যাকে তোমরা কুৎসিত বলছ সেটা হচ্ছে সাতটি মারাম্লক গুণের একটি, গ্ল্যাডিস, সাঁচ্চা টোরি হিসাবে ওদের তুমি হেলাফেলা করতে পার না। বিষয়, বাইবেল আর ওই সাতটি মারাত্মক গুণই আমাদের ইংলন্ডকে বর্তমান অবস্থায় নিয়ে এসেছে।
ডাচেস জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি তাহলে তোমার দেশকে পছন্দ কর না?
আমি এই দেশেই বেঁচে রয়েছি।
এই জন্যে যে এর অপগুণ তুমি ভালো করে প্রচার করতে পার?
তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এ সম্বন্ধে ইউরোপ কী বলে তাই কি তুমি শুনতে চাও?
কী বলে তারা?
টার্টুফি ইংলন্ডে এসে দোকান খুলে বসেছে।
এটা কি তোমারই কথা, হ্যারি?
আমি এটা তোমাকেই দিলাম।
আমি তা কাজে লাগাতে পারতাম না। জিনিসটা ভয়ঙ্কর রকমের সত্যি।
ভয় নেই তোমার। আমাদের দেশের লোক কোনো বর্ণনাকেই স্বীকার করে না।
তারা বাস্তবধর্মী।
তারা যতটা বাস্তকবধর্মী তার চেয়ে অনের বেশি চতুর। হিসাবের খাতা লিখতে বসে তারা মূর্খতার জের টানে অর্থের প্রাচুর্য দিয়ে, আর পাপের জের টানে শঠতা দিয়ে।
তবু, আমাদের অনেক বড়ো জিনিস রয়েছে।
বড়ো জিনিস আমাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, গ্ল্যাডিস।
সে-বোঝা আমরা বয়ে এনেছি।
সেকথা সত্যি, তবে আমাদের দৌড় ওই স্টক এক্সচেঞ্জ পর্যন্ত।
ঘাড় নাড়লেন ডাচেস, বললেন, ইংরেজ জাতের ওপরে আমার আস্থা রয়েছে।
ইংরেজ জাতটা বেঁচে রয়েছে কেবল অপরকে ল্যাঙ মারার চেষ্টায়।
উন্নতির পথে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
ধ্বংসই আমাকে আকর্ষণ করে বেশি।
কিন্তু আর্ট?
ওটা একটা রোগ।
প্রেম?
ওটা ভাঁওতা ছাড়া আর কিছু নয়।
ধর্ম?
ওটা হচ্ছে বিশ্বাসের একটা শৌখিন প্রতীক।
তুমি একটি নাস্তিক।
কভি নেহি। নাস্তিকবাদ দিয়েই বিশ্বাসের শুরু।
তোমার কাজটা কী বল তো?
ব্যাখ্যা করার অর্থই হচ্ছে সীমাবদ্ধ করা।
আমাকে একটা ধরতি দাও।
দড়ি ছিঁড়ে যায়। অনন্তু গহ্বরে তুমি পথ হারিয়ে ফেলবে।
তুমি আমাকে বিভ্রান্ত করে তুলেছ। অন্য আলোচনা করা যাক এস।
যাঁর বাড়িতে আমরা আজ অতিথি হয়ে এসেছি তাঁকে নিয়ে আলোচনা করলে আনন্দ পাবে। অনেকদিন আগেই তাঁর নতুন নামকরণ হয়েছে। সেই নামটা হচ্ছে প্রিন্স চার্মিং।
ডোরিয়েন গ্রে বললেন, ওকথাটা আর আমাকে স্মরণ করিয়ে দিয়ো না।
একটু লাল হয়ে ডাচেস বললেন, মিঃ গ্রেকে আজ একটু যেন কেমন-কেমন দেখাচ্ছে। আমার বিশ্বাস ও মনে করে নিছক বৈজ্ঞানিক স্পৃহা চরিতার্থ করার জন্যে মনমাউথ আমাকে বিয়ে করেছে। ওর ধারণা আমাকে বিয়ে করে মনমাউথ আধুনিক প্রজাপতির শ্রেষ্ঠ একটি নিদর্শন সংগ্রহ করেছে।
ডোরিয়েন হেসে বলেলন, আশা করি মনমাউথ তোমার বুকে পিন ফুটিয়ে দেবেন না ডাচেস।
সে-কথা যদি বল তাহলে আমার চাকরানিই চটে গেলে আমার বুকে পিন ফুটিয়ে দেয় মিঃ গ্রে।
কিন্তু তোমার ওপরে বিরক্ত হওয়ার তার কারণটা কী ডাচেস?
