আমি বলে চললাম। “সেক্ষেত্রে ইনজেকশন নেয়ার কারনে আমি শান্তির সাথে মৃত্যুবরণ করব ঠিকই কিন্তু জানতে পারব না যে প্লেন ক্রাশ করল নাকি করল না। আমি কখনো জানতে পারব না, জিনিসটা আমি যে কারনে কিনলাম তা কাজ করল নাকি করল না। আর আপনি, বেঁচে যাওয়ার পর প্লেন থেকে নেমে সোজা ব্যাংকে যাবেন আর আমার একাউন্ট সাফ করে দিবেন। আপনার জন্য চমৎকার লাভ। যদি আমরা ধরে নেই আপনি আসলে এই ইনজেকশনের জন্য একশ ইয়েন দিয়েছেন তাহলে আপনার লাভ হবে দুই মিলিয়ন নয় শত নিরানব্বই হাজার নয়শ ইয়েন।”
“স্বীকার করছি, সেরকম একটা সম্ভাবনা অবশ্যই আছে,” সেলসম্যান বলল। “যদিও আপনি বলার আগে আমি বিষয়টা নিয়ে ভাবিনি।”
“আপনি খুবই বাজে ধরনের মিথ্যুক।”
“আসলে হ্যাঁ, আপনি যেরকম বললেন সেরকম সম্ভাবনা আসলেই আছে যে প্লেনটা হয়ত শেষ পর্যন্ত ক্রাশ করল না। ছেলেটার দিকে তাকিয়ে দেখুন। পিস্তল হাতে কিরকম জবরজং হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে নিজের পায়েই গুলি করে বসতে পারে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ভাগ্য ওর পক্ষেই খেলছে। কেউ এখন পর্যন্ত ওকে ছুঁতেও পারেনি। সবকিছুর নিয়ন্ত্রন ওর হাতেই রয়েছে। এরকম যদি চলতে থাকে তাহলে আমার কোন সন্দেহ নেই যে আর ঘন্টা খানেকের মধ্যেই আমরা টি-বিশ্ববিদ্যালয়ের বিল্ডিংগুলোর উপর ধসে পড়তে যাচ্ছি।”
“যাই হোক, আমার মনে হচ্ছে আপনি এসব বলছেন যাতে আপনি ডাগটা বিক্রি করতে পারেন। বাজি ধরে বলতে পারি মনে মনে আপনি আশা করছেন কেউ একজন ঠিকই ছেলেটাকে ধরাশায়ী করে ফেলবে।”
“সেরকম কিছু আমি জানি না।”
লোকটার ঠোঁটে মৃদু হাসি দেখা গেল। ধূর্ত শেয়ালের মত হাসি।
“আমি ওরকম বাজি ধরতাম যদি এতে আমার কোন সুবিধা দেখতে পেতাম,” সে বলল, “কিন্তু এখন এটা স্পষ্ট যে আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে ডাগটা কিনবেন কি কিনবেন না। যদি আপনার মনে হয় কেউ ছেলেটাকে প্লেনসহ আত্মহত্যা করা থেকে আটকাতে পারবে না তাহলে আপনার উচিত হবে ড্রাগটা কেনা। যদি আপনি মরতেই বসেন তাহলে নির্মমভাবে মৃত্যুবরণ করার চেয়ে শান্তিপূর্ণভাবে মৃত্যুবরণ করা অনেক ভাল। অন্যদিকে আপনি যদি ভাবেন, ছেলেটা যা করতে চাইছে তাতে ব্যর্থ হবে তাহলে আপনার জন্য ড্রাগটা না কেনাই ঠিক হবে। প্লেন যদি ক্রাশ না করে তাহলে শান্তিপূর্ণ মৃত্যুবরণ করাও বোকামি হবে।”
“এসব আপনি বলছেন আমাকে পটানোর জন্য। খুবই বাজে আইডিয়া।”
আমি জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম। আগের মতই বাইরে খালি নীল আকাশ আর সাদা মেঘ দেখা যাচ্ছিল।
“ব্যাপারটা আসলে ইন্টারেস্টিং। আমার মনে হয় সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে ছেলেটাকে আরো কিছুক্ষণ আমার খেয়াল করে দেখা উচিত। দাম নিয়ে আমরা আরো কিছুক্ষণ কথা বলতে পারি?”
