“আমার ওকে এখান থেকে সরাতে হবে।”
কিন্তু লাশটা কোথায় সরাবে ও?
“ছাতার কোথায় লুকাবো এটা?”
বিশৃঙ্খল রুমটায় এদিক ওদিক তাকাল ও। সবখানে কাপড়-চোপড় পড়ে আছে, পা ফেলার জায়গা পর্যন্ত নেই। ও তাড়াতাড়ি কাপড় সব একত্র করে এক কোণায় নিয়ে জমা করল।
তারপর ওয়ারড্রবটার উপর চোখ পড়ল ওর।
“কাঠের তৈরি কালো একটা ওয়ারড্রব…একজন ঔপন্যাসিকের লাশ রাখার জন্য নিখুঁত একটা সাইজ।”
ও ঠিক করল ওয়ারড্রবটা পরীক্ষা করে দেখবে, কিন্তু দরজাটা খুলতে পারল না। রিয়ুজি বলেছিল, ও রুমের দরজার সাথে সাথে ওয়ারড্রবের দরজাও লক করে রাখে। ওয়ারড্রবের দরজার হাতলের সাথেই একটা সোনালী রঙের চাবির ফুটো।
ও রিফুজির পকেট হাতড়াল। কয়েকটা চাবি পেল। এর মধ্যে একটা ছিল পরনো ধরনের দেখতে, সোনালী রঙের।
“বাজি ধরে বলতে পারি এটাই সেই চাবি,” লকের ভেতর চাবিটা ঢুকিয়ে ঘোরাল সে।
***
দশ মিনিট পর।
মিকি রিয়ুজির লাশটা লুকিয়ে ফেলেছে। ছেলেটা ছোটখাট সাইজের হওয়ায় খুব একটা কষ্ট করতে হয়নি। কিন্তু অনেক কাপড় চোপড় ছিল। রিয়ুজির জন্য জায়গা করতে ওকে কিছু কাপড় সরাতে হল। একগাদা কাপড় তুলে নিয়ে ও রুমের কোণায় বাকি কাপড়গুলোর সাথে নিয়ে রাখল।
বেরিয়ে যাওয়ার সময় ও শেষ বারের জন্য একবার কাপড়ের স্তূপের দিকে তাকাল। নিচের ঠোঁট কামড়ে ও বাম হাতটাকে মুঠি করে রাখল।
দরজাটা বন্ধ করে দিল। লকের ভেতর চাবির শব্দটা স্বাভাবিকের চেয়ে জোরে শোনাল। মিকি রিয়ুজির পকেটে পাওয়া সবগুলো চাবি, বেডরুমের চাবিসহ নিজের সাথে নিয়ে নিল। রুমের মধ্যে শুধু রয়ে গেল একটা ওয়ারড্রব আর তার ভেতরে থাকা মানুষটা।
২
পরদিন ব্রেকফাস্টের সময়।
মিকি টেবিলে এল। জানালার বাইরে আকাশটা গাঢ় মেঘে অন্ধকার হয়ে ছিল। হয়তো সে কারনেই মনে হচ্ছিল তখনো ঠিক মত ভোর হয়নি। এমন কি লাইটগুলো সব জ্বলে থাকার পরেও রুমের কোণাগুলোতে আলোর অভাব মনে হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল যেন পোকার ঝাঁকের মত অন্ধকার ঝুলে রয়েছে, হাত নাড়ালেও সরছে না।
অন্যদিনের চেয়ে তাপমাত্রার পার্থক্যও চোখে পড়ার মত ছিল। মিকি ওর কাঁধ কুঁচকে কেঁপে উঠল। বাড়িটা পুরাতন হওয়ার কারনে এখানে সেখানে ফাঁক ফোঁকর ছিল। যখনই কেউ হেঁটে যেত, মেঝের বোর্ডগুলো একটা আরেকটার সাথে লেগে যে শব্দটা হচ্ছিল তা কানে যন্ত্রণাদায়ক শোনাচ্ছিল।
“মা আমি কি কোন সাহায্য করতে পারি?”
“ওসব নিয়ে চিন্তা করতে হবে না, মিকি, শুধু চেয়ার টেনে বসে পর
মিকি কথা মতই কাজ করল, একটা চেয়ার নিয়ে বসে পড়ল। ওর জন্য খাবার নিয়ে আসতে দেখল।
“মিকি!”
