আবলুস কালো একজোড়া চোখ তার দিকে পাল্টা দৃষ্টি হানলো। তিনি তার লাল প্রলেপ যুক্ত পূর্ণঠোঁট দেখতে পেলেন-সেখানে মৃদু হাসি। কয়েক মুহূর্ত পর আকবরের আড়ষ্ঠতা বুঝতে পেরেই যেনো, সে মোলায়েম ভাবে আকবরের হাতটি নিজের বুকের কাছে পোষাকের ফিতার উপর পৌঁছে দিলো। তিনি ফিতা খুলে দিলেন, মেয়েটির পোষাক মেঝেতে গড়িয়ে পড়লো। সে সম্পূর্ণ নগ্ন, কেবল তার কোমরে একটি সোনার শিকলি জড়িয়ে আছে যার মাঝে ছোট ছোট চুনি পাথর বসান। তার ঠোঁট জোড়া ভীষণ আকর্ষণীয়, তার স্তনযুগল সুডৌল এবং উন্নত, স্তনের বোটাদ্বয় মেহেদি রাঙা।
আকবর স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে আছেন, তিনি বাক্য হারিয়ে ফেলেছেন, মেয়েটি দুপা পিছিয়ে গেলো। তারপর আকবরের সম্মুখে ধীরে একপাক ঘুরলো। মনে হচ্ছে আপনার আমাকে পছন্দ হয়েছে জাহাপনা, সে ফিসফিস করে বললো। আকবর মাথা নাড়লেন। সে এবার তার দিকে এগিয়ে এলো এবং তিনি অনুভব করলেন সে খুব ধীরে দুষ্টুমিচ্ছলে তার পোষাক গুলি আলগা করে দিচ্ছে, যতোক্ষণ পর্যন্ত না তিনি নিজেও নগ্ন হয়ে পড়লেন। আকবরের পেশীবহুল দীর্ঘ শরীর একপলক প্রত্যক্ষ করে সে আবার হাসলো। আসুন সম্রাট আমার মাঝে পরিভ্রমণ করুন। আকবরকে তার পেলব আঙ্গুলে আকড়ে ধরে সে বিছানার দিকে এগিয়ে গেলো। আকবর যখন তার পাশে শায়িত হলেন সে আকবরের হাতটি নিয়ে নিজের উরুসন্ধির মাঝে পৌঁছে দিলো। অনুভব করছেন সম্রাট, প্রেমের আদ্র মন্দির, যেখানে শীঘ্রই আপনি প্রবেশ করবেন। আপনাকে যা করতে হবে তা হলো….।
ছয় ঘন্টা পর, আকবর বিছানার উপর চিৎ হয়ে শায়িত, মেয়েটি তার পাশেই শুয়ে আছে, তাদের উভয়ের শরীরই ঘামে আবৃত। মেয়েটি তখন ঘুমাচ্ছে, তার হাত-পা ছড়িয়ে আছে, বক্ষ উঁচু-নিচু হচ্ছে এবং ঠোঁটজোড়া অর্ধউন্মুক্ত। তিনি তাকে দেখার জন্য মাথা ঘুরালেন, ভাবছেন কতো অল্প সময়ের মধ্যে তাঁর জীবন সম্পূর্ণ বদলে গেলো। মেয়েটি তাঁকে সম্পূর্ণ অজানা এক অভিনব ইন্দ্রিয় সুখের জগতের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলো যেখানে তিনি নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলেন। তারা ইতোমধ্যে তিনবার মিলিত হয়েছে। প্রথমে মৃদু অনুমান নির্ভর এবং তারপর আগ্রহী প্রবল ধাক্কা এবং হঠাৎ চরম পরিণতি। একসময় মেয়েটির নির্দেশনা অনুযায়ী তিনি তার উপরে উঠলেন যা আরো অধিক সূক্ষ্ম অনুভূতি সম্পন্ন ও দীর্ঘস্থায়ী বলে সে তাকে বুঝিয়েছিলো। তিনি বুঝতে পারছিলেন তাঁর মতো মেয়েটিও প্রতিটি মুহূর্ত চরম সংবেদনশীতায় উপলব্ধি করছে এবং আনন্দ পাচ্ছে। এইসব ভাবতে ভাবতে তার মাঝে আবারো কামনা উদ্দীপ্ত হয়ে উঠলো। তিনি মেয়েটির নিতম্বে মৃদু ধাক্কা দিলেন। মায়ালা ঘুমাচ্ছন্ন গাঢ় চোখ মেলে তাকালো। মিষ্টি করে হাসল। কেউ আর কখনোও তার পৌরুষ নিয়ে ঠাট্টা বা সন্দেহ পোষণ করবে না, আকবর ভাবলেন-তাঁর তরুণ নিতম্ব তীব্র সুখে আন্দলিত হতে লাগলো যখন তিনি পুনরায় মেয়েটির উপর সওয়ার হলেন।
