‘কেন–তুমি কী করতে চাও? জেনডা সম্পর্কে আবোলতাবোল কথা বলার অর্থ কী?’
‘আবোলতাবোল নয়। আমি সিরিয়াস। আমরা সেখানে যাচ্ছি। তিনদিন পরে যাত্রার কথা থাকলেও আমরা আজকেই যাত্রা করেছি। জেনারেল তুমি বিশ্বাস করো না যে দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন আছে। কিন্তু আমি করি, তুমি শুধু অন্ধের মতো মিউলের আদেশ পালন কর; আমি অনেক বিপদ দেখতে পাচ্ছি। দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন প্রস্তুত হওয়ার জন্য পাঁচবছর সময় পেয়েছে। তারা কীভাবে তৈরি হচ্ছে আমি জানি না, কিন্তু কালগানে তাদের এজেন্ট থাকতে পারে। যদি আমার মাইণ্ডে তাদের অস্তিত্বের কথা থাকে তবে ব্যাপারটি তাদের অজানা থাকবে না। আমার জীবন হুমকির সম্মুখীন হবে। তাই জেনডার কথা কাউকে জানাইনি, তোমাকে ছাড়া। তুমিও জেনেছ আমরা মহাকাশে বেরিয়ে আসার পর।‘ চ্যানিশ আবার হাসছে। সন্দেহ নেই পরিস্থিতি পুরোপুরি তার নিয়ন্ত্রণে।
ব্লাস্টার থেকে হাত সরিয়ে আনল প্রিচার। কয়েক মুহূর্তের জন্য সে অস্বস্তিতে ভুগল। কিছু একটা তাকে ভিতর থেকে বাধা দিচ্ছে, দমিয়ে রাখছে। একসময় যখন সে প্রথম ফাউণ্ডেশনের বাণিজ্যিক সাম্রাজ্যের বিদ্রোহী ক্যাপ্টেন ছিল, তখন সে চ্যানিশের চেয়েও দ্রুত ও ভয়ঙ্কর পদক্ষেপ নিয়েছে। মিউলের কথাই কী ঠিক? তার কন্ট্রোলড মাইণ্ড কি এতই অনুগত যে সে কোনো উদ্যোগ নিতে পারে না। ভিতরের হতাশা তাকে অদ্ভুত অস্বস্তিতে ফেলে দিল।
সে বলল, ‘ঠিক আছে। তবে ভবিষ্যতে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমার সাথে আলোচনা করে নেবে।’
মিটমিট সংকেত তার মনযোগ কেড়ে নিল।
‘ইঞ্জিন রুম’, চ্যানিশ সহজ গলায় বলল, ‘বলে রেখেছিলাম কোনো সমস্যা হলে জানাতে। দুর্গ সামলাতে চাও?’
নিঃশব্দে মাথা নাড়ল প্রিচার। একটা দুটো নক্ষত্র দেখা যাচ্ছে ভিজিপ্লেটে। গ্যালাক্সির মূল অংশ একপ্রান্তে ঝাপসা হয়ে গেছে।
কী ঘটবে যদি সে মিউলের প্রভাব থেকে মুক্ত হয়—
কিন্তু চিন্তাটা তার মনে ভয় ধরিয়ে দিল।
.
চিফ ইঞ্জিনিয়ার হক্সলানি তীক্ষ্ণ চোখে তরুণের দিকে তাকাল। নিজেকে সে ফ্লিট অফিসার হিসাবে পরিচয় দিচ্ছে এবং দেখে মনে হয় তার হাতেই পুরো কর্তৃত্ব। হক্সলানি দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত ফ্রিটম্যান হিসাবে কাজ করছে। এখন পর্যন্ত সে উপরওয়ালাদের ইনসিগনিয়া ভালভাবে বুঝতে পারে না।
তবে এই লোকটিকে মিউল নিয়োগ করেছে এবং মিউলের কথাই শেষ কথা। এমনকী অবচেতন মনেও মিউল সম্বন্ধে তার কোনো সন্দেহ নেই। ইমোশনাল কন্ট্রোলের শিকড় অনেক গভীর।
সে চ্যানিশের হাতে একটা ডিম্বাকার বস্তু দিল।
সেটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে সুন্দরভাবে হাসল চ্যানিশ।
‘তুমি ফাউণ্ডেশনের লোক, তাই না চিফ?’
‘জী, স্যার। ফার্স্ট সিটিজেন ক্ষমতা দখলের আঠারো বছর আগে থেকে আমি ফাউণ্ডেশনে কাজ করি।’
‘ইঞ্জিনিয়ারিং-এর উপর ফাউণ্ডেশন থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছ?’
