এরপর জেন ফিন জানালো, হোলিহেড হয়েই এসেছিলেন। আর ওখানেই সব ঘটেছিল। জেটির ওপর গণ্ডগোল বেঁধেছিল। আমি সেখান থেকে পালিয়ে গাড়ি নিয়ে শহরের বাইরে চলে যাই।
একটা পাহাড়ের কাছে, ঝোপের মধ্যে ঢুকে কুকুর আকৃতির একটা পাথরের গায়ে গর্ত পেলাম। তেলা কাগজের প্যাকেটটা তার মধ্যেই রেখে দিলাম। ঘাসলতাপাতা দিয়ে গর্তের মুখটা বন্ধ করে দিয়েছিলাম।
জায়গাটাকে ভালো করে চিনে নিলাম। তারপর গাড়িতে ফিরে এসে ট্রেন ধরলাম।
আমার পাশের সহযাত্রী ভদ্রলোক এক মহিলাকে চোখের ইশারা করলেন। আমার ভয় হল। করিডরে গেলাম। আচমকা মাথার পেছনে প্রচণ্ড আঘাত পেলাম। তারপর জেগে দেখি এই হাসপাতালে শুয়ে আছি।
নিশ্চয় আপনার ক্লান্তিবোধ হচ্ছে, ধন্যবাদ মিস ফিন।
উঠে দাঁড়ালেন স্যার জেমস।
–বিদায় জেন। কাগজগুলোর খোঁজে বেরতে হবে এখন। তুমি তাড়াতাড়ি সেরে ওঠ। ফিরে এসে আমরা আমেরিকায় ফিরে যাব।
.
স্যার জেমস বললেন, এখনই রওনা হলে চেস্টারে বারোটা চল্লিশের হোলিহেডগামী ট্রেন পেয়ে যাবেন। সতর্ক থাকবেন–মিঃ ব্রাউনের দৃষ্টি সর্বত্রগামী। যদি বোঝেন কেউ অনুসরণ করছে, কাগজগুলো নষ্ট করে ফেলবেন।
একরকম তাড়া দিয়েই যেন স্যার জেমস তাদের পাঠিয়ে দিলেন। হার্সিমার ও টমি চেস্টারে পৌঁছে প্রথম শ্রেণীর একটি কামরায় উঠে বসল।
হোলিহেডে পৌঁছে, মানচিত্র ধরে ট্রেভুর উপসাগরের দিকে এগিয়ে জেন ফিনের বর্ণনা মতো কুকুর আকৃতির পাথর–তার গায়ে গর্ত–গর্তের ভেতরে তেলা কাগজে মোড়া প্যাকেটটি উদ্ধার করল ওরা।
কিন্তু প্যাকেট খুলতেই সাদা কাগজ–তার বুকে লেখা–মিঃ ব্রাউনের শুভেচ্ছা সহ—
হতভম্ব হয়ে পরস্পরের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল টমি আর হার্সিমার।
–আমরা ব্যর্থ, বলল টমি, তবে একটা কাজ এখুনি আমাকে করতে হবে। কাগজগুলোর ব্যাপারে মিঃ কার্টারকে সাবধান করে দিতে হবে। নইলে সর্বনাশ হতে আর বাকি থাকবে না।
হার্সিমার হোলিহেডেই থেকে গেল। টমি মাঝরাতেই লন্ডনের মেল ধরল।
.
–আমার ব্যর্থতার কথাই জানাতে এলাম স্যার, বলল টমি, চুক্তির সেই খসড়া মিঃ ব্রাউনের হাত থেকে উদ্ধার করতে পারলাম না।
তুমি ভেবো না, শান্ত কণ্ঠে বললেন মিঃ কার্টার, তুমি যথাসাধ্য করেছ, প্রায় সফলও হয়েছিলে। আমি অন্য খবরটা নিয়ে চিন্তিত।
টেবিলের খবরের কাগজটার দিকে ইঙ্গিত করলেন তিনি।
–খবরটা পড়ে দেখ।
…এবারির কাছে ইয়র্কশায়ারের তীরে একটা মৃতদেহ ভেসে আসে…তার গায়ের সবুজ কোট, পি. এল. সি. লেখা রুমাল থেকে মৃতদেহ সনাক্ত করা হয়েছে…
–হ্যায় ভগবান। আর্তনাদ করে উঠে ব্যথাতুর চোখে মিঃ কার্টারের দিকে তাকাল টমি।
–ওরা টুপেনসকে খুন করেছে স্যার, ওদের শায়েস্তা না করে আমি শান্তি পাব না।
-তোমার মানসিক অবস্থা আমি বুঝতে পারছি। অনভিপ্রেত অনেক কিছুই আমাদের মেনে নিতে হয়। মেয়েটার জন্য আমি দুঃখিত।
.
