প্রথম দিন সন্ধ্যায় টমি, অ্যালবার্টকে সঙ্গে নিয়ে বাইরে থেকে বাড়িটাকে দেখার চেষ্টা করল। ডাইনিং কামরায় টেবিলে কয়েকজনকে পান করতে দেখতে পেল তারা।
দ্বিতীয় দিনটাও আশপাশের দু-একজনের সঙ্গে সতর্কভাবে কথাবার্তা বলে টুপেনসের উপস্থিতির আভাস পাবার চেষ্টা করল।
তৃতীয় দিনে চটপটে অ্যালবার্ট মোক্ষম খবর নিয়ে এলো। ওই বাড়িতে একজন ফরাসি তরুণী বাস করে বলে জানা গেল।
রাতে টমির ঘুম হল না। আজ ২৮ শে। ২৯ তারিখ শ্রমিক দিবস। শ্রমিক দল ক্ষমতা দখল করবে এই ইঙ্গিত দিয়ে খবরকাগজগুলো দারুণ উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে। সরকার পক্ষে আলোচনার আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও শ্রমিক দলকে বিভ্রান্ত করে চলেছে অন্তরালবর্তী কিছু মতলবী
মিঃ কার্টার তার অনুরোধ রক্ষা করেছেন, মনে মনে তাকে ধন্যবাদ জানাল কার্টার। ওই। দলিল মিঃ ব্রাউনের হস্তগত হলে শ্রমিক দল আর চরমপন্থীদের দিকেই জনমতের হাওয়া বইবে। ওই খসড়া দলিলই সেই অদৃশ্য দলপতির মুখোশ খোলার অনিবার্য অস্ত্র। সেই কারণেই সে খামটা না খোলার জন্য মিঃ কার্টারকে অনুরোধ জানিয়েছে।
পরদিন সন্ধ্যাবেলা দুজনে মিলে আবার অনুসন্ধানে বেরলো। আচমকা অ্যাসলে প্রিয়রসের তিন তলার জানালার পর্দায় একটা ছায়া টমির দৃষ্টি আকর্ষণ করল। ওই ছায়া যে টুপেনসের তাতে নিঃসন্দেহ হল সে।
জানালা বরাবর খানিকটা দূরে অ্যালবার্টকে দাঁড় করিয়ে দিল সে। বলল, আমি বাগানে গান গাইতে থাকলে জানালার দিকে লক্ষ্য রাখবে।
বাগানের রাস্তা দিয়ে টমি চড়া গলায় বেসুরো গান ধরল।
হাসপাতালে থাকার সময় রেকর্ডের যে গানটা টুপেনস খুব পছন্দ করত সেই গানের কলি মস্ত বাড়িটার দেয়ালে প্রতিধ্বনি তুলতে লাগল।
সেই সাংঘাতিক আওয়াজ শুনে সঙ্গে সঙ্গেই একজন চাপরাশি আর বাটলার ছুটে বেরিয়ে এলো। টমি ঘাবড়ালো না। তার গানের গলা ওদের দেখে আরও চড়ল।
হৈ হৈ করে বাটলার চেপে ধরল তাকে। টমির চিনতে ভুল হল না। লোকটা স্বয়ং হুইটিংটন। পুলিসের ভয় দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত তারা টমিকে নিরস্ত করল।
.
