“কি নিদারুন অপচয়! আমার বলা হয়ত ঠিক হচ্ছে না কিন্তু আপনি দেখতে খারাপ নন। আপনার ফিগার…”
“জানি।”
“আমি জানি আমার বলা ঠিক হয়নি।”
“কিন্তু আমি কিছু ট্রমায় ভুগেছি যে কারনে লোকজনের সংস্পর্শে ভয় পাই। স্পষ্ট করে বললে পুরুষদের ক্ষেত্রে। অনেক বছর আগে এক লোক আমার সাথে কিছু খারাপ কাজ করেছিল।”
“খারাপ কাজ?”
“হ্যাঁ, যে রকম খারাপ কাজের কথা কেউ লেখার আগে দুইবার ভাববে।”
লোকটা একথা শুনে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ল। আমি নিচু গলায় তাকে জানালাম হাইস্কলে থাকতে আমার
লে থাকতে আমার সাথে কি হয়েছিল। যে লোকটা আমার মন আর শরীর দুটোই টুকরো টুকরো করেছিল তার নাম আর চেহারা আমার স্পষ্ট মনে আছে।
সেলসম্যান লোকটা মনোযোগ দিয়ে আমার কথা শুনল। তার কপাল আর ভুরু থেকে ঘাম গড়িয়ে পড়ল। হাত দিয়ে মুখ চেপে আছে যেন অসুস্থ বোধ করছে। চোখগুলো লাল দেখাল যেন এখনি কেঁদে ফেলবে।
“কী ভয়ংকর। মনে হল যেন কোন থ্রিলার উপন্যাসের কাহিনী শুনলাম। যেখানে ক্রিমিনাল একজন যুবতী নারী। যার অপরাধের মোটিভ হল অতীতে নির্মমভাবে রেপড হওয়া।”
“বুঝলেন তো?” আমি বললাম। “আসল কাহিনী হল, মাত্র কিছুদিন আগে আমি ওই লোকটার বাসার ঠিকানা আবিষ্কার করেছি, যে আমার সাথে এসব করেছিল। টোকিওর এক প্রাইভেট গোয়েন্দাকে ভাড়া করেছিলাম।”
“আপনি কেন তাকে খুঁজে বের করতে চাইছিলেন?”
“আবার জিগায় প্রতিশোধ! প্রতিশোধ নেয়ার জন্য! গোয়েন্দার দেয়া তথ্য অনুযায়ী সে এখন বিবাহিত। একটা বাচ্চাও আছে। সে সুখি জীবন কাটাবে আর আমি বসে বসে আঙুল চুষব? না! সেকারনেই আমি এই প্লেনে চড়েছি। আমার ইচ্ছা ছিল হানেদা এয়ারপোর্টে নামার পর সোজা তার বাড়িতে যাব, তারপর তার চোখের সামনে তার বাচ্চাকে নির্যাতন করব।”
“আর আপনি আমাকে মাথা খারাপ বলছেন? আপনি নিজে কি?”
“আমাকে একা থাকতে দিন। এসবের থেকে মুক্তি চাই আমি।”
আবারো আমরা প্লেনের ভিতর খালি ক্যানটাকে গড়াতে শুনলাম। তারপর গুলির শব্দ হল। এবার আর আমরা কষ্ট করে তাকালামও না। দুজনেই পুরোপুরি নিশ্চিত যে আবারও কেউ একজন উঠে ছেলেটাকে ধরার চেষ্টা করেছে আর ক্যানে পা দিয়ে উল্টিয়ে পড়েছে। তারপর গুলি খেয়ে মরেছে।
“যাই হোক, দশ হাজার ইয়েন দিয়ে আমার একদমই পোষাবে না। যদিও আপনার মত কাউকে একথা বলতে আমার দ্বিধা হচ্ছে, যার জীবনের সকল আনন্দ কিনা দামদামি করায় সীমাবদ্ধ।।”
‘শুনুন। আমি যা বলছি শুনুন। আমি একটা ভাল প্রস্তাব পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে পারব না এখন। আপনি ওই ডাক্তারকে কত দিয়েছেন?”
