“তো রিয়ুজি, ফোনে যা যা বলেছিলে তা কি আসলেই সত্যি? তোমার সাথে সিয়োরির দেখা হয়েছিল?”
“এক মাস আগে। একটা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানে কিছু কাজের ব্যাপারে আমার একটা ইন্টারভিউ ছিল। ও ছিল ওখানের লেখিকা যাকে কাজটা। করার জন্য নেয়া হয়েছিল। প্রথমে আমি বুঝিনি যে ও তোমার পুরোনো বন্ধু ছিল। পরিচয় হওয়ার প্রায় এক সপ্তাহ পর গিয়ে আমি জানতে পারি যে কলেজে ও তোমার সাথে একই ক্লাসে ছিল। তখন তোমরা বেশ ঘনিষ্ঠ ছিলে তাই না? যাই হোক, সে যখন এইসব জানতে পারল তখন ওর মুখ শুকিয়ে গেল।”
রিযুজি গভীর দৃষ্টিতে মিকির চেহারার দিকে তাকাল যেন চেহারার রঙের কোন পরিবর্তন হলে তা ধরতে পারে। কিন্তু মেয়েটা চুপ করে ছিল।
“আমি ওকে কারনটা জিজ্ঞেস করতে চাইছিলাম। কিন্তু সে কিছু বলেনি। তবে একদিন আমি জেনে গেলাম। আমরা বারে বসে ড্রিঙ্ক করছিলাম।”
“মাতাল অবস্থায় ও তোমাকে কিছু বলেছে?”
“ও চিত হয়ে বারের টেবিলে পড়ে ছিল। আর গোঙাতে গোঙাতে কোন একটা এক্সিডেন্টের কথা বলছিল।”
মিকি একটা বড় দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উঠে দাঁড়াল।
“ও একবার বলেছিল যে তোমরা দুজন একবার একটা গাড়িতে ছিলে আর তুমি সাইকেলে থাকা একটা জুনিয়র হাইয়ের ছাত্রকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিলে। তোমরা একে অপরকে বলেছিলে ঘটনাটা নিয়ে দুশ্চিন্তা না করতে। আর অন্য কাউকে যেন না বলা হয়। তারপর তুমি গাড়ি চালিয়ে বাড়ি চলে যাও।”
“আমাদের জানা ছিল না যে ছেলেটা মারা গিয়েছিল। আমরা ভেবেছিলাম ও হয়ত একটু আহত হয়েছিল।”
“পরদিন যখন খবরটা কাগজে এল, দেখে তোমার কেমন লেগেছিল? তোমার কি অপরাধবোধ হয়েছিল? ভয় হয়েছিল? নাকি স্রেফ দুঃখবোধ করছিলে? আর এরপর থেকে বাকি জীবনটা কি তুমি পুলিশের হাতে ধরা পড়ার ভয় পেয়ে এসেছ? অনুভুতিটা ঠিক কি রকম ছিল?”
নিয়জি সোফা থেকে উঠে মিকির দিকে তাকাল। ওর চোখগুলো দেখে মনে হচ্ছিল যেন কোন বাচ্চা ছেলে লুকোনো গুপ্তধন পেয়েছে। “আমি চাই তুমি আমাকে সব খুলে বল, প্লিজ।”
“যাতে তুমি ইশিরোকে বলতে পার?”
“বোকার মত কথা বোলনা! তুমি কি এখনো বুঝতে পারোনি? আমি একজন লেখক! আমি তোমার গোপন সব বের করে নিয়ে, তোমার দুর্দশা নিয়ে সেগুলোকে শিল্পে রুপান্তরিত করতে চাই!”
ও ওর হাতগুলোকে ঈগলের নখরের মত বাঁকিয়ে উঁচু কর্কশ কন্ঠে চেঁচিয়ে বলল। ওর কাঁধ ফুলে উঠল, তারপর পিছিয়ে গিয়ে কাউচে ধপ করে পড়ল, যেন ক্লান্ত।
“অবশ্য, আমাকে তোমার এখনই বলতে হবে না।”
মিকি স্টেরিওর কাছে গিয়ে ভলিউমটা ঠিক করার চেষ্টা করল। মিউজিক আরো বেড়ে গেল।
“তুমি নিশ্চয়ই আর কাউকে বলোনি, নাকি?”
