.
টিউব স্টেশনে ট্যাক্সি থামতেই টমিকে চোখে পড়ল। বিস্মিত টমি এগিয়ে এসে দরজা খুলতে সাহায্য করল।
ট্যাক্সি বিদায় করে দুষ্টু হাসি হাসল টুপেনস। টমিকে আরও কিছুটা হতভম্ব করার জন্য সে লাঞ্চ সারবার জন্য তাকে নিয়ে রিজে ঢুকল।
–এসব কি হচ্ছে টুপেনস। আমার মাথা ঘুরছে।
–আমি টাকা পেয়েছি
-কি করেছো? ব্যাঙ্ক ডাকাতি?
টুপেনস নিরিবিলিতে বসে সব কথা খুলে জানালো। সব শেষে বলল, জেন ফিন নামটা কেন যে মুখে এসে গেল–
টমি খানিকটা ধাতস্থ হল। জিজ্ঞেস করল, যে দুজনকে দেখলে, তারা কি রকম দেখতে?
–হুইটিংটন লোকটার চেহারা বিরাট, গোঁফ দাড়ি কামানো। অন্যটিকে লক্ষ্য করিনি। তবে নামটা অদ্ভুত।
-বুঝলাম। কিন্তু গায়ে পড়ে বিপদ ডেকে আনলে, বলল টমি; লোকটা এরপর তোমার কাছে অনেক কিছু জানতে চাইবে।
খাওয়া শেষ করে কফি নিয়ে বসলো ওরা। টুপেনস বলল, আমি সেটাই ভাবছি। জেন ফিন–এর সব কিছু জানতে হবে। আর জানতে হবে হুইটিংটনের ভেতর দিয়েই। কিন্তু লোকটা আমাকে চেনে, তোমাকে চিনতে পারবে না।
–আবার কি মতলব আঁটছ?
–শোন, মাথায় এসেছে, কাল আমি একা যাব, তুমি বাইরে কাছাকাছিই কোথাও থাকবে। লোকটা বেরিয়ে এলে তুমি তার পেছন নেবে।
.
পরদিন নির্দিষ্ট সময় বাড়িটাতে ঢুকে পরক্ষণেই হতাশ মুখে বেরিয়ে আসতে হল টুপেনসকে।
টমি বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল। এগিয়ে এসে পাশে দাঁড়াল।
-কি হল, বেরিয়ে এলে যে?
–অফিসটা বন্ধ। কোনো সাড়া পাওয়া গেল না।
একজন কেরানী গুটিগুটি বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো।
–আপনি গ্লাসওয়্যার কোম্পানির খোঁজ করছিলেন?
–হ্যাঁ। জবাব দিল টুপেনস।
–গতকাল বিকেল থেকে বন্ধ। নাকি কোম্পানি তুলে দেওয়া হয়েছে। বলল লোকটি।
লোকটির কাছ থেকে হুইটিংটনের ঠিকানাও পাওয়া গেল না। দুজনে চিন্তিতভাবে পথে নামল।
–পঞ্চাশ পাউন্ড, দুষ্টু হেসে বলল টমি, এবারে কি করবে?
–আমি ভাবতেই পারিনি, চিন্তিতভাবে বলল টুপেনস, কিন্তু এখানেই শেষ নয়, সবে মাত্র শুরু।
–কিসের শুরু?
–ওরা যখন পালিয়ে গেছে, বোঝা যাচ্ছে জেন ফিনের ব্যাপারটা গুরুতর। এর তল খুঁজে বার করবো–ঠিক বইয়ের গোয়েন্দার মতো।
আজই একটা বিজ্ঞাপন কাগজের অফিসে জমা দিয়ে আসবে। বয়ানটা হবে : জেন ফিন সম্পর্কে যে কোনো সংবাদ চাই। যোগাযোগ-ওয়াই. এ.
.
