চ্যানিশ নিচু একটানা সুরে কথা বলে গেল, ‘দৃষ্টি আকর্ষণ করার ঝুঁকি আমাদের নিতেই হবে। আমরা যাদের খুঁজছি, প্রিচার, তাদেরকে হাত বাড়ালেই খুঁজে পাব না। যারা মাইণ্ড ট্রিকসের দ্বারা শাসন করে তাদেরকে তথাকথিত ক্ষমতায় থাকার প্রয়োজন নেই। প্রথমত দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের সাইকোলজিস্টরা মোট জনসংখ্যার অত্যন্ত ক্ষুদ্র একটা অংশ। সাধারণ অধিবাসীরা বেশি মাত্রায় সাধারণ। সাইকোলজিস্টরা সম্ভবত নিজেদের খুব ভালোমতো লুকিয়ে রেখেছে এবং যারা শাসন করছে তারা হয়ত সত্যিই ধারণা করেছে যে তারাই সর্বময় কর্তা।‘
‘আমি সবটা বুঝতে পারিনি।’
‘কেন, দেখ এটাই স্বাভাবিক। জেনডায় শ শ মিলিয়ন মানুষ বাস করে। তাদের ভিতর থেকে আমরা কীভাবে সাইকোলজিস্টদের খুঁজে বের করব। কিন্তু এখানে, এই কৃষক পৃথিবীতে, সকল জেনডিয়ান শাসক, আমাদের হোস্টের মতে গ্রামে থাকে জেনট্রি। সেখানে মাত্র কয়েক শ জন রয়েছে এবং তাদের মধ্যে অবশ্যই একজন বা তারও বেশি দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের লোক রয়েছে। আমরা অবশ্যই সেখানে যাব, তবে প্রথমে এল্ডারদের সাথে দেখা করব–সেটাই ভালো হবে।’
তাদের হোস্ট আবার ঘরে প্রবেশ করল। ‘নোবল লর্ডস, এল্ডারগণ পৌঁছেছেন। আমি আরেকবার বিনীতভাবে বলছি, আমার কথা খেয়াল রাখবেন।’ অনুগ্রহ লাভের আশায় সে প্রবল বেগে কুর্নিশ করে ফেলল।
তারা ছিল তিনজন। কথা বলল একজন। মাথা ঝুঁকিয়ে গাম্ভীর্যপূর্ণ সম্মানের সাথে সে বলল, ‘আমরা সম্মানিত। বাহন তৈরি আছে। আশা করি মিটিং হল এ আমরা আপনাদের সঙ্গ পাব।’
.
তৃতীয় সম্মেলন
ফার্স্ট স্পিকার বিষণ্ণভাবে আকাশের দিকে তাকালেন। গুচ্ছ গুচ্ছ মেঘ নক্ষত্রের স্নান আলোকে ঢেকে দিয়ে সোজা ছুটে চলেছে। মহাশূন্য পুরোপুরি বৈরি মনোভাবাপন্ন। সে সবসময়ই ছিল ঠাণ্ডা ও ভয়ঙ্কর। আর এখন যোগ হয়েছে মিউলের মতো বিপজ্জনক ক্রিয়েচার। ফলে অন্ধকার গহ্বরে অশুভ কিছু একটা ঘোট পাকিয়ে উঠছে।
মিটিং খুব বেশি দীর্ঘ হয়নি। অনিশ্চিত মানসিকতা নিয়ে বেড়ে উঠা একটা মেন্টাল মিউট্যান্টকে দমন করার গাণিতিক সমস্যাসমূহ শুধু আলোচনা করা হয়েছে।
তারা কী এখনও নিশ্চিত। মহাশূন্যের এই অঞ্চলের কোনো এক অংশে–গ্যালাক্সির অতিক্রম্য দূরত্বের মধ্যেই রয়েছে মিউল? কী করবে সে?
তার অনুচরদের সামলানো সহজ। তারা পরিকল্পনা অনুযায়ী সাড়া দেয় এবং দিচ্ছে।
কিন্তু স্বয়ং মিউলের ব্যাপারে কী হবে।
.
