আপনি দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের কথা বলছেন না, তাহলে কিসের কথা বলছেন?
পোলোরেট হঠাৎ করেই আরো দ্র এবং ক্ষমা প্রার্থনার সুরে বলল, আহ্, মেয়র : তাহলে তোমাকে বলেননি?–পুরো ব্যাপারটিই অদ্ভুত, বুঝেছ। আমি কি করছি সেটা অনেকদিন থেকেই সরকারকে বুঝানোর চেষ্টা করছি, আর এখন হঠাৎ করেই মেয়র আমার ব্যাপারে খুব বেশি উৎসাহী হয়ে পড়েছেন।
হ্যাঁ, ট্র্যাভিজ বলল, তিরস্কারের ভঙ্গি লুকানোর চেষ্টা করল না। মেয়র গোপনে অনেক জনসেবা করেছেন, কিন্তু এই ব্যাপারটা আমাকে বলতে ভুলে গেছেন।
তুমি আমার গবেষণার ব্যাপারে কিছুই জানো, তাহলে?
দুঃখিত, কিছুই জানি না।
ঠিক আছে, দুঃখ প্রকাশ করার কিছু নেই। আমি আসলে প্রচারবিমুখ লোক। এখন বলছি। আসলে আমি আর তুমি যাচ্ছি এক অনুসন্ধানে, এবং যা খুঁজে বের করতে চাই তা হচ্ছে–পৃথিবী।
.
১০.
ট্র্যাভিজ সে রাতে ঘুমোতে পারেনি।
বারবার সে মেয়রের জেলখানা থেকে বেরোতে চেষ্টা করেছে। লাভ হয়নি কোনো।
শান্ত নির্মমতার সাথে মেয়র তাকে নির্বাসন দিয়েছেন এবং তিনি যে অসাংবিধানিক কাজ করছেন সেটা গোপন করার কোনো চেষ্টা করেননি। কাউন্সিলম্যান হিসেবে অধিকার এবং ফাউণ্ডেশনের নাগরিক অধিকারের উপর ট্র্যাভিজ বড় বেশি ভরসা করেছিল। মেয়র সেগুলোকে পাত্তাই দেননি।
আর পেলোরেট, নিজের দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন এই অদ্ভুত প্রফেসর বলছে ওই ভয়ানক মহিলা নাকি কয়েক সপ্তাহ থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছে।
নিজেকে তার ছোট খোকার মতই মনে হলো।
এই বন্ধুবৎসল ইতিহাসবিদের সাথেই তাকে নির্বাসনে যেতে হবে। বোঝাই যাচ্ছে পৃথিবীর গ্যালাকটিক অনুসন্ধান শুরু করার জন্য প্রফেসর অস্থির হয়ে আছে।
তাকে জানতে হবে। অবশ্যই, এখনি।
সে জিজ্ঞেস করল, মাফ করবেন, প্রফেসর। আমি আপনার কাজের ব্যাপারে খুব একটা জানি না। তাই খুব সহজ একটা প্রশ্ন করলে নিশ্চয়ই বিরক্ত হবেন না। পৃথিবী কি?
বিশ সেকেণ্ড হাসি মুখে তাকিয়ে থাকল পেলোরেট। তারপর বলল, পৃথিবী একটা গ্রহ। মূল গ্রহ। সেই গ্রহ যেখানে মানুষের প্রথম উদ্ভব হয়েছিল?
মানুষের প্রথম উদ্ভব হয়েছিল? কোথা থেকে?
শূন্য থেকে। এটাই সেই গ্রহ, যেখানে একেবারে আদিম অবস্থা থেকে মানবজাতি চরম সভ্য হয়ে উঠেছিল।
ট্র্যাভিজ কিছুক্ষণ চিন্তা করে মাথা নাড়ল। বুঝতে পারছি না কি বলছেন। হালকা বিরক্তি দেখা দিল পেলোরেটের মুখে। গলা পরিষ্কার করে বলল একটা সময় ছিল টার্মিনাসের বুকে কোনো মানুষ ছিল না। অন্যান্য গ্রহ থেকে মানুষ এসে–এখানে বসতি স্থাপন করে। এটা জানোত?
