–অথবা বলুন?
-তুমি যে ব্র্যাণ্ডি দিয়েছিলে, তাতে কেউ গোপনে মিশিয়ে দিয়েছিল। আর ওই ব্যাণ্ডিতে হাত দিয়েছিলাম কেবল আমরা তিনজন, আমি, তুমি আর মিঃ হার্সিমার।
–কি বলছেন, উত্তেজিত স্বরে বলল টুপেনস, জুলিয়াস একজন অতিবিখ্যাত লক্ষপতির ছেলে, সেই লোক মিঃ ব্রাউন হবে ভাবা যায় না। তবে এটা ঠিক, আপনাদের দেখে মিসেস ভ্যান্ডেমেয়ার আতঙ্কে উত্তেজনায় উঠে দাঁড়িয়েছিলেন।
-হ্যাঁ, তুমি যুক্তি ধরতে পেরেছ। মিঃ বেরেসফোর্ডের টেলিফোন আমি পেয়েছিলাম। তারপরেই বুঝতে পারি জেন ফিনের ছবি তার কাছেই ছিল–কেউ ধাপ্পা দিয়ে নিয়ে যায়নি। সে কাল্পনিক গল্প শুনিয়েছিল।
জেন তীব্র স্বরে চেঁচিয়ে উঠল, এসব কি বলছেন? জুলিয়াস আমার নিজের মামাতো ভাই, সে মিঃ ব্রাউন হতে যাবে কেন?
–না মিস ফিন, এই জুলিয়াস তোমার কেউ নয়।
ওরা দুজন হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল স্যার জেমসের দিকে। তারা যেন তার কথা বিশ্বাস করতে পারছিল না।
স্যার জেমস, খবরের কাগজের একটা কাটিং এনে জেনের হাতে দিলেন। টুপেনস চোখ বোলাল, নিউইয়র্কে পাওয়া রহস্যময় মৃতব্যক্তির সেই খবর।
স্যার জেমস বলতে শুরু করলেন, আসলে যা ঘটেছিল, তা হল, মিঃ জুলিয়াস হার্সিমার তার মামাতো বোনের খবর জানার জন্য, তার একটা ফটো সঙ্গে নিয়ে নিউইয়র্ক থেকে রওনা হয়েছিল।
তাকে অনুসরণ করা হয়েছিল। পথে তাকে হত্যা করে, মুখ ক্ষতবিক্ষত করে দেওয়া হয় যাতে সনাক্ত করা না যায়।
এরপর হার্সিমার নাম নিয়ে মিঃ ব্রাউন ইংলন্ড রওনা হন। নিখুঁত ছদ্মবেশ নিয়েছিলেন তিনি। সবচেয়ে আশ্চর্য হল যে যারা তাকে খোঁজ করছিল, তাদের সঙ্গেই তিনি ভিড়ে গিয়েছিলেন।
ফলে আগে থেকে সব সূত্রই তার জানা হয়ে যেত। একমাত্র মিসেস ভ্যান্ডেমেয়ারই গোড়া থেকে তার রহস্য জানতেন। সম্ভবতঃ মোটা টাকার ঘুষের লোভ দেখিয়ে তার মুখ বন্ধ করে রাখা হয়েছিল।
কিন্তু সেই রাতে মিস টুপেনস যে কাণ্ড ঘটালে, তাতে মিঃ ব্রাউনের আসল পরিচয় ফাঁস হয়ে যাবার অবস্থা হয়েছিল। মিস টুপেনস তার আভাসও পেয়ে গিয়েছিল।
–আমার সন্দেহ হচ্ছিল, কিন্তু নিশ্চিত হতে পারছিলাম না। কিন্তু হার্সিমারই যদি মিঃ ব্রাউন হবে তাহলে সে আমাদের উদ্ধার করল কেন?
–হার্সিমার এত ভালো, জেন বলল, আমি বিশ্বাস করতে পারছি না।
–বিশ্বাস না হবারই কথা, বললেন স্যার জেমস, জুলিয়াস হার্সিমার একজন দক্ষ অভিনেতা। কিন্তু, মিস টুপেনস, তোমাদের উদ্ধার করেছে, একথা বলছ কেন?
