মিলার বলল–আমিই ছিলাম তার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু; তাই আমারই উচিত এই সভার সবচেয়ে ভালো স্থানটি দখল করা।
এই বলে গায়ে কালো পোশাক চডিযে, কালো রুমালে মাঝে মাঝে চোখের জল মুছতে মুছতে সে শোকযাত্রার পুরোভাগে চলতে শুরু করল।
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার শেষে সরাইখানায় আরামের সঙ্গে বসে মশলা দেওয়া মদ আর মিষ্টি কেক খেতে-খেতে কামার বলল–খুদে হ্যানস-এর মৃত্যু প্রত্যেকের কাছে একটা ক্ষতি।
মিলার বলল–অন্য কারো কথা জানি নে, কিন্তু তার মৃত্যু আমার কাছে নিঃসংশয়ে বিরাট একটা ক্ষতি ছাড়া আর কিছু নয়। সে আমার এত প্রিয় বন্ধ ছিল যে তাকে আমার ঠেলাগাড়ি আর একটু হলে দানই করে ফেলতাম। এখন সেটাকে নিয়ে আমি কী করব ভেবে পাচ্ছি না। সেটা বাড়িতে ফেলে রাখতে আমার অসুবিধে হচ্ছে। তার অবস্থা এতই খারাপ যে এমন অবস্থায় বিক্রি করেও বিশেষ কিছু ঘরে আসবে না। এর পরে আর কাউকে যাতে কিছু দেওযার বাসনা আমার না হয় সেদিক থেকে খুব সতর্ক হতে হবে। উদার হতে গেলে মানুষকে দুঃখ পেতেই হয়।
অনেকক্ষণ চুপ করে থাকার পরে জলের ইঁদুর বলল–মানে?
লিনেট বলল–মানে, এইখানেই আমার গল্প শেষ।
জলের ইঁদুর জিজ্ঞাসা করল–কিন্তু মিলারের শেষ পর্যন্ত কী হল?
লিনেট বলল–তা আমি জানি নে; আর জানারও ইচ্ছে নেই।
জলের ইঁদুর বলল–এতেই বোঝা যাচ্ছে তোমার চরিত্রে সহানুভূতি বলে কোনো পদার্থ নেই।
লিনেট বলল–এই গল্পের নীতিটা কী তা নিশ্চয় তুমি বুঝতে পারছ না।
জলের ইঁদুর প্রায় গোঙিয়ে উঠল–কী-কী বললে!
নীতি।
তুমি বলতে চাও গল্পটার একটা নীতি রয়েছে?
নিশ্চয়।
রাগে ঘোঁৎ-ঘোঁৎ করতে করতে ইঁদুর বলল–বটে, বটে! সেকথা শুরু করার আগে তুমি আমাকে বলনি কেন? তা যদি বলতে তাহলে তোমার এ গল্প আমি শুনতামই না। সত্যি কথা বলতে কি সেই সমালোচকের মতো আমি শুধু বলতাম-পুঃ।
এই বলে গভীর বীতশ্রদ্ধায় ল্যাজ নাড়িয়ে একটা চকিত শব্দ করে সে তার গর্তের মধ্যে ঢুকে গেল।
কয়েক মিনিট পরে সাঁতার কাটতে কাটতে ফিরে এসে হাঁসটা জিজ্ঞাসা করল জলের ইঁদুরকে–কেমন লাগল তোমার? ওর সত্যিই কি ভালো বক্তব্য রয়েছে; কিন্তু আমি হচ্ছি মা; মা-এর অনুভূতি রয়েছে আমার মধ্যে যারা চিরকুমার তাদের দিকে চোখের জল না ফেলে আমি তাকাতে পারি নে।
লিনেট বলল–মনে হচ্ছে আমি তাকে বিরক্ত করেছি। মোদ্দা কথাটা হচ্ছে আমি তাকে এমন। একটি গল্প বলেছিলাম যার মধ্যে একটা নীতি রয়েছে।
হাঁসটা বলল–তাই বুঝি! ওটাই সর্বক্ষেত্রে বিপজ্জনক। এবং তার সঙ্গে আমিও একমত।