গ্রামের কেউ নিশ্চয় ওকে দেখে থাকবে। ওকে যেভাবেই হোক খুঁজে বার করব। বিচলিত কণ্ঠে বলল টমি। টুপেনসের বর্ণনা দিয়ে গ্রামের সবজায়গায় খোঁজ করা হল। কিন্তু তার কোনো সন্ধানই পাওয়া গেল না।
দুজনের সাতটা দিন এখানেই কেটে গেল।
হঠাৎই ২৯শের কথা মনে পড়ে গেল টমির।
–এখানে এতদিন থেকে আমাদের ভুল হয়েছে, হার্সিমার। সামনের রবিবারেই ২৯শে। তার আগেই টুপেনসকে বার করে আনতে হবে।
শেষ পর্যন্ত স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করাই স্থির হলো। টমি রয়ে গেল। হার্সিমার লন্ডন রওনা হয়ে গেল।
কিন্তু বিকেলের দিকেই হার্সিমারের টেলিগ্রাম পেল টমি :
ম্যাঞ্চেস্টারে মিডল্যান্ড হোটেলে দেখা কর। জরুরী। জুলিয়াস।
.
সাতটা তিরিশে প্ল্যাটফর্মে নেমেই হার্সিমারের সঙ্গে টমির দেখা হল।
-টুপেনসের খবর পেয়েছ? জানতে চাইল সে।
–না। কিছু আগেই এই টেলিগ্রামটা পেলাম। এখনই ম্যাঞ্চেস্টারে মিডল্যাণ্ড হোটেলে আসুন। পিল এজারটন।
.
রাত আটটায় টমিকে নিয়ে স্যার জেমসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করল হার্সিমার।
টমিকে তিনি প্রথম দেখলেন। খুশি হয়ে বললেন, টুপেনসের কাছে আপনার কথা শুনেছি।
প্রাথমিক সৌজন্যমূলক কথাবার্তার পর স্যার জেমস ওদের বিস্মিত করে জানালেন, শেষ পর্যন্ত তিনি জেন ফিনকে খুঁজে বার করেছেন।
হার্সিমার উল্লসিত হয়ে তাকে নানা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করল।
স্যার জেমস জানালেন, পথদুর্ঘটনায় মাথায় চোট পেয়ে মেয়েটি হাসপাতালে ছিল। জ্ঞান ফিরে এলে নিজের নাম জেন ফিন বলেছে। আমার বন্ধু এক ডাক্তারের কাছে তাকে সরিয়ে দিয়েছি। তারপরই আপনাকে খবর পাঠাই।
–আঘাত কি গুরুতর? জানতে চায় হাসিমার।
–আঘাত সামান্য। তবে ডাক্তার বলেছেন তার স্মৃতিশক্তি ফিরে আসছে।
–তাহলে ডিনারের পর জেনের সঙ্গে গিয়ে দেখা করতে পারব?
স্যার জেমস বললেন, আজ রাতে আর তার সঙ্গে দেখা করতে দেবে না। কাল সকাল দশটায় যাওয়াই ভালো।
স্যার জেমসের কণ্ঠস্বরে এমন কিছু ছিল যে টমি চমকে উঠল। হার্সিমারের সমস্ত আগ্রহে জল পড়ল।
এরপর টমির সমস্ত ঘটনা শুনে তাকে তার বুদ্ধি ও সাহসিকতার জন্য অভিনন্দন জানালেন।
-ওই মেয়েটাই আসলে আমাকে বাঁচিয়েছে–অ্যানেট। বলল টমি।
–আপনার সৌভাগ্য। না হলে ওই দলের মেয়ে হয়ে
–কিন্তু ওর ব্যবহার অন্যরকম ছিল। পালাবার সময়ে শুনলাম ও বলছে, মার্গারেটের কাছে চলে যাবে। মিসেস ভ্যান্ডেমেয়ারের কথাই মেয়েটি বলতে চেয়েছিল আমার ধারণা।
–আশ্চর্য যে, সে যখন ওই কথা বলছে, ঠিক সেই সময়েই মিসেস ভ্যান্ডেমেয়ার মারা গিয়েছেন। তা সেই বাড়িটা পরীক্ষা করা হয়েছিল?
