-নামিয়ে দাও মানে?
–সামনেই একটা স্টেশন আছে, কয়েক মিনিট পরেই ট্রেন আছে।
হার্সিৰ্মার উত্তেজিত স্বরে বলে উঠল, এভাবে ওদের ফাঁকি দেওয়া যাবে না। তাছাড়া মেয়েদের একা ছেড়ে দেবার কথা তুমি ভাবছ কি করে?
–টুপেনস, ওকে সঙ্গে নিয়ে শিগগির বেরিয়ে পড়, আমি বলছি, নিরাপদে লন্ডনে পৌঁছতে পারবে। মিঃ কার্টার শহরে নেই। তোমরা সোজা স্যার জেমসের কাছে চলে যাবে।
-তোমার মাথার ঠিক নেই। উন্মাদের মতো বকছ। জেন, গাড়ি থেকে নামবে না।
টমি পলকের মধ্যে ছোঁ মেরে হার্সিমারের হাত থেকে রিভলভারটা নিজের হাতে নিয়ে তাকে তাক করল।
–আমরা গাড়িতেই থেকে যাব, কেবল মেয়েরা নেমে যাবে। একটাও কথা বলবে না। তোমরা দুজনে এখুনি নেমে পড়–নইলে আমার হাতেই মরতে হবে।
গাড়ি থেকে জোর করে সে টুপেনসকে নামিয়ে দিল। অনেটের দিকে হাত বাড়িয়ে বলল টুপেনস, নেমে এসো, টমি যখন বলছে, কোনো চিন্তা নেই।
গাড়ি থেকে নেমেই রাস্তার ধার ধরে তারা ছুটল। হার্সিমার কি বলতে যাচ্ছিল, টমি তার দিকে তাকিয়ে বলল, এবারে তোমার সঙ্গে কয়েকটা কথা বলার আছে আমার মিঃ হার্সিমার।
.
অ্যানেটের হাত ধরে স্টেশনে পৌঁছেই এক মিনিট পরে ট্রেন পেয়ে গেল টুপেনস। দুজনে একটা প্রথম শ্রেণীর কামরায় উঠে পড়ল।
টমি বলে দিয়েছে সোজা স্যার জেমসের কাছে চলে যেতে। সেখানে ওরা নিরাপদ। কিন্তু মিঃ ব্রাউনের অদৃশ্য চক্ষু কি ওদের লক্ষ্য করছে? চোখ কান সজাগ রেখে অ্যানেটকে পাশে নিয়ে বসে রইল টুপেনস।
–কিন্তু ওরা বড় ভয়ানক, বলল অ্যানেট, পাঁচ পাঁচটা বছর যে কি ভাবে আমি কাটিয়েছি
–ওসব এখন ভেবে কাজ নেই। বলল টুপেনস।
চেয়ারিংক্ৰশে পৌঁছে ওরা ট্রেন থেকে নেমে পড়ল। একটা ট্যাক্সি ধরে কিংক্ৰশের দিকে চলল ওর।
হার্বোনের মুখে জ্যামে আটকে গেল ট্যাক্সি। ওরা দরজা খুলে রাস্তার ওপর লাফিয়ে পড়ল।
ভিড়ের মধ্যে দিয়ে ফাঁকায় সরে এসে আবার ট্যাক্সি ধরল। টুপেনস হুকুম করল কার্লটন হাউস।
কয়েক মিনিটের মধ্যেই গন্তব্যস্থলে পৌঁছে গেল ওরা। কিন্তু কার্লটন হাউসে ঢোকার মুখেই বাধা পেল। বিশাল চেহারার একটা লোক পথ আটকাল।
দয়া করে সরে দাঁড়ান। তীব্রস্বরে বলে উঠল টুপেনস।
হিংস্র হাসি হাসল লোকটা। হাত বাড়িয়ে দেখিয়ে টুপেনসকে বলল, আপনার বান্ধবীর সঙ্গে দুটো কথা বলব কেবল।
লোকটা খপ করে অ্যানেটের কাঁধ চেপে ধরল। টুপেনস তৈরি হয়েই ছিল। এক পা পিছিয়ে এসে বিদ্যুৎবেগে মাথা দিয়ে লোকটার পেটে ঢু মারল।
আঁক শব্দ করে দশাসই চেহারার লোকটা ফুটপাতে গড়িয়ে পড়ল। সেই ফাঁকে টুপেনস আর অ্যানেট ছুটে এসে স্যার জেমসের দরজায় ঘণ্টা বাজাল।
ততক্ষণে সেই লোকটা সামলে উঠে ছুটে প্রায় সিঁড়ির কাছে চলে এলো। দরজা খুলতেই ভেতরে হুমড়ি খেয়ে পড়ল দুজন। শব্দ পেয়ে লাইব্রেরি থেকে বেরিয়ে এলেন স্যার জেমস।
-আরে, কি ব্যাপার?