১.৪ এন্ডারস
রোসেম এই নির্দিষ্ট অঞ্চলের এল্ডারস। তারা যেমন আশা করেছিল ঠিক সেরকম নয়। সাধারণ কৃষকদের সাথে এল্ডারসদের অনেক পার্থক্য। বৃদ্ধ, মুখে শান্ত গাম্ভীর্য, অনেক বেশী কর্তৃত্বপরায়ণ।
ব্যবহার বন্ধুত্বপূর্ণ, আচরণ কর্তৃত্বপূর্ণ। বোঝাই যায় কর্তৃত্ব করা তাদের জন্মগত অভ্যাস।
তারা বসেছে তাদের ডিম্বাকার টেবিলের পিছনে বসেছে। অধিকাংশই যৌবন পার হয়ে এসেছেন। কারও মুখে সুন্দর করে ছাটা দাড়ি। এখনও অনেকে আসছে। যাদের বয়স চল্লিশেরও কম। তাতেই বোঝা যায় এল্ডারস্ একটি সম্মানসূচক শব্দ, বয়সের শাব্দিক প্রতিরূপ না।
আউটার স্পেস থেকে আসা দুজনকে টেবিলের মাথায় বসতে দেওয়া হয়েছে। শান্ত, গম্ভীরভাবে তারা তাদের খাবার খেল। দু-একজন এলডার অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা দিল। তারপরই মনে হয় কৌতূহলের কাছে হার মানল গুরুগম্ভীর স্বভাব। দুই আগন্তুককে তারা ঘিরে ধরল। শুরু হল প্রশ্নবাণ স্পেসশিপ চালানো কী খুব কঠিন, কতজন লোক লাগে, তাদের গ্রাউণ্ড কারের জন্য উন্নত মোটর তৈরি করা সম্ভব কিনা, সত্যি নাকি যে অন্যান্য গ্রহে বরফ পড়ে না, তাদের গ্রহে কতজন মানুষ বাস করে। এটি কী জেনডার মতো অনেক বড়, অনেক দুরে, কীভাবে তাদের কাপড় তৈরি হয়, তারা কী প্রত্যেকদিন শেভ করে, প্রিচারের আংটিতে কী পাথর ইত্যাদি।
প্রায় প্রতিটি প্রশ্নই করা হল প্রিচারকে কারণ তারা ধরেই নিয়েছে সেই নেতা। প্রিচার বিস্তারিতভাবে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য হল। জানার আগ্রহ তাদের অসীম।
প্রিচার ব্যাখ্যা করে বলল যে স্পেসশিপ চালানো কঠিন নয়, এর আয়তনের উপর নির্ভর করে কতজন লোক প্রয়োজন হবে। সে তাদের গ্রাউণ্ড কারের মোটর সম্বন্ধে বিস্তারিত জানে না তবে অবশ্যই উন্নত করা যাবে, তার গ্রহে কয়েক শ মিলিয়ন লোক বাস করে, তবে অবশ্যই জেনডার তুলনায় তাদের গ্রহ অনেক ছোট ও কম গুরুত্বপূর্ণ, তাদের কাপড় তৈরি করা হয় সিলিকন প্লাস্টিক দিয়ে, তারা প্রত্যেকদিন শেভ করে তার আংটির পাথর হচ্ছে এমেথিষ্ট। ক্রমেই প্রশ্নের তালিকা বড় হচ্ছে। প্রিচার লক্ষ্য করল যে সে প্রায় তার ইচ্ছার বিরুদ্ধেই প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাচ্ছে।
প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর পেয়েই তারা তর্ক-বিতর্ক করছে নিজেদের মধ্যে। তাদের এই নিজস্ব আলোচনা একেবারেই বোধগম্য হচ্ছে না। কারণ তারা আন্তঃমহাজাগতিক ভাষার এমন একটি রূপে কথা বলছে যা অনেক আগেই হয়ে পড়েছে অপ্রচলিত।
শেষ পর্যন্ত চ্যানিশ বাধা দিয়ে বলল, ‘ভদ্রমহোদয়গণ, আমরা এখানে নতুন। তাই আপনারা এবার আমাদের কিছু প্রশ্নের উত্তর দিন, জেনডা সম্বন্ধে আমরা সব জানতে চাই।’
তারপরে যা ঘটল তা এককথায় অবিশ্বাস্য। সম্পূর্ণ মিটিং হল এ অস্বাভাবিক নীরবতা নেমে এল। যে এল্ডারসরা এতক্ষণ কথা বলছিল অনর্গল, তারা এখন একেবারেই চুপ। বক্তব্য পরিষ্কার বোঝানোর জন্য এতক্ষণ মুখের কথার সাথে নানাভাবে ও দ্রুত হাত নাড়ছিল, এখন হাতগুলো নির্জীব হয়ে পড়ে আছে। চোরাচোখে একজন আরেকজনের দিকে তাকাচ্ছে, চাইছে অন্য কেউ কথা বলার দায়িত্ব নিক।