রিজে টুপেনসকে যে তারবার্তা পাঠিয়েছিলাম, সেটা আবার পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। আপনার পক্ষে সেটা অসম্ভব হবে না বলে স্যার জেমস জানিয়েছেন।
আর একটা কথা, সোহোর সেই বাড়িতে পাহারা অব্যাহত রাখার ব্যবস্থা করবেন।
আপনার বিশ্বস্ত
টমাস বেরেসফোর্ড
–খামের সেই চিঠিটা তাহলে।
কথা অসমাপ্ত রেখে ক্লান্ত দৃষ্টিতে তাকালেন প্রধানমন্ত্রী।
–আমাদের চারপাশেই চর। কাজেই কোনো ঝুঁকি নেই নি। ওটা ব্যাঙ্কের ভল্টে রেখে দিয়েছি।
-ওটা এখনই খোলা উচিত মনে করছেন না?
–মেয়েটির জীবনমরণের প্রশ্ন তার সঙ্গে জড়ানো। ছেলেটি আমাদের বিশ্বাস করেছে
–বেশ তাই হোক। ছেলেটিকে কিরকম মনে করেন?
ইংরেজ ছেলেদের মতোই দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, তবে বুদ্ধি কিঞ্চিৎ মোটা। কোনোক্রমেই বিপথগামী হবার নয়। মেয়েটির বুদ্ধি যাইহোক, সহজাত প্রেরণায় ভরপুর। ওরা দুজনে পরিপূরক বলা যায়।
–ছেলেটিকে বাহাদুরি দিতে হচ্ছে, এ সময়ের সেরা অপরাধীর সঙ্গে পাঞ্জা কষছে। বললেন প্রধানমন্ত্রী।
–তা, ঠিক। কিন্তু মাঝে মাঝে আমার সন্দেহ হয় ওর পেছনে একটা অদৃশ্য চালিকা শক্তি রয়েছে।
–চালিকা শক্তি?
-হ্যাঁ, পিল এজারটন। সবকিছুতে তারই হাত রয়েছে। আড়ালে থেকে তিনি গোপনে কাজ করে চলেছেন। মিঃ ব্রাউনকে যদি কেউ কজা করতে পারে, সে হল পিল এজারটান। বলতে ভুলে গেছি, কদিন আগে তার কাছ থেকে একটা অদ্ভুত অনুরোধ পেয়েছি।
–অদ্ভুত কেন? আগ্রহের সঙ্গে বললেন প্রধানমন্ত্রী।
–আমেরিকার কোনো কাগজের একটা কাটা অংশ পাঠিয়েছেন। খবরটা হল, নিউইয়র্কের একটা ডকের কাছে এক তরুণের মৃতদেহ আবিষ্কার প্রসঙ্গে। লোকটাকে সনাক্ত করা যায়নি। তিনি এ সম্পর্কে খোঁজ করতে বলেছেন।
–দুটো ব্যাপারের মধ্যে যোগসূত্র আছে আপনি মনে করেন?
–অসম্ভব নয়। বিষয়টা আরও পরিষ্কার করার জন্য আমি তাকে আসতে বলেছি। বেরেসফোর্ডের চিঠির ব্যাপারে তিনি কিছু জানতে পারেন।
একমিনিট পরেই স্যার জেমস উপস্থিত হলেন। তাকে অভ্যর্থনা জানাবার জন্য দুজনেই উঠে দাঁড়ালেন। প্রধানমন্ত্রী জানেন, আগামী দিনে তিনিই তার স্থলাভিষিক্ত হতে পারেন।
স্যার জেমস বললেন, বেরে ফোর্ড আমাকে ফোন করেছিল।
আপনাদের কি বিষয়ে কথাবার্তা হল, আমাদের জানাতে আপত্তি আছে? জানতে চাইলেন মিঃ কার্টার।
–কিছুমাত্র না। আমি তাকে একটা চাকরির প্রস্তাব দিয়ে চিঠি লিখেছিলাম, তাই ধন্যবাদ জানিয়েছিল। আর ম্যাঞ্চেস্টারের একটা ঘটনার কথা জানিয়ে বলে একটা ভুয়ো টেলিগ্রাম করে মিস কার্ডলকে ভুলিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। আরও জানায় হার্সিমারের ঘরে একটা ফটো সে আবিষ্কার করে; ফটোটা সেই ফরাসি মেয়ে অ্যানেটের। এই মেয়েটিই তার প্রাণ বাঁচায়।
-তাই কি!
