-হাত তুলুন, নইলে গুলি করব।
–এসব কি হচ্ছে? কি চান আপনি?
–আমার কথা মেনে চললে কোনো ভয় নেই আপনার। নইলে
–কিন্তু আপনি কি চান? টাকা?
–আমি চাই জেন ফিনকে।
–ও নাম আমি জীবনে শুনিনি।
–আমার এই ছোট্ট উইলি কিন্তু বিশ্বাসঘাতকতা করে না।
বিভ্রান্ত বিপর্যন্ত ক্ৰেমেলিনের কপাল বেয়ে ঘাম ঝরছে। শুষ্ককণ্ঠে বললেন, জেন ফিনের খোঁজ করছেন কেন?
-সোজা পথে আসুন। এই মুহূর্তে তাকে কোথায় পাওয়া যাবে?
–অসম্ভব কথা! আমার বলার সাহস নেই।
-মিঃ ব্রাউনের ভয়ে? ওরকম নামে সত্যিই কি কেউ আছে, যে আপনার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে ভয়ে?
–আছে, আমি তাকে দেখেছি, ভিড়ের মধ্যে, ভয় করার মতোই মানুষ তিনি।
–আপনি মুখ খুলুন, তিনি জানতে পাবেন না।
–তার কানকে ফাঁকি দেওয়া যায় না–প্রতিশোধ নেমে আসে দ্রুত। আমি ক্রেমলিনও রেহাই পাব না।
–তাহলে আমি যা জানতে চাইছি আপনি বলবেন না?
কঠিন স্বরে উচ্চারণ করল হার্সিমার। রিভলবার তুলে ধরল।
-গুলি করবেন না, আমি বলছি।
–মেয়েটি কোথায়?
–গেট হাউস, কেন্টে। জায়গাটার নাম অ্যাসলে প্রিয়রস।
–সেখানে সে বন্দী?
–মেয়েটা স্মৃতি হারিয়েছে।
–এক সপ্তাহ আগে যে মেয়েটাকে ভুয়া টেলিগ্রাম করে গায়েব করেছেন সে কোথায়?
–সে-ও ওখানে।
-তাহলে এই রাতেই চলুন কেন্টে গেট হাউসে। আমার সঙ্গেই আপনাকে থাকতে হবে। কোনো বেচাল করবেন না, পোশাক পাল্টে সোজা নিচে গিয়ে গাড়িতে উঠবেন। পেছনে উইলিকে নিয়ে আমি আছি।
.
সোফারকে লক্ষ্য করে হাসিমার হুকুম করল, জর্জ, কেন্টে গেট হাউসে যেতে হবে। রাস্তা চেনো?
–হ্যাঁ স্যার। দেড়ঘণ্টা লাগবে।
সময়টা একঘন্টা করবে।
হার্সিমার স্বনামখ্যাত রুশ বলশেভিক নেতার পাশে বসল। গাড়ি ছুটে চলল ঝড়ের বেগে।
একঘণ্টার মধ্যেই বাড়ির বারান্দার তলায় এসে পৌঁছল গাড়ি।
–জর্জ ইঞ্জিন বন্ধ করো না। বাড়ির ঘণ্টা বাজিয়ে তৈরি থাকো। ইঙ্গিত করলেই গাড়ি উড়িয়ে নিয়ে চলবে।
ক্ৰেমেলিনের পাঁজরায় রিভলবার ঠেকিয়ে বসল হার্সিমার। ঘণ্টা শুনে বাটলার হুইটিংটন দরজা খুলল। ক্রেমলিন গলা বাড়িয়ে বললেন, আমি ক্রেমলিন, মেয়ে দুটোকে নিয়ে এসো সময় নষ্ট করো না।
-তুমি এসময়ে? কিন্তু পরিকল্পনা তো
পরিকল্পনা বাতিল হয়েছে। আমাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে।
–তার আদেশ পেয়েছ?
–আমি এসেছি, বুঝতে পারছ? শিগগির ওদের গাড়িতে তুলে দাও।
হুইটিংটন ভেতরে চলে গেল। একটু পরেই কোট জড়ানো দুটি মেয়েকে নিয়ে এসে গাড়িতে তুলে দিল।
ঠিক সেই মুহূর্তে একঝলক আলো এসে হাসিঁমারের মুখে পড়ল। আর সিঁড়ির ওপর থেকে একজন চিৎকার করে উঠল।
–জর্জ
গাড়ি স্টার্ট দেওয়াই ছিল। ঝড়ের বেগে রাস্তায় গিয়ে পড়ল।
এলোপাথাড়ি গুলি ছুটে এলো পেছন থেকে। হার্সিমার পেছন ফিরে রিভলবার তুলে ঘোড়া টিপল।
টমি কোথয়া জুলিয়াস, বলল টুপেনস, ওই ভদ্রলোক কে?
