বৃহস্পতিবার, মে 15, 2025
  • Login
BnBoi.Com
No Result
View All Result
No Result
View All Result
BnBoi.Com
No Result
View All Result

জু – অৎসুইশি

***

প্রথমে আমি ধরতে পারিনি কি হচ্ছিল। যতক্ষণে বুঝতে পেরেছিলাম ততক্ষনে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল।

বাবা আর আমি সোফায় বসে টিভি দেখছিলাম। বাবা সামনের দিকে হেলে দু হাতে থুতনি রেখে বসে ছিলেন। মুখটা অন্ধকার। আমরা অলৌকিক ব্যাপার স্যাপার নিয়ে একটা শো দেখছিলাম-একটা ভৌতিক গল্প আমি জানতাম ভয়ের হবে, কিন্তু তারপরেও দেখা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারছিলাম না। গল্পটা ছিল এক লোকের ট্রাফিক এক্সিডেন্টে মরে গিয়ে ভুত হয়ে যাওয়া নিয়ে। কিন্তু গল্পে একটা প্যাঁচ ছিল। ভুতটা বুঝতে পারছিল না যে মৃত, এবং কিছুই হয়নি এমনভাবে বাসায় ফিরে যায়।

মা দরজা খুলে লিভিং রুমে এলেন। বাবার মত তাকেও হাসিখুশি দেখাচ্ছিল না।

“তুমি একা একা টিভি দেখছ কেন?” মা আমাকে বললেন। একম সাধারণভাবে বলা, আমি প্রায় খেয়ালই করিনি। কিন্তু এখন পেছনে ফিরে তাকালে আমি নিশ্চিত, তিনি এ শব্দ দুটো বলেছিলেন, “একা একা।”

আমার কথাটা শুনে অস্বস্তি হল, বাবার দিকে তাকালাম। আমি ভেবেছিলাম তাকে উপেক্ষা করার জন্য তিনি ক্ষেপে যাবেন। কিন্তু তাকে দেখে মনে হল না মা যে রুমে ঢুকেছে তা তিনি খেয়াল করেছেন।

“কি করছ তুমি?” মা বললেন। “ডান দিকে তাকিয়ে কাকে দেখছ? ওখানে তো কেউ নেই।”

মায়ের মুখভঙ্গি খুবই অস্বাভাবিক মনে হচ্ছিল, আর সেজন্য আমার আরো নার্ভাস লাগছিল।

এর কিছুক্ষণ পর বাবা চুপচাপ সোফা থেকে উঠে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। আমার বা মায়ের দিকে তাকালেন না। আমি খুবই বিভ্রান্ত বোধ করছিলাম। অদ্ভুত কিছু একটা ঘটছে, আমি জানি না সেটা কি। আমি নিশ্চিত আমাকে দেখে তখন মনে হচ্ছিল যে কোন মুহূর্তে কেঁদে ফেলব। মা এক মুঠো কার্ড বের করে এনে হেসে হেসে বললেন, “চল ওল্ড মেইড খেলি!” আমি ছটফট করতে শুরু করেছিলাম। কিন্তু মায়ের হাসিটা বন্ধুত্বপূর্ণ আর ভরসাদায়ক ছিল, যে কারনে একটু পর আমি শান্ত হলাম।

মা আর আমি কিছুক্ষণ খেলার পর বাবা লিভিং রুমে এসে ঢুকলেন।

“একা একা কি করছ? সলিটেয়ার খেলছ নাকি?” তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন।

তারপর হাত বাড়িয়ে দিলেন আমার দিকে। “চল আজকে বাইরে খেতে যাই,” বাবা বললেন।

আমি সোফা থেকে নেমে দৌড়ে বাবার কাছে গেলাম। পেছনে ফিরে দেখি মা কার্ড হাতে বসে আছে। তার চোখের দৃষ্টি আমাকে বলছিল, “কোথায় যাচ্ছ?”

আমি ভেবেছিলাম মাও আমাদের সাথে বাইরে যাবে, কিন্তু যাননি। আমি লিভিং রুম থেকে বের হতেই বাবা আলো নিভিয়ে দরজা লক করে দিলেন। মা আমাদের সাথে আসেননি।

আমি আর বাবা একটা ফ্যামিলি রেস্টুরেন্টে গেলাম। আর ওখানে পুরোটা সময় মাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা হচ্ছিল আমার।

“এখন থেকে জীবনটা কঠিন হতে যাচ্ছে…” বাবা নিজ মনে বলেছিলেন।

***

পরদিনের ডিনারটাও অস্বাভাবিক ছিল। মা শুধু আমার আর তার জন্য ডিনার বানিয়ে ছিলেন। কিচেনের টেবিলের উপর শুধু আমার আর তার জন্য প্লেট আর চলটিক সাজানো।

