তারা মাথা ঝুঁকিয়ে বসল। গভর্নর ইউর বাকের বাইরের দিকে এবং দুইসারি এল্ডারস্ সহ তারা দুইজন ইউর ভিতরের দিকে বসেছে।
খেতে খেতে গভর্নর জেনডার খাবারের প্রশংসা করল, রোসেমের আবহাওয়ার সমালোচনা করতে লাগল, এমনকি একবার পেস ট্রাভেলের জটিলতা নিয়েও কথা বলার চেষ্টা করল।
চ্যানিশ দুএকটা কথা বলল। প্রিচার একেবারেই চুপ।
খাওয়া শেষ। গভর্নর চেয়ারে হেলান দিল। আমি তোমাদের মহাকাশযানের খোঁজ নিয়েছি। চেয়েছিলাম যানটা যেন সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। কিন্তু আমাকে বলা হয়েছে, তোমাদের যানের অবস্থান অজানা।
‘সত্যিই, চ্যানিশ হালকাঁচালে বলল। আমরা সেটা মহাকাশে রেখে এসেছি। অনেক বড় যান, দুর্গম অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদে ভ্রমণের উপযুক্ত নয় এবং এত বড় যান নিয়ে এখানে নামলে আমাদের শান্তিপূর্ণ মনোভাবের প্রতি সন্দেহ জাগতে পারে। তাই আমরা নিরস্ত্র অবস্থায় একা এসেছি।’
‘বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ, গভর্নর মন্তব্য করল। তুমি বলছ, অনেক বড় যান?’
‘কোনো যুদ্ধ জাহাজ নয়, এক্সিলেন্সি।‘
‘তোমরা কোত্থেকে এসেছ?’
‘সান্তানি সেক্টরের একটি ছোট পৃথিবী থেকে, ইওর এক্সেলেন্সি, গ্রহটা এতই ছোট এবং গুরুত্বহীন যে আপনি হয়ত এর অস্তিত্ব সম্পর্কে অবগত নন। আমরা বাণিজ্য করতে আগ্রহী।‘
‘বাণিজ্য? তোমাদের কাছে কী আছে?’
‘সকল ধরনের যন্ত্রপাতি, এক্সিলেন্সি, বিনিময়ে খাদ্য, কাঠ, খনিজ–’
‘হুম,’ গভর্নরকে দ্বিধাগ্রস্ত মনে হল। ‘এই বিষয়ে আমার ধারণা খুব কম। হয়ত পারস্পরিক চুক্তি করা সম্ভব। তবে আমার সরকারের প্রচুর তথ্যের প্রয়োজন হবে। তাই তোমাদের বিষয়ে বিস্তারিত জানার পর এবং তোমাদের মহাকাশযান আমাকে দেখানোর পর জেনডার দিকে যাত্রা করাই তোমাদের জন্য ভাল হবে।‘
কেউ কোনো উত্তর দিল না, গভর্নরের আচরণ পাল্টে গেল।
‘যাই হোক, তোমাদের মহাকাশযান দেখাটা প্রয়োজন।’
চ্যানিশ নিরাসক্ত গলায় বলল, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের যানের এই মুহূর্তে মেরামতের কাজ চলছে। ইওর এক্সিলেন্সি যদি মাত্র আটচল্লিশ ঘণ্টা সময় দেন তবে যানটিকে আমরা আপনার সেবায় হাজির করতে পারব।’
‘আমি অপেক্ষা করতে অভ্যস্ত নই।‘
প্রথমবারের মতো প্রিচার প্রতিপক্ষের তীব্র দৃষ্টির মুখোমুখি হল, চোখে চোখ, ভিতরে ভিতরে দম বন্ধ হয়ে গেল তার। এক মুহূর্তের জন্য ডুবে যাওয়ার মতো অনুভূতি হল। কিন্তু তারপরই চোখ সরিয়ে নিল সে।
চ্যানিশ এর মধ্যে কোনো ইতস্তত ভাব নেই। সে বলল, আটচল্লিশ ঘণ্টার আগে আমাদের যান এখানে নামতে পারবে না, ইওর এক্সিলেন্সি। আমরা এখানে সম্পূর্ণ নিরস্ত্র অবস্থায় এসেছি। তারপরও আমাদের সৎ উদ্দেশ্যের প্রতি আপনার সন্দেহ রয়েছে?
