কামঅন, ট্র্যাভিজ!
সত্যি বলছি। এই যে সেলডন হল-কি ছিল তখন? ছোট একটা টাইম ভল্ট আর ছিল এই সিঁড়িগুলো। আর এখন এক বিশাল ভবন। কিন্তু এর চার পাশে কোনো গ্র্যাভিটিক ফিল্ড আছে? কোনো র্যাম্প? কোনো স্লাইডওয়ে? কিছু নেই। শুধু এই সিঁড়িগুলো। স্যালভর হার্ডিন যেগুলো ব্যবহার করতেন। প্রতিটি মুহূর্ত আমরা অতীতকে ধরে রাখতে চাই।
অস্থিরভাবে হাত নেড়ে বাইরের দিকে দেখালো। এমন কিছু দেখাতে পারবে যা ধাতুর তৈরি। একটাও না। এই গ্রহে ধাতুর নিজস্ব উৎপাদন নেই। আর হার্ডিনের সময় তো আমদানী করাও কঠিন ছিল। ভবনগুলো তৈরি করার সময় প্রাষ্টিক ব্যবহার করেছি। সেগুলো বয়সের ভারে ধূসর হয়ে গেছে। অন্য গ্রহের পর্যটকরা। দেখে যেন বলতে পারে গ্যালাক্সি! কি সুন্দর পুরনো প্লাস্টিক কত বড় অপমান, চিন্তা করে দেখ!
তাহলে এই তুমি বিশ্বাস করো না? সেলডন হল?
এবং এর সাথে জড়িত সব কিছু ট্র্যাভিজ হিংস্র স্বরে বলল। দেখ আমাদের পূর্বপুরুষরা এখানে লুকিয়েছিলেন বলে আমাদেরও তাই করতে হবে এমন কোনো কথা নেই! উচিত হবে এখান থেকে বেড়িয়ে মূল স্রোতের সাথে মিশে যাওয়া।
কিন্তু তোমার ধারণা ভুল। সেলডন প্ল্যান যেভাবে কাজ করার কথা, সেভাবেই কাজ করছে।
আমি জানি। টার্মিনাসের প্রত্যেকটি শিশুকেই ছোটবেলা থেকে শেখানো হয় যে হ্যারি সেলডন একটা প্ল্যান তৈরি করেছেন, মানবজাতিকে রক্ষার জন্য ফাউন্ডেশন তৈরি করেছেন আর ভবিষ্যৎ ইতিহাসের এক হাজার বছর অতিক্রম করার পথ দেখিয়ে দিয়েছেন, যেন আমরা পুরনো এম্পায়ার–পাঁচশ বছর আগে যার পতন শুরু হয় এবং দুইশ বছর পূর্বে সেই পতন সম্পূর্ণ হয়–তার চেয়েও শক্তিশালী দ্বিতীয় এম্পায়ার গড়ে তুলতে পারি।
আমাকে এগুলো কেন বলছ গোলান?
কারণ এই ব্যাপারগুলো আমাদের জন্য অপমানজনক। আগে না হলেও এখন তো অবশ্যই। আসলে আমরা নিজেরা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করছিনা। আমরাই সেলডন প্ল্যান অনুসরণ করে চলছিনা।
কম্পর অনুসন্ধানী চোখে তার সঙ্গীর দিকে চাইল। এ ধরনের কথা আগেও বলেছ, গোলান। ভেবেছিলাম ঠাট্টা করছ। গ্যালাক্সী! এখন মনে হচ্ছে তুমি সিরিয়াস।
অবশ্যই, আমি সিরিয়াস।
হতে পারে না। হয় তুমি আমার বোঝার অসাধ্য জটিল ধাঁধা তৈরি করছ, অথবা তুমি পাগল হয়ে গেছ।
কোনোটাই না, ট্র্যাভিজ বলল। শান্ত হয়ে এসেছে। স্যাশ-এ বুড়ো আঙ্গুল আটকানো, যেন কথা বোঝানোর জন্য হাত নাড়ার আর প্রয়োজন নেই। স্বীকার করছি আমি অনেক দিন থেকেই ভাবছি, কিন্তু তখন ছিল শুধুই সন্দেহ। আজ সকালের প্রহসনের পর হঠাৎ করেই সবকিছু আমার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে। এখন কাউন্সিল মিটিং-এ সব খুলে বলব।
তুমি পাগল হয়ে গেছ।
চল আমার সাথে, শুনবে।
নিচে নেমে এল দুজন কাউন্সিলের সদস্য সংখ্যা পূর্ণ করতে শুধু এই দুজনই বাকি ছিল। ট্র্যাভিজ যখন সামনে এগুচ্ছে কম্পর তার পিঠের দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে বলল বোকা!
