পেলোরেট যতটুকু বুঝতে পেরেছে তাতে মনে হয়েছে, ক্রাইসিসটা ছিল মূলত ফাউণ্ডেশনের রাজধানী টার্মিনাসে থাকবে নাকি অন্য কোথাও সরানো হবে। ক্রাইসিস দূর হলেও সে নিশ্চিত নয় তার ধারণা ঠিক ছিল কিনা, ঠিক হলেও হ্যারী সেলডন কোনো পক্ষে ভোট দিয়েছেন।
বড় কথা সেলডন আবির্ভূত হয়ে চলে গেছেন এবং তার প্রত্যাশিত দিন এসে গেছে।
দুপুর দুইটার কিছু পরে পেলোরেট-এর শহরতলীর নির্জন বাড়ির সামনে একটা গ্রাউণ্ড কার এসে থামল।
পিছনের দরজা খুলে প্রথমে মেয়রের নিরাপত্তা বাহিনীর পোশাক পরা একজন গার্ড তারপর এক সুদর্শন তরুণ, তার পেছনে আরো দুজন গার্ড নামল।
পেলোরেট খুশী। কারণ মেয়র তার কাজকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছেন। যে লোকটা তার সঙ্গী হবে তাকে সসম্মানে গার্ড দেয়া হচ্ছে, এবং তাকে কথা দেয়া হয়েছে একটা প্রথম শ্রেণীর আধুনিক মহাকাশযান দেয়া হবে। সেটা চালাবে তার সঙ্গী।
দরজা খুলে দিল হাউজকিপার। তরুণ ভিতরে প্রবেশ করার পর দুজন গার্ড দরজার দুপাশে পজিশন নিল। আরেকজন গার্ড বাইরেই থাকল। জানালা দিয়ে পেলোরেট দেখল আরেকটা গ্রাউন্ড কার আসছে। অতিরিক্ত গার্ড!
অবাক কাণ্ড!
ঘুরে অতিথিকে চিনতে পেরে সে আরো অবাক হয়ে গেল। এই লোককে সে হলোকাষ্টে দেখেছে, তুমি সেই কাউন্সিলম্যান। ট্র্যাভিজ!
গোলান ট্র্যাভিজ। ঠিকই ধরেছেন। আপনি প্রফেসর জেনোভ পেলোরেট?
হ্যাঁ, হ্যাঁ, পেলোরেট বলল। তুমিই আমার সাথে
আমরা দুজন একসাথে বেড়াতে যাবো, ট্র্যাভিজ কাষ্ঠ গলায় বলল।
কিন্তু তুমি ইতিহাসবিদ না।
না, তা নই। আমি একজন কাউন্সিলম্যান, একজন রাজনীতিবিদ।
হ্যাঁ–কিন্তু আমি এত ভাবছি কেন? আমি নিজেই একজন ইতিহাসবিদ তাহলে আরেকজনের প্রয়োজন কি? তুমি মহাকাশযান চালাতে পার?
হ্যাঁ, ভালোই পারি।
বেশ সেটাইতো প্রয়োজন, আর কি চাই। অবশ্য আমি তোমার মতো বাস্তব চিন্তা করিনা ইয়ংম্যান। এটা মেনে নিতে পারলে আশা করি আমরা দুজন ভালো টীম হিসাবে কাজ করতে পারব।
এই মুহূর্তে নিজের বাস্তব চিন্তা নিয়ে আমি খুব একটা উৎসাহিত না, তবে। এতটুকু বুঝতে পারছি যে ভাল টীম না হয়ে আমাদের উপায় নেই।
আশা করি আমার অহেতুক মহাশূন্য ভীতি কেটে যাবে। আমি আগে কখনো। মহাশূন্যে যাইনি, কাউন্সিলম্যান। ভালো কথা, চা খাবে। মনে হচ্ছে আরো কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে। আমি অবশ্য পুরোপুরি তৈরি। দুজনের প্রয়োজনীয় সব কিছু নেয়া হয়েছে। মেয়র বেশ সাহায্য করেছেন। এই প্রজেক্ট নিয়ে তার আগ্রহ অবাক করার মতো।
আপনি আগেই জানতেন তাহলে, কতদিন থেকে? ট্র্যাভিজ জিজ্ঞেস করল।
মেয়র আমার কাছে (পেলোরেট থেমে ভুরু কুঁচকে হিসাব করে নিল) দুই বা তিন সপ্তাহ আগে প্রস্তাব দেন। বেশ খুশী হয়েছিলাম। এখন বুঝতে পারছি আমার আরেকজন ইতিহাসবিদ না একজন পাইলট দরকার। আর সঙ্গী হিসাবে তোমাকে পেয়ে আরো খুশী হয়েছি।
দুই বা তিন সপ্তাহ আগে, ট্র্যাভিজ আচ্ছন্ন গলায় পুনরাবৃত্তি করল। সে আগে থেকেই তৈরী হচ্ছে, আর আমি- ট্র্যাভিজের মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেল।
কিছু বলছ?