বুকের ভেতরে আগুন জ্বলছিল। তীব্র বেদনায় যেন পাঁজরা গুঁড়িয়ে যাচ্ছিল। সবকিছুই দুঃস্বপ্ন হচ্ছিল টমির।
রিজে ফিরে সুটকেস গুছিয়ে নিল। ঘণ্টা বাজিয়ে বয়কে হুকুম করল ট্যাক্সি ডাকার জন্য।
মিঃ ব্রাউন যতই রহস্যময় অস্তিত্ব হোক, তার সঙ্গে একটা বোঝাঁপড়া করতে হবে–টুপেনসের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে হবে।
স্যার জেমসের একটা চিঠি সে পেল। কাগজের খবরটা পড়ে সহানুভূতি জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে কৃপা পরবশ আর্জেন্টিনায় একটা চাকরির প্রস্তাবও পাঠিয়েছেন।
স্যার জেমসকে একটা চিঠি লিখবে ভেবে টমি খাম কাগজ খুঁজল। না পেয়ে হার্সিমারের ঘরে খুঁজতে গেল। ঘর খালি। টমি টেবিলের ড্রয়ার টানল।
একটি মেয়ের ছবি চোখের পড়ল। চিনতে ভুল হল না। সেই ফরাসি মেয়ে অ্যানেট।
টমির ভ্রু কুঞ্চিত হল। এই মেয়ের ছবি হাসিঁমারের ড্রয়ারে এল কি করে?
.
০৭.
প্রধানমন্ত্রী বললেন, আমি ঠিক দুশ্চিন্তামুক্ত হতে পারছি না। ছেলেটির চিঠিটা আর একবার দেখা
মিঃ কার্টার চিঠিঠা পড়ে শোনালেন, সেটা তাঁকে উদ্দেশ্য করেই লেখা।
প্রিয় মিঃ কার্টার,
একটা আকস্মিক আবিষ্কার আমাকে চমকে দিয়েছে। আমি একরকম নিশ্চিত যে ম্যাঞ্চেস্টারের ওই মেয়েটি আসল নয়, সম্পূর্ণ সাজানো। আমাদের পথ থেকে সরিয়ে দেবার উদ্দেশ্যেই ওই নকল আয়োজন করা হয়েছিল। আমরা যে ঠিক পথে চলেছি, তাতে সন্দেহ নেই।
আসল জেন ফিন কে আমি তা জেনেছি। কাগজগুলোর হদিশও পেয়েছি। সমস্ত কিছু লিখে একটা আলাদা খামে আমি পাঠালাম। ওটা একেবারে শেষ মুহূর্তে, ২৪ তারিখ মধ্যরাতে খুলবেন। আমার একথা বলার কারণ একটু পরেই বুঝতে পারবেন।
টুপেনস ডুবে মরেছে, তার যেসব জিনিসপত্র উদ্ধার করা হয়েছে, সবই স্রেফ ধাপ্পা। এসবের কারণটাও আমি নির্ধারণ করার চেষ্টা করেছি। শেষ অস্ত্র হিসেবেই ওরা জেন ফিনকে পালাবার সুযোগ দেবে যাতে সে আসল জিনিসের কাছে চলে যায়। জেন ওদের সবকিছু জানে, ওকে মুক্তি দেওয়া তাই তাদের পক্ষে মস্ত ঝুঁকির কাজ। তবু ওই চুক্তির খসড়াটার তারা এই ঝুঁকি নেবে।
কিন্তু ওই কাগজপত্র আমরা উদ্ধার করেছি, যদি একথা ওরা জানতে পারে, তাহলে ওই দুটি মেয়ের জীবন মূল্যহীন হয়ে পড়বে তাদের কাছে। কাজেই, বুঝতে পারছেন, জেন পালাবার আগেই আমাকে টুপেনসকে উদ্ধার করতে হবে।