.
অতিরিক্ত টীকা
অধ্যায় :১
শিবাজির জন্মতারিখ সম্পূর্ণ নিশ্চিত নয়, তবে সাধারণত বিবেচনা করা হয় যে, ১৬২৭ খ্রিস্টাব্দের ৬ এপ্রিল পশ্চিম ঘাটের শিবনেরি দুর্গে তার জন্ম হয়। শিবাজি এবং আফজাল খানের মধ্যেকার লড়াই সম্পর্কে বেশ কয়েকটি ভাষ্য রয়েছে, তবে সাধারণত বলা হয় ঘটনাটি ১৬৫৯ খ্রিস্টাব্দের ২০ নভেম্বর ঘটেছিল। শিবাজির আরেকটি উল্লেখযোগ্য কৃতিত্ব ছিল। আওরঙ্গজেব তাকে দমন করার জন্য তাঁর চাচা এবং মমতাজ মহলের ভাই শায়েস্তা খানকে পাঠান, তখন শিবাজি একটি ছোট দল নিয়ে পুনরায় শায়েস্তা খানের শিবিরে ঢুকে হেরেম পর্যন্ত পৌঁছে শায়েস্তা খানকে আহত করে পালিয়ে যান। এছাড়া ১৬৬৪ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে শিবাজি সুরাট আক্রমণ করেন।
.
অধ্যায় : ২
আরঙ্গজেবের জন্ম ১৬১৮ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে। তাঁর পিতা সম্রাট শাহজাহানের জন্ম ১৪৯২ খ্রিস্টাব্দে। তিনি ছিলেন সম্রাট জাহাঙ্গীরের পুত্র এবং সম্রাট আকবরের পৌত্র। এই সিরিজের পঞ্চম পুস্তক দি সার্পেন্টস টুথ-এ বর্ণিত হয়েছে, ১৬৫৭ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে যখন শাহজাহান পীড়িত হন, তখন পিতার মৃত্যুতে তাদের বড় ভাই দারাশিকোর-জন্ম ১৬১৫, সিংহাসনে আরোহণে বাধা দেবার জন্য শাহজাহানের তিন পুত্র–যথাক্রমে মুরাদ–জন্ম ১৬২৪, শাহ সুজা-জন্ম ১৬১৬ এবং আওরঙ্গজেব বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। দারা শিকো তাঁর পিতার পছন্দের ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকার ছিলেন। বিশেষত আওরঙ্গজেব দারা শিকোকে একজন নব্যতান্ত্রিক বা খারেজি বিবেচনা করতেন। বিদ্রোহী তিন ভাই একটি পর্যায় পর্যন্ত ঐকমত্য ছিলেন মুরাদকে লেখা আওরঙ্গজেবের একটি চিঠি সংরক্ষিত হয়েছিল, তাতে তিনি একটি ধারণা তুলে ধরেছিলেন–কিভাবে তাদের মধ্যে সাম্রাজ্য ভাগ করবেন। মে ১৬৫৮ আগ্রা থেকে আট মাইল দক্ষিণপূর্বে সমুড়ে আওরঙ্গজেব এবং মুরাদ দারাকে পরাজিত করেন। পরিশেষে আওরঙ্গজেবের সৈন্যরা দারা শিকোকে বন্দী করে এবং ১৬৫৯ খ্রিস্টাব্দের আগস্টে দিল্লিতে আওরঙ্গজেব তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেন। তাঁর ছোট কবরটি দিল্লিতে সম্রাট হুমায়ুনের কবর-মঞ্চে রয়েছে।
ইতোমধ্যে আওরঙ্গজেব মুরাদকেও সরিয়ে দেন। কৌশলে তাঁকে তাঁর শিবিরে, তারপর একা তাঁর তাঁবুতে ঢুকিয়ে, সেখান থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে বন্দী করা হয় এবং তার প্রাণদণ্ড দেওয়া হয়। সিংহাসনের জন্য তাঁর দাবি নিয়ে এগোবার সময় প্রথম পর্যায়ে মুরাদ তার অর্থমন্ত্রীকে হত্যা করেছিলেন, তাঁর মৃত্যুদণ্ডকে ন্যায্যতা প্রদানের জন্য এই