দীর্ঘ নীরবতা, তারপর গভর্নর কর্কশভাবে বলল, ‘তোমরা যে পৃথিবী থেকে এসেছ সেটা সম্পর্কে বল।’
এভাবেই শেষ হল। আর কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটল না। গভর্নর তার অফিসিয়াল দায়িত্ব পালন করে চলে গেলেন।
.
নিজেদের কক্ষে ফিরে এসে নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে নিল প্রিচার।
সতর্কতার সাথে–নিশ্বাস বন্ধ করে সে তার ইমোশন অনুভব করল। নিজের ভেতরে কোনো পরিবর্তন টের পেল না। পাওয়ার কথাও না। মিউল কনভার্ট করার পর সে কী কোনো পরিবর্তন টের পেয়েছিল? সব কিছুই কি আগের মতো ছিল না? যেন সবসময় এমনই হয়।
সে নিজেকে পরীক্ষা করল।
ঠাণ্ডা বিদ্বেষের সাথে, নিজের মনের গহীনে চিৎকার করে বলল, ‘দ্বিতীয় ফাউন্ডেশন অবশ্যই খুঁজে বের করতে হবে এবং ধ্বংস করতে হবে।’
এই বক্তব্যের সাথে তার ভিতরে যে ইমোশন তৈরি হল তা হচ্ছে পরিপূর্ণ ঘৃণা। কোনো দ্বিধা বা সন্দেহ নেই।
তারপর ‘দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন’ শব্দের পরিবর্তে ‘মিউল’ শব্দটি ব্যবহার করে আবারও একই কাজ করল। এই মুহূর্তে আবেগে তার দম বন্ধ হয়ে এল, কণ্ঠস্বর রুদ্ধ হয়ে গেল।
ভাল, যথেষ্ট ভাল।
কিন্তু আরও সূক্ষ্ম বা ছোট কোনো পরিবর্তন করা হয়েছে কী? যে ধরনের পরিবর্তন তার বিচারবুদ্ধিকে অবরুদ্ধ করে দেয়নি, ফলে ধরাও পড়বে না।
বলার কোনো উপায় নেই।
কিন্তু সে এখনও মিউলের প্রতি পুরোপুরি অনুগত বোধ করছে। যদি সেটার কোনো পরিবর্তন না হয়, অন্য কোনো কিছুকেই আর ভয় নেই।
আবার কাজের দিকে মনটাকে ফিরিয়ে আনল। কক্ষের নিজের অংশে চ্যানিশ তার নিজের কাজে ব্যস্ত। অলসভাবে কব্জির কমিউনিকেটরে বুড়ো আঙুলের নখ ছোঁয়ালো প্রিচার।
অপর প্রান্ত থেকে সারা পেতেই নিজেকে তার মনে হল ভারমুক্ত।
মুখ পুরোপুরি শান্ত, কিন্তু ভিতরে সে খুশিতে লাফাচ্ছে এবং চ্যানিশ তার মুখোমুখি হয়েই অনুভব করতে পারল যে নাটকের শেষ অঙ্কের অভিনয় শুরু হয়েছে।
.
চতুর্থ সম্মেলন
দুই স্পিকার রাস্তায় পরস্পরকে অতিক্রম করার সময় একজন আরেকজনকে থামিয়ে বলল, ‘ফার্স্ট স্পিকারের কাছ থেকে খবর পেয়েছি।’
অপরজনের চোখে শঙ্কা ফুটে উঠল। ‘ইন্টারসেকশন পয়েন্ট।‘
‘হ্যা! জানি না আগামী ভোর দেখতে পারব কিনা!’
.
১.৫ মিউল
প্রিচারের ভেতর বা তাদের দুজনের সম্পর্কের মধ্যে যে সূক্ষ্ম পরিবর্তন ঘটে গেছে সে বিষয়ে চ্যানিশকে সচেতন মনে হলো না। শক্ত কাঠের বেঞ্চে হেলান দিয়ে পা দুটো ছড়িয়ে বসল।
‘গভর্নরের ব্যাপারে তোমার মতামত কী?’
কাঁধ ঝাঁকাল প্রিচার, ‘কিছুই না। তাকে আমার মেন্টাল জিনিয়াস বলে মনে হয়নি। দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের খুব দুর্বল নিদর্শন, যদি সে তাদের লোক হয়ে থাকে।‘