মিকির চেহারা দেখে মনে হল অবাক হওয়াটা লুকানোর চেষ্টা করছে। “আপনি বলতে চাইছেন রিয়ুজির রুমের চাবিও?”
“হ্যাঁ। কোন অতিরিক্ত চাবি নেই। আমার উদাসীনতার কারনে ওগুলো হারিয়েছি। দোষটা আমারই।”
“আপনার কাছে যদি অতিরিক্ত চাবি নাই থাকে তাহলে গতকাল সকালে আপনি কি করে জানলেন যে রিয়ুজি ওর রুমে ছিল না?”
“রুম লক করা ছিল না। আমি ভেতরে গিয়ে দেখেছি।”
এরপর কিছুক্ষণ মিকি চুপচাপ খেল। খাওয়া শেষ হলে ও ফুয়ুমিকে বলল, “তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে। দুটোর সময় রিয়ুজির রুমে এসো, শুধু আমরা দুজন। ঠিক আছে?”
ও যেমনটা আশা করেছিল, ফুয়ুমি মাথা নেড়ে সায় দিল।
“চমৎকার। আমারও তোমাকে জরুরি কিছু কথা বলার আছে।”
৪
দুপুর ১টা ৫৮ মিনিট।
নির্ধারিত সময়ের দুই মিনিট আগে মিকি রিয়ুজির রুমে এসে ঢুকল, যেটা মূল বাড়ির থেকে আলাদা। খুনের রাতের মতই সোফায় গিয়ে বসল। একটু পরপর ওয়ারড্রবের দিকে চোখ চলে যাচ্ছিল। নভেম্বর মাস, ঠান্ডার সময়। হিটার জ্বালানো ছিল না। ওর নিশ্বাস বেরিয়ে সাদা ধোঁয়ার মত দেখাচ্ছিল।
ফুয়ুমি দুটোর সময় হাজির হল। ওর পেছনে সবুজ ইউনিফর্ম পরা দুজনকে দেখা গেল। ওদের দেখে মিকি গুটিয়ে গেল।
“এরা কারা?”
“ওরা আমার কলিগ। ওরা আবার একটা জিনিসপত্র সরানোর কোম্পানিতে পার্টটাইম কাজ করে। আমি ওদেরকে বলেছিলাম কিছু বিশাল সাইজের বাতিল জিনিসপত্র সরাতে হবে, তাই ওরা এসেছে আমাকে সাহায্য করতে।”
“বিশাল সাইজের বাতিল জিনিসপত্র?”
ফুয়ুমি মাথা ঝাঁকাল, লোক দুজনের একজন কেবিনেটটার দিকে এগিয়ে গেল। সে তার হাতগুলো ছড়িয়ে ওটার প্রস্থ মাপল। অন্য লোকটা আঙুল দিয়ে ওয়ারড্রবটার দিকে ইঙ্গিত করে ফুয়ুমিকে কোন একটা প্রশ্ন করল।
“হ্যাঁ, এটাই। তোমরা কি এটা বের করে ট্রাকে নিয়ে রাখতে পারবে?”
“কি করছ তুমি?”
ফুয়ুমির ফ্যাকাসে চেহারাটায় হালকা একটা হাসি ফুটল যা ঠিক মত মানাল না।
“বাড়ির সামনে একটা ট্রাক রাখা আছে, ধার করে এনেছি। ওরা দুজন আমার জন্য ওয়ারড্রবটা বয়ে বাইরে নিয়ে যাবে।”
লোক দুটো ওয়ারড্রবের দুপ্রান্তে ধরে সেটাকে তুলল। একজন ফুয়ুমিকে কিছু একটা বলল।
“কি বল? অস্বাভাবিক রকমের ভারি? যেন ভেতরে কোন মানুষের দেহ ভরা আছে? হ্যাঁ ঠিক বলেছ। আমি নিশ্চিত সেটা সঠিক। সাবধানে নিও। ঝাঁকি লাগিও না। আর দয়া করে কোনভাবে এটা ফেলে দিও না যেন, কিংবা উপর নিচ করে ফেলল না।”
লোক দুটো ওয়ারড্রবটা নিয়ে বেরিয়ে গেল। মেয়ে দুজন পেছন পেছন গেল।
“তো মিকি, তোমাকে এই কথাটাই বলার ছিল। তুমিই কাজটা করেছ। আমার মনে হয় তুমি বুঝতে পারছ কিসের কথা বলছি আমি।”
“তুমি ভুল করছ।”
“তাহলে আমাকে পুরো সত্যটা কি সেটা বল।”
রিয়ুজির রুমটা মূল বাড়ি থেকে আলাদা। তাই ওয়ারড্রবটা নিয়ে যাওয়ার পর ওরা দরজা দিয়ে বাইরের বাগানটা দেখতে পাচ্ছিল। ট্রাকটা ঠিক বাইরেই পার্ক করা ছিল।
“ট্রাকে ভোলার পর তুমি ওটা নিয়ে কি করবে?”
