–উরেব্বাস। আমিও তাই বলছিল, উনি ভালো নন।
–অ্যানি কে?
–২০ নম্বরের কাজের মেয়ে। আজই চলে যাচ্ছে। কতবার বলেছে, ওকে একদিন ঠিক পুলিসে ধরবে।
-ওকে পান্না পরতে দেখেছ?
–পান্না, মানে সবুজ পাথর?
–হ্যাঁ, অনেক দাম। ওই জন্যেই তো এসেছি। তবে এখনো প্রমাণ হয়নি, কাউকে এখন কিছু বলবে না।
-না, বলবো না।
–অ্যানি চলে যাচ্ছে কেন?
–ওর সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেনি।
–তাহলে কাজটা আমি করব। শোন, তুমি বলবে, অ্যানির জায়গায় তোমার এক আত্মীয় কাজ করবে। কি বলতে হবে বুঝতে পেরেছ?
-খুব পেরেছি। আপনি এলে দারুণ হবে।
-তুমি বলবে, আমি এখনই কাজে আসতে পারি। আমাকে জানাবে, কাল এগারোটায় আসব।
-গোয়েন্দাগিরি খুব মজার কাজ, তাই না?
–দারুণ মজার, তোমাকেও সঙ্গে নেব।
সাউথ ম্যানসন থেকে বেরিয়ে সোজা রিজে ফিরে এলো টুপেনস। মিঃ কার্টারকে একটা চিঠি লিখে দিল।
ডিনারের আগে পর্যন্ত টমি বা হার্সিমার কেউ ফিরল না। একটু চিন্তা হল। একাই ডিনার খেল সে।
সকালে মিঃ কার্টারের একটা চিঠি পেল। কাজের অগ্রগতির খবর জেনে অভিনন্দন জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে আরো একবার সম্ভাব্য বিপদের আভাস দিয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন।
বেলা দশটা পর্যন্ত টমির জন্য অপেক্ষা করল সে। দশটা তিরিশে একটা ট্রাঙ্কে নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে ট্যাক্সি ধরে প্যাডিংটন এলো।
স্টেশনে ক্লোকরুমে ট্রাঙ্কটা রেখে বাস ধরল। সাউথ অ্যালে ম্যানসনে যখন ঢুকল তখন এগারোটা বেজে দশ মিনিট।
এখানে আসবে বলে বেশবাসের সামান্য বদল ঘটিয়েছিল টুপেনস। চুলের গোছা বদলে বেঁধেছে, ভ্রূ এঁকেছে অন্যভাবে। হুইটিংটন যাতে চিনতে না পারে।
অ্যালবার্টকে দিয়েই বেশ যাচাই করে নিল। প্রথমে চিনতেই পারেনি।
–সব ঠিক আছে মিস। বলেছি, আপনার কথা এক বন্ধুর কাছে শুনেছি। অ্যানি আজ পর্যন্ত আছে। বলেছে আপনাকে সব বলে যাবে।
অ্যালবার্টকে পিঠ চাপড়ে বাহবা দিয়ে ২০ নম্বরে গিয়ে ঘন্টা বাজাল।
অ্যানিই দরজা খুলে দিল, নতুন কাজের লোক বুঝতে পেরে ফিসফিস করে কিছু বলল।
বিরাট বারান্দা পার হয়ে একটা ঘরে টুপেনসকে নিয়ে এলো অ্যানি।
কঠিন অথচ সুন্দর চেহারার মিসেস ভ্যান্ডেমেয়ারকে দেখে সে বুঝতে পারল, সহজে একে বোকা বানানো যাবে না।
তাকে বসতে বলে গৃহকর্ত্রী জিজ্ঞেস করলেন, পার্লার মেড খুঁজছি কি করে জানলে?
-এক বন্ধুর কাছে। এখানকার লিফট বয়ের চেনা।
–আগে কোথায় কাজ করেছ?
এসব অনুসন্ধানের জবাবে মনিবকে সন্তুষ্ট করার মতো জবাব তৈরি করেই এসেছিল টুপেনস। সুতরাং সে কাজে বহাল হয়ে গেল। বাড়ির কাজের জায়গায় সে নাম নিল, প্রুডেন্স কপার।
মিসেস ভ্যান্ডেমেয়ারের অনুমতি পেয়ে প্যাডিংটন থেকে নিজের ট্রাঙ্ক নিয়ে আসার জন্য রওনা হয়ে গেল সে।
.
