বলেই চলে সে, অবশ্যি এতে কিছু আসে যায় না। ওরা যদি আদৌ বাইরে না বেরোয় তাহলেই বা ক্ষতিটা কী? নিচেই ওরা সুখী। আর সাম্রাজ্য চালায় তো ওরাই। আমরা কত উঁচুতে আছি বলে মনে হয় আপনার?
গাল উত্তর দিল, আধ মাইল? বলেই ভাবল কথাটা বোকার মতো শোনাল কিনা।
তাই শোনাল হয়ত, কেননা জেরিল মুখ টিপে, শব্দ করে হাসল। বলল, না, মাত্র পাঁচশো ফুট।
কী! কিন্তু এলিভেটর তো প্রায়-?
জানি। কিন্তু ঐ সময়ের বেশির ভাগই ব্যয় হয়েছে গ্রাউণ্ড লেভেল পর্যন্ত উঠতে। মাটির নিচে এক মাইলেরও বেশি গভীর টানেল খোঁড়া রয়েছে ট্র্যানটরে। গ্রহটা আইসবার্গের মতো অনেকটা। দশ ভাগের নয় ভাগই চোখের আড়ালে। উপকূল অঞ্চলে তো সাব-ওশান সয়েলের কয়েক মাইল নিচেও টানেল আছে। সত্যি কথা বলতে কী, আমরা এতই নিচে বাস করি যে, আমাদের প্রয়োজনীয় সমস্ত শক্তির জন্য গ্রাউণ্ড লেভেল আর তার মাইল দুয়েক নিচের মধ্যেকার তাপমাত্রার পার্থক্যটাকে কাজে লাগাতে পারি। আপনি জানতেন কথাটা?
না, আমি ভেবেছিলাম আপনারা অ্যাটমিক জেনারেটর ব্যবহার করেন।
একসময় করতাম। কিন্তু এটা বেশি সস্তা।
আমারও তাই মনে হয়।
তা, সব মিলিয়ে কী মনে হচ্ছে? মুহূর্তের জন্য সদাশয় ভাবটা উবে গিয়ে ধুরন্ধর একটা ভাব ফুটে উঠল লোকটার চেহারায়। অনেকটা ধূর্তের মতো দেখাচ্ছে তাকে এখন।
একটু অসহায় বোধ করল গাল। তারপর আবার আগের বিশেষণটা ব্যবহার করল সে, অসাধারণ।
এখানে কি ছুটিতে এসেছেন? বেড়াবেন? দর্শনীয় জায়গা দেখবেন?
ঠিক তা নয়। সত্যি বলতে, ট্র্যানটরে বেড়াতে আসার ইচ্ছে আমার অনেক দিনের। কিন্তু এসেছি আসলে একটা কাজের জন্য।
ও!
আরেকটু ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন বোধ করল গাল। ট্রানটর ইউনিভার্সিটিতে ড. সেলডনের একটা প্রজেক্টে।
অপয়া সেলডন?
না। আমি হ্যারি সেলডনের কথা বলছি। সাইকোহিস্টোরিয়ান সেলডন। অপয়া সেলডন বলে কাউকে চিনি না।
আমিও হ্যারির কথাই বলছি। লোকে ওকে অপয়া বলে ডাকে। গালি, বুঝতেই পারছেন। কেবলই ধ্বংসের ভবিষ্যদ্বাণী করে লোকটা।
তাই নাকি? গাল সত্যিই অবাক হল।
সত্যিই তাই, আপনার জানা উচিত। এখন আর হাসছে না লোকটা। আপনি তাহলে তার প্রজেক্টে কাজ করতে এসেছেন?
ইয়ে- মানে, হ্যাঁ। আমি যাকে বলে, গণিতবিদ। তা, উনি ধ্বংসের কথা বলেন কেন? কী ধরনের ধ্বংস?।
কী ধরনের বলে মনে হয় আপনার?