কিছু না, প্রফেসর। নিজের মনে কথা বলা আমার একটা বদভ্যাস। আপনাকে কষ্ট করে মানিয়ে নিতে হবে।
নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই, পেলোরেট বলল, ট্র্যাভিজকে হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছে ডাইনিং রুমের দিকে, তার হাউজকীপার টেবিলের উপর চা তৈরি করে রেখে গেছে। খোলাখুলি বলতে গেলে, মেয়র বলেছেন আমাদের যত সময় দরকার নিতে পারি। পুরো গ্যালাক্সিতে আমরা সাহায্য পাবো এবং যে কোনো স্থান থেকেই ফাউণ্ডেশনের ফান্ড ব্যবহার করতে পারব। মেয়র অবশ্য বুঝে শুনে খরচ করতে বলেছেন। পেলোরেট ঠোঁট ভিজিয়ে হাত ঘষতে লাগল। বসো, মাই গুড ফেলো, বসো। হয়তো আগামী অনেকগুলো দিনের মধ্যে এটাই টার্মিনাসে আমাদের শেষ লাঞ্চ।
ট্র্যাভিজ বসল। আপনার পরিবার আছে, প্রফেসর?
এক ছেলে। সান্তানী বিশ্ববিদ্যালয় ফ্যাকাল্টিতে আছে, কেমিস্ট বা ঐ ধরনের কিছু একটা হবে। মায়ের সাথে থাকে। তার মা আবার অনেকদিন আগেই আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। কাজেই আমার কোনো দায়দায়িত্ব নেই, কোনো পোষ্য নেই। তোমারও বোধহয় নেই–স্যান্ডউইচ আছে, নিজে নিয়ে খাও, মাই বয়।
এই মুহূর্তে কেউ নেই। মেয়ে বন্ধু কয়েকজন আছে। তবে স্থায়ী সম্পর্ক নেই।
হা। ব্যাপারটা বেশ মজার বাচ্চা কাচ্চা নেই নিশ্চয়ই।
না।
বেশ। আমার আসলে প্রয়োজন তারুণ্য, প্রাণপ্রাচুর্য এবং এমন একজন যে গ্যালাক্সির গোলকধাঁধায় নিজের পথ করে নিতে পারবে। আমরা একটা অনুসন্ধানে চলেছি–অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুসন্ধান। কোনো বাহ্যিক পরিবর্তন নেই, কিন্তু পেলোরেট-এর শান্ত মুখ এবং শান্ত স্বর একটা অপার্থিব আবহ তৈরি করেছে।
ট্র্যাভিজ চোখ ছোট করে জিজ্ঞেস করল, গুরুত্বপূর্ণ অনুসন্ধান?
হ্যাঁ। গ্যালাক্সির দশ মিলিয়ন বসতিপূর্ণ গ্রহের ভেতর এক অমূল্য রতন লুকিয়ে আছে এবং আমাদের হাতে সামান্য সূত্রও নেই। আমরা খুঁজে পেলে, পুরস্কার হবে অমূল্য। যদি বের করতে পারি, মাই বয়, ট্র্যাভিজ বিশ্বাস করো–এই মহাবিশ্ব ধ্বংস হয়ে গেলেও আমাদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
যে পুরস্কারের কথা বলছেন–এই অমূল্য রত্ন-
আমি সেই লেখিকা–আর্কেডি ডেরিল-এর মতো কথা বলছি–দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনারদের মতো তাইনা? তুমি যে থমকে গেছ, তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। পেলোরেট এমনভবে পিছন দিকে ঘাড় বাঁকালো যেন প্রচণ্ড হাসিতে ফেটে যাবে কিন্তু শুধু মৃদু একটু হাসল। এর ভেতর অলীক বা বাড়াবাড়ি কিছু নেই, নিশ্চিত থাক।