আমি তোমাকে নিশ্চয় করে বলতে পারি মি: গে, একেবারে বাড়ে কারণ সাধারণত আমি নটা বাড়তে দশ মিনিটে বাড়িতে ঢুকে তাকে বলি আমাকে সাড়ে আটটার মধ্যে সাজিযে দাও। এই আমার অপরাধ।
সত্যিই কী অন্যায়। তোমার তাকে সতর্ক করে দেওয়া উচিত।
সাহস পাই নে, মিঃ গ্রে। কী করে পাব বলুন? সে আমার জন্যে নতুন রকমের টুপি তৈরি করে। লেডি হিলটনের গার্ডেন পার্টিতে আমি যেটা পরেছিলাম সেই টুপিটার কথা তোমার মনে রয়েছে? মনে নেই, কিন্তু মনে থাকার ভান যে করছ তাই যথেষ্ট। সেই টুপিটা সে তৈরি করেছিল তেমন কিছু মালমশলা না দিয়েই। সব ভালো টুপিই এইভাবে তৈরি হয়।
লর্ড হেনরি মাঝপথে বলে উঠলেন, হ্যাঁ, গ্ল্যাডিস, ঠিক যশের মতো। প্রতিটি যশ অর্জন করার সঙ্গে-সদে মানুষ একটি করে শত্রু তৈরি করে। জনপ্রিয় হতে গেলে মানুষকে চরিত্র আর দক্ষতার দিক থেকে মাঝামাঝি ধরনের হতে হবে।
মাথা নেড়ে ডাচেস বললেন, উঁহু। ও কথা মহিলাদের সম্বন্ধে খাটে না; আর বিশ্ব শাসন করে এই মহিলারাই। কে যেন বলেছে, আমরা মহিলারা কান দিয়ে ভালোবাসি যেমন পুরুষরা। ভালোবাসে চোখ দিয়ে, যদি অবশ্য সত্যিকার ভালোবাসার মত পুরুষদের থাকে।
ডোরিয়েন বিড়বিড় করে বললেন, আমার তো মনে হয় এক ভালোবাসা ছাড়া আর কিছুই আমরা করিনে।
দুঃখের ভান করে ডাচেস বললেন, তাহলে মিঃ গ্রে, তুমি সত্যি-সত্যিই ভালোবাস।
লর্ড হেনির বললেন, প্রিয় গ্ল্যাডিস, একথা তুমি বললে কেমন করে? পুনরাবৃত্তির ওপরেই প্রতিটিবার মানুষ যখন প্রেমে পড়ে একমাত্র তখনই সে সত্যিকার ভালোবাসে। বস্তুর পার্থক্য। আকাণ্ডহষ্কার অকাগ্রতাকে পরিবর্তন করতে পারে না; বরং বাড়িয়ে তোলে। জীবনে আমরা একবারই মহৎ অভিজ্ঞতা লাভ করি আর জীবনের রহস্য হচ্ছে যতবার সম্ভব সেই অভিজ্ঞতাকে বাস্তব ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা।
একটু চুপ করে থেকে ডাচেস প্রশ্ন করলেন, মানুষ আহত হলেও, হ্যারি?
লর্ড হেনরি উত্তর দিলেন, আলবৎ।
মুখ ঘুরিয়ে চোখের ওপরে একটা অদ্ভুত দৃষ্টি ফুটিয়ে ডাচেস ডোরিয়েন গ্রের দিকে তাকিয়ে রইলেন।
মিঃ গ্রে, তুমি কী বল?
একটু দ্বিধা করলেন ডোরিয়েন; তারপরে মাথাটা পেছনে সরিয়ে হেসে বললেন, হ্যারির সঙ্গে আমি সব সময়েই একমত, ডাচেস।
যখন সে অন্যায় কথা বলে তখনো?
হ্যারি কখনো অন্যায় কথা বলে না, ডাচেসা।
ওর দর্শন কি তোমার ভালো লাগে?
সেকথা কোনোদিনই আমি ভাবিনে। কে সুখ চায়? আমি খুঁজে বেড়িয়েছি আনন্দ।