‘সত্যি?’ শ্লেষের সুরে বলল প্রিচার, আর দয়ালু সাইকোলজিস্টদের দেওয়া শাস্তির কথা বলতে গিয়ে এল্ডারদের চোখেমুখে যে ভয় ফুটে উঠেছিল, তোমার থিওরিতে সেটা কীভাবে ফিট করবে।’
‘তারা নিজেরাই কী শাস্তির বিষয় ছিল? তারা শুধু অন্যদের শাস্তির কথা বলেছে। আসলে শাস্তির ব্যাপারটা এমনভাবে তাদের মধ্যে গেঁথে দেওয়া হয়েছে, যে সত্যিকার শাস্তি প্রদানের প্রয়োজন হয় না। পুরো বিষয়টি তাদের মনে এমনভাবে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে যে আমি নিশ্চিত এই গ্রহে কোনো জেনডিয়ান সৈনিক নেই। তুমি খেয়াল করোনি?’
‘খেয়াল করব,’ প্রিচার বলল, ঠাণ্ডা গলা, ‘যখন গভর্নরের সাথে দেখা হবে এবং কথার কথা, যদি আমাদের মেন্টালি কন্ট্রোল করা হয় তাহলে কী করবে।’
চ্যানিশ নিষ্ঠুর অবজ্ঞার সাথে বলল, ‘সেই ব্যাপারে তুমি অভ্যস্ত।‘
সাদা হয়ে গেল প্রিচারের মুখ। নিজেকে অনেক কষ্টে নিয়ন্ত্রণ করল সে। সেদিন তারা নিজেদের মধ্যে আর কোনো কথা বলল না।
.
নীরব শীতল রাত। প্রিচার ঘুমন্ত চ্যানিশের মৃদু শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ পাচ্ছে। ধীরে ও নিঃশব্দে কব্জিতে বাধা ট্রান্সমিটার আন্ট্রাওয়েভ রিজিওনে এডজাস্ট করল। নখ দিয়ে চাপ দিতেই মূল যানের সাথে যোগাযোগ তৈরি হল।
ছোট ছোট বিরতিতে নিঃশব্দ স্পন্দনের মাধ্যমে উত্তর পাওয়া গেল।
দ্বিতীয়বার জিজ্ঞেস করল প্রিচার, ‘যোগাযোগ হয়েছে?’
দ্বিতীয়বার উত্তর এল, ‘না, আমরা অপেক্ষা করছি।‘
বিছানা থেকে নামল সে। রুমের ভিতর ঠাণ্ডা। পশমের কম্বল গায়ে জড়িয়ে চেয়ারে বসে আকাশের তারার দিকে তাকিয়ে থাকল। তার নিজের পেরিফেরির রাতের আকাশের তুলনায় এখানকার নক্ষত্রগুলো অনেক বেশি উজ্জ্বল এবং গ্যালাক্সির স্বচ্ছতার মধ্যে এলোমেলোভাবে সাজানো।
নক্ষত্রগুলোর মাঝখানে কোথাও রয়েছে যে দুর্বোধ্য পরিস্থিতি তাকে বিধ্বস্ত করে দিচ্ছে তার সমাধান এবং সমাধান পাওয়ার জন্য সে ব্যাকুল হয়ে পড়ল।
কয়েক মুহূর্তের জন্য সে আবারও অবাক হল, যদি মিউলের কথাই সত্যি হয়। আসলেই কি কনভার্সন তাকে তার আত্মবিশ্বাসের শেষপর্যায়ে এনে দাঁড় করিয়েছে। নাকি এটা শুধু বয়স এবং গত কয়েক বছরের উত্থান পতন?
সে আর কেয়ার করে না।
সে ক্লান্ত।
.