“আমি সবাইকে বলার জন্য মারা যাচ্ছি।”
“আমি চাই তুমি কোনদিন কাউকে কথাগুলো বলবে না।”
মিকি শেলফের কাছে গিয়ে পাথরের তৈরি একটা অ্যাষ্ট্রে তুলে নিল। বাড়ি দিয়ে ঔপন্যাসিককে মৃত্যুমুখে পাঠিয়ে দেয়ার জন্য জিনিসটা একটা নিখুঁত অস্ত্র হতে পারে।
রিয়ুজি মিকির দিকে পেছন ফিরে সোফায় বসে ছিল।
“ইশিরো এসবের কিছুই জানে না তো তাই না?”
“তুমি মনে হয় জানো না, ও যদি জানেও তাহলেও তোমাকে ডিভোর্স দেয়ার মত লোক ও না। তুমি কি দেখে আমার ভাইয়ের প্রেমে পড়েছিলে বল তো? ও একটু পাগলাটে ধরনের।”
মিকি অ্যাস্ট্রেটা নামিয়ে রাখল।
“পাগলাটে মানে কি বলতে চাইছ?”
“ও একটু উচ্ছন্নে যাওয়া ধরনের। যে কারনে ওর পেইন্টিংগুলো এত ভাল বিক্রি হয়। আমার কাছে ওগুলোকে ভীতিকর মনে হয়। ছাউনিতে যেটা রাখা আছে ওটা গিয়ে দেখ একবার।”
মিকি ছাউনির দরজার দিকে ঘুরল। রিয়ুজি হাসল।
“কিরকম দম্পতি! একজন পাগল আরেকজন খুনি! একদম ক্লাসিক!”
“তা যদি বলতে চাও…”
***
তিন মিনিট পর।
রক্তাক্ত অ্যাস্ট্রেটা মিকির হাত থেকে পিছলে মেঝেতে পড়ার সময় ভারি শব্দ তুলল। রিয়ুজি, যাকে পেছন থেকে আঘাত করা হয়েছিল, তখনো সোফায় বসে আছে। শরীরের উপরের অংশ সামনের দিকে ঝুঁকে আছে। পেছন থেকে মিকি ওর কাঁধ ধরে পিছনে টেনে আনল যাতে ওর ভারটা সোফার উপর এসে পড়ে। মিকি নিজের শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্য গভীরভাবে কয়েকবার নিশ্বাস নিল। তারপর নিজের দুহাত মুখের সামনে এনে দেখল। আঙুল দশটা থরথর করে কাঁপছিল।
হঠাৎ করে দরজায় ঠকঠক শব্দ হল। হালকা ধরনের শব্দ, সসপ্যানের উপর ডিম ভাঙার সময় যেরকম শব্দ হয়। মিকি শক্ত হয়ে গেল, দরজার দিকে তাকিয়ে থাকল।
“রিয়ুজি, ভেতরে আছে তুমি?” রিয়ুজির মায়ের গলা। “ভেতরেই আছ, তাই না? আমি মিউজিক শুনতে পাচ্ছি এখান থেকে। তোমার সম্পাদকের কাছ থেকে ফোন এসেছে।”
মিকি কিছু বলল না, স্টেরিওর দিকে ঘুরে তাকাল। মিউজিক তখন চলছিল।
“সব ঠিক আছে তো? আমি ভেতরে আসছি।”
দরজার নব ঘুরে গেল আর দরজাটাও কেঁপে উঠল। কিন্তু রুমের মৃত মালিক দরজাটা লক করে রেখে ছিল, তাই সেটা খুলল না। রিয়ুজির মা হাল ছেড়ে দিয়ে ফিরে গেলেন। মিকি এতক্ষন ধরে আটকে রাখা দমটা ছাড়ল। কিন্তু ওর অভিব্যক্তি আগের মতই কঠিন হয়ে ছিল। ও গিয়ে স্টেরিওটা বন্ধ হাত কপালের উপর রেখে মাথা ঝাঁকাল।
“এসব কি করে হল?”
লাশটার দিকে তাকাল ও।
“এখানে কি ঘটেছে?”
ও নিজের স্বর নিচু রাখল। চিল্লাচিল্লি করে কোন লাভ নেই।