“আমি ভাবছিলাম পুলিশ স্টেশনের সামনে ফেলে আসব। আইডিয়াটা কেমন?”
ওয়ারড্রবটা একবার ফসকে যাচ্ছিল। “সাবধান!” মিকি চিল্লিয়ে বলল।
“মিকি তোমার কি মনে আছে, গতরাতে যখন আমরা ইশিরার রুমে কথা বলছিলাম? তুমি ওয়ারড্রবটা খুলতে গিয়েছিলে কিন্তু খোলেনি। তুমি জানো কারনটা কি?”
“তুমি মনে হচ্ছে কারনটা জানো?”
“গতরাতে তুমি বলেছিলে যে লকটা নষ্ট, তাই খুলছে না।”
“হ্যাঁ, আমি আজকে সকালেও চেক করেছি, নষ্ট ছিল। জোর দেয়ার স্কুগুলো নেই।” মিকি এমনভাবে বলল যেন অজুহাত দিচ্ছিল, ফুয়ুমি ওর কথা শুনে হাসল।
“কিন্তু আমি বাজি ধরে বলতে পারি ওটা মোটেও নষ্ট ছিল না। তুমি শুধু তোমার ভুল ধরতে পেরেছিলে আর পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য বলেছ যে নষ্ট ছিল।”
“আমার ভুল?”
“আহ, বাদ দাও না। আর অভিনয় কোর না যে তুমি কিছু জানো না। গতরাতে ইশিয়োর ওয়ারড্রবে তুমি যে চাবিটা ঢুকিয়েছিলে সেটা ছিল ভুল চাবি। ওটা আসলে ছিল রিয়ুজির ওয়ারড্রবের চাবি, ঠিক বলেছি কিনা? দুটো ওয়ারড্রব দেখতে হুবহু একই রকম, চাবিও দেখতে একই রকম: পুরাতন আর সোনালী রঙের। আমি এটা জানি কারন ছোট থাকতে আমার ভাইয়েরা ওগুলো আমাকে দেখিয়েছিল। কিন্তু দেখতে এক রকম হলেও ওগুলো এক না। চাবিগুলো শুধু যার যার নির্দিষ্ট ওয়ারড্রবই খুলতে পারে।”
লোক দুটো ওয়ারড্রবটা ট্রাকের উপর উঠাচ্ছিল। মিকি আর ফুয়ুমি এক পাশে মুখোমুখি দাঁড়াল।
“গতরাতে তুমি বুঝতে পারানি যে চাবি দুটো মিলিয়ে ফেলেছ। তুমি রিয়ুজির চাবি দিয়ে ইশিয়োর ওয়ারড্রব খোলার চেষ্টা করছিলে। যখন ব্যর্থ হলে, তখন আমি বুঝতে পারলাম কি ঘটেছে। আমার মনে হয় চিঠিগুলো পড়ার পর আমার কিছু ধারণাও হয়েছিল। এরপর আমি চিন্তা করলাম তোমার কাছে কিভাবে রিয়ুজির ওয়ারড্রবের চাবি এলো। আর সেটাই আমাকে ওর ভয়ংকরতম পরিনতির কথা জানিয়ে দিল।”
লোক দুজন একটা দড়ি দিয়ে ওয়ারড্রবটাকে ট্রাকের উপর শক্ত করে বাঁধছিল যাতে নড়াচড়া না করে।
“এই ওয়ারড্রবে যাই লুকানো থাকুক না কেন, তুমিই তা সেখানে ভরেছিলে। এরপর লক করে রেখেছিলে যাতে কেউ জানতে না পারে। তারপর ওয়ারড্রবের চাবি আর রিয়ুজির রুমের চাবি তোমার পকেটে ঢুকিয়ে রাখো।”