–বেশ, বলে যান, বললেন মিঃ হার্সিমার।
টমি গোড়া থেকে জেন ফিনের অদৃশ্য হওয়া পর্যন্ত এবং বেসরকারী ভাবে তাদের জড়িয়ে পড়া সবিস্তারে জানালো। পরে বলল, আপনার কাছ থেকে তার সম্বন্ধে কিছু জানতে চাই।
-দেখুন, জেন ফিন আমার পিসতুত বোন বটে, আমি তাকে জীবনে দেখিনি।
–সেকী? অবাক হয়ে বলল টমি।
-হ্যাঁ, এটাই সত্যিকথা। আমরা পিসী পশ্চিমের এক স্কুলশিক্ষক অ্যামস কিনকে বিয়ে করবেন স্থির করেন। বাবা জানতে পেরে ক্ষেপে জান, জানিয়ে দেন একাজ করলে তাকে এক সেন্টও দেওয়া হবে না। পিসী গ্রাহ্য করলেন না। পশ্চিমে চলে গেলেন।
তেল আর ইস্পাতের ব্যবসা থেকে বাবা প্রচুর টাকা রোজগার করেন। গতবছর তিনি মারা। গেছেন। এখন সবই আমার।
আমি জেন পিসীর খোঁজ নিতে লাগলাম। জানতে পারলাম জেন পিসি আর অ্যামস কিন মারা গেছেন। তারা তাদের এক মেয়ে জেনকে রেখে গেছেন। সে লুসিটোনিয়া জাহাজে প্যারী ফিরছিল, টর্পেডোর আঘাতে জাহাজ ডুবে যায়, কিন্তু জেন বেঁচে যায়। তবে তার খোঁজ কেউ জানে না।
আমি স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড ও অ্যাডমিরালটির সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আজ সকালেই ইয়ার্ড থেকে একজন এসে জেনের ছবি নিয়ে যায়। প্যারীর পুলিসের সঙ্গেও এবারে যোগাযোগ করব।
–তাহলে তো জেন ফিনকে খোঁজার ব্যাপারে আমরা একসঙ্গেই কাজ করতে পারি। বলল টুপেনস।
খানিক পরে ওরা রেস্তোরাঁয় গেল লাঞ্চ সারবার জন্য। সেখানে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড থেকে ইনসপেক্টর জ্যাপ এলেন হার্সিমারের সঙ্গে দেখা করতে।
-সকালে তো একজন এসেছিলেন, তাকেই সব বলেছি। জেনের ছবিটা যেন হারিয়ে না ফেলে দেখবেন; ওর একটাই ছবি। ওর কলেজের প্রিন্সিপালের কাছ থেকে পেয়েছিলাম। এর নেগেটিভ নষ্ট হয়ে গেছে।
জ্যাপ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ছবি নিয়ে গেছে? যে এসেছিলেন তার নাম জানেন?
–হ্যাঁ, ইনসপেক্টর ব্রাউন। খুবই সাধারণ দেখতে।
সাংঘাতিক ব্যাপারটা তখনই জানা গেল জ্যাপের কাছে। ব্রাউন নামে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডে কোনো ইনসপেক্টর নেই। জেনের একমাত্র ছবিটি চিরকালের জন্য হাতছাড়া হয়ে গেছে। সেটা হাতিয়েছেন মিঃ ব্রাউন।
-আর পুলিসের ওপর নির্ভর করে থাকা ঠিক হবে না। আমরা তিনজনে মিলেই ব্যাপারটা দেখব আসুন। বললেন হার্সিমার।
অতঃপর এক তরুণ আমেরিকান আর দুই তরুণ অ্যাডভেঞ্চারারের মধ্যে নিবিড় সমঝোতা গড়ে উঠলো। টুপেনস তাদের সব কথা নতুন বন্ধুকে খুলে জানাল। তারা জেন ফিনের একমাত্র আত্মীয়ের সঙ্গে থাকার জন্য রিজেই উঠে এল।
পরবর্তী কর্মপন্থা নিয়ে আলোচনা করতে বসল টুপেনস।
–রিজে যখন উঠে আসতেই হল, এবারে কিছু একটা করতে হবে টমি।
–কি করবে ভাবছ। বলল টমি।
কাজে লাগাবার মতো আপাততঃ দুটো সূত্র আমাদের হাতে আছে। প্রথম হল, দলের হুইটিংটন লোকটাকে চিনি।
-কিন্তু লোকটা তত বেপাত্তা।
–পিকাডেলি সার্কাসে সকলকেই আসতে হয়, এখানে নজর রাখলে একদিন ঠিক চোখে পড়ে যাবে। বলল টুপেনস।
–আর দ্বিতীয় সূত্রটা?