বাড়ির কাজে আর্চডিকনের মেয়ের দক্ষতা কিছু কম ছিল না। সব কাজই সে চটপট বুঝে নিয়ে সারতে লাগল।
মিসেস ভ্যান্ডেমেয়ার ডিনারে একজন অতিথিকে বলেছিলেন। টুপেনস সেভাবেই টেবিল সাজিয়ে রাখল।
রাত আটটার পরে অতিথি এলো। সে দেখে চিনতে পারল, টমি যাদের অনুসরণ করেছিল তার দ্বিতীয় জন। ভ্যান্ডেমেয়ার তাকে বোরিস ইভানোভিচ বলে সম্বোধন করলেন।
টমির কথা ভেবে টুপেনস বিচলিত হয়ে উঠল। ফিরেছে কিনা কে জানে।
ডিনার শেষ হল। টুপেনস পরিবেশনের সময় আগাগোড়া কান খাড়া রেখেছে।
দুজনে একটা ছোট ঘরে ঢুকল। কফি আর পানীয় নিয়ে যখন সে ঢুকল বোরিসকে বলতে শুনল, একে তো ভালোই মনে হচ্ছে। আগেরটি বিপজ্জনক ছিল। তবে নজর রেখো।
মেয়েটা হলের ছেলের পরিচিত। তুমি বড় বেশি ভয় পাও বোরিস। আমাদের বন্ধু মিঃ ব্রাউনের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক আছে, আমাকে দেখে কেউ ভাবতেই পারবে না।
-অত নিশ্চিত হয়ো না রিটা।
টুপেনস বেরিয়ে এলে ঘরের দরজাটা বন্ধ হয়ে গেল। সে অস্থিরতা বোধ করল। দ্রুতপায়ে মিসেস ভ্যান্ডেমেয়ারের ঘরের কাছে গেল।
জানালার নিচে দাঁড়িয়ে ভেতরের কথা শুনতে লাগল।
–রিটা, পিল এজারটনের সঙ্গে অত মাখামাখি বন্ধ কর। লোকটা লন্ডনের নাম করা কে. সি.। তাছাড়া আইনবিদ। তুমি বুদ্ধিমতী, আমার কথা বুঝতে পারবে, ওকে ছেড়ে দাও।–আমি সবই বুঝি। কিন্তু তোমার মতো ভীতু নই।
–তুমি গোঁয়ার্তুমি করছ। ঝাঁঝের সঙ্গে বলল বোরিস। এরকম হলে ব্যাপারটা আমাদেরই হাতে নিতে হবে।
-ভুলে যেও না বোরিস, আমি একমাত্র মিঃ ব্রাউনের কাছ থেকেই হুকুম নিই। পিল এজারটনের আকর্ষণের কারণ আমার অজানা নয়।
তুমি সুন্দরী, এই তো? পিল এজারটন অপরাধীর গন্ধ পান, একথা সকলেই জানে। তার উদ্দেশ্য বুঝতে পারা তোমার কর্ম নয়।
বেশ তো সেয়ানে সেয়ানে খেলা জমবে ভালো। তাছাড়া লোকটার অনেক টাকা, আমার চাই টাকা, জানতো।
রিটা, তোমার টাকার লালসা বড় ভয়াবহ। নিজের আত্মাকেও বিক্রি করতে পার। ভয় হয়, কোনো দিন আমাদেরই না বিক্রি করে দাও।
–কোটিপতি ছাড়া সেই পরিমাণ দাম কে দিতে পারবে?
–তাহলে ঠিকই ধরেছি।
–মূর্খ, ঠাট্টা বোঝার মতো মগজও খুইয়েছ।
–ঠাট্টা হলে ভালো।
–আর ঝগড়া নয়, বোরিস
.
পরদিন সকালেও টমির কোনো সংবাদ জানতে পারল না টুপেনস। খুবই মুষড়ে পড়ল। ওর কিছু হয়নি তো? একবার বেরুতে পারলে খবর নেওয়া যেত।
সৌভাগ্যক্রমে সুযোগ এসে গেল। মিসেস ভ্যান্ডেমেয়ার তাকে ডেকে বললেন, প্রুডেন্স, রাতে বাড়িতে খাচ্ছি না। তুমি ইচ্ছে করলে ওবেলায় ছুটি নিতে পার।