“দামাদামি নিয়ে আমরা এর মধ্যেই অনেক কথা বলেছি। আমি এর মধ্যে কোন সমস্যা দেখতে পাচ্ছি না। আপনি শুধু আমাকে আপনার পিন নাম্বারটা জানাবেন।”
লোকটা কথাগুলো বলতে বলতেই আমি উপলদ্ধি করলাম আমি মারা যাওয়ার পর লোকটা এমনিতেও চাইলে আমার লাগেজ হাতড়াতে পারবে। ত্রিশ হাজার ইয়েন একদম নিশ্চিতভাবে হারাবো। ওকে পিন নাম্বার দিব কি দিব না সেটার উপর নির্ভর করছে সে কতটুকু কি পেতে যাচ্ছে। অন্য কথায় বললে হয় সে হয় ত্রিশ হাজার ইয়েন পাচ্ছে নয়ত তিন মিলিয়ন ত্রিশ হাজার ইয়েন পাচ্ছে।
“আচ্ছা বলুন তো, আপনার পিন নিশ্চয়ই আপনার জন্মতারিখ নয়?”
“হলে কি খুব খারাপ কিছু?”
সে তার কাঁধ তুলল, চেহারা দেখে মনে হল অবাক হয়েছে।
“আপনি জানেন নিশ্চয়ই, আপনার জন্মতারিখ জানা আমার জন্য কঠিন হবে না। আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্সেই আছে। এর অর্থ হল আপনি ইতিমধ্যেই মূল্য তিন মিলিয়ন ত্রিশ হাজার ইয়েনে নির্ধারণ করে ফেলেছেন।”
“আপনিই জিতলেন। আমার জীবন এমনিতেও শেষ ওমিতেও শেষ।”
আমার হাসি দেখে লোকটাও হাসল।
“এই যে আপনারা দুজন,” উপর থেকে একটা কণ্ঠ ভেসে এল। “মনে হচ্ছে ওখানে আপনারা দুজন খুব ভাল সময় কাটাচ্ছেন?”
“এক মিনিট দাঁড়ান, আমাদেরকে একটু সময় দিন।” সেলসম্যান বলল। “আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যবসায়িক লেনদেন নিয়ে আলাপ করছি। প্রায় শেষ পর্যায়ে এসে গিয়েছি। তারপর মাথা তুলে দেখতে গেল কে কথা বলছে। দেখার পর ওর গলার স্বর হাঁসের মত ফসফ্যাসে শোনাতে লাগল।
“ওহ! আমি দুঃখিত…”
“একদমই না। আমি দুঃখিত আপনাদের ডিস্টার্ব করার জন্য। দয়া করে আপনাদের ব্যবসায়িক আলাপ চালিয়ে যান।”
কথাগুলো যে বলছিল সে হল হাইজ্যাকার স্বয়ং। ছেলেটা করিডোরে দাঁড়িয়ে শক্ত হাতে পিস্তলটা ধরে আছে। আমি পিস্তলটার উপর থেকে চোখ সরাতে পারছিলাম না।
কাছের এক সিট থেকে একজন বিশালদেহী লোক উঠে হাইজ্যাকারের দিকে এগুলো। দেখে মনে হচ্ছিল জুডো প্রশিক্ষক ধরনের কেউ হবে হয়ত। আমি আর সেলসম্যান শক্ত হয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম জুডো এক্সপার্ট আর পিস্তল হাতের দুর্বল ছেলেটার লড়াই দেখার জন্য, কিন্তু যেরকম ভেবেছিলাম, জুডো ফাইটারটা ক্যানে পা পিছলে সিটের কোনায় বাড়ি খেয়ে মাথা ফাটিয়ে পড়ে থাকল। হাইজ্যাকার ছেলেটা ওর ঘাড়ে আঘাত করে তারপর পরীক্ষা করল লোকটা বেঁচে আছে কিনা।
৩
“অনেকক্ষণ ধরে আপনাদের দুজনকে খেয়াল করছি,” অল্পবয়সি ছেলেটা আমাদের সারির খালি সিটটায় বসল। ডান থেকে বামে, আমি জানালার পাশে বসে ছিলাম, সেলসম্যান মাঝখানের সিটে, আর হাইজ্যাকার করিডোরের সাথের সিটে। হাইজ্যাক হওয়ার পর পৌনে এক ঘন্টা পার হয়ে গিয়েছে।