সত্যটি ব্যবহার করা হয়। আওরঙ্গজেব বিনয়ের সাথে মন্ত্রীর পরিবারকে আমন্ত্রণ জানিয়ে তাদেরকে ন্যায় বিচার দাবি করার জন্য আহ্বান জানান। মুসলিম আইন অনুযায়ী তারা আর্থিক ক্ষতিপূরণ কিংবা যদি তারা চায়, তবে প্রাণের বদলে প্রাণ–এই দাবি করতে পারে। মন্ত্রীর জ্যেষ্ঠ পুত্র আর্থিক কিংবা শারীরিক, যে কোনো ধরনের ক্ষতিপূরণ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়, তবে কেউ কেউ বলেন দ্বিতীয় পুত্র সম্ভবত ঘুষ খেয়ে আর্থিক ক্ষতিপূরণের অর্থ গ্রহণ না করে মুরাদের প্রাণদণ্ড দাবি করে। অবশেষে ১৬৬১ খ্রিস্টাব্দের ৪ ডিসেম্বর মুরাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। রক্তের দাবি না করার বিষয়টিকে বিশেষভবে চিহ্নিত করে আওরঙ্গজেব বড় ছেলেটিকে পুরস্কৃত করেন।
উত্তরাধিকার নিয়ে সংঘটিত যুদ্ধে শাহ সুজা প্রথম দিকেই পরাজিত হয়েছিলেন, তবে তারপরও মাঝখানে তিনি বেশ কয়েকবার হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করেন। বেশ কয়েকবার পরাজিত হওয়ার পর তিনি বাংলার পুবে আরাকানের জলদস্যু রাজার দেশে পালিয়ে যান। সেখানে সম্ভবত তাকে হত্যা করা হয়। আওরঙ্গজেবের সাথে শাহ সুজার সংঘর্ষের সময় আওরঙ্গজেবের জ্যেষ্ঠ পুত্র মোহাম্মদ সুলতান কিছু সময়ের জন্য শাহ সুজার সাথে যোগ দিয়েছিলেন। তার শাস্তিস্বরূপ আওরঙ্গজেব তাকে গোয়ালিয়রে দুর্গ-প্রাসাদে বন্দী করে রাখেন। ষোল বছর পর সেখানে তার মৃত্যু হয়। একই সময়ে আওরঙ্গজেব দারা শিকোর জ্যেষ্ঠ পুত্র সোলায়মান শেখের মৃত্যুর জন্যও দায়ী ছিলেন। মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন তাকে জোর করে বিশেষ পরিমাণে আফিমের একটি দ্রবণ–পোস্তা খাওয়ানো হত। এছাড়া দারা শিকোর দ্বিতীয় পুত্র সিফিরকেও গোয়ালিয়র দুর্গে বন্দী করে রাখা হয়।
সমুগড়ের যুদ্ধের সময় থেকেই আওরঙ্গজেবের সৈন্যরা শাহজাহানকে ঘিরে ফেলে, তারপর তাঁকে আগ্রা দুর্গে বন্দী কনে রাখে। তাঁর সর্বজ্যেষ্ঠ কন্যা জাহানারার জন্ম ১৬১৪–শুরু থেকে শেষ অবধি তাঁর পিতার সাথেই ছিলেন। তবে অন্য দুই কন্যারওশনআরা (জন্ম ১৬১৭) এবং গওহরা (জন্ম ১৬৩১) তাকে ছেড়ে চলে যান। রওশনআরা আওরঙ্গজেবের দীর্ঘকালের সমর্থক ছিলেন। এই পুস্তকে উল্লেখ করা শাহজাহানের সকল সন্তানের মাতা মমতাজ মহল গওহরাকে জন্ম দিতে গিয়ে ১৬৩১ খ্রিস্টাব্দের জুনে বোরহানপুরে মারা যান। তাঁর মৃত্যু শাহাজাহানের মনে গভীর দাগ কাটে, তিনি তাঁকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন। আর আমার বিশ্বাস তার সন্তানরাও একইভাবে শোকগ্রস্ত হয়ে পড়েন। তাঁকে তাজমহলে সমাহিত করা হয়, যা বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভালোবাসার স্মৃতিসৌধ।