–হ্যাঁ। কাউকে পাওয়া যায়নি। ভালোকথা, আপনাকে তো টুপেনসের কথা জানাতেই ভুলে গেছি স্যার।
এরপরে গত একসপ্তাহের ঘটনা টমি বলল। সব শুনে স্যার জেমস বললেন, আপনার নামে ভুয়ো তার পাঠিয়েছিল, বোঝা যাচ্ছে ওরা সবই জানে। আচ্ছা, আপনার পরিচয় কি জানিয়েছিলেন?
–কোনোভাবেই না। বলল টমি।
–অন্য কেউ নিশ্চয় জানিয়েছে
–কে জানিয়ে থাকতে পারে? বলল টমি।
–সর্বশক্তিমান সেই মিঃ ব্রাউনই হবে। বললেন স্যার জেমস।
–ওসব সবই ভাওতা। সেই রুশ ক্রেমলিনই সব কলকাঠি নাড়ছে, বলল টমি, তিনটে দেশে বিপ্লব ঘটাবার ক্ষমতা ধরে লোকটা। ইংলন্ডের দায়িত্বে আছে হুইটিংটন।
–যাই ভাবুন, মিঃ ব্রাউন আছেন। যাইহোক, জেন ফিনের এদিকটা সামলেই মিস টুপেনসকে মুক্ত করার ব্যবস্থা করব। জেন ফিনের কথা আপাততঃ গোপন রাখাই ভালো হবে।
.
পরদিন সকালে স্যার জেমস নির্দিষ্ট জায়গায় ওদের দুজনকে ডাক্তার রয়ল্যান্সের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন।
ডাক্তার সকলকে নিয়ে ওপরে রোগীর ঘরে এলেন। ধবধবে বিছানায় মাথায় ব্যাণ্ডেজ বাঁধা একটি মেয়ে শায়িত।
টমির মাথায় টুপেনসের চিন্তাই চেপে ছিল। স্যার জেমস ওকে খুঁজে বার করবেন বলেছেন। কিন্তু মিঃ ব্রাউনের অদৃশ্য হাত যদি তার আগেই..
বিছানায় শায়িত মেয়েটির দিকে তাকিয়ে চকিতে তার মনে হল, সবকিছু সাজানো নয় তো?
হার্সিমারের প্রশ্নের উত্তরে মেয়েটি যখন বলল, আপনি সত্যিই হিরাম মামার ছেলে? টমির মনে হল, কণ্ঠস্বর যেন আগে কোথায় শুনেছে।
মেয়েটি আবার বলল, কাগজে হিরাম মামার কথা পড়তাম। মা বলতেন, তার ভাইয়ের রাগ কোনোদিনই পড়বে না।
-বুড়োদের যুগ বদলে গেছে। তাই যুদ্ধ থামতেই তোমার খোঁজে বেরিয়ে পড়েছি। বলল হার্সিমার।
–আমার নাকি স্মৃতি মুছে গেছে–আগের কোনো কথা মনে পড়বে না
–তুমি নিজে কিছু বুঝতে পারছ?
–মনে হয় না। জোর করে আমাদের বোটে তুলে দেওয়া হল এপর্যন্ত কেবল মনে করতে পারছি।
এবারে ঠিক সেরে উঠবে। আচ্ছা জেন, একটা কথা বলতে পারবে, জাহাজে একজন লোক তোমাকে কিছু জরুরী কাগজপত্র দিয়েছিলেন।
মেয়েটি ওদের দিকে তাকিয়ে ইতস্ততঃ করল। হার্সিমার টমিকে দেখিয়ে বলল মিঃ–বেরেসফোর্ড, ব্রিটিশ সরকারের হয়ে ওই কাগজ উদ্ধারের কাজ করছেন। আর স্যার জেমস খোদ ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য। তুমি নির্ভয়ে সব বলতে পার।
-উনি বলেছিলেন, বলল মেয়েটি, কাগজগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ–কিন্তু যুদ্ধ তো থেমে গেছে, এখন আবার
-সেই কাগজ ব্রিটিশ সরকারের পক্ষে এখন আবার অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। সেগুলো আমাদের হাতে তুলে দিতে পারবে?