সুপারভাইবার বলে, ওয়ান পয়েন্ট ওয়ান টু।
খুচরো পয়সার জন্য পকেট হাতড়ায় গাল। জিগ্যেস করল, কোথায় যাচ্ছি আমি?
আলোটা ফলো করুন। যতক্ষণ ঠিক পথে যাবেন টিকেটটা জ্বলতে থাকবে।
মুখ তুলে হাঁটতে শুরু করল গাল। বিশাল মেঝে বরাবর নিজের নিজের ট্রেইল ধরে এগিয়ে যাচ্ছে সবাই। ইন্টারসেকশন পয়েন্টগুলোতে তোতি করতে করতে সুড়ৎ করে বেরিয়ে চলে যাচ্ছে যার যার গন্তব্যে।
গালের ট্রেইল ফুরোল। চকচকে নতুন, দাগশূন্য প্লস্টো-টেক্সটাইলে তৈরি, উজ্জ্বল চোখ ধাঁধানো নীল-হলুদ ইউনিফর্ম পরা এক লোক ওর ব্যাগ দুটোর দিকে হাত বাড়িয়ে দিল। লাক্সর-এর ডিরেক্ট লাইন, লোকটা বলল।
যে লোকটা গালকে অনুসরণ করছিল, সে শুনতে পেল কথাগুলো। উত্তরে গালের বলা চমৎকার শব্দটাও কানে গেল তার। সে দেখল, নাক ভোতা একটা বাহনে চেপে বসল যুবকটি।
সোজা ওপরের দিকে উঠে গেল ট্যাক্সি। বাঁকা, স্বচ্ছ জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল গাল। বন্ধ একটা জায়গায় এই আকাশভ্রমণে বেশ রোমাঞ্চিত বোধ করছে সে। সহজাত প্রবৃত্তির বশেই ড্রাইভারের সীটের পেছনের অংশটা আঁকড়ে ধরল সে। সঙ্কুচিত হয়ে এল বিশালতা। লোকগুলো সব পিঁপড়ের আকার ধারণ করল। গোটা দৃশ্যটা ছোট হয়ে এলো আরো। তারপর পিছিয়ে যেতে থাকল।
সামনে একটা দেয়াল দেখা দিল। অনেক উঁচুতে, শূন্যেই শুরু হয়েছে সেটা, তারপর ওপরে উঠে হারিয়ে গেছে চোখের আড়ালে। শত শত গর্ত দেয়ালটার গায়ে। আসলে টানেলের মুখ ওগুলো। গালের ট্যাক্সি সেই অগুনতি মুখের একটা লক্ষ্য করে এগোয়। তারপর একসময় ঢুকে যায় সুড়ৎ করে। মুহূর্তের জন্য গাল
অবাক হয়ে ভাবে, এত মুখের মধ্যে ড্রাইভার লোকটা ঠিক মুখটা চিনল কী করে?
নিকষকালো অন্ধকার ঘেঁকে ধরেছে ট্যাক্সিটাকে। মাঝে মাঝে শুধু রঙিন সিগন্যাল লাইটের আলো দ্রুত পেছনে সরে যাচ্ছে। সঁ সঁ একটা শব্দ হচ্ছে বাতাসে।
ট্যাক্সির গতি কমে আসতে সামনে ঝুঁকে পড়ল গাল। টানেল থেকে বেরিয়ে এল ওরা। তারপর আবার নেমে এল গ্রাউণ্ড লেভেলে।
লাক্সর হোটেল, ঘোষণা করল ড্রাইভার, যদিও তার কোনো দরকার ছিল না। ব্যাগ দুটোসহ গালকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করল সে। ব্যবসায়িক ভঙ্গিতে পকেটে ঢোকাল টেন্থক্রেডিট বকশিশ। তারপর একজন অপেক্ষমান যাত্রীকে তুলে নিয়ে উড়াল দিল ফের।
শিপ থেকে নামার পর এপর্যন্ত আকাশের চিহ্নটুকু চোখে পড়েনি গালের!
.