*
আগ্রার দূর্গ-প্রাচীরের নীচ দিয়ে সর্পিলভাবে বয়ে যাওয়া যমুনা নদীর উপর বাঁকা আকৃতির নতুন চাঁদ যে হালকা আলো ছড়াচ্ছিলো তা প্রতিফলিত হয়ে অস্পষ্ট মায়াবী দ্যুতির জন্ম দিচ্ছে। কিন্তু আকবর নিরাপত্তা পাঁচিলের উপর দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় রাতের সেই মোহনীয় সৌন্দর্য খেয়াল করলেন না। হিমুকে পরাজিত করার পর বিজয়গৌরবের সঙ্গে তিনি হিন্দুস্তান পরিভ্রমণ করেছেন দুবছর আগে। এই বিশাল বালু-পাথর নির্মিত দূর্গে দশদিন আগে ১৫ই অক্টোবরে তিনি তাঁর সতেরো তম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন করেছেন। দিল্লীর পরিবর্তে সেখান থেকে উজানে একশ বিশ মাইল উত্তরে অবস্থিত এই আগ্রাকে তিনি তার নতুন রাজধানী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আগ্রা তাঁর পিতামহ বাবর এর রাজধানী ছিলো। পিতা হুমায়ূন বেঁচে থাকলে তিনিও হয়তো একে তাঁর রাজধানী বানাতেন। আকবরের মা, ফুফু এবং দুধমা এই সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, তাঁর সকল সেনাপতি এবং উপদেষ্টারাও। একমাত্র বৈরাম খান এই সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করেন। তিনি যুক্তি দেখান যেকোনো বিদ্রোহ বা বহিঃশত্রুর আক্রমণ ঠেকানোর জন্য কৌশলগত ভাবে দিল্লীই আদর্শ স্থান। সভাসদগণের সম্মুখে আকবরের সঙ্গে তর্ক এড়ানোর জন্য তিনি পরে আকবরের ব্যক্তিগত কক্ষে এসেছিলেন। কিন্তু আকবর তাঁর পরামর্শ কানে তোলেননি। তিনি তাঁর সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। বৈরাম খান আকবরের সঙ্গে তাঁর সর্বপ্রথম সত্যিকার বিরোধ থেকে ফ্যাকাশে মুখে ধীর পদক্ষেপে ফিরে যান।
স্মৃতি রোমন্থনের সময় আকবর দ্রুকুটি করলেন। পরবর্তী মাস গুলিতে পরিস্থিতি ভালোর দিকে যায়নি। তিনি অনুভব করছিলেন বৈরাম খানের আচরণ ক্রমশ বিরক্তিকর এবং অনধিকারচর্চামূলক হয়ে উঠছে। তার মনে হচ্ছিলো তিনি যতোই আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠছেন এবং শাসনকার্যে অধিক সক্রিয় ভূমিকা রাখতে চাইছেন, বৈরাম খান ততোই তাকে নিরুৎসাহিত করতে চাইছেন। বৈরাম খানের প্রতিটি বিরোধীতার সাথে তালমিলিয়ে শাসনকার্যে তাঁর নিজের স্বাধীন হস্তক্ষেপের আকাক্ষা বর্ধিত হচ্ছিলো।
সাম্রাজ্যের দুর্বল হয়ে পড়া সীমান্ত এলাকার নিরাপত্তা রক্ষায় বৈরাম খানের ভূমিকা স্মরণ করে এখনো পর্যন্ত তিনি তাঁর এই ভাবনাগুলি কাউকে জানাননি। কিন্তু কাউকে বিশ্বাস করে তাঁর এই গোপন অনুভূতি প্রকাশ করার তীব্র আকাঙ্ক্ষা তিনি অনুভব করছিলেন। হয়তো তার মায়ের বিচক্ষণ মন তাঁকে এ ব্যাপারে উপদেশ প্রদান করতে সক্ষম হবে।