ফুয়ুমি লোক দুজনের দিকে ঘুরল। “ধন্যবাদ, অনেক সাহায্য করলে। বাকি কাজ আমিই করতে পারব।”
ফুয়ুমি ধন্যবাদ জানানোর পর তোক দুজন তাদের মাথা বো করে নীরবে চলে গেল। শুধু মিকি আর ফুয়ুমি ওয়ারড্রবের সামনে দাঁড়িয়ে থাকল।
“এখন শুধু তুমি আর আমি আছি, মিকি,” ফুয়ুমি ওর হাতদুটো সামনের দিকে ভাঁজ করে বলল। মিকি মাথা নাড়ল।
“না, আমরা তিনজন আছি।”
ফুয়ুমি এক মুহূর্তের জন্য ওর কথাটা ধরতে পারেনি। তারপরই ওর মুখে ধূর্ত হাসিটা ফিরে এল। “আমি জানতাম। আমি জানতাম যে তুমিই রিয়ুজিকে খুন করেছ, আর ওর লাশটা ওটার ভেতর লুকিয়ে রেখেছ। তুমি লাশটা ওর রুমেই রেখে দিতে চেয়েছিলে যতক্ষণ পর্যন্ত না সেটা সরানোর কোন ব্যবস্থা করতে পার।”
“তুমি ভুল করছ! তুমি ভুল বুঝছ! আমি স্বীকার করছি যে দুই রাত আগে আমি রিয়ুজির রুমে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমি ওকে খুন করিনি।”
“আমি তোমার কথা বিশ্বাস করি না।”
“আমি তোমাকে বিশ্বাস করাবোটাই বা কিভাবে? আমি নিজেই জানি ব্যাপারটা এপর্যন্ত গড়াল কি করে? ঐ রাতে আসল ক্রিমিনাল সবার দৃষ্টি এড়িয়ে পালিয়ে যেতে পেরেছিল। আর আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম, আমার উপর সব সন্দেহ তো পড়বেই। যে কারনে আমি রিয়ুজির লাশটা লুকিয়েছিলাম। আমার সামনে আর কোন উপায় ছিল না!” এই পর্যায়ে এসে মিকি প্রায় চিল্লাচ্ছিল।
“ঐ রাতে, রিয়ুজি আমাকে ওর রুমে ডেকেছিল কিছু পুরাতন ঘটনা নিয়ে কথা বলার জন্য। মিউজিক জোরে জোরে বাজছিল, আর প্রায় তিন মিনিটের জন্য আমি ছাউনিতে ছিলাম। ও আমাকে বলেছিল যে ইশিয়োর কিছু পেইন্টিং ওখানে রাখা আছে। ছাউনি থেকে যখন আমি রুমে ফিরে আসি তখন ওকে আমি মৃত দেখতে পাই, মাথাটা ফাটা।”
“একটা অ্যাস্ট্রে দিয়ে, যেভাবে চিঠিতে লেখা ছিল?”
“হ্যাঁ ঠিক তাই। একটা রক্তাক্ত অ্যাস্টে টেবিলের উপর পড়েছিল। আমি ওটা হাতে নিয়েছিলাম-যে কারনে আমার হাতের ছাপ ওটার উপর পড়ে গিয়েছিল। অ্যাস্ট্রেটা আমার হাত থেকে পিছলে মেঝেতে পড়ে যায়।”
“তুমি বলছ ও যখন খুন হয়েছে তুমি তখন ছাউনিতে ছিলে?”
