হুমায়ূনের সৎ ভাইদের বিশেষত (কামরান ও আসকারির) ষড়যন্ত্র মোকাবেলার বিষয়টিও ছিল তাঁর জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ। সভাসদরা যখন বারবার বলছিলেন তাদের ফাঁসি দেয়ার জন্য তখন হুমায়ুন তাঁর এই ভাইদের বিভিন্ন সময়ে ক্ষমা করে দিয়েছেন। এদের ফাঁসির পক্ষে তারা অনেক যুক্তিও দেখিয়েছেন। হুমায়ূন হিন্দালের সঙ্গে বৈরি সম্পর্ক সৃষ্টি করেন, কারণ তিনি হামিদাকে বিয়ে করার বিষয়ে দৃঢ় প্রত্যয়ী ছিলেন। হামিদার প্রতি হিন্দালেরও অনুরক্ততা ছিল বলে জানা গেছে। এদিকে, এক সময় ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেলে হুমায়ুন কামরানকে অন্ধ করে দেন। এবং হজ্জের জন্য মক্কায় পাঠান। যা হোক, আমি মাঝে মাঝে তার কাজগুলোকে বিবেচনা করে সহজবোধ্য করে তোলার চেষ্টা করেছি এবং সময়সীমার কথা মাথায় রেখে কিছু ঘটনার বর্ণনা করা থেকে বিরত থেকেছি। মুল ইতিহাসের সঙ্গে সংগতি রেখে উপন্যাসিকের স্বাধিনতা বজায় রাখার চেষ্টাও আমি করেছি। এক্ষেত্রে আমি অনুসাঙ্গিক আরও কিছু ঘটনার বর্ণনা দিয়েছি।
বইটিতে যেসব চরিত্র রয়েছে, হুমায়ুনের তিন সৎ ভাই, তার পূত্র আকবর, সৎ বোন গুলবদন, চাচি খানজাদা, আকবরের দুধভাই মাহাম আগা ও আদম খান, শেরশাহ, ইসলাম শাহ, সিকন্দর শাহ, পারস্যের শাহ তাহমাস, গুজরাটের বাহাদুর শাহ, সিন্দ এর হোসেইন, মারওয়ারের মেলদিও এবং বৈরাম খান। বৈসংহার, হুমায়ূনের দাদি, আহমেদ খান, কাসিম এবং বাবা যশেবালের মতো চরিত্রগুলো যৌগিক।
কয়েক বছরের বেশি সময় ধরে এই বইটি নিয়ে গবেষণার অংশ হিসেবে আমি ঐতিহাসিকভাবে বর্ণিত অধিকাংশ অঞ্চলে ভ্রমণ করেছি। এগুলো এখনও সেখানে বিদ্যমান আছে। সেগুলো শুধু ভারতেই নয়, আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ইরানেও রয়েছে। বিশেষত আমি মনে করতে পারছি লাল পাথরের প্রাসাদ, যমুনা নদীর তীরে দিল্লির শের মণ্ডল যেখান থেকে পড়ে হুমায়ূন মারা গেছেন। আমি এখনও কল্পনা করতে পারি, আধ্যাত্বিক নক্ষত্ৰ সন্ধানী পূর্ণ আত্মবিশ্বাসী ও শক্তিশালী এই সম্রাট সংকীর্ণ সিঁড়ি বেয়ে পড়ে যাচ্ছেন। তিনি চিরতরের জন্য পড়ে গেলেন।
.