ওদের লাইব্রেরির সোফায় নিয়ে বসিয়ে দেওয়া হল। দুজনেই হাঁপাতে লাগল।
-আর ভয় নেই। তুমি নিরাপদ।
টুপেনসের দিকে তাকিয়ে বললেন স্যার জেমস, তোমার বন্ধু টমির মতোই তুমিও তাহলে বেঁচে আছ? এই মেয়েটি
-আমি জেন ফিন, বলল অ্যানেট, আপনাকে অনেক কথা বলার আছে।
–সবই শোনা যাবে, আর একটু সুস্থ হও।
দরকার পড়বে না, এখনই সব বলে আমি নিরাপদ হতে চাই।
–বেশ, তোমার যখন ইচ্ছে
–জেন তখন তার কাহিনী বলতে শুরু করল :
যুদ্ধ লাগলে আমিও সাহায্য করব বলে উদগ্রীব হয়ে উঠেছিলাম। আমি ফরাসি শিখলাম। এক শিক্ষিকার কাছে শুনলাম, প্যারীর হ্যাঁসপাতালে তোক নিচ্ছে। আবেদন করে কাজও পেয়ে গেলাম। সঙ্গে সঙ্গে লুসিটোনিয়ায় চড়ে প্যারীতে রওনা হলাম।
আমাদের জাহাজে টর্পেডো যখন আঘাত করল, জাহাজ ডুবছে, সেই সময় আমার কাছে এক ভদ্রলোক এলেন।
জাহাজে কয়েকবার তাকে চোখে পড়েছিল। আমি দেশকে ভালোবাসি জেনে তিনি আমাকে বললেন, মিত্রশক্তির কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এমন কিছু কাগজপত্র তিনি সঙ্গে নিয়ে চলেছেন। মেয়েদের আর শিশুদেরই বাঁচার সম্ভাবনা ছিল। তিনি কাগজগুলো আমাকে সঙ্গে নেবার জন্য দিলেন।
টাইমস কাগজে বিজ্ঞাপন লক্ষ্য করতে বললেন। তিন দিনের মধ্যে কোনো বিজ্ঞাপন দেখতে না পেলে কাগজগুলো আমেরিকার রাষ্ট্রদূতের হাতে পৌঁছে দিতে বললেন।
কাগজগুলো দেবার সময় মিঃ ডেনভারস বলেছিলেন, তাকে হয়তো অনুসরণ করা হচ্ছে। আমি তাই সতর্ক হয়েই ছিলাম। হোলিহেডে যখন বোটে উঠলাম, তখন থেকেই শুরু হল অস্বস্তি। জাহাজে থাকতেই মিসেস ভ্যান্ডেমেয়ার নামে এক মহিলা আমার সুবিধা অসুবিধা নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করছিলেন।
প্রথমে বুঝতে পারিনি তাই কৃতজ্ঞ বোধ করি। আমার কাছাকাছিই ছিলেন তিনি। ডেনভারসের সঙ্গে দু-একবার আলাপ করতে চেয়েছিলেন।
আইরিশ বোটে ওঠার পর চোখে পড়ল, ভদ্রমহিলা অদ্ভুতদর্শন একজনের সঙ্গে আমার সম্পর্কে আলোচনা করছেন। আমি খুবই অস্বস্তি বোধ করতে লাগলাম। কি করব বুঝতে পারছিলাম না।
ইতিমধ্যে আমি একটা কাজ করেছিলাম। তেলাকাগজের প্যাকেটটা কেটে তাতে সাদা কাগজ ভরে সেলাই করে নিয়েছিলাম।
ভেতরে দুটো মাত্র কাগজ ছিল। সেগুলো একটা সাময়িকপত্রের দুটো পাতার মাঝখানে রেখে আঠা দিয়ে আটকে দিয়েছিলাম। আর পত্রিকাটা হেলা ভরে পকেটে ঢুকিয়ে রেখেছিলাম।