কেবিনেটের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় মিকি নিজের পকেট হাতড়াল। ইশিয়োর ওয়ারড্রবটাও রিয়ুজিরটার মতই, লক লাগানো। মিকি একটা পুরাতন সোনালী রঙের চাবি বেছে নিয়ে সেটা চাবির ফুটোয় ঢুকালো তারপর মোচড় দিল।
“কোন সমস্যা?” ফুয়ুমি জিজ্ঞেস করল। মিকিকে দেখে মনে হচ্ছিল ওয়ারড্রবের দরজা খুলতে সারাজীবন লাগাচ্ছে।
“কাজ করছে না। মনে হচ্ছে লকটা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। চাবি ঘুরল, লকটা খোলার কথা কিন্তু দরজাটা আটকে আছে।”
ও হাতলে আঙুল দিয়ে চেপে ধরে টান দিল, কিন্তু কিছুই হল না।
“হতে পারে…” ফুয়ুমি বলতে শুরু করেছিল, কিন্তু তারপরেই মুখ বন্ধ করে ফেলল। ওর চোখগুলো বেরিয়ে আসছিল আর ওর অভিব্যক্তি দেখে মনে হচ্ছিল যেন কোন ভয়াবহ খুনের দৃশ্য দেখতে পাচ্ছে।
“কি হয়েছে?”
“কিছু না।” ফুয়ুমি উঠে দাঁড়িয়ে মিকিকে উপেক্ষা করে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। সে রাতেও মিকি রিয়ুজির লাশ সরানোর কোন সুযোগ পেল না।
***
রিয়ুজির মৃত্যুর পর দ্বিতীয় দিন সকালে বাড়ির প্রায় সবাই ব্রেকফাস্টের সময় জড়ো হল। মিকি শুনতে পাচ্ছিল যে ফুয়ুমি চিঠির বাক্সে দ্বিতীয় আরেকটা চিঠি পাওয়ার খবর সবাইকে জানাচ্ছে। প্রথম চিঠিটার মতই দ্বিতীয়টাও হাতে হাতে করে চিঠির বাক্সে রাখা হয়েছিল। প্রেরকের নাম লেখা নেই।
চিঠিটায় টাইপ করে লেখা ছিল-”রিয়ুজিকে খুন করা হয়েছে একটা অ্যাস্ট্রে দিয়ে।”
ব্রেকফাস্টের পর মিকি ওর রুমে ফিরে গেল যাতে ও আর ইশিরো হলের ভেতর হাঁটাহাঁটি করতে পারে। ওরা দেখল ফুয়ুমি দোতালার হলওয়েতে একটা বাইনোকুলার হাতে দাঁড়িয়ে আছে। মনে হল জানালা দিয়ে কিছু একটা দেখছে।
“কি দেখছ?” মিকি জানতে চাইল। ফুয়ুমি ঠোঁটে আঙুল দিয়ে ইশারা করল চুপ থাকার জন্য।
“আমি ধরার চেষ্টা করছি কে ঐ চিঠিগুলো রেখে যায়। আমি নিশ্চিত যে সে আশেপাশে কোথাও থেকে এই বাড়ির উপর নজর রাখছে।”
কথাগুলো বলার সময় ওর মুখ দেখে বোঝা যাচিল ও খুবই সিরিয়াস। চোখে বাইনোকুলার চেপে দেখছিল।
জানালার বাইরে এক সারি মলিন রঙের গাছ ছিল। মেঘগুলো দেখে মনে হচ্ছিল যে কোন সময় বৃষ্টি নামতে পারে। ঠাণ্ডা বাতাসের একটা ঝাপ্টা এসে মিকির মুখে লাগলো, ওর লম্বা চুলগুলো নড়ে উঠল। ওর নাকের নিচের ত্বক ঠান্ডায় লাল হয়ে ছিল, চোখগুলো দেখে মনে হচ্ছিল ওগুলো যে কোন সময় কান্নায় ফেটে পড়বে।
“তুমি চিঠিগুলোকে অনেক সিরিয়াসলি নিচ্ছ দেখা যাচ্ছে।”
“এমন না যে আমি লেখাগুলো পুরোপুরি বিশ্বাস করছি। আমার কৌতূহলের যদি একটা পাই চার্ট বানাই তাহলে আমি একে ১২০ ডিগ্রী এর মত দিব।”
“কিন্তু যে ব্যক্তি চিঠিগুলো লিখেছে, সে কেন ভাবছে রিয়ুজি ওর রুমেই খুন হয়েছে? সে কি করে জানল যে একটা অ্যাস্ট্রে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে?”