রোসেমের গভর্নর এলেন অতি সাধারণভাবে। তার একমাত্র সঙ্গী হল গ্রাউণ্ড কারের চালক।
গ্রাউণ্ড কারের গঠন বিশাল ও আরামদায়ক, কিন্তু প্রিচারের কাছে তেমন ভালো বলে মনে হল না, দেখেই বোঝা যাচ্ছে এটমিক ফুয়েলে নয় কেমিক্যালে চলে।
জেনডিয়ান গভর্নর হালকা পায়ে পাতলা বরফের উপর নামলেন এবং দুই সারি অনুগত এলডারসের মাঝখান দিয়ে হেঁটে এসে দ্রুত ঘরে ঢুকলেন। তিনি কারও দিকে তাকালেন না। তাকে অনুসরণ করল সবাই।
নিজেদের ঘর থেকে মিউল ইউনিয়নের দুই ব্যক্তি সব দেখেছে। তিনি অর্থাৎ গভর্নর হালকা পাতলা গড়নের, খাটো এবং অনাকর্ষক।
কিছুই প্রমাণ হয় না।
নার্ভাস হয়ে পড়ার জন্য প্রিচার নিজেকে অভিশাপ দিল। তার মুখ, সে নিশ্চিত একেবারে শান্ত। চ্যানিশের সামনে অপদস্থ হওয়ার ভয় নেই, কিন্তু তার রক্তের গতি দ্রুত হয়ে উঠেছে এবং গলা শুকিয়ে গেছে।
শারীরিক ভয় না। অন্য ধরনের ভয়।
চ্যানিশ অলসভাবে এক হাতের নখের দিকে তাকিয়ে নখ খুঁটছে।
বড় করে শ্বাস টানল প্রিচার। গভীরভাবে চিন্তা করার চেষ্টা করল মিউল তাকে কনভার্ট করার আগে কেমন ছিল সে। মনে করা কঠিন। মেন্টালি সে আগের অবস্থার সাথে নিজেকে তুলনা করতে পারল না। যে শক্ত বাধন তাকে ইমোশনালি মিউলের সাথে বেঁধে রেখেছে, সেই বাধন সে ছিঁড়তে পারল না। শুধু মনে করতে পারল যে সে একসময় মিউলকে হত্যা করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও সেই সময়ের প্রকৃত ইমোশন অনুভব করতে পারল না। তবে পুরোপুরি না পারলেও ঐ সময়ের ইমোশন যতটুকু সে চিন্তা করতে পারল তাতেই মোচড় দিয়ে উঠল পেটের ভেতর।
যদি গভর্নর বিশেষ মেন্টাল পাওয়ারের অধিকারী কোনো দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনার হয়?
যদি তারা প্রিচারের মানসিক গঠনের কোনো ফাটল দিয়ে ঢুকে তাকে ভেঙেচুরে নতুন করে তৈরি করে–
প্রথমে কিছুই বোঝা যাবে না। কোনো ব্যথা না, মানসিক অবসাদ না। শুধু নির্দিষ্ট একটা সময়ের পর তার মনে হবে সে কখনোই মিউলের অনুগত ছিল না, সে শুধু তাকে ঘৃণা করে। এই ভীতিকর কল্পনা প্রিচারকে বিব্রত করে তুলল। ভিতরের বমি বমি ভাবটাকে ঠেকাল অনেক কষ্টে।
চ্যানিশের গলার আওয়াজ পেয়ে ঘুরল সে। একজন এলডার দরজার চৌকাঠে গম্ভীরভাবে দাঁড়িয়ে আছে। তাদেরকে গভর্নরের কাছে নিয়ে যাবে। চ্যানিশ একটা ঝাঁকুনি দিয়ে বেল্ট ঠিক করে নিল। মাথায় একটা রোসেমিয়ান হুড প্রল।
প্রিচারের চোয়াল শক্ত। আসল জুয়াখেলা শুরু হচ্ছে।
রোসেমের গভর্নর একেবারেই বৈশিষ্ট্যহীন। একটা কারণ তার মাথায় কোনো আচ্ছাদন নেই, এবং পাতলা ধূসর চুল তার প্রকৃতিতে একটা নরম ভাব এনে দিয়েছে। চোখের চারপাশে অসংখ্য বলিরেখা। তার সদ্য কামানো থুতনি মোলায়েম ও ছোট যার কারণে তাকে দুর্বল প্রকৃতির লোক বলে মনে হয়।
প্রিচার চোখের দিকে না তাকিয়ে তার থুতনির দিকে তাকিয়ে রইল। অবশ্য বিপদের সময় এতে কোনো কাজ হবে কিনা সে জানে না।
গভর্নরের কণ্ঠস্বর ভরাট, একঘেয়ে, ‘জেনডায় স্বাগতম। খাবার খেয়েছেন?’ সে দরাজ ভাবে ইউ শেপ টেবিলের উপর হাত নেড়ে দেখাল।