মিকি মাথা ঘুরিয়ে ওর পাশে বসা ফুয়ুমির দিকে তাকাল।
“গতরাতে কখন এসেছ তুমি? আমি তো খেয়ালই করিনি। রাতের বেলা রাস্তাঘাট একদম অন্ধকার হয়ে থাকে। হারিয়ে যাওনি নিশ্চয়ই? জঙ্গলটা বেশ বড়, আর বলার মত কোন স্ট্রিটলাইটও নেই। তোমার কি নিজেকে লিটল রেড রাইডিং হুডের মত মনে হচ্ছিল না?”
কথাগুলো বলার সময় হাসছিল ফুয়ুমি। ওর ত্বকের রঙ কিরকম অস্বাভাবিক নীলচে সাদা দেখাচ্ছিল, অথচ ঠোঁটগুলো গাঢ় লাল।
“হ্যাঁ, আমি ভয় পাচ্ছিলাম কখন একটা নেকড়ে লাফিয়ে বেরিয়ে আমাকে আক্রমণ করে বসে।”
“কিন্তু মিকির নেকড়ে তো লিটল রেড রাইডিং হুডকে আক্রমণ করেছিল যখন সে ওর নানির বাড়িতে গিয়েছিল! তার অর্থ হল, আসল ভয়ের জায়গাটা জঙ্গলে ছিল না, ছিল বাড়িটায়!”
“সেটা তুমি ভালই বলেছ কিন্তু।”
ফুয়ুমি ওর আঙুলের ডগা দিয়ে প্লেটের খাবারটা খুঁচিয়ে দেখল। আঙুলটা এতটাই সাদা যে বিশ্বাস হচ্ছিল না আসলেই ওটার ভেতর দিয়ে রক্ত চলাচল করে কিনা।
“মিকি। তুমি কি কোন কারডিগান বা কিছু পরতে চাও? তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে অনেক শীত লাগছে তোমার।”
মিকি পাতলা কাপড় পড়ে ছিল।
“না ঠিক আছে। আমার সাথে গরম কাপড় আছে। আমি শুধু পরার কথা চিন্তা করিনি।”
“কে ভেবেছিল রাতারাতি এরকম ঠাণ্ডা পড়ে যাবে?”
ফুয়ুমি ঘুরে শখানেক বছর বয়সি স্টোভটার দিকে তাকাল। স্টোভটা বিশাল, একজনের পক্ষে তোলা অসম্ভব, আর জং ধরা। স্টোভের উপর একটা চায়ের কেটলি রাখা যেটার মুখ থেকে হালকা ধোঁয়া বের হচ্ছিল। জানালাটা পানির ফোঁটায় ঢেকে আছে। ফুয়ুমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।
“রিয়ুজি নাস্তার জন্য দেরি করে ফেলছে। বাকি সবাই এখানে উপস্থিত। আমি গিয়ে ওকে জাগাচ্ছি।”
সে উঠতে শুরু করলে মিকি ওকে থামাল।
“এখানে আসার সময় আমি ওর দরজায় নক করেছিলাম। কিন্তু দরজা বন্ধ ছিল। ও সম্ভবত ঘুমাচ্ছে। আমার মনে হয় ওকে ঘুমাতে দেয়াই উচিত। ও নিশ্চয়ই অনেক রাত পর্যন্ত জেগে ছিল।”
একটার পর একটা মিথ্যা কথা।
“তা ঠিক। ও বলেছিল, রাতে ওর এক বন্ধুর সাথে দেখা করতে যাবে। সে-কারনেই হয়ত এতক্ষণ ধরে ঘুমাচ্ছে কিংবা এমনও হতে পারে যে ও হয়ত রাতে বাসায়ই ফেরেনি। যেহেতু ওর দরজা সবসময় লক করা থাকে, তাই ও যে কখন রুমে থাকে আর কখন থাকে না তা আমি বুঝতেই পারি না।”
অতঃপর রিজিকে ছাড়াই নাশতা চলল। নীরবে নাশতা করার সময় সবাই শুনতে পাচ্ছিল যে লিভিং রুমে টেলিফোন বাজছে। মা উঠে গিয়ে টেলিফোন ধরলেন। কয়েক মুহূর্ত পর ফিরে এলেন।
“কে ফোন করেছিল, মা?” ফুয়ুমি জিজ্ঞেস করল।