“রিয়জুর রুমে একটা জানালা আছে না? যে কেউ বাইরে থেকে দেখতে পারে। যদি চিঠির লেখক ব্যক্তিটি জঙ্গলের ভেতর থেকে থাকে, তাহলে পাহাড়ের চূড়া থেকে বাড়ির আলোকিত জানালা দেখতে পাবে। তার পক্ষে দেখা কঠিন হবে না, একজন মানুষকে অ্যাস্টে দিয়ে খুন করা হচ্ছে। আমার পক্ষে দৃশ্যটা কল্পনা করতে একদমই কোন সমস্যা হচ্ছে না। যাই হোক, মিকি, তোমার কি কখনো এমন অনুভূতি হয় যে কেউ হয়ত তোমার দিকে তাকিয়ে আছে? মানে তোমাকে লক্ষ্য করছে বা দুর থেকে খেয়াল করছে ধরণের?।”
“তাকিয়ে আছে?” মিকি মাথা নাড়ল।
“তাই বুঝি? তাহলে এটা স্রেফ আমার কল্পনা।”
“ফুয়ুমি, আমার যা মনে হয় সেটা বলি। আমার মনে হয় যে চিঠিগুলো লিখেছে সে এই বাড়িরই কেউ।”
“এই বাড়ির কেউ?”
“হ্যাঁ। আর সেই সাথে, আমার ধারণা যে চিঠিটা লিখেছে সে নিজেই রিজিকে খুন করেছে। অবশ্য যদি ধরে নেই যে রিয়ুজি আসলেই খুন হয়েছে।”
ফুয়ুমি হাসল। “আমি তোমার বক্তব্য বুঝতে পারছি, মিকি। কিন্তু কেন একজন ক্রিমিনাল নিজের অপরাধের কথা চিঠি লিখে জানাতে যাবে? আর তোমার কি আসলেই মনে হয় যে এই পরিবারের কেউ রিজিকে খুন করতে পারে?”
মিকি চুপ করে থাকল। যে কোণ থেকেই দেখা হোক না কেন, কোন যুক্তিরই কোন কারন দেখা যাচ্ছে না। যুক্তিগুলো একটা আরেকটার সাথে খাপ খাচ্ছে না। ওর সাদা কপালে এক বিন্দু ঘাম জমল।
“মিকি, আমার কোন ধারণা নেই কে চিঠিগুলো পাঠিয়েছে, কিন্তু একটা সন্দেহ আছে যে কে রিয়ুজিকে খুন করে থাকতে পারে,” ফুয়ুমি বলল, এবং হাসল। তারপর মুখটা মিকির কাছে এনে বলল, “আর আমার ধারণা তুমিও
সেটা জানো, ঠিক বলেছি না?”
***
লাঞ্চের সময়।
সবাই ডাইনিং টেবিলে এসে জড়ো হলে চিঠির কথাটা উঠল।
“আমার মনে কূ-ডাক দিচ্ছে। আমাদের মনে হয় পুলিশকে জানানো উচিত।”
“কিন্তু কে বিশ্বাস করে যে রিয়ুজি খুন হয়েছে? কাল সকাল পর্যন্ত দেখা যাক আর কোন চিঠি আসে কিনা। তারপর না হয় পুলিশকে জানানো যাবে।”
“বাবা তোমার কাছে এই বাড়ির সব চাবির কপি আছে তাই না? রিয়ুজির রুমের ওয়ারড্রবটার চাবি আছে?”
কথাগুলো বলতে বলতে ফুয়ুমি আড়চোখে মিকির দিকে তাকাল যে, কথাগুলো শুনে ঠোঁট কামড়ে আছে।
“না, আমার মনে হয় না ওয়ারড্রবের কোন অতিরিক্ত চাবি আছে। ও একটা কথা তোমাকে বলতে চাচ্ছিলাম, ফুয়ুমি, কিন্তু তুমি বাড়িতে না থাকায় আর বলা হয়নি। সব চাবির কপি আমি ছয় মাস আগে হারিয়ে ফেলেছি।”