-কিন্তু শুরু করবে কিভাবে? আগ্রহী হল টমি।
–সেটাই তো সমস্যা।
ঠোঁটকামড়ে টুপেনস একমুহূর্ত চিন্তা করল। পরে বলল, টমি, এসো দুজনে মিলে একটা অংশীদারী ব্যবসা গড়ে তোলা যাক। কাগজ পেন্সিল বার কর–
বার কয়েক কাটাকুটি করার পর টুপেনস একটা বিজ্ঞাপনের খসড়া দাঁড়া করাল। পড়ে। শোনাল টমিকে–অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় দুজন তরুণকে কাজের জন্য পাওয়া যাচ্ছে। যেকোনো কাজ। মাইনে ভালো চাই।
টাইমস পত্রিকাতেই দেওয়া সাব্যস্ত হল। পাঁচ শিলিং খরচের অর্ধেক সহ বিজ্ঞাপনটা টমির হাতে গুঁজে দিল টুপেনস। বলল, এভাবেই শুরু করে দেখা যাক।
হস্টেলে ফেরার জন্য দুজনেই উঠে পড়ল।
–আবার কোথায় দেখা হচ্ছে?
–পিকাডেলি টিউব স্টেশনে–কাল বেলা বারোটা।
পরস্পরের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ওরা দুজন দু দিকে চলতে শুরু করল।
.
০২.
সেন্ট জেমস চার্চের মাঝামাঝি পৌঁছতেই টুপেনস কানের কাছে কার গলার শব্দ শুনতে পেল।
–মাপ করবেন, একটু কথা বলতে পারি?
ঘুরে দাঁড়াল সে। বিরাট চেহারার একটা লোক, ভারি চোয়াল, পরিষ্কার করে কামানো। ধূর্ততা মাখানো চোখ।
–আপনাদের কথাবার্তা কিছু কানে এসেছে। আমি হয়তো আপনাদের সাহায্য করতে পারি।
-সেজন্যই অনুসরণ করছেন?
লোকটা পকেট থেকে একখানা কার্ড বের করে টুপেনসের হাতে দিল। মিঃ এডওয়ার্ড হুইটিংটন, এসথোনিয়া গ্লাসওয়ারি কোং।
–আপনার প্রস্তাব
–আগামীকাল বেলা এগারোটায় যদি দেখা করেন, আলোচনা করা যাবে।
–এগারোটায়, ঠিক আছে।
–ধন্যবাদ, শুভ সন্ধ্যা।
হাতের কার্ডটা আর একবার দেখল টুপেনস। তাহলে অ্যাডভেঞ্চার শুরু হয়ে গেল। কিন্তু লোকটার হাবভাব সন্দেহজনক। টুপেনস নিজেকে রক্ষা করতে জানে, ভাবল সে।
একটা ডাকঘরে ঢুকে টমিকে ক্লাবের ঠিকানায় টেলিগ্রাম করল।–বিজ্ঞাপন দিও না। কাল সব জানাবো।
নিজের হস্টেলে ফিরে চলল সে।
.
পরদিন যথাসময়েই এসখোনিয়া কোম্পানির অফিসে পৌঁছল টুপেনস। মধ্যবয়স্ক এক কেরানী তাকে মিঃ হুইটিংটনের ঘরে পৌঁছে দিল।
-ওহ, এসে গেছেন, বসুন।
একটা ডেস্কের পেছনে বসে আছেন মিঃ হুইটিংটন। সামনে প্রচুর কাগজপত্র। অফিসের সাজসজ্জায় কোনো গোলমাল নেই।
সামনের চেয়ারে বসল টুপেনস।
–কাজের কথা দিয়েই শুরু করা যাক। চমৎকার একটা কাজ–সব খরচ আর ১০০ পাউন্ড, ওতে চলবে?
-কাজটা কি ধরনের? সতর্ক কণ্ঠে বলল টুপেনস।
–একটা ভ্রমণ–প্যারীতে একটা স্কুলে।
–কোনো বোর্ডিং কি?
–হ্যাঁ, অ্যাভেনিউ দ্য নিউলিতে মাদাম কলম্বিয়ার বোর্ডিং।
–কত দিনের জন্য?
–ধরুন মাস তিনেক।
–আর কিছু শর্ত?
