থেমে অলস চোখে সবার দিকে তাকালেন তারপর শুরু করলেন, অর্ধেক সময় পেরিয়ে এসেছি; এম্পায়ারের পথে বিস্তৃত এক হাজার বছরের অর্ধেক। সময়টা ছিল কঠিন। কিন্তু আমরা অনেক দূর এসেছি। এরই মধ্যে আমরা প্রায় গ্যালাকটিক এম্পায়ারে পরিণত হয়েছি। আমাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর মতো কোনো শক্তি নেই।
সেলডন প্ল্যান ব্যতীত অরাজকতা চলত ত্রিশ হাজার বছর। তারপরে নতুন এম্পায়ার গড়ে তোলার মতো কোনো শক্তি অবশিষ্ট থাকত কিনা সন্দেহ। হয়তো অবশিষ্ট থাকত কিছু বিচ্ছিন্ন মৃতপ্রায় বিশ্ব।
যা অর্জন করা গেছে তার জন্য আমরা হ্যারি সেলডনের প্রতি কৃতজ্ঞ, বাকি অংশের জন্যেও তার অতি উন্নত চিন্তাভাবনার উপর নির্ভর করতে হবে। তাই এই মুহূর্ত থেকে সেলডন প্ল্যানের উপর অফিসিয়ালি কোনো সন্দেহ করা যাবে না। অর্থাৎ প্রশাসনের সাথে জড়িত কেউ সেলডন প্ল্যানের প্রতি কোনো সন্দেহ বা বিরূপ। সমালোচনা করতে পারবে না। এই প্ল্যান মানবজাতিকে রক্ষা করবে। কাজেই এর উপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস থাকতে হবে।
সদস্যদের মাঝে মৃদু গুঞ্জন শুরু হলো। মেয়র তাকানোর প্রয়োজন মনে করলেন না। এদের নাড়িনক্ষত্র তিনি ভালোভাবেই জানেন? জানেন এই মুহূর্তে কেউ তার বিরোধিতা করবে না। হয়তো আগামী বছর, কিন্তু এখন না। আগামী বছরের সমস্যা আগামী বছরই দেখা যাবে।
শুধু-
থট কন্ট্রোল, মেয়র ব্র্যান্নো? সবাইকে শোনানোর জন্য কথাগুলো ট্র্যাভিজ জোরে বলল। লম্বা পায়ে সামনে এগুচ্ছে।
ব্র্যান্নো তখনো তাকালেন না। খুলে বল, কাউন্সিলম্যান ট্র্যাভিজ।
বলতে চাই আপনি কারো কথা বলার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে পারেন না। যে কেউ, বিশেষ করে কাউন্সিলের সদস্যরা তো অবশ্যই দিনের রাজনৈতিক ঘটনা নিয়ে আলোচনা করতে পারে। কোনো রাজনৈতিক ঘটনাই সেলডন প্ল্যানের বাইরে নয়।
মেয়র হাত ভাঁজ করে চোখ তুলে তাকালেন। এভাবে একটা আলোচনা শুরু করা তোমার ঠিক হয়নি, কাউন্সিলম্যান ট্র্যাভিজ। যাই হোক তোমার কথার উত্তর দিচ্ছি।
সেলডন প্ল্যান নিয়ে স্বাধীনভাবে কথা বলায় কোনো বাধা নেই। সেলডনের ইমেজ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়ার আগে একটা ঘটনার হাজারো ব্যাখ্যা হতে পারে। কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার পর এই বিষয়ে কাউন্সিলে কোনো প্রশ্ন তোলা যাবে না। এমনকি এর আগেও তোলা যাবে না।
কেউ কোনো প্রশ্ন তুললে, ম্যাডাম মেয়র?
যদি সে সাধারণ নাগরিক হয়, কোনো সমস্যা নেই।
অর্থাৎ, এই নিয়ম শুধু কাউন্সিল মেম্বারদের জন্য?