হা নিশ্চয়ই, ট্র্যাভিজ অধৈর্য স্বরে বলল। পেলোরেটের হঠাৎ শিক্ষকসুলভ আচরণে বিরক্ত।
বেশ। সবগুলো গ্রহের ক্ষেত্রেই কথাটা সত্যি। এনাক্রোন, সান্তানি, কালগান–সবগুলোর ক্ষেত্রেই। প্রত্যেকটি গ্রহেই অতীতের কোনো এক সময় বসতি স্থাপন করা হয়েছে। অন্য কোনো গ্রহ থেকে মানুষ এখানে এসেছে। ট্র্যানটরের বেলায়ও কথাটা সত্যি। হয়তো বিশ হাজার বছর ধরে ট্রানটর ছিল এক মহান নগরী, তার আগে কিন্তু ছিল না।
কেন, আগে কি ছিল?
শূন্য! অন্তত জনমানব শূন্য।
বিশ্বাস করা কঠিন।
সত্যি। পুরনো ইতিহাসে তাই লেখা আছে।
ট্রিানটরে যারা প্রথম বসতি স্থাপন করে সেই মানুষগুলো কোনখান থেকে এসেছিল?
নিশ্চিত করে কারো কথাই বলা যায় না। একশরও বেশি গ্রহ দাবী করে যে সুপ্রাচীন কাল থেকেই সেখানে মানুষ বাস করছে এবং মানুষের প্রথম অভিযাত্রা নিয়ে তাদের নিজস্ব গল্পগাথাও রয়েছে। ইতিহাসবিদদের কাছে এগুলোর কোনো গুরুত্ব। নেই, বরং যে বিষয়টা নিয়ে তারা বেশি চিন্তা করে তা হচ্ছে মূল প্রশ্ন।
কি সেটা? আমি কখনো শুনিনি।
অবাক হচ্ছি না। আসলে বিষয়টা এখন আর ইতিহাসবিদদের কাছে খুব একটা জনপ্রিয় না। তবে একসময়, যখন সাম্রাজ্যের পতন ঘটছে, সেই সময় প্রশ্নটা হঠাৎ করেই পণ্ডিতদের মাঝে আলোড়ন সৃষ্টি করে। স্যালভর হার্ডিন তার স্মৃতিকথায় খুব সুন্দরভাবে এর বর্ণনা দিয়েছেন। মূল প্রশ্ন হচ্ছে একটা গ্রহের অস্তিত্ব এবং অবস্থান নিয়ে, যে গ্রহ থেকেই শুরু হয়েছিল সব কিছু। অতীতের দিকে তাকালে দেখা যাবে যে সবচেয়ে নতুন গ্রহে মানুষ এসেছে তার চেয়ে পুরনো কোনো গ্রহ থেকে, আবার সেখানে মানুষ এসেছে আরো প্রাচীন কোনো গ্রহ থেকে। এভাবে পিছনে যেতে থাকলে আমরা একটা বিন্দুতে গিয়ে এক হয়ে যাব, যেখান থেকে মানুষ চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। সেটাই হচ্ছে–মূল গ্রহ।
ট্র্যাভিজের চোখে সাথে সাথেই ভুল ধরা পড়ল। মূল গ্রহ তো একাধিক হতে পারে?
অবশ্যই না। গ্যালাক্সির সব মানুষের গঠন বৈশিষ্ট্য এক ধরনের। একই। বৈশিষ্ট্যের অধিকারী কোনো প্রজাতির উৎপত্তি একাধিক উৎস থেকে হতে পারে না। একেবারেই অসম্ভব।
আপনি কিভাবে জানেন?
প্রথমত- পেলোরেট যেন খুব জটিল বিষয় বোঝাচ্ছে, সেভাবে ডান হাত দিয়ে। বা হাতের আঙ্গুল চেপে ধরে বলল, মাই ডিয়ার ফেলো, তুমি আমার কথা বিশ্বাস। করতে পার।
ট্র্যাভিজ ভদ্রতার সাথে মাথা নিচু করে সম্মান জানালো। আমি স্বপ্নেও আপনাকে অবিশ্বাস করার কথা ভাবতে পারি না, প্রফেসর পেলোরেট। ধরা যাক একটা মূল। গ্রহ রয়েছে, কিন্তু সম্ভাবনা আছে একাধিক গ্রহ সেই সম্মানের দাবীদার হতে চাইবে।