ফুয়ুমি টেবিলে রক্তের দাগ দেখার আগেই ওরা বেরিয়ে গেল। দশ মিনিট পর ফিরে এসে মিকি দাগগুলোর ব্যবস্থা করল। তারপর ছাউনিতে গিয়ে একটা বই তুলে নিল।
***
ঘড়িতে দুপুর বারোটা বাজতেই মিকি ডাইনিং টেবিলে ফিরে এল। রিয়ুজি বাদে সবাই ওখানে উপস্থিত ছিল।
মিকি হঠাৎ থেমে গেল। ফুয়ুমি আর ওর মা মুখ কাছে নিয়ে ফিসফিস করে কথা বলছিল।
“সবকিছু ঠিক তো?”
“মিকি, দেখ! চিঠির বাক্সে এই অদ্ভুত চিঠিটা পেয়েছি।”
মিকি টেবিলের দিকে এগিয়ে ফুয়ুমির বাড়িয়ে দেয়া সাদা কাগজটা হাতে নিল। কাগজটা পড়ে ওর মুখ সাদা হয়ে গেল।
কাগজটায় টাইপ করে লেখা ছিল-”রিয়ুজি ওজিসিম খুন হয়েছে। ওকে ওর রুমের মধ্যেই আঘাত করে খুন করা হয়েছে।”
ফুয়ুমি উঠে দাঁড়িয়ে নিজের বুকের উপর হাত দুটো ভাঁজ করে রাখল।
“এরকম কিছু কে লিখতে পারে? মা, তুমি কি বাড়ির বাইরে কাউকে বলেছ যে রিয়ুজি উধাও? যে লোক এই চিঠিটা বাক্সে ফেলে গিয়েছে সে নিশ্চয়ই আমাদের বাড়ির উপর নজর রাখছে। আর এই ‘খুন’ এর ব্যাপারটাই বা কি? এই কথা সে কেন বলল?”
কাগজটা ফিরিয়ে দেয়ার সময় মিকি অসুস্থ বোধ করছিল।
“আমার শরীরটা খারাপ লাগছে।”
ফুয়ুমি ওর মরার মত সাদা হাত মিকির কাঁধে রাখল। মিকির মনে হল কেউ যেন ওর গলার কাছে বরফ দিয়ে স্পর্শ করেছে। কেঁপে উঠল ও।
“চিঠিটায় কোন ডাকটিকেট লাগানো নেই। কেউ নিশ্চয়ই এটা হাতে হাতে ফেলে গিয়েছে। রিফুজি ওর রুমে খুন হয়েছে…ওর রুমটা নিচ তলায় আর বাড়ির থেকে আলাদা। আমাদের চোখে না পড়ে একজন ক্রিমিনালের পক্ষে ওর রুমে ঢোকা খুবই সম্ভব। মিকি, লাঞ্চের পর তোমার সাথে একটু কথা আছে। একা কথা বলব। যেখানে তোমার খুশি। তোমার রুমে হলেই বোধহয় ভাল, মানে ইশিরোর রুমে আরকি। এই ধর আর এক ঘন্টার মধ্যে?”
৩
এক ঘন্টা পর।
ফুয়ুমি রুমের ভেতর ঢুকে চোখ বোলাল।
“অনেকদিন পর ইশিরোর রুমে এলাম। এই ওয়ারড্রবটা একদম রিয়ুজির রুমেরটার মত দেখতে। যখন ছোট ছিলাম তখন মনে হত আমার কেন একটা নেই। অনেক হিংসা হত তখন।”
“দুঃখিত, রুমটা একটু অগোছালো হয়ে আছে।”
কাপড়চোপড় আর লাগেজগুলো রুমের এক কোণায় স্তূপ করে রাখা ছিল।
“রিয়ুজির রুমের সাথে তুলনা করলে এটা অনেক গোছানো। চিন্তা কোর না।”
ফুয়ুমি কিছুক্ষণ দেয়ালে ঝুলানো পেইন্টিংগুলো দেখল, তারপর ডেস্কের সামনে থেকে চেয়ারটা টেনে নিয়ে বসল। পকেট থেকে সাদা কাগজটা বের করল।
“তোমার কি মনে হয় এই লোক সত্যি বলছে? রিয়ুজি, খুন হয়েছে..?”
“চিঠিটা…ওটাকি আসলেই চিঠির বাক্সে পাওয়া গিয়েছিল?”