পরদিন বৃহস্পতিবারেই বিজ্ঞাপনটা ছাপা হল। শুক্রবার দিনে ওরা সকাল দশটায় ন্যাশনাল গ্যালারিতে মিলিত হল।
কথা হয়েছিল, কোনো চিঠি এলে টমি একা খুলবে না। টমি শপথ রক্ষা করেছে। সে দুটো চিঠি টুপেনসের হাতে তুলে দিল।
মাত্র দুটো–বিজ্ঞাপনের টাকাগুলোই নষ্ট হল।
টুপেনস প্রথম চিঠিটা খুলে পড়ল :
প্রিয় মহাশয়,
আজকের কাগজে আপনার বিজ্ঞাপন দেখলাম। আপনাদের হয়তো কিছু সাহায্য করতে পারি। আগামীকাল ওপরের ঠিকানায় বেলা এগারোটায় দেখা করবেন।–
আপনার বিশ্বস্ত,
এ. কার্টার
ঠিকানাটাও পড়ল টুপেনস : ২৭, কারশ্যালটন গার্ডেনস। গ্লসেস্টার রোডের দিকেই তো জায়গাটা। টিউবেই যাওয়া যাবে।
দ্বিতীয় চিঠিটা খুলল টুপেনস। বলল, শোন পড়ছি–ওহ, এটা রিজ থেকে এসেছে,
প্রিয় মহাশয়,
আপনার বিজ্ঞাপনের উত্তরে মধ্যাহ্নভোজের আগে দেখা করার অনুরোধ জানাচ্ছি।
আপনার বিশ্বস্ত
জুলিয়াস পি. হার্সিমার
–কোনো আমেরিকান কোটিপতি হবে। বিনা পয়সায় লাঞ্চটা ভালোই হবে মনে হচ্ছে। বলল টমি।
কারশ্যালটন গার্ডেনস জায়গাটা খুঁজে পেতে অসুবিধা হল না। ২৭ নং ফ্ল্যাটের দরজায় পৌঁছে ঘন্টা বাজাতেই পরিচারিকা দরজা খুলে দিল। মিঃ কার্টারের কথা বলতে সে তাদের নিচের লাইব্রেরী ঘরে নিয়ে বসাল।
এক মিনিট পরেই একজন দীর্ঘকায় গম্ভীর প্রকৃতির মানুষ ঘরে ঢুকলেন। ভঙ্গীটা ক্লান্ত, লক্ষ্য করল টুপেনস।
–মিঃ ওয়াই. এ.-দুজনেই বসুন।
ভদ্রলোক বসলেন, ওরাও আসন গ্রহণ করল।
–আপনি জানিয়েছিলেন, জেন ফিন সম্বন্ধে আমাদের কিছু জানাতে পারেন।
-ও হ্যাঁ, জেন ফিন, কিন্তু কথা হল, আপনারা তার সম্পর্কে কি জানেন? বললেন মিঃ কার্টার।
–আমরা জানতে এসেছি। ঢোঁক গিলে বলল টুপেনস।
–টাকা খরচ করে যখন বিজ্ঞাপন দিয়েছেন, তখন তার সম্পর্কে নিশ্চয় কিছু জানেন। তাহলে বলুন…
–সেটা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয় স্যার।
টুপেনস টমিকে সাক্ষী মানল।
টমি তাকে সমর্থন না করে মিঃ কার্টারকে লক্ষ্য করে বলল, যেটুকু জানি আপনাকে বলতে পারি স্যার। দেখেই আপনাকে চিনেছি। গোয়েন্দা বিভাগে যখন ছিলাম ফ্রান্সে আপনাকে দেখি, আপনি
তৎক্ষণাৎ হাত তুলে বাধা দিলেন মিঃ কার্টার। বললেন, কোনো নাম নয়। এখানে আমি মিঃ কার্টার। এটা আমার বোনের বাড়ি, বেসরকারী ভাবে কাজ করার সময় এখানে থাকতে পাই। তোমাদের তুমি বলেই সম্বোধন করছি। নাও, এবারে বলে যাও।
টুপেনস একপলক টমিকে দেখেছিল। পরে গোড়া থেকে তাদের অ্যাডভেঞ্চার সংগঠন গঠন করা পর্যন্ত সব কথাই খুলে জানাল।
-তোমরা তাহলে অ্যাডভেঞ্চার চাইছ? অদ্ভুত। তাহলে আমার হয়েই কাজ কর। আমি ভাগ্য বিশ্বাস করি। তোমরা হয়তো সফল হতে পার। সবই বেসরকারী, বুঝলে, খরচখরচা আর মোটামুটি কিছু পাবে।
টুপেনস আগ্রহভাবে জিজ্ঞেস করল, আমাদের তাহলে করণীয় কি হবে?
–জেন ফিনকে খুঁজে বার করবে।
–কিন্তু জেন ফিন কে?
-হ্যাঁ, এটা তোমাদের জানা দরকার। বেশ শোন। ব্যাপারটা গোপন কূটনীতি বিষয়ক। ১৯১৫ সালে আমেরিকায় একটা গোপন চুক্তির দলিলের খসড়া করা হয়। এটা বিভিন্ন প্রতিনিধির সই করার কথা, তাই ডেনভারস নামের বিশেষ দূত মারফত ইংলন্ডে পাঠানো হয়। ব্যাপারটা গোপন থাকারই কথা ছিল, কিন্তু কেউ ফাঁস করে দিয়েছিল।