.
প্রথম তুষারপাত শক্ত মাটি ঢেকে দিয়েছে। নারোভী তার দাড়ি ঝাড়তে ঝাড়তে কুটিরের বাইরে এসে দাঁড়াল। আকাশ নিপ্ৰভ ধূসর। তবে বড় ধরনের ঝড় হবে না। কোনো ঝামেলা ছাড়াই সে জেনট্রি পর্যন্ত গিয়ে অতিরিক্ত শস্যের বিনিময়ে শীতের জন্য প্রয়োজনীয় টিনের খাদ্য সংগ্রহ করতে পারবে।
পিছন ফিরে একটা হাক দিল, ‘গাড়িতে ফুয়েল ভরা হয়েছে, ইয়ুঙ্কার?’
নারোভীর সবচেয়ে বড় ছেলে চিৎকার করে জবাব দিল, বাপের চেয়ে কিছুটা খাটো মুখটা এখন ও বালকসুলভ, দাড়ি গোফ ভালোমতো গজায়নি।
‘গাড়িতে,’ রাগের সাথে বলল সে ‘ফুয়েল ভরা হয়েছে এবং ভালমতোই চলবে। কিন্তু নষ্ট এক্সেলের জন্য আমার কোনো দোষ নেই। আমি তোমাকে বলেছি এর জন্য দক্ষ লোকের প্রয়োজন।’
ভুরু কুঁচকে ছেলের দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকল নারোভী। থুতনি নাচিয়ে বলল, ‘তাহলে কী আমার দোষ? কোত্থেকে, কীভাবে আমি দক্ষ লোক আনব? পাঁচবছরে ফসল কী কম হয়েছে? আমার গবাদি পশুর দল কী পালিয়ে গেছে–’
‘নারোভী!’ পরিচিত একটা কণ্ঠস্বর তাকে থামিয়ে দিল মাঝপথে। সে বিড়বিড় করতে লাগল, ‘ভালো, ভালো–বাপ-ছেলের মাঝখানে নাক এখন তোমার মাও গলাবে, গাড়িটা নিয়ে আসো, দেখে নিও স্টোরেজ ট্রেইল ভালোমতো লাগানো হয়েছে কিনা।‘
দস্তানা পরা হাত দুটো জড়ো করে সে আবার তাকাল আকাশের দিকে। ধূসর আকাশে হালকা-লালবর্ণের মেঘ। সূর্যের দেখা নেই।
চোখ নামিয়েই আবার সে ঝট করে আকাশের দিকে তাকাল, স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার আঙুল উপর দিকে উঠে গেছে এবং ঠাণ্ডা সত্ত্বেও চিৎকার করে তার স্ত্রীকে ডাকল, ‘তাড়াতাড়ি এস।’
জানালায় একটা মাথা দেখা গেল, নারোভীর আঙুল নির্দেশিত দিকে তাকিয়ে বিষম খেল মহিলা। একটা পুরোনো ব্যাপার এবং চারকোণা একটি লিনেন মাথায় জড়িয়ে দৌড়ে বাইরে এসে দাঁড়াল স্বামীর পাশে।
রুদ্ধশ্বাসে বলল, ‘আউটার স্পেসের মহাকাশযান।’
নারোভী অধৈর্য্যের সাথে বলল, ‘এ ছাড়া আর কী? আমরা অতিথি পেয়েছি।’
ফার্মের দক্ষিণ দিকের খালি ঠাণ্ডা জমিতে মহাকাশযান অবতরণ করছে।
‘আমরা কী করব?’ মহিলা ফিসফিস করে বলল, ‘আমরা কী তাদের আপ্যায়ন করব?
