ডেনভারস লুসিটোনিয়া জাহাজে ইংলণ্ড রওনা হয়েছিল। কিন্তু পথে টর্পেডোর আঘাতে জাহাজটিকে ডুবিয়ে দেওয়া হয়।
তেলা কাগজের মোড়কে দলিলটা রাখা ছিল। কিন্তু ডেনভারসের ভাসমান মৃতদেহ পাওয়া গেলেও প্যাকেটটা পাওয়া যায়নি।
খবর আছে, টর্পেডোর আঘাতে বিধ্বস্ত জাহাজ থেকে নৌকো নামানোর ফাঁকে ডেনভারসকে এক আমেরিকান তরুণীর সঙ্গে কথা বলতে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু তাকে ওর হাতে কিছু দিতে দেখা যায়নি।
আমার ধারণা যদি কেউ ওটা ডেনভারসের কাছ থেকে আগেই ছিনিয়ে নিয়ে না থাকে। তাহলে কোনো মেয়ের পক্ষেই ওটা বাঁচিয়ে আনা সম্ভব। যদি তাই হয়, তাহলে মেয়েটি কাগজগুলো কি করল?
আমেরিকা থেকে জানা গেছে, ডেনভারসকে অনুসরণ করা হয়েছিল। শত্রুপক্ষের সঙ্গে মেয়েটির যোগাযোগ ছিল কিনা বোঝা যাচ্ছে না। অথবা এমনও হতে পারে, তাকে অনুসরণ করে কাগজপত্র ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল।
আমরা মেয়েটির খোঁজ নিয়েছি। তার নাম জেন ফিন। জাহাজের জীবিতদের তালিকাতে তার নাম ছিল। সে একজন অনাথা।
পশ্চিমে একটি স্কুলে শিক্ষকতা করত। তার পাসপোর্ট ছিল প্যারীর। এক হাসপাতালে কাজ নিয়ে সে যাচ্ছিল।
ইংলন্ডে ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গেই মেয়েটি উধাও হয়ে যায়। আমরা কোথাও তার হদিশ করতে পারিনি।
সেই খসড়া চুক্তি আর কার্যকর করা যায়নি। ফলে যুদ্ধ কূটনীতি অন্যদিকে মোড় নিল। জেন ফিনের প্রসঙ্গও একদিন চাপা পড়ে গেল।
–তাহলে এখন আবার তার নাম উঠল কেন? জানতে চাইল টমি।
-কারণ পাঁচ বছর আগের সেই খসড়া চুক্তিটি। যদি সেটা নষ্ট করা না হয়ে থাকে, তাহলে বর্তমানে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ইংলন্ডের পক্ষে তা ভয়ঙ্কর ক্ষতিকারক হয়ে উঠতে পারে। আবার একটা যুদ্ধই হয়তো অনিবার্য হয়ে উঠতে পারে।
কোনো শ্রমিকদল ক্ষমতায় এলে তাদের পক্ষেও ওটা ক্ষতিকর হবে। তোমরা শুনে থাকবে, বর্তমানে যে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে, তার পেছনে কলকাঠি নাড়ছেবলশেভিকরা। তারা এদেশে বিপ্লব ঘটাবার জন্য আঁটঘাট বাঁধছে।
বলশেভিকরা পাইকারী হারে এদেশে সোনা নিয়ে আসছে। সমস্ত কিছুর পেছনেই কাজ করছে একটা মানুষের মাথা।
বলশেভিকদের শ্রমিক আন্দোলনের হোতা ওই লোকটাকে আমরা জানি না। তবে তাকে ব্রাউন নামে উল্লেখ করা হয়।
যুদ্ধের সময়ে অঢেল টাকা খরচ করে সেই শান্তির প্রচার করেছে। অনেক জায়গায় তার নিজস্ব গুপ্তচর রয়েছে।
–এদেশের নাগরিক কোনো জার্মান হতে পারে। টমি বলল।
–আমার ধারণা, জার্মান সমর্থক কোনো ইংরেজই হবে। তবে তার আসল পরিচয় কেউ জানে না। অনেক অনুসন্ধান করেও তাকে প্রত্যক্ষ কোনো ভূমিকায় পাওয়া যায়নি।