দেখুন, এ-সম্পর্কে আমার বিন্দুমাত্র ধারণা নেই। আমি শুধু ড. সেলডন আর তাঁর দল যে সব গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন সেগুলো পড়েছি। ওগুলো সব গাণিতিক তত্ত্ব নিয়ে লেখা।
আচ্ছা।
গাল বিব্রত বোধ করল। এবার আমি আমার ঘরে যাই। খুব খুশি হলাম আপনার সঙ্গে পরিচিত হয়ে।
গা-ছাড়াভাবে হাত নেড়ে ওকে বিদায় জানাল জেরিল।
গাল ঘরে ঢুকে দেখে একজন লোক বসে আছে। ও এততাই অবাক হল যে, এ পরিস্থিতিতে অবধারিতভাবে ঠোঁটের ডগায় চলে আসা আপনি এখানে কী করছেন? প্রশ্নটাও করতে পারল না।
চেয়ার ছেড়ে দাঁড়াল লোকটি। এগিয়ে এল। লোকটি বৃদ্ধ। প্রায় সমস্ত মাথা জোড়া টাক। একটু খুঁড়িয়ে হাঁটছে সে। তবে তার চোখ জোড়া উজ্জ্বল আর নীল।
গালের হতবুদ্ধি মস্তিস্ক বহুবার ছবিতে দেখা একটি মুখের স্মৃতির পাশাপাশি এই মুখটিকে স্থাপন করার ঠিক আগের মুহূর্তে বৃদ্ধ লোকটি বলে উঠল, আমি হ্যারি সেলডন।
.
চার
সাইকোহিস্ট্রি…অগাণিতিক ধারণার সাহায্যে গাল ডরনিক সাইকোহিস্ট্রির সংজ্ঞা দিয়েছেন এই বলে যে, এটি গণিতের সেই বিশেষ শাখা যা একটি নির্দিষ্ট সামাজিক এবং অর্থনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে মানবগোষ্ঠীসমূহের প্রতিক্রিয়া নিয়ে কাজ করে।…
…উল্লিখিত সব কটি সংজ্ঞার মধ্যেই একটি ধারণা অন্তর্নিহিত রয়েছে যে, অভ্রান্ত বা কার্যকর পরিসংখ্যানগত প্রয়োগের জন্যে বিশেষ মানবগোষ্ঠীকে হতে হবে যথেষ্ট বড়। এ-ধরনের গোষ্ঠীর আকার কত বড় হবে তা সেলডনের প্রথম সূত্র থেকে বের করা যায়। এ সূত্র অনুযায়ী…।
…আরেকটি প্রয়োজনীয় ধারণা এই যে, প্রতিক্রিয়াগুলো যাতে সত্যিই অ পূর্বনির্ধারিত হয় সেজন্য মানবগোষ্ঠীকে মনো-ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ বা সাইকোহিস্টোরিক অ্যানালাইসিস সম্পর্কে অনবহিত থাকতে হবে…।
সেলডন ফাংশন-এর উন্নতির ওপরই নির্ভর করছে সমস্ত কার্যকর সাইকোহিস্ট্রির ভিত্তি। এই সেলডন ফাংশনগুলোর বৈশিষ্ট্য কিছু সামাজিক এবং
অর্থনৈতিক শক্তির অনুরূপ। আর সেই শক্তিগুলো হচ্ছে…
–ইনসাইক্লোপীডিয়া গ্যালাকটিকা
.
গুড আফটারনুন, স্যার, বলে উঠল গাল। আ-আমি–
ভাবোনি যে আগামীকালের আগেই দেখা হয়ে যাবে আমাদের, এই তো? স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে হয়ত হতো না। কিন্তু এ-মুহূর্তে অবস্থা এমনই দাঁড়িয়েছে যে, তোমাকে আমাদের সহকর্মী হিসেবে পেতে হলে দ্রুত কাজ করা ছাড়া উপায় ছিল না। নতুন লোক পাওয়া দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে।
ঠিক বুঝতে পারলাম না, স্যার।
অবজার্ভেশান টাওয়ারে তুমি একজন লোকের সঙ্গে কথা বলেছিলে, তাই না?
হ্যাঁ। লোকটার ফাস্ট নেইম জেরিল। এর বেশি কিছু জানি না তার সম্পর্কে।
লোকটার নামে কিছু আসে যায় না। আসল কথা হচ্ছে, লোকটা কমিশন অভ পাবলিক সেইফটি-র একজন এজেন্ট। স্পেস-পোর্ট থেকেই তোমাকে ফলো করছিল সে।
কিন্তু কেন? আমি তো কিছু বুঝতে পারছি না।