“তুমি কি বলতে চাইছ এটা আমি লিখেছি?”
“না না তা বলিনি।”
“এটা আসলেই চিঠির বাক্সে ছিল। আমি ওখানেই পেয়েছি। কিন্তু আমার তোমাকে আরো ইন্টারেস্টিং কিছু বলার আছে। গতরাতে রিয়ুজির সম্পাদক ওকে ফোন করেছিল। মা বলল, মা নাকি নয়টার দিকে ওর দরজায় গিয়ে নক করেছিল। দরজা লক করা থাকলেও ভেতরে মিউজিক চলছিল তখন। তোমার কি মনে হয়?”
“আমার কি মনে হয় মানে…?”
“চিঠিতে লেখা আছে ও ওর নিজের রুমে খুন হয়েছে। শোনো আমার কি মনে হয় তোমাকে বলি। আমার মনে হচ্ছে মা যখন ওর রুমে গিয়েছিল, রিয়ুজি তখন ওখানেই ছিল। আমি অবশ্য নিশ্চিত হতে পারছি না। কিন্তু
আমার মনে হয় না ও মিউজিক চালিয়ে রেখে বাইরে চলে যাবে।”
ফুয়ুমি চেয়ার ছেড়ে উঠে রুমের মধ্যে পায়চারি করল।
“যদি এই চিঠির দাবি সত্য হয়, হয়ত খুনি খুন করার পর রিয়ুজির লাশ রুমের বাইরে বয়ে নিয়ে গিয়েছিল, মিউজিক ছেড়ে রেখে। ইশিরো বলেছে ও কাল রাতে আটটা পর্যন্ত রিয়ুজির রুমে ছিল। ওরা কিছুক্ষণ গল্প করে, তারপর ইশিরো বেরিয়ে যায়। যতদূর মনে হচ্ছে রিজিকে শেষ দেখা ব্যক্তিটি হল ইশিরো।”
“তুমি কি বলতে চাইছ ইশিরো একজন ক্রিমিনাল?”
“না, একদমই না কিন্তু আমি জানি যে রিয়ুজির দরজা লক করে রাখার অভ্যাস আছে, আর এই ব্যাপারটাই আমাকে খোঁচাচ্ছে। কারো পক্ষে সোজা ওর রুমে ঢুকে ওকে খুন করা সম্ভব না। প্রথমে তাকে দরজার লক ভাঙতে হবে নয়তো দরজা ভাঙতে হবে। কিন্তু ইশিরো বলল ও যখন বেরিয়ে যাচ্ছিল তখন রিয়ুজির খেয়াল ছিল না। ও নিশ্চিত না ওর বের হওয়ার পর রিয়ুজি দরজা লক করেছিল কিনা। সুতরাং এমন হতে পারে যে ইশিরো বেরিয়ে যাওয়ার পর রাত আটটা থেকে কিছুক্ষণ দরজাটা লক করা ছিল না। মা নয়টার পরে গিয়ে দরজা নক করে। এর অর্থও হল কেউ একজন ভেতরে ঢুকতে আর বের হতে পেরেছিল। মিকি, তুমি সকালে রিয়ুজির রুমে ছিলে। তুমি বলেছিলে ইশিরো একটা বই চেয়েছিল আর তুমি সেটা নিতে গিয়েছিলে। তুমি আর আমি একসাথেই বের হয়েছিলাম রুম থেকে। দশ মিনিট পর তোমার বইটার কথা মনে পরে আর তুমি ফিরে গিয়ে সেটা নিয়ে আসো, তাই না?”
মিকি মাথা ঝাঁকাল। ঐ সময়ই ও টেবিলের রক্তের দাগগুলো মুছেছিল।
“যে বইটা তুমি এনেছিলে ছাউনি থেকে, সেটা এখন কোথায়? বইটার নাম কি? রিজির লাইব্রেরিটা খুবই ইন্টারেস্টিং, কিন্তু ওখানের কিছু বই নয়….”
“ওহ হ্যাঁ বইটা…কোথায় যেন রাখলাম সেটা?”
“কি হল? অন্য কোথাও রেখেছ?”
“না, আমি নিশ্চিত যে বইটা এখানে নিয়ে এসেছিলাম। আমি নিশ্চিত যে ওটা ওয়ারড্রবে রেখেছিলাম…”