এই বইয়ের প্রতিটি স্তরে আমি (লেখক) চেষ্টা করছি যে আকবর প্রকৃত অর্থে কেমন ছিলেন তা বর্ণনা করতে। বাস্তব তথ্য তুলে ধরার জন্যই এই বইটি লিখেছি। এই বই লেখার সময় বহু মানুষের মধ্যে দ্বন্দ্ব, সংকট সৃষ্টি হয়েছিলো, তারা আমাকে ঠিকমতো তথ্য দিচ্ছিলো না। অবশ্য শেষ পর্যন্ত এমন একজনকে পেলাম যিনি আমাকে তথ্য-উপাত্তের জন্য সার্বিক সহায়তা করেছেন। এই বইয়ের প্রতিটি চরিত্র বাস্তব সত্য বটে–তারা হচ্ছে আকবরের মা হামিদা, ফুফু গুলবদন, তার দুধভাই আদম খান, দুধমাতা মাহাম আঙ্গা, তার নিকট আত্মীয় বৈরাম খান উপদেষ্টা, হিমু, শাহ দাউদ, রানা উদয় সিং, ছেলে সেলিম, মুরাদ, দানিয়েল এবং স্বর্গীয় সূফি শেখ সেলিম চিশতি–যাঁরা তাদের জন্মের জন্য গর্বিত এবং তারা তাদের দাদাজান, পারস্যের গিয়াস বেগ- তাদের পরিবারের কাছে ঋণী। এছাড়াও জেসুইট পুরোহিত ফাদার এ্যান্টোনিও মনসেরেট, ফাদার ফ্রান্সিসকো হেনরিকস, উচ্চ পদস্থ ওলামা শেখ মোবারক, শেখ আহমেদ-তাদের প্রত্যেকের চরিত্র বইটিকে সমৃদ্ধি করছে।
.
আনুষাঙ্গিক
অধ্যায়-১ আকবর ছিলেন অশিক্ষিত–সেটাই সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ হয়েছে। লেখাপড়া করতে বিশেষ করে অক্ষর বানান করতে সমস্যা ছিলো বলেই পড়ালেখা আর হয়নি তার। হুমায়নের মৃত্যু হয় ১৫৫৬ সনের জানুয়ারিতে। আকবরের জন্ম ১৯৪২ সনের ১৫ অক্টোবরে। শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হোন ১৫৫৬ সনে। তৈমুর, বর্বর তুর্কীদের সভ্যতার পথে নিয়ে আসেন। পাশ্চাত্য জগতে তাম্বুর লাইন নামেই তিনি পরিচিত লাভ করেন। ক্রিস্টোফার মারলোওয়েস স্কোর্জ অত্ গড গ্রন্থে তৈমুর দি লেম নামে একটা পর্ব লেখেন। আকবরই প্রথম মুসলিম বর্ষপঞ্জিকা প্রচলন করেন। কিন্তু এই বর্ষপঞ্জিকায় যেহেতু মুসলিম দিন-ক্ষণ-তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে। তাই এটাকে রূপান্তরিত করে খ্রিষ্টীয় বর্ষপঞ্জিকার সাথে মিল রাখতে হয়েছে।
অধ্যায়-২ পানিপথের যুদ্ধ সংঘটিত হয় ১৫৫৬ সনের নভেম্বরে।
অধ্যায়-৩ বৈরাম খানের পতন হয় ১৫৬০ সনে।
অধ্যায়–৪ ১৫৬১ সনে বৈরাম খান খুন হোন।
অধ্যায়-৫ আতগা খানকে হত্যা করে আদম খান এবং তিনি ১৫৬২ সনে আকবরকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। মাহাম আঙ্গা এর কিছুদিন পরে শারীরিক দুর্দশাগ্রস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। আকবর অর্থ সংগ্রহ করে তাদের জন্য স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করেন। এই স্মৃতিসৌধ দক্ষিণ দিল্লীর কুতুব মিনারের পাশে মেরাওলিতে অবস্থিত।
অধ্যায়-৭ চত্তিরগড় আন্দোলন সংঘটিত হয় ১৫৬৭-৬৮ সনে।