‘প্রথম শ্রেণীর কোয়ালিফাইড টেকনিশিয়ান, সেন্ট্রাল স্কুল অন এনাক্রিওন।‘
‘খুব ভালো। আর তুমি এটা পেয়েছ কমিউনিকেশন সার্কিটে যেখানে আমি দেখতে বলেছিলাম।‘
‘জী স্যার।‘
‘জিনিসটা কী সেখানে থাকার কথা?’
‘না স্যার।‘
‘তা হলে কী এটা?’
‘হাইপারট্রেসার স্যার।‘
‘বুঝিয়ে বল। আমি ফাউণ্ডেশনের লোক নই। এটার কাজ কী?’
‘এই যন্ত্র দিয়ে হাইপারস্পেসেও মহাকাশযানকে ট্রেস করা সম্ভব।’
অন্যকথায় যেখানেই যাই, আমাদের অনুসরণ করা যাবে?’
‘জী, স্যার।‘
‘আচ্ছা! এটা আধুনিক আবিষ্কার। ফার্স্ট সিটিজেনের নিজস্ব রিসার্চ ইনস্টিটিউটে এটি তৈরি হয়েছে, তাই না?’
‘আমার তাই মনে হয় স্যার।’
চ্যানিশ কয়েক সেকেণ্ড হাইপারট্রেসার মুঠ করে ধরে রাখল। তারপর চিফ ইঞ্জিনিয়ারের দিকে বাড়িয়ে দিল, এটা নাও এবং যেখানে যেভাবে পেয়েছিলে ঠিক সেখানে সেইভাবে আবার রেখে এস। বুঝেছ? তারপর পুরো ব্যাপারটি ভুলে যাও।’
চিফ প্রায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাকে স্যালুট করে চলে গেল।
.
গ্যালাক্সির মাঝ দিয়ে মহাকাশযান ভেসে চলেছে। স্ক্রিনে তার গতিপথ দেখা যাচ্ছে নক্ষত্রগুলোর ভিতর দিয়ে ছোট ছোট বিন্দুর একটা সরল রেখার সাহায্যে। প্রতিটি বিন্দু প্রকাশ করছে দশ থেকে ষাট লাইট সেকেণ্ড এবং এক বিন্দু থেকে আরেক বিন্দুর দূরত্ব প্রকাশ করছে এক শ বা তার বেশি লাইট ইয়ার। বিন্দুগুলোর দূরত্বই মূলত: হাইপার স্পেশাল হপের হিসাব।
লেন্সের কন্ট্রোল প্যানেলে বসে চ্যানিশ ‘হপ’-এর প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইন্টারস্টেলার যোগাযোগের ক্ষেত্রে লেন্স প্রায় বিপ্লব এনে দিয়েছে। মহাকাশ যোগাযোগের প্রথম যুগে ‘হপ’ ছিল অত্যন্ত জটিল ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। কারণ তিনটি পরিচিত নক্ষত্রের অবস্থান ও যানের নিজস্ব অবস্থান নির্ণয়ে দিন বা সপ্তাহ পর্যন্ত চলে যেত। এমনকি ফাউণ্ডেশনের যুগেও কাজটা এতটা সহজ ছিল না।
লেন্স কাজটিকে অনেক সহজ করে দিয়েছে। প্রথম কারণ এখানে একটি নক্ষত্রের অবস্থান নির্ণয় করলেই চলে। দ্বিতীয় কারণ যে কোনো অনভিজ্ঞ লোক এটি চালাতে পারে।
এই মুহূর্তে সবচেয়ে কাছের পরিচিত নক্ষত্র হচ্ছে ভিনসেটোরি। ভিজিপ্লেটের কেন্দ্রে একটা উজ্জ্বল নক্ষত্র দেখা যাচ্ছে। চ্যানিশ আশা করল এটাই ভিনসেটোরি হবে।
লেন্সের ফিল্ড স্ক্রিন ভিজিপ্লেটের দিকে ঘুরিয়ে চ্যানিশ সতর্কতার সাথে ভিনসেটোরির কো-অর্ডিনেটস পাঞ্চ করল। একটা রিলে বন্ধ করে দেওয়ায় স্টারফিল্ড উজ্জ্বল হয়ে উঠল। এখনেও ঠিক কেন্দ্রে আরেকটা নক্ষত্র বেশি উজ্জ্বল হয়ে আছে। সে লেন্স জেড এক্সিস পর্যন্ত এডজাস্ট করে নিয়ে ফিল্ড বড় করল। ফলে ফটোমিটারে সমান উজ্জ্বল দুটি নক্ষত্রের ছবি ফুটে উঠল।