একহাতে স্ত্রীর কাধ জড়িয়ে সে বলল, ‘তুমি নিচের রুমে দুটি চেয়ার এনে রাখ। খাদ্য ও পানিয়ের ব্যবস্থা কর। আমি তাদের এগিয়ে আনতে চললাম।’
একটা বেসুরো শব্দ বের হল মহিলার গলা দিয়ে। নারোভী এক আঙুল তুলে বলল, ‘শোনো, এন্ডারস্ কী বলেছিল মনে নেই। বলেছিল অপরিচিত কোনো মহাকাশযান আসলে সাথে সাথে যেন তাকে খবর দেওয়া হয়। এটা গভর্নরের আদেশ।
‘শোনো ক্ষমতাশালীদের সুনজরে পড়ার সুযোগ আমি পেয়েছি। যানটাকে দেখ, এরকম আগে কখনো দেখেছ, আউটার ওয়ার্ল্ডের এই লোকেরা ধনী ও শক্তিশালী। গভর্নর নিজে খোঁজখবর করছেন, যার কারণে এল্ডাররা ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় ফার্মে ফার্মে ঘুরে মেসেজ পৌঁছে দিচ্ছে। সম্ভবত পুরো রোসেমে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে যে জেনডার লর্ডরা এদের আশা করছেন। এবং তারা ল্যাণ্ড করেছে আমার ফার্মে। সঠিকভাবে আপ্যায়ন করলেই গভর্নরের কাছে তারা আমাদের নাম বলবে।’
তার স্ত্রী হঠাৎ করেই ঘরোয়া কাপড়ের ভিতরে শীত অনুভব করল। দরজার দিকে এগোতে এগোতে চিৎকার করে বলল, তা হলে তাড়াতাড়ি যাও।
কিন্তু যাকে বলল সে ততক্ষণে মহাকাশযানের দিকে দৌড়াতে শুরু করেছে।
.
এই গ্রহের প্রচণ্ড ঠাণ্ডা বা সীমাহীন শূন্যতা হ্যান প্রিচারের চিন্তার বিষয় না। এর দারিদ্র্য অথবা সামনে দাঁড়ানো কৃষককে নিয়েও সে চিন্তা করছে না।
যা তাকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে তা হচ্ছে তাদের এখানে আসা ঠিক হল কিনা। সে এবং চ্যানিশ সম্পূর্ণ একা এসেছে।
মহাকাশে ছেড়ে আসা মূল যান নিরাপদেই থাকবে, তবুও সে নিরাপদ বোধ করছে না। এর জন্য চ্যানিশই দায়ী। এদিকে চ্যানিশ হাসিমুখে ফার দিয়ে আলাদা করা একটি অংশের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। সেখানে একজন মহিলার মুখ দেখা দিয়েই মিলিয়ে যাচ্ছে, চ্যানিশ বেশ স্বাভাবিক। তবে আর বেশিক্ষণ নিজের ইচ্ছামতো খেলা চালিয়ে যেতে পারবে না।
কৃষক মাথা ঝুঁকিয়ে অত্যন্ত শ্রদ্ধা ভরে বলল, ‘নোবল লর্ডস, আমার বড় ছেলে, দারিদ্র্যের কারণে যাকে আমি প্রয়োজনীয় শিক্ষা দিতে পারিনি–সে আমাকে, জানিয়েছে, যে কোনো মুহূর্তে এল্ডারসগন এখানে এসে পৌঁছবেন। আশা করি আপনারা এখানে আনন্দে থাকতে পারবেন। আমি অভাবী হলেও এখানের সবাই জানে আমি সৎ ও পরিশ্রমী।’
‘এল্ডারস্?’ সহজ গলায় বলল চ্যানিশ। ‘এই অঞ্চলের চিফ?’
‘সেরকমই, নোবল লর্ডস, তারা সকলেই সৎ এবং পরিশ্রমী, যার কারণে পুরো রোসেমে আমাদের গ্রাম ন্যায়বিচার ও ভালো আচরণের জন্য বিখ্যাত–যদিও ফসলের উৎপাদন খুব কম। যদি নোবল লর্ডস আপনারা এল্ডারসদের আমার আতিথেয়তার কথা বলেন তা হলে তারা আমাকে একটি নতুন মোটর ওয়াগনের ব্যবস্থা করে দিতে পারেন।’
তার ব্যাকুলতা দেখে প্রিচার একজন নোবল লর্ডের চরিত্র অনুযায়ী গম্ভীরভাবে মাথা নাড়ল।
‘তোমার আতিথেয়তার বিষয় এল্ডারদের কানে তোলা হবে। আধো ঘুমন্ত চ্যানিশকে বলল, ‘এল্ডারদের সাথে দেখা করাটা আমার পছন্দ হচ্ছে না। তুমি কিছু ভেবেছ?’
চ্যানিশকে অবাক দেখাল, না। তুমি চিন্তিত হচ্ছ কেন? ‘এখানে বসে দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেয়ে আমাদের আরও গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে বলে আমি মনে করি।’