ঠিক তাই। ফাউণ্ডেশনের পুরনো নিয়ম। এর আগেও অনেক মেয়র ব্যবহার করেছেন। একজন সাধারণ নাগরিকের কথার কোনো গুরুত্ব নেই; একজন সরকারী অফিসারের কথার গুরুত্ব আছে এবং সেটা বিপদ ডেকে আনতে পারে। এই মুহূর্তে বিপদের ঝুঁকি নিতে পারি না।
কিন্তু ম্যাডাম মেয়র, এর আগে ছোটখাটো দু-একটি ক্ষেত্রে হয়তো এই নিয়ম ব্যবহার করা হয়েছে। সেলডন প্ল্যানের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কখনোই ব্যবহার করা হয়নি।
সেলডন প্ল্যানের নিরাপত্তা সবচেয়ে বেশি দরকার।
আপনি হয়তো জানেন না, ম্যাডাম মেয়র, তারপর ঘুরে রুদ্ধশ্বাসে বসে থাকা বাকি সদস্যদের উদ্দেশ্য করে বলল, হয়তো আপনারাও জানেন না, বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে সেলডন প্ল্যানের অস্তিত্ব নেই।
আমরা সবাই আজকেই এর কার্যকারিতা দেখেছি, মেয়র ব্র্যানো আগের চেয়েও শান্ত গলায় বললেন আর ট্র্যাভিজ আরো উঁচু গলায় কথা বলতে লাগল।
দেখেছি কারণ আমাদের শেখানো হয়েছে সেলডন প্ল্যান বিশ্বাস করতে।
থামো, কাউন্সিলম্যান ট্র্যাভিজ। তুমি বেশি বাড়াবাড়ি করছ।
আমার অফিসিয়াল অধিকার রয়েছে, মেয়র।
তোমাকে অফিস থেকে বরখাস্ত করা হলো, কাউন্সিলম্যন।
আপনি তা পারেন না। যে নিয়মের কথা আপনি বলছেন সেটাও আইনসম্মত নয়। এ ব্যাপারে কাউন্সিলে কোনো ভোট নেয়া হয়নি, মেয়র, আর হলেও আমার সে ব্যাপারে প্রশ্ন করার অধিকার রয়েছে।
সেলডন প্ল্যান রক্ষার জন্য যে নিয়মের কথা বলেছি তার সাথে তোমার বরখাস্তের কোনো সম্পর্ক নেই।
তো কিসের সাথে আছে?
তোমাকে বিশ্বাসঘাতকতার দায়ে অভিযুক্ত করা হলো, কাউন্সিলম্যান। চাই না কাউন্সিল চেম্বারের ভিতরে তোমাকে গ্রেফতার করতে। কিন্তু দরজার বাইরে সিকিউরিটি দাঁড়িয়ে আছে, তুমি বেরোলে ওরাই তোমাকে কাষ্টডিতে নিয়ে যাবে। আমি তোমাকে শান্তভাবে বেড়িয়ে যেতে বলছি। এমন কিছু করো না যাতে সিকিউরিটি এখানে আসতে বাধ্য হয়।
ট্রাভিজের ভুরু কুঁচকে গেছে। হলে পিনপতন নিঃশব্দতা। (সবাই জানত-শুধু সে আর কম্পর বাদে?)। ঘুরে বেরোবার দরজার দিকে তাকালো। কিছুই দেখতে পেল না। কিন্তু কোনো সন্দেহ নেই মেয়র ব্র্যান্নো ধাপ্পা দিচ্ছে না।
রাগে তোতলাতে লাগল ট্র্যাভিজ। আমি সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চেয়েছিলাম।
তোমাকে হতাশ করতে হলো বলে দুঃখিত।
আমার বিরুদ্ধে কি প্রমাণ রয়েছে?
সেগুলো সময় মতো হাজির করা হবে। নিশ্চিত থাক যতটুকু প্রমাণ দরকার তার সবটুকুই আমাদের হাতে রয়েছে। তুমি একটা অর্বাচীন। আরো জেনে রাখো তোমার বন্ধু তোমার বেঈমানীর সঙ্গী হতে রাজী না।
ট্র্যাভিজ ঝট করে ঘুরে কম্পর-এর দিকে তাকালো।