আর তিনি হারলা ব্র্যান্নো, মিউলের পর সবচেয়ে শক্তিশালী শাসক (তিনি নিজেও সেটা জানেন) এবং মহিলা মেয়র হিসাবে পঞ্চম। শুধু আজকেই তিনি তার ক্ষমতা এত খোলাখুলিভাবে ব্যবহার করেছেন।
নিজের মত প্রতিষ্ঠার জন্য তাকে সেইসব একগুয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীর সাথে লড়তে হয়েছে যারা চেয়েছিল ফাউণ্ডেশনকে গ্যালাক্সির ভিতরের দিকে সরিয়ে নিতে কিন্তু তিনিই জিতেছেন। সেলডনও তাকে সমর্থন করেছেন।
ফলে ফাউণ্ডেশনের সবার চোখেই তিনি কিছু সময়ের জন্য সেলডনের মতো জ্ঞানী বলে স্বীকৃতি পাবেন। কিন্তু জানেন যে কোনো সময়েই তারা একথা ভুলে যেতে পারে।
আর এতগুলো বছরের মধ্যে শুধু এই তরুণ তাকে চ্যালেঞ্জ করল। এই তরুণের জন্য তিনি এমন কতগুলো পদক্ষেপ নিয়েছেন যেগুলোর জন্য তৃতীয় ইন্ডবারের সময় থেকে প্রচলিত আইন অনুযায়ী তাকে ইমপীচ করা যায়।।
কিন্তু তরুণ যা বলেছে, ঠিকই বলেছে!
আসল বিপদ এখানেই। তরুণের নির্ভুলতা ফাউণ্ডেশনকে ধ্বংস করে দিতে পারে!
এই মুহূর্তে তিনি দাঁড়িয়ে আছেন তরুণের মুখোমুখি, একা।
তিনি বিষণ্ণ স্বরে বললেন, একা আমার সাথে কথা বলতে পারলে না? কাউন্সিলের সামনে আমাকে বোকা বানানোর জন্য চিৎকার করে বলার প্রয়োজন ছিল? জানো কি সর্বনাশ করেছ, বোকা ছেলে?
.
০৬.
ভেতরের বেড়ে উঠা রাগটাকে দমানোর জন্য ট্র্যাভিজকে রীতিমতো লড়াই করতে হলো। মেয়র একজন বয়স্ক মহিলা, আগামী জন্মদিনে তেষট্টিতে পা দেবেন। নিজের দ্বিগুণ বয়সের কারো সাথে উঁচু গলায় কথা বলার প্রবৃত্তি হলো না।
তাছাড়া রাজনৈতিক যুদ্ধে মেয়র যথেষ্ট অভিজ্ঞ, ভালোমতোই জানেন প্রথমেই প্রতিপক্ষকে অপ্রস্তুত করে দিতে পারলে তিনি অর্ধেক লড়াই জিতে যাবেন। যদিও সেই কৌশল কাজে লাগাতে হলে হলরুম ভর্তি দর্শক চাই। আর এখানে শুধু তারা দুজন রয়েছে।
কাজেই ট্র্যাভিজ মেয়রের কথায় গুরুত্ব না দিয়ে চরম বিতৃষ্ণা নিয়ে তাকে পর্যবেক্ষণ করতে লাগল। মেয়র একজন বৃদ্ধ মহিলা, পরেছেন দুটি প্রজন্ম থেকে প্রচলিত ইউনিসেক্স ফ্যাশনের পোশাক। মেয়র লিডার অফ দ্যা গ্যালাক্সি –অত্যন্ত সাধারণ মহিলা, যে কেউ তাকে বৃদ্ধ পুরুষ ভেবে ভুল করতে পারে। শুধু চুল দেখে মানুষের ভুল ভাঙবে। মরিচা রং-এর চুলগুলো প্রচলিত পুরুষালী স্টাইলে ছেড়ে না রেখে শক্ত করে বেঁধে রেখেছেন।
ট্র্যাভিজ সুন্দর করে হাসল। যে কোনো বয়স্ক প্রতিপক্ষ বোকা ছেলে কথাটি শুনে অপমানিত বোধ করবে। কিন্তু এখানে কথিত বোকা ছেলে বয়সে তরুণ এবং সুদর্শন তারা দুজনেই সে ব্যাপারে সচেতন।