-ইনি মঁসিয়ে ক্ৰেমেলিন। টমি আর্জেন্টিনা রওনা হয়েছে। জর্জ, ওরা আমাদের তাড়া করতে পারে, অন্য রাস্তা ধর।
-ওরা আমাদের ছেড়ে দিল কেন? বলল টুপেনস।
–সেই কৃতিত্ব মঁসিয়ে ক্রেমলিনের।
–আমার জীবনের দাম কানাকড়িও রইল না, হতাশকণ্ঠে বললেন ক্রেমলিন। বিশ্বাসঘাতকতার শাস্তি আমাকে পেতে হবে।
-আপনাকে এখানে নামিয়ে দিচ্ছি, এখনই রাশিয়ায় পাড়ি দিন। জর্জ গাড়ি থামাও।
গাড়ির গতি মন্দিভূত হতেই রাতের অন্ধকারে ঝাঁপিয়ে পড়ে অদৃশ্য হলেন ক্রেমলিন।
-ওরা আমাদের নাগাল ধরতে পারেনি, ধন্যবাদ জর্জ, টুপেনস, এবারে নিশ্চিন্ত হয়ে বসো।
টুপেনস বলল, আমি বুঝতেই পারিনি, অ্যানেট আর আমাকে ওরা কোথায় পাঠাতে চাইছে।
–ওকে অ্যানেট বলেই ডাকো?
–ওটাই তো ওর নাম
–ফুঃ, আমরা যাকে খুঁজে বেড়াচ্ছি, ও-ই তো সেই জেন ফিন–আসল জেন ফিন।
–কি বলছ। তীব্রস্বরে চেঁচিয়ে উঠল টুপেনস।
ঠিক এই সময় সকলকে আঁৎকে দিয়ে একটা গুলি এসে বিঁধে গেল গাড়ির গদিতে।
–জর্জ দ্রুত চালাও, উত্তেজিত স্বরে বলে উঠল হার্সিমার, ওরা আক্রমণ করেছে, তোমরা মাথা নামাও
গাড়ি ছুটেছে প্রচণ্ড গতিতে। এরই মধ্যে আরও তিনটি গুলি পরপর পাশ কেটে বেরিয়ে গেল। একটা সামান্য আঁচড় রেখে গেল হাসিঁমারের গালে।
রিভলবার বাগিয়ে ধরে পেছন ফিরে তাকাল সে। কিন্তু গুলি করার মতো কাউকে দেখতে পেল না।
আপনার গালে লেগেছে? বলল অ্যানেট।
–ও কিছু না, সামান্য ছড়ে গেছে। বলল হার্সিমার।
-ওহ, ওরা ধেয়ে আসছে, আমাকে ছেড়ে দিন। আমার জন্য আপনারা মারা যাবেন। আমাকে ছেড়ে দিন।
অ্যানেট গাড়ি থেকে নেমে যাবার জন্য দরজা খোলার চেষ্টা করে। হার্সিমার তাকে জড়িয়ে ধরে বলে, অধীর হয়ো না। চুপ করে বসে থাক।
একটু চুপ করে থেকেই সে আবার বলে, তোমার খোঁজেই আমি ইউরোপে এসেছি। আমি তোমার আত্মীয় জুলিয়াস হার্সিমার।
একটা ক্রসিং-এর মুখে এসে গাড়ির গতি মন্থর হল।
জর্জ বলল, ডানে বাঁয়ে রাস্তা গেছে স্যার, কোনো দিকে যাব?
এই সময় আচমকা বাইরে থেকে একটা মূর্তি হুড়মুড় করে ওদের মধ্যে পড়ল।
সকলে দেখল টমি। ওকে ধরে তুলে সিটে বসিয়ে দিল।
–তুমি ছিলে কোথায়? হর্ষোৎফুল্ল কণ্ঠে বলে উঠল টুপেনস।
-বাগানে, বলল টমি, ঝোপের আড়ালে। সেখান থেকেই গাড়ির পেছনে উঠে পড়ি। গাড়ি যে গতিতে ছুটেছে–জানাব কি করে। এবারে মেয়েদের নামিয়ে দাও।