“আমি কিছুই শুনতে পাইনি কারন জোরে জোরে মিউজিক বাজছিল। তাই বুঝতে পারিনি কি হচ্ছিল। আমি ওর লাশের সামনে দাঁড়িয়ে ভাবছিলাম কি করব, এমন সময় তোমার মা এসে দরজায় নক করেন এবং দরজাটা খোলার চেষ্টা করেন। তুমি জানো যে দরজাটা লক করা ছিল, তাই তিনি ঢুকতে পারেননি।”
“কেউ রুমের ভেতর ঢুকতে বা বের হতে পারেনি? তোমার কথা যদি সত্যি হয়ে থাকে-আমি বলছি না তোমাকে আমি এখনই বিশ্বাস করছি বা সেরকম কিছু-তোমার কাহিনী যদি সত্যি হয় তাহলে ক্রিমিনাল এমন কেউ যার কাছে রিয়ুজির রুমে ঢোকার চাবি ছিল। তুমি যে সময়টা ছাউনিতে ছিলে, ঐ ব্যক্তি তখন চুপিসারে দরজার লক খুলে ভেতরে ঢোকে, অ্যাস্ট্রে দিয়ে রিয়ুজির মাথায় বাড়ি মারে, আবারও রুম থেকে বেরিয়ে যায়। তারপর বাইরে থেকে আবার দরজা লক করে দেয়। ক্রিমিনালকে করতে হলে এসব কিছু করতে হবে।”
“কিন্তু রুমের চাবি তো রিয়ুজির পকেটে ছিল। প্রথমে আমি ভেবেছিলাম যে ক্রিমিনালের কাছে নিশ্চয়ই অতিরিক্ত চাবি ছিল। মৃত লাশের সাথে একা থাকা অবস্থায় আমি যে দায়ী তাকে অভিশাপ দিচ্ছিলাম। কিন্তু পুলিশের কাছে যেতে চাইনি…”
মিকি থামল। ফুয়ুমি ওর মাথা কাত করে প্রশ্ন করল।
“কেন না? তুমি যা বলছ তা যদি সত্যি বলে থাকো, তোমার উচিত ছিল পুলিশকে সব খুলে বলা।”
মিকি দুহাতে ওর মুখ ঢাকল।
“এটাই আমার শাস্তি। এখন আমি আর পুলিশকে বলতে পারব না। আমাকে এই যন্ত্রণা নিয়ে সারাজীবন চলতে হবে…ঈশ্বর আমাকে এই শাস্তি দিয়েছেন, ঈশ্বর রিজিকে খুন করেছেন, আর যন্ত্রণায় ফেলেছেন আমাকে,
আর তিনি ঐ জঘন্য চিঠিগুলো পাঠিয়েছেন…”
“মিকি তুমি ঠিক আছে তো?”
“আমি দুঃখিত। আমার কিছু হয়নি…কোন একদিন হয়ত আমি তোমাকে আসল কারনটা বলতে পারব,” মিকি ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল। ওর চোখগুলো লাল হয়ে ছিল। যদিও ও ফুয়ুমির দিকে সরাসরি তাকাচ্ছিল না।
“চল মূল বিষয়ে ফিরে যাওয়া যাক। প্রথমে আমি অতিরিক্ত চাবিগুলোর কথা চিন্তা করেছিলাম, যে কারনে তোমার বাবাকে সন্দেহ হয়েছিল।”
“বাবাকে? হুম ঠিক আছে, কারনটা বুঝতে পারছি। আমি তোমাকে বলেছিলাম যে তার কাছে সব চাবির কপি আছে। কিন্তু তিনি তো বলেছেন দেড় বছর আগে ওগুলো তিনি হারিয়ে ফেলেছেন। হ্যাঁ, এমন হতে পারে, তিনি নিজেকে সন্দেহ থেকে দূরে রাখতে সেটা বানিয়ে বলতে পারেন। যেটাই হোক না কেন, খুনির কাছে অবশ্যই অতিরিক্ত একটা চাবি রয়েছে।”
“কিন্তু একটা বিষয় আমি বুঝতে পারছি না। গতকাল সকালে, রিয়ুজি যখন ব্রেকফাস্টে এল না, তোমার বাবা ওর রুমে গেলেন দেখতে। আগের রাতে আমি যখন রিয়ুজির রুম থেকে বের হয়েছিলাম তখন আমি ওর চাবি দিয়ে ওর রুম লক করে এসেছিলাম। সুতরাং তোমার বাবার পক্ষে দরজা খুলে ভেতরে দেখা সম্ভব নয় যদি না তার কাছে অতিরিক্ত একটা চাবি থাকে। সকাল পর্যন্ত আমার ধারণা সেটাই ছিল। কিন্তু তার কাছে অতিরিক্ত কোন চাবি নেই। গতকাল সকালে তিনি বলেছেন রিয়ুজির রুমের দরজা লক করা ছিল না। আমি একশত ভাগ নিশ্চিত যে রুম থেকে বের হওয়ার সময় আমি দরজা লক করে বেরিয়েছিলাম। কিন্তু পরদিন সকালে দরজাটার লক খোলা ছিল।”