–মিঃ হুইটিংটনের কেরানীর নামও ছিল ব্রাউন, মনে পড়ছে। বলল টুপেনস।
–ভালো ভাবে লক্ষ্য করিনি, তবে অসাধারণ কিছু নয়।
–মিঃ ব্রাউনের ওরকমই চেহারা। হুইটিংটন তোমাকে টাকা দিয়ে কাল আসতে, বলেছিল–সবই মিঃ ব্রাউনের নির্দেশ। যাইহোক, এত কিছু বলার উদ্দেশ্য; লোকটার গুরুত্ব তোমাদের বোঝানো। তোমাদের কাজ করতে হবে এই লোকের বিরুদ্ধে সতর্কতার সঙ্গে। তোমাদের কোনো বিপদ হোক, আমি চাই না।
–আমাদের কিছু হবে না। বলল টুপেনস।
মিঃ কার্টার হেসে বললেন, বাকি অংশটা শুনে রাখো। বিপ্লবী সমর্থকেরা খসড়া কাগজটা পাওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। যদিও তারা এটা তাদের হাতে আছে বলে ধাপ্পা দেবার চেষ্টা করেছে।
তারা যে আমাদের কাছ থেকেই মেয়েটির খবর নেওয়ার চেষ্টা করছে তোমার কথাতেই বোঝা যাচ্ছে। তারা জেন ফিনের খোঁজ করছে। হয়তো শেষ পর্যন্ত নিজেদের কাউকে জেন ফিন বলে দাঁড় করাবে। জানাবে প্যারীর কোনো গোপন আবাসে সে আছে। এভাবে কৌশলে তারা আসল খবর বার করার চেষ্টা করবে।
–আমাকে কি তাহলে সেই উদ্দেশ্যেই প্যারীতে পাঠাতে চেয়েছিল?
মিঃ কার্টার হেসে মাথা ঝাঁকালেন।
-স্যার, আর কোনো সূত্র দিতে পারেন? বলল টমি।
–ওই পর্যন্তই। আমার লোকেরা ব্যর্থ হয়েছে। ভাগ্যই হয়তো তোমাদের এতে টেনে এনেছে। হুঁশয়ার হয়ে কাজ করবে।
টুপেন উঠে দাঁড়াল।
-যাবার আগে, একটা বিষয় পরিষ্কার করে নিতে চাই। মিঃ কার্টার, আপনার সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটা কি হবে?
–উক্ত বিষয়ে খবর এবং যুক্তিসঙ্গত টাকা। তবে একটা কথা, পুলিসের ঝামেলায় পড়লে কোনো সাহায্য করতে পারব না। টাকাকড়ি সরাসরি আমার কাছেই চাইবে। বছরে তিনশ পাউন্ড করে দুজনেই পাবে, চলবে?
-আমরা খুশি স্যার।
–তোমাদের দুজনকেই শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
.
কাজের মতো একটা কাজ পাওয়া গেছে। খুশি মনেই ওরা বেরিয়ে এলো।
–এবারে জুলিয়াস পি. হার্সিমার। বলল টমি। –
-ইচ্ছে করেই কার্টারকে কথাটা চেপে গেছি। একটা ট্যাক্সি নাও। বলল টুপেনস।
.
খোঁজ করে মিঃ হার্সিমারের সুইটে প্রবেশ করল ওরা।
সবল, শক্ত কাঠামোর একজন আমেরিকান। বয়স পঁয়ত্রিশের বেশি হবে না। মুখখানা সুন্দর। সাদরে অভ্যর্থনা জানিয়ে তাদের বসালেন তিনি।
–জেন ফিন আমার পিসির মেয়ে, তার সম্পর্কে যা জানেন বলুন! বললেন মিঃ হার্সিমার।
–আপনি তাহলে জানেন সে কোথায়? বলল টুপেনস।
–না। আপনারা কি জানেন বলুন।
–খবর জানার জন্যই বিজ্ঞাপন দিয়েছিলাম।
–আমার ধারণা হয়েছিল, ওর অতীত জানতে চাইবেন। এখন ও কোথায় আপনারা তা জানেন।
–আমরা আপনার বোনকে অপহরণ করিনি। আমাদের লাগানো হয়েছে তাকে খোঁজার জন্যেই।