অধ্যায়-৮ আকবর অম্বরের জয়পুরের শাসক রাজপুতের কন্যাকে বিয়ে করেন। তিনি অবশ্য আকবরের প্রথম স্ত্রী ছিলেন না। তার নাম কখনোও জানা যায়নি, এমনকি তার সাথে আকবরের মূলত কি ধরনের সম্পর্ক ছিলো তাও পরিস্কারভাবে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে তিনি শাহজাদা সেলিমের মা ছিলেন।
অধ্যায়-৯ ১৫৬৮ সনে শেখ সেলিম চিশৃতির মাজারে ভ্রমণ করেন আকবর। আর তার ছেলে সেলিমের জন্ম হয় ১৫৬৯ সনের ৩০ আগস্ট। সূফি শব্দের অর্থ–যারা ঐশ্বরিক দর্শন ও মতবাদে বিশ্বাসী।
অধ্যায়-১০ ১৫৫১ সনের জানুয়ারিতে আবুল ফজল জন্মগ্রহণ করেন। ১৫৭৪ সন থেকে আকবরের সেবায় নিয়োজিত হন। আকবর তাকে সেনাবাহিনীর কমান্ডার হিসাবে অধিষ্ঠিত করেন। তিনি অফিসিয়াল ভাবে প্রথমে ‘দশ সংখ্যা ব্যবহার করেন। নির্দিষ্ট সৈন্য সংখ্যার ক্ষেত্রে শূন্যকে ভিত্তি হিসাবে ধরা হয়েছে। এই শূন্য আবিষ্কারক ভারতীয় গণিতবিদ। এই সম্পর্কে পরবর্তীতে ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যের জ্ঞানী সমাজ জানতে পারে। আকবর পৃথিবীর মানুষকে জানালো কীভাবে ইটের দালান নির্মাণ করতে হয়।
অধ্যায়-১১ গুজরাট সম্পর্কিত প্রচার প্রচারণা শুরু হয় ১৫৭২ সনে।
অধ্যায়-১২ পাটনা সম্পর্কে প্রচার এবং বাংলা দখল হয় ১৫৭৪ সনে। ১৫৭৬ সনে শাহ। দাউদ মৃত্যুবরণ করেন।
অধ্যায়-১৩ ১৫৭০ সনের জুনে মুরাদ জন্মগ্রহণ করেন এবং তার দুই বছর পর ১৫৭২ সনের সেপ্টেম্বরে দানিয়েল জন্মগ্রহণ করেন। শিয়া এবং সুন্নীর লড়াই শুরু হয়। এটা ছিলো ইসলামের প্রথম শতাব্দীর ঘটনা। এই দুই সম্প্রদায়ের দ্বন্দ্বের কারণ উভয়েই দাবি করে তারাই মোহাম্মদ (সা:)-এর প্রকৃত উত্তরসূরি এবং তাঁর উত্তরসূরিরাই বিশ্ব নিয়ন্ত্রণ করবে। শিয়াদের দাবি মহানবীর উত্তরসূরি হিসাবে তারাই একমাত্র যোগ্য কারণ মোহাম্মদ (সা:) এর চাচাতো ভাই এবং পরবর্তীতে জামাতা আলী (রা:) শিয়াদের যোগ্য নেতা। শিয়া শব্দের আভিধানিক অর্থ ‘দল’ আর এই শব্দটা মূলত এসেছে প্রবাদ বাক্য “আলীর দল” থেকে। “সুন্নী শব্দের অর্থ যারা নিয়ম-রীতি মেনে চলে। এখানে মূলত মোহাম্মদ (সা:) এর নীতি, আদর্শ, আচরণকেই বুঝানো হয়েছে। ষোড়শ শতাব্দীতে এই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে অনবরত বিরোধ বাধে। বিরোধের মূল কারণ ধর্মীয় রীতিনীতি নিয়ে। ১৫৮০ সনে আকবরের রাজপ্রাসাদের উপস্থিত হোন জেসুইট পুরোহিত ফাদার এ্যান্টিনিও মনসেরাট।
অধ্যায়-১৪ ১৫৭৭ সনে গিয়াস বেগের কন্যা মেহেরুন্নেসা জন্মগ্রহণ করেন। এ সময় গিয়াস বেগ ভারত বর্ষে তার যাত্রা শুরু করেন।
অধ্যায়-১৬। ইংরেজ বণিক জন নিউবেরি ভারতে পৌঁছান, তাঁর সাথে ছিলেন রালফ ফিট। তারা আসেন ১৫৮৪ সনে। অনেক ইতিহাসবিদদের মতে, আকবর তাদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।