আনুসাঙ্গিক
অধ্যায় ১ ১৫৩০ সালে সিংহাসনে আরোহণ করেন হুমায়ূন। ১৫০৮ সালে জন্ম গ্রহণের পর হুমায়ুন মাহামের কাছে পাঠানো হয়। কামরান, জন্মের পর তাঁকে গুলরুখের কাছে পাঠানো হয়। তবে তাঁর জন্মের তারিখ বাবরের স্মৃতিকথা বাবরনামায় উল্লেখ নেই। যতদূর জানা যায় তাঁর বয়স ছিল হুমায়ূনের বয়সের কাছাকছি।
১৫১৬ সালে জন্মের পর আসকারিকে গুলরুখের কাছে পাঠানো হয়। তার জন্মের তিন বছর পর ১৫১৯ সালে দিলদারের কাছে পাঠানো হয় হিন্দালকে। মাহাম বাবরকে দিলদারের সন্তান পালন করার জন্য চেয়েছিলেন এবং তিনি রাজিও হন। ঘটনাটি হিন্দালের জন্মেরও আগের।
অবশ্যই হুমায়ূন মুসলিমদের চন্দ্রভিত্তিক ক্যালেন্ডার ব্যবহার করতেন। তবে আমি তারিখগুলোকে প্রচলিত সূর্য এবং পশ্চিমাদের ব্যবহৃত খ্রিস্টান ক্যালেন্ডারের সঙ্গে মিল রেখে করেছি।
তৈমুর পশ্চিমাদের কাছে টাম্বারল্যান নামে পরিচিত হন। তৈমুর দ্য ল্যাম থেকে এই টাম্বারল্যান শব্দটি এসেছে। এর অর্থ দাঁড়ায় খোঁড়া তৈমুর। ব্রিটিশ নাট্যকার খ্রিস্টফার মারলো তাঁকে তাঁর একটি নাটকে তোলে ধরেন ঈশ্বরের বিচরণ হিসেবে।
খানজাদার অপহরণ এবং বাবরের মৃত্যুকে ঘিরে অদ্ভূত পরিস্থিতি রাইডার্স ফ্রম দ্য নর্থ এ উল্লেখ করা হয়েছে।
অধ্যায় ২ ১৫৩৫-৩৬ সালে হুমায়ূন গুজরাটে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন।
অধ্যায় ৬ ১৫৩৯ সালের জুনে কৌসার যুদ্ধ সংগঠিত হয়। জওহর নিজামের গল্পটি বলে।
অধ্যায় ৮ কানাউজের যুদ্ধ সম্পন্ন হয় ১৫৪০ সালে।
অধ্যায় ৯ শেরশাহের কাছে কয়েকটি শর্ত দিয়ে হুমায়ূন ও কামরান উভয়েই পত্র লিখেন যা অগ্রাহ্য করেন শেরশাহ।
অধ্যায় ১০ গুলবদন লাহুর প্রত্যাবর্তনের বর্ণনা দেন। এটা যেনো পুনরুত্থানের দিন এবং লোকজন তাদের প্রিয় ও সুসজ্জিত প্রাসাদ ছেড়েছে।
অধ্যায় ১১ ১৫৪১ সালের ২১ আগস্ট মধ্যাহ্নে বিয়ে করেন হামিদা ও হুমায়ূন।
অধ্যায় ১৩ কয়েক বছর পর খানজাদা মারা যান এবং সে সময়ের বিভিন্ন বিষয় এই অধ্যায়ে বর্ণিত হয়েছে। ১৫৪২ সালের ১৫ অক্টোবর উমরখতে জন্ম গ্রহণ করেন আকবর।
অধ্যায় ১৪ কামরানের কাছে আকবরকে হস্তান্তর সম্পর্কীত বিভিন্ন বিষয় বর্ণিত হয়েছে।
অধ্যায় ১৫ গুলবদন দুরাচারি পর্বত উপজাতিদের নরখাদ্য গ্রহণ সম্পর্কে বর্ণনা করেন। তিনি তাঁদের বর্জ্যের পিশাচ বলে অভিহিত করেন। ১৫৪৩ সালে হুমায়ূন পারস্যের সীমান্তে পৌঁছান। হুমায়ূনকে সাদর সম্ভাষণ জানান শাহ তামাস্প। এককালের জাঁকজমকপূর্ণ শহর কাজবিন ভূমিকম্পে নষ্ট হয়ে যায়। কেস্পিয়ান সাগরের দক্ষিণে ইরানের উত্তরপশ্চিমে এই শহরটির অবস্থান ছিল। শাহ তামাস্প তাঁকে সাদর সম্ভাষণ জানান। এ নিয়ে জওহর ও গুলবদনের কাছে বর্ণনা পাওয়া যায়। কাজবিন শহরের কাছে যান হুমায়ূন। এই ভ্রমণটিকে বেশ সুন্দরভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। তাঁদের আগমনে ঢোল বাজানো হয়। শহর এবং গ্রামে লোকজনকে তাদের সবচেয়ে সুন্দর পোষাক পরার জন্য বলা হয়। লোকজন তাঁদের প্রবেশের পর উল্লাস ধ্বনী করতে থাকে। আবুল ফজল লিখেছেন, কহিনূর একটি মহামূল্যবান হীরা। এটা শাহ তামাস্পের কাছে ছিল। পরে সেটি হিন্দুস্তানে যায় এবং সম্রাট শাহজাহানের কাছে থাকে। পরবর্তীতে এটি ব্রিটেনের রাজকীয় অলংকারের অংশ হয়।