–তেমন কিছুই না। আমার আত্মীয় হিসেবে যাবেন, তবে কোনো বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারবেন না–আপনার নিজেকে গোপন রাখতে হবে। প্যারীতে বেশ আনন্দেই কাটাতে পারবেন। তাহলে এই
শর্তগুলো বিদঘুটে। আমার জন্য টাকা খরচ করবেন কেন বুঝতে পারছি না।
–বেশ, বুঝিয়ে দিচ্ছি, শান্ত কণ্ঠে বললেন মিঃ হুইটিংটন; বুদ্ধি আছে, অভিনয় করতে পারে আর বেশি প্রশ্ন করবে না এমন কোনো মেয়ের জন্যই আমি টাকা খরচ করতে চাইছি।
–বেশ, কিন্তু মিঃ বেরেসফোর্ডের কি হবে?
–তিনি কে?
–আমার অংশীদার, গতকাল যাকে সঙ্গে দেখেছেন।
–আমি দুঃখিত, তার প্রয়োজন হবে না।
–আমি দুঃখিত, মিঃ হুইটিংটন। যা করবার আমরা যৌথভাবেই করতে চাই। সুপ্রভাত।
–ওহ, একমিনিট, দেখি কিছু করা যায় কিনা।
গতকাল টমির মুখে শোনা নামটা হঠাৎ কি কারণে মনে ভেসে উঠল। টুপেনস অস্ফুটে উচ্চারণ করে ফেলল, জেন ফিন।
আশ্চর্য, সঙ্গে সঙ্গে খোলসটা খুলে পড়ল হুইটিংটনের। মুখ লাল হয়ে কপালের শিরা ফুলে উঠল। চোখে হিংস্র দৃষ্টি। হিসহিস শব্দে বললেন, এতক্ষণ তাহলে খেলা করছিলেন? কে ফাস করল কথাটা, রিটা?
টুপেনস নড়েচড়ে বসল। নিজের উপস্থিত বুদ্ধির ওপর তার অগাধ বিশ্বাস। কিছু বুঝতে না পারলেও সে বলল, রিটা আমার সম্বন্ধে কিছুই জানে না।
–আপনি জানেন, তাই ওই নামটা শুনিয়েছেন।
–ওটা তো আমার নামও হতে পারে।
-বাজে কথা রাখুন, খিঁচিয়ে উঠলেন মিঃ হুইটিংটন, কতখানি জেনেছেন–ব্ল্যাকমেল, অ্যাঁ, কত টাকা চান?
–আপনি আমাকে ভুল বুঝছেন মিঃ হুইটিংটন।
–বাজে কথা না বলে আসল কথায় আসুন। কত চান?
–আমি টাকার জন্য অতটা লালায়িত নই।
–আপনি ভালো খেলোয়াড়, বুঝতে পারছি। অথচ শান্ত ভীরু মেয়েই বোধ হয়েছিল আমার। কিছুতেই স্বীকার করছেন না আপনি কতটা জেনেছেন।
-স্বীকার করছি, একটা নামই আমার জানা।
–বুঝতে পারছি, মুখ খুলেছে রিটা। ওহহ, এসো ভেতরে—
কেরানী ভেতরে ঢুকে একটুকরো কাগজ এগিয়ে দিল।
এই টেলিফোন বার্তা এই মাত্র পেলাম।
মিঃ হুইটিংটনের ভ্রু কুঁচকে গেল। চকিতে টুপেনসকে দেখে নিলেন।
–ঠিক আছে ব্রাউন–আমি দেখছি।
কেরানী চলে গেলে টুপেনসের দিকে তাকিয়ে মিঃ হুইটিংটন বললেন, ঠিক আছে, আগামী কাল ঠিক এই সময়ে আসুন–বাকি কথা হবে। আর এই নিন, কাজ চলার মতো আপাততঃ পঞ্চাশ পাউন্ড।
নোটগুলো হাত বাড়িয়ে নিয়ে ব্যাগে ঢুকিয়ে নিল টুপেনস।
সুপ্রভাত মিঃ হুইটিংটন, আবার দেখা হবে।
–আবার দেখা হবে, বিদায়।
সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে টুপেনস ঘড়িতে দেখল, বারোটা বাজতে এখনো পাঁচ মিনিট বাকি আছে।
কড়কড়ে পঞ্চাশ পাউন্ডের মালিক সে এখন। ভাবল, টমিকে চমকে দেবে। একটা ট্যাক্সি ডেকে উঠে পড়ল।