টুপেনস তখন সন্ধ্যাবেলার সমস্ত ঘটনা খুলে বলল।
–এই ব্যাপার, বললেন স্যার জেমস, বুঝতে পারছি।
–কিন্তু ব্যাপারটা আমার কাছে রহস্যময় মনে হচ্ছে। বলল টুপেনস।
–আমি তোমায় বুঝিয়ে দিচ্ছি। জেন ফিনকে ওরা ইচ্ছে করেই পালাতে দিয়েছে। মিঃ বেরেসফোর্ডকে ওরা হিসেবের মধ্যে আনেনি। যথাসময়ে তাকে সরিয়ে দিত। হার্সিমার জেনকে নিয়ে সোজা হাজির হত সোহোর বাড়িতে। খসড়া কাগজটা তার হাতেই পড়ত।
–কিন্তু টমি যে তার সঙ্গেই রয়ে গেল। উদ্বেগের সঙ্গে জানতে চাইল টুপেনস।
–শুনে এখন আমারও উদ্বেগ হচ্ছে। মিঃ হার্সিমারই হল মিঃ ব্রাউন। একটামাত্র রিভলভার নিয়ে তাকে সামলান অসম্ভব।
-তাহলে এখন আমরা কি করতে পারি?
–প্রথম কর্তব্য হবে সোহোর সেই বাড়িতে যাওয়া। শত্রুকে আমরা হাতের মুঠোয় পেয়ে যাব, আশা করছি।
স্যার জেমস ড্রয়ার থেকে একটা রিভলভার তুলে নিয়ে কোটের পকেটে ঢোকালেন।
-মিস ফিন খুবই ক্লান্ত, আমার মনে হয় তার এখানে থাকাই ভালো। সম্পূর্ণ নিরাপদ।
-না, আমি যাব, জোরের সঙ্গে প্রতিবাদ করল জেন, কাগজগুলো আমি নিজে দেখতে চাই–ওগুলো বিশ্বাস করে আমার কাছে দেওয়া হয়েছিল।
.
সাদা পোশাকের পুলিস বাড়িটার ওপর নজর রাখছিল। গাড়ি থেকে নেমে স্যার জেমস ওদের কিছু হুকুম করলেন।
তারপর মেয়েদের উদ্দেশ্যে বললেন, এখনো পর্যন্ত বাড়িতে কেউ ঢোকেনি। আমাদের পর কেউ ঢুকতে এলেই গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দিয়ে এলাম। চল, ভেতরে ঢোকা যাক।
–স্যার জেমসকে পুলিস চেনে। তাই একজন এগিয়ে এসে দরজার তালা খুলে দিল। তিনজনেই বাড়ির ভেতরে ঢুকলে আবার দরজা বন্ধ করে দিল।
জেন সরাসরি ওপরের একটা ঘরে গিয়ে ঢুকল। মার্গারেটের ছবিটা দেয়াল থেকে নামিয়ে আনল। স্যার জেমস তার হাতে একটা ছুরি এগিয়ে দিলেন। ছবির পেছনের কাগজটা সরিয়ে জেন ভেতর থেকে লেখায় ভরা দুটো কাগজ বের করে আনল।
-এটাই সেই আসল খসড়া, বলল জেন, আমাদের সব দুর্ভাগ্যের মূল।
–শেষ পর্যন্ত আমরাই জিতেছি, বলল টুপেনস।
স্যার জেমস কাগজ দুটো ভাঁজ করে নিজের কোটের পকেটে ঢুকিয়ে রাখলেন।
–কী ভয়ানক একটা ঘর দেখ, কোনো জানালা নেই, দরজাও পোক্ত। ভাবতেও শরীর শিহরিত হয়, এই ঘরেই আমাদের তরুণ বন্ধু বেরেসফোর্ডকে বন্দী করে রাখা হয়েছিল। এই ঘরে কিছু ঘটলে বাইরে থেকে কেউই টের পাবে না।
টুপেনস শিউরে উঠল। এখন যদি কেউ দরজাটা বন্ধ করে দেয়, তাহলেই তো খাঁচায় আটকানো ইঁদুরের মতো মরতে হবে সকলকে। কে জানে ভেতরে কেউ লুকিয়ে আছে কিনা?
ভয়ার্ত চোখে সে তাকাল স্যার জেমসের দিকে।
–ভয় হচ্ছে, তাই না মিস টুপেনস, রহস্যময় কণ্ঠে বললেন স্যার জেমস, আমিও মনে হচ্ছে বিপদের গন্ধ পাচ্ছি। মিস ফিনও নিশ্চয় পাচ্ছ?