“রিয়ুজির বন্ধু। সে জানতে চাইছিল গতরাতে কেন রিয়ুজি যায়নি। ও দুশ্চিন্তা করছিল। আমি ওকে বললাম রিয়ুজি ঘুমাচ্ছে, উঠলে ওকে ফোন করবে।”
“তার মানে মনে হচ্ছে রিয়ুজি কালকে রাতে বাইরে যায়নি। আমার ভয় হচ্ছে ওর কোন অ্যাক্সিডেন্ট হল কিনা,” ফুয়ুমি বলল, নাশতা খাওয়া চালিয়ে গেল। ওকে দেখে মনে হল না তেমন কোন আগ্রহ আছে এ ব্যাপারে, “হয়ত ও আর বেঁচে নেই। কোন ধরনের ট্রাফিক অ্যাক্সিডেন্ট বা সেরকম কিছু হয়ত।”
“এভাবে বলছ কেন?” মিকি বলল, ওর চপস্টিকগুলো শূন্যে থেমে আছে। ফুয়ুমি মাথা কাত করে মিকির দিকে তাকাল।
“কোন সমস্যা?”
“না…”
“আমি ওর রুমে গিয়ে চেক করে দেখছি।” বাবা বললেন।
“বাবা, এরকম ছোটখাট সবকিছু নিয়ে দুশ্চিন্তা করার দরকার নেই।” বাবাকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করে ফুয়ুমি বলল, কিন্তু ততক্ষণে চেয়ার ছেড়ে উঠে গিয়েছেন তিনি।
“উনি বললেন উনি গিয়ে দেখতে চান, কিন্তু দরজার লকের কি করবেন?” মিকি জিজ্ঞেস করল। ফুয়ুমি উত্তর দিল, “বাবার কাছে অতিরিক্ত চাবি থাকার কথা। তার কাছে ঘরের সবকিছুর অতিরিক্ত চাবি থাকে।”
“তাই নাকি?”
“ঐ দেখ, বাবা ফিরে এসেছে, রিয়ুজিকে কেমন দেখলে? ছিল ওর রুমে?”
“না। আমি ছাউনিটাও ঘুরে এসেছি, পুরোপুরি খালি। অবশ্যই ওর রুমটা বরাবরের মত আস্তাকুড় হয়ে আছে। কাপড়গুলো এক কোনায় স্তূপ করে রাখা। রুমের ভেতর তাহলে ওয়ারড্রবটা রাখার মানে কি? ওর যদি ওটা কাজেই না লাগে, সরিয়ে ফেললেই হয়।”
***
দুই ঘন্টা পর।
মিকি রিয়ুজির রুমে ঢুকে দরজাটা লাগাল। তারপর চারপাশে চোখ বোলাল। আগের রাতের থেকে কোন পার্থক্য চোখে পড়ল না। রুমটা এখনো আগের মত নোংরা।
ও সোফাটার দিকে এগিয়ে গেল, যেখানে বসে রিয়ুজি তার শেষ নিশ্বাস ফেলেছিল। ও চোখ বন্ধ করে হাতের আঙুলগুলো দিয়ে কপালটা চেপে ধরল, নিজেকে শোনাল এসব নিশ্চয়ই কোন দুঃস্বপ্ন। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখ খুলল আর সোফার উপর সাবধানে সূত্র খুঁজতে লাগল।
টেবিলের উপর শুকিয়ে যাওয়া রক্তের কয়েকটা ফোঁটা দেখা গেল। রিয়ুজির বাবা যখন এসেছিলেন তখন ওগুলো খেয়াল করেননি নিশ্চয়ই। আর কোথাও কোন রক্তের চিহ্ন ওর চোখে পড়ল না। আশ্চর্যজনকভাবে রিয়ুজির খুব কমই রক্তপাত হয়েছিল। ও নখের ঘষায় শুকনো রক্তের একটা বিন্দু তুলে ফেলল। পরেরটা তুলতে যাবে এমন সময় ঠকঠক শব্দ হল দরজায়।
“মিকি, তুমি কি ভেতরে আছ? আমি তোমাকে ঢুকতে দেখেছি। আমাকে ঢুকতে দাও।” ফুয়ুমির গলা। মিকি এক মুহূর্তের জন্য ইতস্তত করল, তারপর রিয়ুজির একটা শার্ট তুলে এনে টেবিলের উপর রাখল দাগটা ঢাকার জন্য। তারপর দরজার লক খুলে ফুয়ুমিকে ঢুকতে দিল। ফুয়ুমি ঢুকে রুমের ভেতর চোখ বোলাল।
“ওহ তুমি একা। আমি ভেবেছি রিয়ুজি হয়ত এতক্ষনে ফিরে এসেছে। তুমি এখানে কি করছ মিকি?”