সরাইখানায় ফিরে টমি অ্যালবার্টের জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। অনেক পরে সে এসে পৌঁছল।
–কি খবর অ্যালবার্ট।
–খবর ভালো স্যার। ওরা যখন আপনাকে বাগান থেকে বরে করে দিচ্ছিল, সেই সময় জানালা থেকে কেউ এটা ছুঁড়ে দেয়।
অ্যালবার্ট একটুকরো পাকানো কাগজ পকেট থেকে বের করে দিল। তাতে লেখা ছিল : আগামীকাল ঠিক এই সময়।
–সাবাস অ্যালবার্ট। আমরা ঠিক জায়গায় এসে গেছি।
-আমিও একটা কাজ করেছি স্যার, অ্যালবার্ট উৎসাহের সঙ্গে বলল, একটা কাগজ লিখে পাথর জড়িয়ে জানালায় ছুঁড়ে দিয়েছি।
-কি লিখেছ? জানতে চাইল টমি।
লিখেছি, আমরা সরাইখানায় আছি, উনি বাইরে আসতে পারলে যেন ওখানে গিয়ে ব্যাঙের ডাক ডাকেন।
-দারুণ হয়েছে। শোন, ওই বাটলার আমার চেনা। কিন্তু আমাকে বুঝতে দেইনি। নিশ্চয় কোনো মতলব আছে ওদের। সতর্ক থাকতে হবে।
সে-রাতে বেশ খুশি মনেই ঘুমোতে গেল টমি। রাত বারোটায় গাড়োয়ান চেহারার একজন দেখা করতে এলো টমির সঙ্গে। ভাঁজ করা একটুকরো কাগজ তাকে দেখাল। টুপেনসের হাতের লেখা, চিনতে পারল সে।
টমি সরাইখানায় ছদ্মনামে থাকতে পারে ভেবে কোনো নাম উল্লেখ না করে টুপেনস বলেছে, আসলে প্রিয়রসের কাছে সরাইখানার ভদ্রলোকের কাছে এটা দিলে তিনি তোমাকে দশ শিলিং দেবেন।
সঙ্গে সঙ্গে লোকটার হাতে দশ শিলিং গুঁজে দিয়ে টমি ভাজ করা কাগজটা তার কাছ থেকে নিয়ে নিল।
প্রিয় টমি,
গতরাতে, তোমার গলা শুনে চিনতে পেরেছি। আজ সন্ধ্যায় যেও না। ওদের ফাঁদে পড়তে হবে। আজ সকালেই আমাদের সরিয়ে দিচ্ছে। ওয়েলস–হোলিহেড বলে শুনেছি।
সুযোগ পেলে রাস্তায় চিঠি ফেলে যাব। অ্যানেটের কাছে তোমার বাহাদুরির গল্প শুনেছি।
তোমার টুপেনস
.
অ্যালবার্টকে ডেকে তুলল টমি।–শিগগির ব্যাগ গোছাও। যেতে হবে।
চিঠিটা আরো দুবার পড়ল টমি। আচমকা চোখ বড় হয়ে উঠল তার। মহামূর্খ আমি, নিজের মনে বলে উঠল সে, তুমিও তাই, তোমার পরিচয় আমি এবারে জেনে ফেলেছি।
অ্যালবার্টকে আবার ডাকল টমি।
-ব্যাগ খুলে ফেল। সময় হয়নি।
–হ্যাঁ স্যার। ঘাড় কাত করে সায় জানাল অ্যালবার্ট।
.
টেলিফোনটা নামিয়ে রেখে সেক্রেটারি ইভান তার মনিবকে জানাল, স্যার, জুলিয়াস পি. হার্সিমার নামে একজন আপনার সঙ্গে দেখা করতে চায়। বিশেষ জরুরী কাজে একাকী কথা বলতে চায়।
–লোকটা কে? জানতে চাইলেন ক্রেমেলিন।
–এই তরুণ অগাধ সম্পত্তির মালিক। ওর বাবা আমেরিকার ইস্পাত জগতের মুকুটহীন সম্রাট ছিলেন।
-তাহলে ওকে নিয়ে এসো।
কিছুক্ষণ পরেই সেক্রেটারি হার্সিমারকে নিচে থেকে নিয়ে এলো।
–মঁসিয়ে ক্ৰেমেলিন, বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আপনাকে জানাবার আছে। দ্বিতীয় কেউ উপস্থিত থাকবে না। বলল হার্সিমার।
–আমার সেক্রেটারি তাহলে পাশের ঘরে গিয়ে অপেক্ষা করুক। আপনার কাজের কথা শেষ করতে কতক্ষণ লাগবে?
-সেটা আপনার ওপর। তবে, আমি চাই সুইটে আপনি আর আমি ছাড়া কেউ থাকবে না।
শেষ পর্যন্ত সেক্রেটারিকে সন্ধ্যাটা ছুটি দিয়ে বাইরে পাঠিয়ে দিলেন ক্রেমলিন।
দরজা নিজে হাতে বন্ধ করে ঘরের মাঝখানে এসে দাঁড়াল হার্সিমার। চকিতে পোশাকের ভেতর থেকে রিভলবার বার করে উঁচিয়ে ধরল সে।