তারপর বাবা বাসায় ফিরলেন, এমন ভাব করলেন, মায়ের বানানো খাবার তার চোখেই পড়েনি। ব্যাগ থেকে কিছু বক্স করা খাবার বের করে লিভিং রুমের নিচু টেবিলটায় রাখলেন। ওগুলো কনভেনিয়েন্স স্টোর থেকে কেনা। একটা তার জন্য একটা আমার জন্য।

কিচেনে বসে আমি মায়ের কাছে জানতে চাইলাম, “বাবার ডিনার কোথায়?”

“হুম?” চোখে প্রশ্ন নিয়ে মা আমার দিকে তাকালেন। তাকে নিশুপ দেখাল, অনেকটা এরকম যে আমার বলা উচিত নয় এমন কিছু আমি বলে ফেলেছি। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। আবার প্রশ্ন করতে চাইলাম না।

তারপর লিভিং রুম থেকে শুনতে পেলাম, “অ্যাঁই তুমি ওখানে কি করছ? এই খাবারগুলোর কোনটা তুমি খেতে চাও?” বাবা বলছিলেন। বাবা যখন মায়ের সাথে কথা বলতেন তখন তার গলার সুর একরকম হত, যখন আমার সাথে কথা বলতেন তখন আরেক রকম হত। তাই আমি বুঝতে পারছিলাম যে তিনি কথাগুলো আমাকে উদ্দেশ্য করেই বলছিলেন।

আমি কিচেন থেকে বেরিয়ে লিভিং রুমে গেলাম। বাবা ওখানে বসে গলার টাই ঢিলে করছিলেন।

“মায়ের জন্য নেই?” আমি জিজ্ঞেস করলাম। বাবা আমার দিকে অদ্ভুতভাবে তাকালেন। তার হাতের নড়াচড়া হঠাৎ থমকে গিয়েছিল। আমি ঠিকই বুঝেছিলাম। প্রশ্নটা করা আমার উচিত হয়নি।

আমার মনে হল দুজনকেই সমান পরিমান মনোযোগ দেয়া উচিত। তাই কয়েকবার কিচেন আর লিভিং রুমের মধ্যে যাওয়া আসা করলাম। মায়ের রান্না করা খাবার একটু খেয়ে লিভিং রুমে গিয়ে টেকআউট মিলের থেকে একটু খেলাম। এভাবে কয়েকবার যাওয়া আসা করলাম।

শেষে গিয়ে দুটো খাবারই আমি অর্ধেক অর্ধেক করে শেষ করতে পারলাম। কিন্তু সেজন্য দুজনের কেউই আমার উপর রাগ দেখালেন না। ডিনার শেষ হলে আমি সোফায় গিয়ে আমার নির্ধারিত স্থানে বসলাম। মা

আমার বামে বসলেন, বাবা ডানে। আমরা চুপচাপ টিভি দেখছিলাম। খবরে কয়েকদিন আগে ঘটা ট্রেন এক্সিডেন্টের উপর একটা প্রতিবেদন দেখাচ্ছিল।

অন্যদিন এই সময়টা আমাদের হাসিখুশি কাটে। ঐদিন আমার বাবা-মা দুজনেই পুরোপুরি চুপ হয়ে ছিল। খারাপ কিছু একটা ঘটেছিল যার কারনে আমাদের তিনজনের মধ্যে গভীর কোন দূরত্বের সৃষ্টি হয়েছিল। আমি যখন এটা নিয়ে ভাবছিলাম তখন আমার মা আমার দিকে তাকালেন। তার অভিব্যক্তি ছিল সিরিয়াস রকমের।

Page 91 of 96
Prev1...909192...96Next
Previous Post

মমি – রকিব হাসান

Next Post

ব্ল্যাক ফেয়ারি টেইল – অৎসুইশি

Next Post

ব্ল্যাক ফেয়ারি টেইল - অৎসুইশি

রত্নদানো - রকিব হাসান

মন্তব্য করুন জবাব বাতিল

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সাম্প্রতিক প্রকাশনাসমূহ

  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৫: ভূমিকম্প – শামসুদ্দীন নওয়াব
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৮: বিভীষিকার প্রহর – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: বড়দিনের ছুটি – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: আলাস্কা অভিযান – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: আমিই কিশোর – রকিব হাসান

বিভাগসমূহ

© 2023 BnBoi - All Right Reserved

No Result
View All Result

© 2023 BnBoi - All Right Reserved

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In