকম মনে করি না।‘
‘কারণ তুমি মনে করছ এতে মিউলের প্রতি বেঈমানি করা হবে।‘
‘না, তুমি যদি ডাবল ক্রস করে থাক মিউল তা ঠেকাতে পারবে। তারপরেও আমি তোমার সাথে একমত নই।’
‘কারণ তোমার ধারণা দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনারদের আমরা ফাঁকি দিতে পারব না?’
‘হয়তো না। কিন্তু মূল কারণ সেটা না।’
চ্যানিশের দৃষ্টি প্রিচারের হাতের উপর স্থির হয়ে থাকল। হাসিমুখে বলল, ‘তুমি বলতে চাচ্ছ তোমার হাতের বস্তুটাই মূল কারণ।‘
প্রিচারের হাতে তার ব্লাস্টার বেরিয়ে এসেছে। ‘ঠিক, তোমাকে গ্রেপ্তার করা হল।‘
‘কেন?’
‘ফার্স্ট সিটিজেন অব দ্য ইউনিয়নের সাথে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগে।’
চ্যানিশের ঠোঁট পরস্পরের সাথে চেপে বসল। ‘কী ঘটছে এসব?’
‘বিশ্বাসঘাতকতা এবং তা সংশোধনের চেষ্টা।‘
‘কী প্রমাণ আছে? অথবা কোনো এভিডেন্স, ধারণা? পাগল হয়ে গেলে নাকি?’
‘না, পাগল হইনি। তুমি কী মনে কর তোমার মতো আনাড়িকে মিউল এমন একটা জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ মিশনে কোনো উদ্দেশ্য ছাড়াই পাঠিয়েছে? আমার কাছেও ব্যাপারটা প্রথমে অস্বাভাবিক মনে হয়েছে। আর আমি নিজেকে সন্দেহ করে সময় নষ্ট করেছি। কেন তোমাকে পাঠানো হয়েছে? কারণ তোমার হাসি সুন্দর, পোশাক সুন্দর? নাকি তোমার বয়স আঠাশ বছর বলে?’
‘সম্ভবত কারণ আমাকে বিশ্বাস করা যায়। অথবা তোমার যুক্তিবুদ্ধি নষ্ট হয়ে গেছে।‘
‘অথবা তোমাকে বিশ্বাস করা যায় না। যা অনেক বেশি যুক্তিযুক্ত।‘
‘আমরা কী ধাঁধা তৈরি করছি না শব্দের খেলা খেলছি?’
প্রিচার ব্লাস্টার তাক করে রেখে সামনে বাড়ল। চ্যানিশের সামনে দাঁড়িয়ে বলল, ‘উঠে দাঁড়াও।’
.
আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়াল চ্যানিশ। ব্লাস্টারের মাজল তার বেল্টের উপর ঠেকে রয়েছে।
‘মিউল দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়েছে। আমিও হয়েছি। তার কারণ নিজেদের তারা খুব ভালোভাবে গোপন রেখেছে। তাই একটা পথই খোলা ছিল–এমন কাউকে খুঁজে বের করতে হবে যে আগে থেকেই গোপন তথ্যটা জানে।‘
‘সেই একজন হচ্ছি আমি?’
‘অবশ্যই। আমি আগে বুঝতে পারিনি। যদিও আমার চিন্তাভাবনা খুব ধীর, তবু ঠিকভাবে কাজ করতে পারছে। কত সহজে আমরা স্টারস এণ্ড খুঁজে পেলাম! কী সুন্দরভাবে তুমি সঠিক ফিল্ড রিজিওন বের করে ফেললে! সেখান থেকে সঠিক স্থানও নির্বাচন করলে! বোকা! তুমি কী ভেবেছিলে এতগুলো অসম্ভব ঘটনা আমি একেবারে হজম করে ফেলব?’
‘তোমার মতে আমি সফল?’
‘যে কোনো অনুগত লোকের চেয়ে অর্ধেক সফল।
‘কারণ তোমার বিচারে আমার সাফল্য অনেক নিচু মানের?’
‘ব্লাস্টার দিয়ে খোঁচা দিল প্রিচার। শুধু চোখ দেখে বোঝা গেল চ্যানিশ রেগে যাচ্ছে। কারণ তুমি দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের লোক।‘
‘আমি?’–অসহিষ্ণু গলা। ‘প্রমাণ কোথায়?’
‘অথবা তাদের দ্বারা মেন্টালি ইনফ্লুয়েন্সড্।‘
‘মিউলের অজান্তে? অসম্ভব।’
‘মিউলের জ্ঞাতসারেই। তুমি কী ভেবেছিলে তোমার খেলার জন্য তোমাকে মহাকাশযান দেওয়া হয়েছে? আসলে যা চেয়েছিলাম তুমি সেভাবেই আমাদের দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের কাছে পৌঁছে দিয়েছ।‘
‘আমি শুধু ভিতরের নির্যাসটুকু বের করে নিয়েছি অথবা বলা যায় কোনো বিশাল বস্তুর খোসা ছাড়িয়েছি মাত্র। জিজ্ঞেস করতে পারি কেন আমি এরকম করব? যদি আমি বিশ্বাসঘাতক হই, আমি তোমাদেরকে দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের কাছে নিয়ে আসব কেন? বরং গ্যালাক্সির এদিক সেদিক ঘুরে তোমাদের ভুল পথে নিয়ে যাওয়াটাই তো ছিল স্বাভাবিক?’
‘মহাকাশযানের কারণে। এবং কারণ আত্মরক্ষার জন্য দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের এটমিক ওয়রফেয়ারের প্রয়োজন।’
‘একটা মাত্র যান তাদের কাছে কোনো গুরুত্ব বহন করে না। যদি ভেবে থাক এই যান পরীক্ষা করে আগামী বছরই তারা এটমিক পাওয়ার প্ল্যান্ট তৈরি করবে তা হলে আমি বলব তারা ঠিক তোমার মতো অতি অতি সাধারণ দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনার।’
‘তুমি এগুলো মিউলের সামনে ব্যাখ্যা করার সুযোগ পাবে।‘