–হুইটিংটনই যে নামটা করেছিল–রিটা। এবারে আর বিজ্ঞাপন নয়–বুদ্ধি দিয়ে তাকে খুঁজে বার করব। ডেনভারসকে অনুসরণ করা হয়েছিল, মনে আছে তো? আমার ধারণা কোনো সুন্দরী যুবতী তার ওপরে নজর রেখেছিল। আর সে বেঁচে গিয়েছিল।
–লুসিটোনিয়ায় যারা বেঁচে গিয়েছিল তাদের তালিকা আমি সংগ্রহ করেছি।
–বাঃ চমৎকার। আনন্দ প্রকাশ করল টুপেনস, তাহলে লন্ডনের ঠিকানাগুলো দেখে রিটা নামটা খুঁজে বার করতে হবে।
.
টমির নোট বইতে টুকে নেওয়া নামগুলোর প্রথমে ছিল মিসেস এডগার হিথ, লরেন্স, গ্লেনশাওয়ার রোড, এন, ওয়াই। লাঞ্চের আগে সেখানে ওরা টু মারল, হ্যাঁম্পস্টেড বরো কাউন্সিলের লোক বলে পরিচয় দিয়ে, জেনে নিল মিসেস এডগার হিথের পুরো নাম মিসেস এলিনর জেন।
এরপর দ্বিতীয় নামটি দেখে ওরা উপস্থিত হল ২০ নং কার্ক লেনে সাউথ অডলে ম্যানসনে।
আগের বারের কায়দাতেই ভোটার তালিকা মেলাবার ভঙ্গিতে খাতা বার করে নিয়ে দোতলায় উঠে ঘণ্টা বাজাল টমি।
দরজা খুলল একজন পরিচারিকা। টমি খাতায় চোখ রেখে জিজ্ঞেস করল, আমরা বরো কাউন্সিল থেকে আসছি, ভোটের ব্যাপার। এখানে যিনি থাকেন তাঁর নাম?
–মার্গারেট।
–কিন্তু আমাদের কাছে নাম রয়েছে রিটা ভ্যান্ডেমেয়ার।
–হ্যাঁ, ওটাই ওনার নাম।
–ঠিক আছে, ধন্যবাদ।
টমি সরে এসে উত্তেজনায় টুপেনসের হাত চেপে ধরে দ্রুত লিফটের কাছে সরে এলো। এমন সময় ওপরে সিঁড়িতে পায়ের শব্দ। আর কণ্ঠস্বর শোনা গেল। টুপেনস টমিকে নিয়ে অন্ধকারে সরে গেল। ফিসফিস করে বলল, গলার স্বর শুনে চিনতে পেরেছি; হুইটিংটন। অন্য জনকে চিনি না। আমাকে চিনে ফেলবে, তুমি ওদের অনুসরণ কর।
.
রাস্তায় নেমে হুইটিংটন আর তার সঙ্গী মেফেয়ার স্ট্রিট বরাবর হাঁটতে লাগল। একটু দূর থেকে টমি ওদের অনুসরণ করতে লাগল।
এরপর অক্সফোর্ড স্ট্রিট, বণ্ড স্ট্রিট…একটা রেস্তোরাঁ…লোকদুটো যে টেবিলে বসল, খানিক দূরেই বসল টমি।
দ্বিতীয় লোকটি বেটেখাটো, বেখাপ্পা মুখ। ক্ষুদে চঞ্চল চোখ। হয় রুশ নয় পোল।
কফি নিয়ে বসে টমি ওদের কথাবার্তা শুনবার চেষ্টা করতে লাগল। হুইটিংটন তার সঙ্গীকে বোরিস নামে ডাকছিল।
আয়ার্ল্যান্ড, প্রচার, মিঃ ব্রাউন শব্দগুলো কয়েকবার শোনা গেল। কিন্তু জেন ফির নাম কেউ উচ্চারণ করল না।