ট্র্যাভিজ বলল, ঠিক বলেছেন। আমার বয়স বত্রিশ এবং বলতে গেলে এখনো ছেলে। আবার আমি একজন কাউন্সিলম্যান, যত যাই হোক–প্রাক্তন অফিসিয়ো, যদিও বেপরোয়া। প্রথমটা এড়িয়ে যাবার উপায় নেই। দ্বিতীয়টার ক্ষেত্রে শুধু বলতে পারি আমি দুঃখিত।
তুমি জানো কি করেছ? দাঁড়িয়ে না থেকে বসো। মাথা খাটাও। যুক্তি দিয়ে আমার প্রশ্নের উত্তর দাও।
আমি জানি আমি কি করেছি। যা ঠিক মনে হয়েছে তাই বলেছি।
আর এমন দিনেই বিরোধিতা করলে যেদিন আমার ক্ষমতা এত বেড়েছে যে তোমাকে কাউন্সিল চেম্বার থেকে বের করে দিয়ে গ্রেফতার করলাম, কেউ কোনো প্রতিবাদ করার সাহস পেলনা।
কাউন্সিল ঠিকই একত্র হয়ে প্রতিবাদ জানাবে। হয়তো এরই মধ্যে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেছে। তারা এখন আরো গুরুত্ব দিয়ে আমার কথা শুনবে।
কেউ তোমার কথা শুনবে না। যদি তুমি এভাবে চালিয়েই যাও, আমিও তোমাকে বিশ্বাসঘাতক হিসাবে আইনের হাতে তুলে দেব।
আরো ভালো হবে। আদালতে কথা বলার সুযোগ পাব।
বেশি আশা করো না। একজন মেয়রের জরুরী ক্ষমতা অসীম, যদিও খুব কমই সেটা ব্যবহার করা হয়।
কিসের ভিত্তিতে আপনি জরুরী অবস্থা ঘোষণা করবেন?
একটা কিছু বের করে নেব। আমার সেই ক্ষমতা আছে, তাছাড়া ঝুঁকি নিতে আমি ভয় পাই না। আমাকে বাধ্য করো না ইয়ং ম্যান। আমি একটা সমঝোতা করতে চাই। যদি না হয়, তুমি আর কখনো স্বাধীন হতে পারবে না। বাকি জীবন প্রিজন সেলে কাটবে। নিশ্চিত থাক।
দুজন পরস্পরের দিকে কঠিন চোখে তাকিয়ে আছে। ব্র্যান্নোর চোখ ধূসর, ট্র্যাভিজের বহুবর্ণ বাদামী।
কি ধরনের সমঝোতা? ট্র্যাভিজ জিজ্ঞেস করল।
আহ, তুমি আগ্রহী। তাহলে তর্কযুদ্ধ না করে আমরা আলোচনা করতে পারি। তোমার সব কথা খুলে বল।
আপনি ভালোমতোই জানেন। কম্পরের সাথে তো আর খোশগল্প করেন নি, তাই না?
আমি তোমার মুখ থেকে শুনতে চাই। সাম্প্রতিক অতিবাহিত সেলডন ক্রাইসিসের আলোকে বল।
বেশ, আপনি যখন শুনতে চান-ম্যাডাম মেয়র! (বুড়ি মহিলা প্রায় জিভের ডগায় এসে গিয়েছিল, অনেক কষ্টে সামলালো।) সেলডনের ইমেজ খুব নিখুঁত, পাঁচশ বছর পরেও খুব বেশি রকম নিখুঁত। আমার ধারণা এইবার নিয়ে আটবার তার আবির্ভাব ঘটল। কয়েকবার এমনও হয়েছে তার কথা শোনার জন্য সেখানে কেউ উপস্থিত ছিলনা। অন্তত একবার, তৃতীয় ইন্ডবারের সময় বাস্তবের সাথে তার বিশ্লেষণ একেবারেই মেলেনি-অবশ্য সেটা ছিল মিউল-এর যুগ, তাই না? কিন্তু এর আগে কখনো আজকের মতো এমন নিখুঁত বর্ণনা দিয়েছিলেন?
ট্র্যাভিজ ছোট করে হাসল। কখনোই না, ম্যাডাম মেয়র। পুরনো রেকর্ড থেকে জানা যায় এর আগে কখনোই তিনি পরিস্থিতির এমন নিখুঁত বর্ণনা দিতে পারেন নি, একেবারে খুঁটিনাটিসহ।