“এই একটা হাইপোডারমিক সিরিঞ্জ এর জন্য আমি ডাক্তারকে তিন মিলিয়ন ইয়েন দিয়েছি। গাধার বাচ্চা ডাক্তার। এই জিনিস আমার মত সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। যে কারনে দাম এত বেশি নিয়েছে। কিন্তু দেখুন দামটা একদম আপনার ব্যাংক একাউন্টে যা আছে তার সমান। একদম খাপে খাপ মিলে যাওয়ার মত একটা লেনদেন।”
“আমি বুঝতে পারছি না আপনাকে আসলে কতখানি বিশ্বাস করা যায়। কিভাবে বুঝব আপনি সত্যি বলছেন? আপনি হয়ত তিন মিলিয়ন দিয়ে কিনেননি, এখন বানিয়ে বলছেন।”
সেলসম্যানের চোখের দিকে তাকিয়ে আমি বোঝার চেষ্টা করলাম আসলেই সে মিথ্যা বলছিল কিনা। সে তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে নিল।
“মূল দাম যত বেশি ততই ভাল, তাই নয় কি?” অন্যদিকে তাকিয়ে আস্তে করে বলল। মনে হল বিরক্ত।
আমি চিন্তা করলাম ওই ইয়থানাসিয়া ডাগের মূল্য আসলে এখন কত হওয়া উচিত। যে লোক প্ল্যান ক্রাশে মৃত্যু নিয়ে যত ভীত হবে, সে নিশ্চয়ই তত বেশি মূল্য দেয়ার জন্য রাজি থাকবে? কিন্তু ডাগটার মূল্য নির্ধারণের জন্য কি সেটাই একমাত্র ভিত্তি?
“আচ্ছা এটা বলুন, আপনি নিজে কেন ডাগটা ব্যবহার করছেন না?”
“আর কেউ না বুঝলেও আপনি বুঝবেন বলে আমার ধারণা। আমি চাই জীবনের একদম শেষ মহুর্তে কাউকে কিছু বিক্রি করে সন্তুষ্টি পেতে।”
আমি এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতে সিটের পেছন থেকে মাথা তুলে পিস্তল হাতের অল্পবয়সি ছেলেটার দিকে তাকালাম। সে করিডরের মাঝে দাঁড়িয়ে উদ্ভটভাবে পিস্তলটা রিলোড করছিল। হিরো মুডে থাকা দুজন পুরুষ সুযোগের সদ্ব্যবহার করার জন্য লাফিয়ে উঠে ওকে ধরার চেষ্টা করল। কিন্তু যেমনটা হওয়ার কথা ছিল, একজন খালি ক্যানটায় পা ফেলে উলটে পড়ল। আর দ্বিতীয়জন তার গায়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ল। আমরা পরপর দুটো গুলির শব্দ পেলাম। তারপর আবার সব চুপচাপ।
“আমি বুঝতে পারছি। এটা আর কোন ব্যবসায়িক লেনদেন নেই। জুয়া হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
সেলসম্যানের দিকে তাকালাম। তার চেহারা দেখে মনে হল শক খেয়েছে।
“আপনি বলেছেন মারা যাওয়ার আগে কাজ করতে ইনজেকশনটার ত্রিশ মিনিট সময় লাগবে। যে কারনে আমার তাড়াতাড়ি মনস্থির করতে হবে। প্লেন ক্রাশে মরতে না চাইলে আমার আসলে প্লেন পড়া শুরু হওয়ার আগেই ডাগটা ইঞ্জেক্ট করতে হবে। এখানেই জুয়া শুরু। কারন ধরুন আমিও ড্রাগ নিলাম আর ওদিকে ছেলেটাও ধরা পড়ল, প্লেনটাও নিরাপদে হানেদা এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করল?”
আমার পাশে বসা সেলসম্যানের দিকে তাকালাম। সে মা আছে। নার্ভাস ভঙ্গিতে নিজের গলা পরিস্কার করছে।