-সত্যিই, কেমন মনে হচ্ছে। অস্ফুটে বলল জেন!
–স্বাভাবিক, মিঃ ব্রাউন উপস্থিত রয়েছেন যে।
–উপস্থিত রয়েছেন? এই বাড়িতে?
–তোমাদের সামনেই…আমিই মিঃ ব্রাউন। নিষ্ঠুর হাসি ফুটে উঠল স্যার জেমসের ঠোঁটে।
অবিশ্বাস আর শঙ্কা নিয়ে মেয়ে দুটি তাকিয়ে রইল খ্যাতনামা আইন বিশেষজ্ঞের দিকে।
-মিস টুপেনস, নিশ্চয় বুঝতে পারছ, সফল তোমরা নও, আমি মিঃ ব্রাউন। কেননা তোমরা কেউই আর এঘর থেকে কোনোদিন বাইরে বেরতে পারবে না। খসড়া চুক্তিটা এখন আমারই হাতে।
টুপেনসের চোখ জ্বলে উঠল। বিস্ফারিত চোখে সে বুঝবার চেষ্টা করতে লাগল সামনে দণ্ডায়মান লোকটিকে।
–তুমি আমাকে বোকা বানিয়েছিলে, আর পারবে না।
স্যার জেমস কোটের পকেট থেকে তার স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রটা বার করে হাতে নিলেন।
ঠিক সেই মুহূর্তে পেছন থেকে একটা হাত শক্ত মুঠিতে তার হাতে চেপে ধরল। জুলিয়াস হার্সিমার। আর টমি। অস্ত্রটা কেড়ে নিয়ে হার্সিমার বলল, এবারে ধোঁকা দিতে পারছেন না আপনি।
কিন্তু পলকের মধ্যে তাদের হাতের বাঁধন ছাড়িয়ে আইনবিদ স্যার জেমস তার পাথর বসানো বাঁ হাতের আংটি জিবে চেপে ধরলেন।
বিদায় বন্ধুগণ—
বলতে বলতে তার বিরাট শরীরটা মেঝেয় গড়িয়ে পড়ল। দুবার হিক্কা উঠল। নিশ্চল হয়ে গেল শরীরটা। অদ্ভুত একটা ঝাঁঝালো গন্ধ ছড়িয়ে পড়ল ঘরে।
.
.
পরদিন টমিই সকলকে সমস্ত গল্পটা শোনাল। হোটেল স্যাভয়ে তখন উপস্থিত ছিলেন আমেরিকান রাষ্ট্রদূত, মিঃ কার্টার, আর্চডিকন কার্ডলে এবং ডঃ হল। আর ছিল জেন ফিন, জুলিয়াস হার্সিমার আর টুপেনস।
টমি বলল, নতুন করে বলার মতো কিছু নেই। আমাকে বন্দী অবস্থা থেকে মুক্ত করে দিয়ে যখন সরে পড়ল তখনই বুঝতে পারলাম, অ্যানেটই জেন ফিন। ও মার্গারেট বলে চেঁচিয়ে উঠেছিল। ব্যাপারটা ভাবতে গিয়েই ছবির রহস্য পরিষ্কার হয়ে গেল।
মিসেস ভ্যাণ্ডেমেয়ারের মৃত্যুটা ঘটিয়েছিলেন স্যার জেমসই। তিনিই নকল জেন ফিনকে আবিষ্কার করেন।
ছবিটা কি করে পাওয়া যায় তাই নিয়েই চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। হার্সিমারকেও নির্ভর করতে পারছিলাম না। মিঃ কার্টারকে একটা চিঠি লিখলাম।
আর স্যার জেমসের বিশ্বাস অর্জনের জন্য তাকেও টেলিফোনে জানালাম সব ঘটনা। কেবল কাগজের কথাটা বাদ দিলাম।
আমি যাতে ফাঁদে গিয়ে পড়ি সেভাবেই জেমস টুপেনস আর জেনের হদিশ আমাকে জানালেন। মাথা ঠান্ডা রেখে আমি এড়িয়ে যেতে সক্ষম হলাম। এরপর টুপেনসের চিঠি হাতে পড়তেই সব পরিষ্কার হয়ে গেল। হার্সিমারের ওপর থেকেও সন্দেহ দূর হয়ে গেল।
–চিঠি পেয়ে কিভাবে বুঝলে?