তিন
ট্র্যানটর-… এয়োদশ সহস্রাব্দের গোড়াতেই চরমে পৌঁছায় এই প্রবণতাটি। গ্যালাক্সির কেন্দ্রীয় অঞ্চলের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এবং শিল্পোন্নত বিশ্বগুলোর মধ্যে অবস্থিত হওয়াতে আর নিরবচ্ছিন্ন কয়েকশো প্রজন্ম ধরে ইম্পেরিয়াল গভর্নমেন্ট-এর মধ্যমণি হয়ে থাকার ফলে, ট্রানটর গ্রহটি অবধারিতভাবে সর্বকালের সবচেয়ে জনবহুল এবং সমৃদ্ধশালী মানবগোষ্ঠীর বাসস্থান হয়ে ওঠে।
গ্রহটির ক্রমবর্ধমান নগরায়ন শেষ পর্যন্ত উপনীত হয় চূড়ান্ত অবস্থায়। সাত কোটি পঞ্চাশ লক্ষ বর্গমাইলব্যাপী ট্র্যানটরের সমস্ত ভূ-ভাগই পরিণত হয় একটি শহরে। জনসংখ্যা পৌঁছায় চার হাজার কোটিরও ওপর। বিশাল এই জনগোষ্ঠী প্রায় পুরোপুরিভাবেই আত্মনিয়োগ করে এম্পায়ার-এর প্রশাসনিক কাজে। সেই সঙ্গে তারা এটাও উপলব্ধি করে যে কাজটির জটিলতার তুলনায় তাদের সংখ্যা নিতান্তই নগণ্য (এখানে স্মরণ করা যেতে পারে যে, পরবর্তী সম্রাটদের নির্জীব নেতৃত্বে গ্যালাকটিক এম্পায়ার-এর সুষ্ঠু পরিচালনা হয়ে পড়ে অসম্ভব এবং এম্পায়ার-এর পতনের এটি একটি মূল কারণ)। প্রতিদিন কয়েক লাখ শিপের বহর বিশটি কৃষিভিত্তিক বিশ্বের উৎপন্ন দ্রব্য ট্রানটরবাসীদের খাবার টেবিলে পৌঁছে দিত।…
খাদ্যের জন্য, এবং প্রকৃতপক্ষে, জীবনধারণের প্রয়োজনীয় সমস্ত কিছুর ব্যাপারে ট্র্যানটরের এই পরনির্ভরতার কারণেই গ্রহটি ক্রমেই নিজেকে এমন এক শিকারে পরিণত করে যাকে অবরোধের মাধ্যমে খুব সহজেই গ্রাস করা সম্ভব। এম্পায়ার-এর শেষ সহস্রাব্দে একঘেয়ে অসংখ্য বিদ্রোহ একের পর এক বিভিন্ন সম্রাটকে এ-ব্যাপারে সচেতন করে তোলে। ফলে, যে কোনো মূল্যে ট্রানটরের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাই হয়ে পড়ে ইম্পেরিয়াল পলিসির একমাত্র উদ্দেশ্য।
-ইনসাইক্রেপীডিয়া গ্যালাকটকা
.
সূর্য আলো দিচ্ছে কি না বুঝতে পারছে না গাল। সেজন্যই এখন দিন না রাত ঠাহর করতে পারছে না সে। কাউকে জিগ্যেস করতে লজ্জা লাগছে তার। মনে হল গোটা গ্রহটাই ধাতু দিয়ে ঢাকা। একটু আগে ও যে-খাবার খেল, সেটাকে বলা হয়েছিল লাঞ্চ। তবে অনেক গ্রহ আছে যেখানে জীবনযাত্রা চলে একটা স্ট্যাণ্ডার্ড টাইম-স্কেল অনুযায়ী এবং সেখানে দিনরাতের সম্ভাব্য অসুবিধাজনক পরিবর্তনের দিকে ভ্রূক্ষেপও করা হয় না। সব গ্রহের আবর্তনের সময় এক নয় এবং ট্রানটরের কত সেটা জানে না গাল।
সান রুম সাইন দেখে খুব উৎসাহ নিয়ে ছুটে গেল সে। কিন্তু গিয়ে দেখল, ওটা স্রেফ কৃত্রিম বিকিরণে রোদ পোনর জায়গা। একটু ইতস্তত করে লাক্সর-এর মেইন লবিতে চলে এল সে। রুম ক্লার্ককে জিগ্যেস করল, প্ল্যানেটরি টুরের টিকিট কোথায় কিনতে পাওয়া যাবে?
এখানেই।
শুরু হবে কখন?
একটুর জন্য মিস করলেন। পরেরটা আগামীকাল। এখন টিকিট কিনে রাখলে আমরা আপনার জন্য জায়গা করে রাখব।