“ইশিরো রিয়ুজির একটা বই চাচ্ছিল। তাই আমি এসেছিলাম সেটা নিতে।”
“ওহ? ভাল কথা ভাইয়া কোথায়?”
“ও একটু বেরিয়েছে। বলল লাঞ্চের আগে ফিরে আসবে।”
মিকি ছাউনির দরজার দিকে এগিয়ে গেল যেখানে রিয়ুজি ওর বইগুলো রাখে। ফুয়ুমিকে দেখে মনে হল না মিকির মিথ্যা বলা ধরতে পেরেছে।
“ভাইয়া আমাকে তোমার সম্পর্কে অনেক কিছু বলেছে। এতকিছু যে যতদিনে তোমার সাথে আমার দেখা হয়েছে, মানে বিয়ের দিনে, ততদিনে আমার মনে হচ্ছিল আমি তোমাকে ভাল করে চিনি।”
“ব্যাপারটা খানিকটা বিব্রতকর।”
“ও আমাকে বলেছে যে তোমার পরিবার অনেক ধনী। ইশ! আমার বাপটাও যদি ডাক্তার হত।”
“আরে বাজে কথা। আমার বাবা খুবই সাধারণ একজন গ্রামের ডাক্তার। আমাদের বাড়িটাও একদম সাধারণ ধরণের।”
“ভাইয়ার সবসময় সবকিছু গুছিয়ে রাখার অভ্যাস, ঘরের কাজে অনেক কষ্ট হওয়ার কথা তোমার। রিয়ুজি একদম উল্টো। ওর রুমের চেহারাটা দেখ! ওর বিয়ে হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। আমরা যখন এখানে আছি, আসো একটু গোছগাছ করার চেষ্টা করি।”
ফুয়ুমি সোজা কাপড়ের স্তূপের দিকে গেল আর একবারে যতটা সম্ভব কাপড় তুলে ওয়ারড্রবের দিকে নিয়ে গেল।
“ফুয়ুমি দাঁড়াও!” মিকি ছাউনি থেকে বেরিয়ে বলল। ও ফুয়ুমির দিকে দৌড়ে গিয়ে ওর হাত থেকে কাপড়গুলো কেড়ে নিল।
“মিকি, কি করছ তুমি? আমরা কাপড়গুলো ওয়ারড্রবে ভরে রাখলে জায়গাটা একটু ভাল দেখাত..।”– “কিন্তু ওটা খোলা যাবে না। ওয়ারড্রবের লকটা নষ্ট। আসলে ওটা মনে হয় লক করা, খুলবে না।” মিকির গলার স্বর বেড়ে গিয়েছিল। ফুয়ুমি ভু কুঁচকে ওর সাদা আঙুলগুলো দিয়ে ওয়ারড্রবের হাতলটা স্পর্শ করল।
“ঠিকই বলেছ। আটকানো। রিয়ুজি নিশ্চয়ই বের হওয়ার সময় চাবিটা সাথে নিয়ে গিয়েছে। আমার মনে হল আমরা যদি একটু পরিস্কার করতে পারতাম তাহলে ও খুশি হত।”
বলতে বলতে ফুয়ুমি টেবিলের উপর থাকা রিয়ুজির শার্টটা তুলে নিয়ে গোল করে পাকিয়ে রুমের কোনায় ছুঁড়ে ফেলল।
“ও যেখানে পারে সেখানেই ওর নোংরা জামা কাপড়গুলো ফেলে রাখে! ছাগল একটা!”
রক্তের দাগগুলো উন্মুক্ত হয়ে পড়েছিল।
“মিকি, কি হল? তোমাকে ভয়াবহ দেখাচ্ছে!”
ফুয়ুমি রক্তের দাগগুলো খেয়াল করেনি। মিকির হাতে ফুয়ুমির থেকে নেয়া কাপড়গুলো ছিল।
“কিছু না, আমরা কি যেতে পারি?”