রোসেমের ঠাণ্ডা পতিত জমির পাশ ঘেঁষে, গ্রামগুলো বিশৃঙ্খলভাবে গড়ে উঠেছে। এর লালবর্ণের সূর্য খুব অল্প তাপ বিকীরণ করে। ফলে বছরের নয় মাস হালকা তুষারপাত হয়। সেই সময় কঠিন খাদ্যশস্য মাটির নিচে সুপ্ত অবস্থায় থাকে। তারপর যখন সূর্যের তাপমাত্রা প্রায় পঞ্চাশ এ পৌঁছে তখন খাদ্যশস্য অত্যন্ত দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পায়।
পাতলা তিনখুরঅলা পায়ের সাহায্যে ছাগলের মতো দেখতে ছোট একপ্রকার প্রাণী পাতলা তুষার খুড়ে তৃণভূমি চাষ করতে ব্যবহার করা হয়।
কাজেই রোসেমের অধিবাসীদের খাদ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। গ্রহের পুরো বিষুব অঞ্চল জুড়ে রয়েছে কালো অশুভ এক বনাঞ্চল। এখান থেকে তারা ঘর তৈরির জন্য শক্ত ও মসৃণ কাঠ সগ্রহ করতে পারে। এই কাঠ এবং সেইসাথে পশুর চামড়া এবং কিছু খনিজ পদার্থ তাদের মূল্যবান রপ্তানি দ্রব্য। কখনও কখনও এম্পায়ারের শিপগুলো বিনিময়ের জন্য খামারের যন্ত্রপাতি, এটমিক হিটার, এমনকি টেলিভাইজর সেট পর্যন্ত নিয়ে আসে। দীর্ঘ শীতকালের বিচেতনতা কাটানোর জন্য টেলিভাইজর বেশ কাজ দেয়।
ইম্পেরিয়াল হিস্টোরির ব্যাপারে রোসেমের কৃষকদের ধারণা খুব কম। ট্রেডিং শিপগুলো কখনো কখনো কোনো বিদ্রোহের খবর নিয়ে আসে। হঠাৎ কখনো নতুন ফেরারী আসামি আসে–একবার অনেক বড় একটা দল এসেছিল এবং তাদের কাছে প্রকৃতপক্ষে গ্যালাক্সির অনেক খবর ছিল।
তাদের কাছ থেকেই রোসেমের কৃষকেরা সর্বপ্রথম সুদূরপ্রসারী লড়াই, ব্যাপক গণহত্যা, নির্মম স্বৈরতান্ত্রিক স্মার্ট এবং বিদ্রোহী ভাইসরয়দের কথা জানে। এবং তারা তখন দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাথা ঝাঁকাত, শার্টের কলার দাড়ি গোফ ভরা মুখের আরও কাছে টেনে এনে গ্রামের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে বসে মানুষের নৃশংস মনোভাব নিয়ে দর্শন আউড়াত।
তার কিছুদিন পর থেকেই ট্রেড শিপগুলো আসা বন্ধ করে দেয়। ফলে জীবন হয়ে দাঁড়াল আরও কঠিন। বিদেশী খাদ্য, তামাক এবং যন্ত্রপাতির সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেল। টেলিভাইজর থেকে প্রাপ্ত টুকিটাকি সংবাদ জোড়া দিয়ে যা বোঝা গেল তাও অস্পষ্ট। তারপর সংবাদ ছড়িয়ে পড়ল ট্রানটরের পতন হয়েছে। সমস্ত গ্যালাক্সির অতি উন্নত ক্যাপিটাল ওয়ার্ল্ড, সম্রাটদের জমকালো, অগম্য, অতুলনীয় রূপকথার মতো বাসস্থান সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে।
অবিশ্বাস্য সংবাদ এবং রোসেমের অধিকাংশ কৃষকের মনে হল গ্যালাক্সির ধ্বংস অনিবার্য।
.