.
০২.
মেয়র হারলা ব্র্যান্নে এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের অধিবেশন শুরু করলেন। দেখে মনে হয় কোনোদিকে তার ল্য নেই। কিন্তু উপস্থিত সকলেই জানে যে মেয়র ঠিকই লক্ষ্য করেছেন কারা উপস্থিত হয়েছে এবং কারা এখনো আসেনি।
মেয়রের ধূসর চুল এমনভাবে গোছানো বোঝা যাবে না, পুরুষ না মহিলা। ভাবলেশহীন মুখে কোনো সৌন্দর্য নেই। অবশ্য কেউ তার মুখে সৌন্দর্য অনুসন্ধান করবে না।
তিনি একজন দক্ষ প্রশাসক স্যালভর হার্ডিন বা হোবার ম্যালোর সাথে তাকে তুলনা করা যাবে না। আবার হেরেডিটারী ইন্ডবার্স-মিউলের আগে যে মেয়র ছিল তার নির্বুদ্ধিতার সাথেও কেউ ব্র্যান্যের তুলনা করবে না।
তার বক্তৃতা শুনে কারো রক্ত গরম হয়ে উঠবে না। কোনো নাটকীয় অঙ্গভঙ্গী তিনি করতে পারেন না। তার সবচেয়ে বড় গুণ যা রয়েছে তা হচ্ছে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা এবং তাতে অটল থাকতে পারা। এরকম দৃঢ় মনোভাবের জন্যই প্রতিদ্বন্দ্বীরা মেয়রের ক্যারিক্যাচার এঁকে দেখিয়েছে তার নিচের চোয়াল গ্রানাইট ব্লকের তৈরি। অবশ্য তার চরিত্রের সাথে মিলে গেছে।
সেলডনবাদীদের ধারণা ইতিহাসের গতিপথে অনির্দিষ্ট কিছু ঘটবেনা (মিউলের অপ্রত্যাশিত আবির্ভাবের কথা তারা প্রায়ই ভুলে যায়), তাই সম্ভব হলে যে কোনো শর্তেই ফাউণ্ডেশন ফেডারেশনের রাজধানী হবে টার্মিনাস। এখানে একটা কথা রয়েছে সম্ভব হলে। তাই অনেকেই মনে করে রাজধানী টার্মিনাস থেকে ফাউণ্ডেশন ফেডারেশনের আরো কেন্দ্রের দিকে সরিয়ে নেয়া উচিত।
কিন্তু মেয়র চাননা কেউ এভাবে ভাবুক। তাছাড়া সেলডনের সাম্প্রতিক প্রত্যাবর্তনে তাকেই সমর্থন করেছেন। ফলে তিনি ব্যাপক রাজনৈতিক সুবিধা পেয়ে গেছেন।
এক বছর আগে বলেছিলেন যে পরবর্তী প্রত্যাবর্তনে যদি সেলডন তাকে সমর্থন করেন তবে তিনি রাজনীতি থেকে অবসর নেবেন। কেউ তার কথা বিশ্বাস না। করলেও প্রতিবাদ করার সাহস সামনে উপস্থিত কারো নেই। এখনো তিনি। রাজনীতির মধ্যবিন্দু। তাছাড়া সেলডন ইমেজ দেখা দিয়ে চলে গেছে। অবসর নেয়ার কোনো নামই নেই।
এখনকার রাজনীতিবিদেরা বক্তৃতা দেয়ার সময় প্রাচীন ইমপেরিয়াল স্টাইল। ব্যবহার করে। কিন্তু মেয়র কথা বলেন পরিষ্কার ফাউণ্ডেশন বাচনভঙ্গীতে
সেলডন ক্রাইসিস শেষ হয়েছে। ফাউণ্ডেশনের পুরনো নিয়ম অনুযায়ী যারা এর বিরুদ্ধে ছিলেন তাদেরকে মৌখিক বা লিখিত কোনোভাবেই কিছু বলা হবে না। তারাও খুশী মনে পরাজয় মেনে নেবেন। দু-পক্ষই পুরো ব্যাপারটা জীবনের মতো ভুলে যাবে।