টমি একটা চিরকূট এগিয়ে দিল। হাতে হাতে নিয়ে সকলেই সেটা দেখলেন।
–চিঠিটা টুপেনসেরই লেখা, কিন্তু সইটা জাল। টুপেনস কখনো টি ডব্লিও লেখে না। হার্সিমার আসল বানানটা জানে। কিন্তু স্যার জেমস ব্যাপারটা জানতেন না। অ্যালবার্টকে মিঃ কার্টারের কাছে পাঠিয়ে দিয়ে আমি চলে যাবার নাম করেও গোপনে রয়ে গেলাম। কেন না, স্যার জেমসকে বামাল ধরতে না পারলে কেউই আমার কথা বিশ্বাস করবে না।
–আমার পক্ষেও কষ্টকর হত। বললেন মিঃ কার্টার।
–সেই কারণেই জবরদস্তি করেই একরকম আমি মেয়েদের স্যার জেমসের কাছে পাঠিয়ে দিই। জেনকে হাতে পেয়ে সে তাকে নিয়ে সোহোর বাড়িতে যাবেন, সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত ছিলাম।
স্যার জেমস যাতে কোনো রকম সন্দেহ না করেন সেই জন্যই আমি রিভলবার তুলে হার্সিমারকে ভয় দেখিয়েছিলাম।
মেয়েরা চলে গেলে হার্সিমারকে সব ঘটনা বলি। সোহোর বাড়িতে গিয়ে আমরা মিঃ কার্টারের দেখা পাই। তাঁর নির্দেশে সব ব্যবস্থা হয়ে যায়। পুলিসকে সব জানানো হয়। আমরা বাড়ির ভেতরে ঢুকে পর্দার আড়ালে লুকিয়ে থাকি।
হার্সিমার বলল, জেনের ছবিটা আমার কাছ থেকে নিয়ে নেয়া হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু পরে সেটা আবার ফিরে পাই।
টুপেনস জানতে চাইল, কোথায়?
মিসেস ভ্যান্ডেমেয়ারের ঘরে।
-দেয়াল সিন্দুকে কিছু একটা যে তুমি পেয়েছিলে আমি বুঝতে পেরেছিলাম, বলল টমি, তুমি আমায় বলনি, এজন্যই তোমার ওপর সন্দেহ হয়েছিল।
মিঃ কার্টার তার পকেট থেকে একটা ছোট্ট ডায়েরী বার করলেন।
-মৃতব্যক্তির পকেটে এটা পাওয়া গিয়েছিল। সমস্ত ষড়যন্ত্রের খসড়া এর মধ্যে রয়েছে। আমরা এখন চাই শান্তি, যুদ্ধ নয়। তাই দুর্ভাগ্যজনক সেই খসড়া চুক্তি পুড়িয়ে নষ্ট করে ফেলা। হয়েছে।
স্যার জেমসের প্রতিপত্তির কথা ভেবেই ডায়েরীর কোনো লেখা প্রকাশ করা হবে না। এটা স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের হেফাজতেই থাকবে।
আমি কেবল খানিকটা অংশ পড়ে আপনাদের শোনাব যাতে ওই সুখ্যাত মানুষটির অবস্থা আপনারা বুঝতে পারেন।
মিঃ কার্টার পড়তে লাগলেন।
এই ডায়েরীতেই আমার সব কথা ধরে রাখছি। যদিও জানি কোনো সময় আমার বিরুদ্ধে এই লেখাগুলোই বড় প্রমাণ বলে সাব্যস্ত হতে পারে। তবে, আমার মৃত্যুর আগে কেউ এ বই হাতে পাবে না।
…বাল্যবয়স থেকেই আমি বুঝতে পেরেছিলাম, সাধারণ মানুষের চেয়ে আমার মস্তিষ্কের ক্ষমতা অনেক বেশি।
ছেলেবেলায় একটা বিখ্যাত খুনের মামলায় আমি উপস্থিত ছিলাম। আসামীপক্ষের আইনবিদের বক্তব্য ও যুক্তিজাল আমাকে মুগ্ধ করেছিল। এই সঙ্গে আসামীর কথাও আমি ভাবি। লক্ষ্য করি, লোকটা নিছকই বোকা।