তারপর একদিন আবার একটি মহাকাশযান অবতরণ করল রোসেমে। প্রতিটি গ্রামের বয়োবৃদ্ধরা জ্ঞানীর মতো মাথা নাড়ল এবং ফিসফিস করে বলল যে তাদের বাপ দাদার আমলে অনেক যান রোসেমে নেমেছে, কিন্তু ঠিক এরকম যান তারা কখনো দেখেনি।
এটা ইম্পেরিয়াল শিপ নয়। কারণ মহাকাশযানের গায়ের চকচকে ভাব এবং লেজের কাছে সম্রাটদের সূর্য চিহ্ন ছিল না। পুরোনো যানের বিভিন্ন অংশ জুড়ে এটি তৈরি হয়েছে। এর চালকেরা নিজেদের পরিচয় দিল জেনডার সৈনিক বলে।
কৃষকেরা জেনডার নাম কখনও শোনেনি। তাই দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ল। তবে ঐতিহ্য অনুযায়ী সৈনিকদের আপ্যায়ন করল। সৈনিকরা গ্রহের ভূ-প্রকৃতি, অধিবাসীদের সংখ্যা, শহরের সংখ্যা–একজন কৃষক ভুল করে গ্রাম বোঝাতে শহর উচ্চারণ করেছিল–ইত্যাদি বিষয়ে খুব ভালো মতো খোঁজখবর করল।
আরও অনেক মহাকাশযান এল এবং পুরো রোসেমে ঘোষণা করা হল যে এই মুহূর্তে জেনড়া রুলিং ওয়ার্ল্ড গ্রহের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ স্থানে কর আদায়ের জন্য কেন্দ্র স্থাপন করা হবে প্রতি বছর নির্দিষ্ট অনুপাতে চামড়া এবং খাদ্য শস্য কর হিসেবে নেওয়া হবে।
রোসেমের অধিবাসীরা কর শব্দটা আগে কখনো শুনেনি, তাই চুপ করে থাকল। যখন সময় আসল তখন অনেকেই পরিশোধ করল, অনেকে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকল। অন্যদিকে ইউনিফর্ম পড়া সৈনিকেরা তাদের উৎপাদিত খাদ্যশস্য ও পশমওলা চামড়া বড় বড় গ্রাউণ্ড কারে ভরতে লাগল।
ক্ষুব্ধ কৃষকরা সংগঠিত হল প্রাচীন আমলের অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। জেনডার আগন্তুকরা খুব সহজেই তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিল। তাদের কঠিন জীবন হয়ে উঠল কঠিনতর।
ক্রমে চালাক হয়ে উঠল রোসেমাইটরাও। জেনডিয়ান গভর্নর জেনট্রি গ্রামে তার লোকদের নিয়ে বসবাস শুরু করল। ফলে ঐ গ্রাম থেকে সকল অধিবাসীকে সরিয়ে দেওয়া হয়, রোসেমাইটদের সাথে তাদের যোগাযোগ একেবারেই নেই। জেনডার লোক নির্দিষ্ট সময়ে কর সংগ্রহ করতে আসে, কিন্তু রোসেমাইটরা জানে কীভাবে ফসল লুকাতে হয়, গবাদি পশু জঙ্গলের দিকে তাড়িয়ে দিতে হয় এবং নিজেদের কুটিরের জীর্ণ দশা বজায় রাখতে হয়। তারপর নিরাসক্ত মুখে সকল তীক্ষ্ণ প্রশ্নবাণের উত্তর দেওয়া তাদের জন্য কোনো ব্যাপারই না।
এই পদ্ধতিতে করের পরিমাণ কমে গেল যেন জেনডা নিজেও এখান থেকে কর আদায় করতে করতে ক্লান্ত।
বরং বাণিজ্য করাই মনে হল লাভজনক। রোসেমের অধিবাসীরা বিনিময়ে যদিও এম্পায়ারের চকচকে জিনিস পাচ্ছে না, কিন্তু জেনডার যন্ত্রপাতি, খাদ্যদ্রব্য তাদের নিজেদের তৈরি জিনিসের চেয়ে উন্নত। এছাড়াও রয়েছে মহিলাদের জন্য কাপড়।
তাই আবার গ্যালাকটিক ইতিহাস নিরবিচ্ছিন্নভাবে বয়ে যেতে লাগল এবং কৃষকরা জীবনের উপাদান সংগ্রহ করতে লাগল শক্ত মাটি থেকে।