–হ্যাঁ। ফটোটা দেখার পর সে খুবই ধাঁধার পড়ে যায়। অবশ্য ফটোটা যথাস্থানেই রেখে দিয়েছে। ম্যাঞ্চেস্টারের মেয়েটি যে জাল তা সে বুঝতে পেরেছে। তবে টেলিগ্রাম পেয়ে মিস কার্ডলের যেখানে যাবার কথা, সেখানে তাকে পাওয়া যায়নি। টেলিগ্রামের কথাটা আপনাকে জানাবার কথা আমি তাকে বলি।
কার্টার সব জানিয়ে একখণ্ড কাগজ বার করে পড়লেন, শিগগির এসো, অ্যাসলে প্রিয়রস, গেট হাউস, কেন্ট, টমি।
–মিস কার্ডল সম্ভবতঃ টেলিগ্রামটা পড়ার পর ঘরেই ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলেন। ওরা অনুসন্ধানকারীকে ভুল পথে চালনা করার জন্য ওটার দু-একটা শব্দ বদলে দিয়েছিল। যেমন, ছোকরা চাকরের কথা। সে বলেছিল যে মিস কার্ডল চেয়ারিংক্রশ গেছে। এই গুরুত্বপূর্ণ সূত্রটা ওরা লক্ষ্য করেনি, ভেবেছে ছোকরা ভুল শুনেছে।
বেরেসফোর্ড তাহলে এখন কোথায়?
–সম্ভবতঃ কেন্টের গেট হাউসেই রয়েছে।
–মনে হয়, আপনারও সেখানে যাওয়া দরকার ছিল, পিল এজারটন।
–উপায় ছিল না। একটা মামলার কাজে ব্যাস্ততা রয়েছে। ভালোকথা, ওই আমেরিকান সম্বন্ধে কোনো খবর আছে?
-এখনো জানা যায়নি। লোকটির পরিচয় জানা আবশ্যক।
স্যার জেমস বললেন, আমি জানি, কিন্তু এখনই প্রমাণ করা যাচ্ছে না।
প্রধানমন্ত্রী আচমকা বলে উঠলেন, ব্যাপারটা খুবই রহস্যময় ঠেকছে। মিঃ হার্সিমারের। ড্রয়ারে ফটোটা এলো কিভাবে?
-ওটা সম্ভবতঃ যথাস্থানেই ছিল।
–তাহলে সেই জাল ইনসপেক্টর ব্রাউন
.
দুদিন পরে জুলিয়াস ম্যাঞ্চেস্টার থেকে ফিরল। টমির পাঠানো একটা চিরকূট টেবিলের ওপরে পেল।
প্রিয় হার্সিমার,
আর্জেন্টিনায় একটা চাকরির প্রস্তাব পেয়েছি। নেব ভাবছি। যদি আর দেখা না হয় তাই বিদায় জানাচ্ছি।
তোমার
টমি বেরেসফোর্ড
কাগজটা মুড়ে সে বাজে কাগজের ঝুড়িতে ফেলে দিল।
.
স্যার জেমসকে ফোনটা করে সাউথ অ্যাসলে ম্যানসনে উপস্থিত হল টমি। অ্যালবার্টের কাছে নিজেকে টুপেনসের বন্ধু বলে পরিচয় দিল।
-স্যার, মিস ভালো আছেন তো?
–ডাকাতরা তাকে ধরে নিয়ে গেছে, অ্যালবার্ট। তাকে খুঁজতে যেতে হবে। তুমিও আমার সঙ্গে যাবে।
অ্যালবার্টকে সঙ্গে করে টমি গেট হাউস সরাইখানায় আশ্রয় নিল। টমি অ্যালবার্টকে খবর সংগ্রহের কাজে লাগিয়ে দিল।
সুন্দর লাল ইটের বাড়ি অ্যাসলে প্রিয়রস। বাগান ঘেরা বাড়ি। বাইরে থেকে কিছুই চোখে পড়ে না।
সরাইখানার মালিকের কাছ থেকে জানা গেল মিঃ অ্যাডামস নামের একজন ডাক্তার হলেন অ্যাসলে প্রিয়রসের মালিক। এখন তিনি আর ডাক্তারি করেন না। বছর দশেক এখানে আছেন। পয়সাওয়ালা দেখে কিছু রোগীকে বেসরকারীভাবে এখানে রাখেন। খুব আমুদে মানুষ এই ডাক্তার। গ্রামে খেলাধূলায় দরাজ হাতে চাঁদা দেন। তাছাড়া বিজ্ঞানচর্চা করেন। বাইরে থেকে অনেকেই তার সঙ্গে দেখা করতে আসে।